বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবি


 বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের মধ্যেও সম্প্রতি সরকারের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে জিজ্ঞাসা ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণও সরকারই তৈরি করেছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে এসেছে জাতীয় সম্প্রচার নীতি এবং সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়ার সিদ্ধান্ত। বলা হচ্ছে, এ ধরনের যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং সংবিধানে সংশোধনী আনার আগে জনগণের মতামত নেয়া দরকার। প্রয়োজনে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। যেমন গত সোমবার সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ভোটারবিহীন একটি একদলীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আগত আওয়ামী লীগ সরকার হঠাৎ কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িঘড়ি করে তা বাস্তবায়নের জন্যও তৎপর হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি না হয়ে পারে না। তারা আরো বলেছেন, প্রস্তাবিত ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার একযোগে বহু প্রতিষ্ঠানের ওপর খড়গ টানার উদ্যোগ নিতে চাচ্ছে। তেমন কোনো সংশোধনী বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তারা। ওদিকে সংবিধান প্রণেতা এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগে বুধবার অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতাদের এক বৈঠকেও একই ধরনের অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠকে  নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নেতারা।
এভাবে অন্য সব মহলের পক্ষ থেকেও জাতীয় সম্প্রচার নীতি ও সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের এবং সরকারের পদত্যাগ ও নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। মূল কথায় সবাই বলছেন, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যা চায় সরকারকে তাই মানতে হবে। তারা আরো বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে সময় পার করা ও বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না- এই কথাটা প্রধানন্ত্রীকে উপলব্ধি করতে হবে। তারা এ কথা বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয় ধরনের ঘোষণার আড়ালে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন পর্যায়ে আরো একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সেটা সম্ভব হলে দেশ মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়বে। এজন্যই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন তারা।  বস্তুত বিভিন্ন সমাবেশে এবং মতবিনিময় সভায় নির্বাচন ও সংবিধান সংক্রান্ত যে বক্তব্য জাতীয় নেতা ও বিশিষ্টজনেরা রেখেছেন সে সবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কারণ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেয়া দ্ব্যর্থবোধক রায়ে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করা হলেও ক্ষমতাসীনরা শুধু তাদের পছন্দের অংশটুকু বেছে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সংশোধিত সংবিধানের ব্যাখ্যাও তারা নিজেদের ইচ্ছামতোই দিয়েছেন। অন্য ক্ষমতাসীনরাও যার যার মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করার এবং নানা ধরনের ঘোষণা দেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের এসব ব্যাখ্যা ও ঘোষণা শুনে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, আগামীতে কখনো অনুষ্ঠিত হলেও সে নির্বাচনও হবে ৫ জানুয়ারির মতো সম্পূর্ণ একতরফা ও একদলীয় একটি নির্বাচন।
মূলত অমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেই ২০ দলীয় জোটের মানববন্ধনসহ বিভিন্ন সমাবেশে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের মতো প্রবীণ রাজনীতিকও একই দাবি জানিয়েছেন। সকলেই একসুরে বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছিল না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও বলা হয়নি যে, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনরা সংবিধান সংশোধন করেছেন এবং সে সংবিধানের অধীনেই একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছেন। এমন অবস্থার কারণেই বলা হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে এর চাইতে বড় প্রতারণা আর কিছু হতে পারে না। আবারও সংবিধান সংশোধনের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, সংবিধান এমন কোনো বিষয় নয় যে, তা পরিবর্তন করা যাবে না। আমরাও ২০ দলীয় জোটসহ জাতীয় নেতাদের মূল কথাগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। সরকারের উচিত সংসদের চলমান অধিবেশনেই সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্রসম্মত এ পথটিতে যাওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা যদি নিজেদের অগণতান্ত্রিক ও একদলীয় শাসনমুখী ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চালান তাহলে দেশে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, যার পরিণতি কারো জন্য শুভ হবে না- বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের জন্য তো বটেই। সরকারের তাই সময় আর নষ্ট করা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads