বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

একুশে টিভি সাংবাদিকের গলা চেপে ধরলেন যশোরের ওসি



পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নাজেহাল হয়েছেন যশোরের দুই সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হন অন্য সাংবাদিকরা। কোতোয়ালি থানার বিতর্কিত ওসি গলা চেপে ধরেন এক সাংবাদিকের। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দায়ী পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালককে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাংবাদিকরা। দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের হয়রানি ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গতকাল সকালে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান একুশে টেলিভিশনের যশোর প্রতিনিধি শিকদার খালিদ, ক্যামেরাম্যান টুটুল ও যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দনের স্টাফ রিপোর্টার কাজী আশরাফুল আজাদ। অফিস ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে তারা ভুক্তভোগীদের সাক্ষাত্কার নিচ্ছিলেন। এ সময় ভবনের দোতলার বারান্দায় এসে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) মাসুম হাসান সাংবাদিকদের উদ্দেশে খিস্তিখেউড় করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি নিজের পশ্চােদশ ঘুরিয়ে বলেন, ‘তোরা এর ছবি তোল, পারলে ... ছিঁড়ে নিস।’ কর্মচারীদের ডেকে তিনি বলেন, ‘ওদের ধরে আন’। একপর্যায়ে দোতলা থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্যান্ডেল ছুড়েও মারা হয়। পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকশ’ লোক উপ-পরিচালকের এই আচরণে হতভম্ব হয়ে যান।
সংবাদ পেয়ে প্রেস ক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমান তোতা, সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন ও সম্পাদক আহসান কবীরের নেতৃত্বে ২০-২২ জন সাংবাদিক পাসপোর্ট অফিসে যান। অফিসে পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষমাণ কয়েকশ’ লোক তখন সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতন, হয়রানি, ঘুষবাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরেন। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশ-আনসারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা অফিস চত্বরে মিছিলও করেন।
প্রায় আধাঘণ্টা পর কোতোয়ালি থানার এএসআই সন্তুর নেতৃত্বে একদল পুলিশ পাসপোর্ট অফিসে যায়। তারা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সাংবাদিক নেতারা প্রায় একঘণ্টা পাসপোর্ট অফিসে অবস্থান করলেও সহকারী পরিচালক তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। বিক্ষুব্ধ জনতার মুহুর্মুহু স্লোগান চলার একপর্যয়ে ঘণ্টাখানেক পর এডি মাসুম দোতলা থেকে নিচে নেমে এলেও কলাপসিবল গেটের বাইরে বের হননি। এ সময় সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
সাংবাদিকরা যখন পাসপোর্ট অফিস থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হন, তখন হঠাত্ সেখানে আবির্ভূত হন কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল জলিল। তিনি বিনা উস্কানিতে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। সঙ্গীয় ফোর্সকে তিনি নির্দেশ দেন, ‘পিটিয়ে সাংবাদিকদের হাত-পা ভেঙে দাও’। ওসির এ নির্দেশ পেয়ে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে সাংবাদিকদের ওপর। ওসি জলিল স্বয়ং একুশে টিভির যশোর প্রতিনিধি শিকদার খালিদের গলা চেপে ধরেন।
পুলিশের এই ভূমিকার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সাংবাদিকরা ফিরে আসেন প্রেস ক্লাবে। সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে পাসপোর্ট অফিসের এডি ও কোতোয়ালি থানার ওসির শাস্তি দাবি করে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সভা থেকে বলা হয়, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ ও অসভ্য সহকারী পরিচালক মাসুম হাসানকে আগামী রোববারের মধ্যে যশোর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল জলিলকে কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এই দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সাংবাদিকদের সব সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং আগামী সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ। দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সাংবাদিক নেতারা হুশিয়ারি দেন।
মিজানুর রহমান তোতার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সম্পাদক আহসান কবীর, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য আনোয়ারুল কবির নান্টু, প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি মহিদুল ইসলাম মন্টু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে ছাত্রদলের এক কর্মীর গলা চেপে ধরেছিলেন ওসি আবদুল জলিল। শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিকে এই ছবি ফলাও করে প্রচারিত হলেও ওসি জলিলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads