শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২

আবুল হোসেনের দেশপ্রেম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি : আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি



যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইফতার শেষে মতবিনিময়কালে সদ্য পদত্যাগকারী মন্ত্রী আবুল হোসেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও সত্সাহসের অধিকারী বলে যে মন্তব্য করেছেন—তা নিয়ে জোরালো বিতর্ক উঠবে বলে মনে হয় না। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর থেকে আবুল হোসেনকে নিয়ে নানামুখী সমালোচনা হয়েছে। সেই সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে এখনও। কিন্তু সমালোচনাকারীরা কেউ তার দেশপ্রেম বা সাহসের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেননি; প্রশ্ন উঠেছে তার কাজকর্মের স্বচ্ছতা নিয়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল হোসেন সাধারণ অবস্থা থেকে কখনও ধীরে ধীরে, কখনও বেশ দ্রুতগতিতে প্রথম কাতারের ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তিনি এভাবে বিকশিত হতে পারতেন না। তাই দেশটির প্রতি তার প্রেম সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই থাকার কথা। তিনি যে একজন সাহসী মানুষ—তা নিয়েও বিতর্ক নেই। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় তার এলাকার প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা এই সাহসের পরিচয় বেশ ভালোভাবে পেয়ে থাকেন। তদুপরি বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধান ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক সরাসরি অভিযোগ করার পর দশ মাস মন্ত্রিত্বে ঝুলে থাকতে পারাও সাহসের পরিচায়ক বটে! তবে সাহসের এ ধরনের বহিঃপ্রকাশকে ‘সত্সাহস’ বলা যায় কিনা—সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে আবুল হোসেনের সততা বা স্বচ্ছতার সপক্ষে কোনো কথা বলেননি। আর প্রেম এবং সাহস যে দুর্নীতি ও অসচ্ছতার নির্ভরযোগ্য প্রতিষেধক নয়—এমন অনেক দৃষ্টান্ত বাংলাদেশেই আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, সবার উচিত আবুল হোসেনের প্রশংসা করা—এর লক্ষ্য সম্ভবত নিজ দলের মন্ত্রী এবং নেতারা। অর্থমন্ত্রী যেভাবে ‘আবুল ইজ ডাউন’ বলে চারদিক কাঁপিয়ে তুলেছেন, তা শোভন হয়েছে বলে আমরাও মনে করি না। চীনের একটি প্রতারক কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেনের ওপর চাপ দিচ্ছিল এবং সে চাপ অগ্রাহ্য করায় পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। এর আগে তিনি সংসদে এবং সংসদের বাইরে ঋণচুক্তি বাতিল সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলেছিলেন; তাতে ষড়যন্ত্রের এবং নেতিবাচক তদ্বিরের ইঙ্গিত ছিল। এসবের মধ্যে কোন্টা কথার কথা আর কোন্টা আসল কথা জানা গেলে আমজনতা স্বস্তি পেত।
ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু ছাড়া গুম এবং দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, গুম শুরু হয়েছিল বিএনপির আমলে এবং রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। এক কথায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, অন্তত তার আমলে গুম-খুন বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের মেয়াদ এরই মধ্যে চার বছর পার হবে হবে করছে। ‘চার বছর’ আর ‘রাতারাতি’ কি এক কথা? হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, ব্রহ্মার এক মুহূর্ত হচ্ছে মানুষের ৬৪ হাজার বছরের সমান। এই ঘোর কলিযুগে ‘রাতারাতি’ আর ‘চার বছর’কে সমান করে ফেলতে হলে এক ব্রহ্মায় কুলাবে বলে মনে হয় না, সঙ্গে বিষ্ণু আর শিবকেও লাগতে পারে। আর ‘রাতারাতি’ গুম-খুন বন্ধ করা যায় না; কিন্তু ‘রাতারাতি’ বর্তমান আমলে দুর্নীতির মাত্রা শূন্যের কোঠায় নেমে গেল—এটাও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার কথা? নইলে ‘পদ্মার ভাঙন’ ‘এই আমলে’ এমন কীর্তিনাশা রূপ নিল কেন?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads