শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

১৫ কোটি মানুষ শিকলবন্দী হয়ে যাবো?

বাংলাদেশে এখন যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, সে সরকার কোনো বিবেচনায়ই জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নয়। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে যে গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়, সে ধারণা মুছে দেয়ার আয়োজন বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা ২০১১-২০১২ সাল থেকেই শুরু করেছে। এখন মনে করছে এরা সেটি নিষ্পন্নের কাছাকাছি চলে এসেছে। সমীকরণটি খুব সহজ। পৃথিবীর সব স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এ ধরনের সরল সমীকরণ করে থাকে। শেখ হাসিনার সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের তিন বছরের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পর এ দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে এনেছিল, তা পছন্দ হয়নি শেখ হাসিনার। তিনিই জামায়াতে ইসলামীর সাথে মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল না। এ ধারণাটি এনেছিলেন জামায়াত নেতারা। শেখ হাসিনা তা লুফে নিয়েছিলেন। আর জামায়াতের সাথে জোট বেঁধে ১৯৯৫-৯৬ সালে এমন এক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন যে, সে সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের দাবি অনুযায়ী সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজন করেছিল।
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের সময় মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি সরকার নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সবাই নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচন করে সংসদে বসুন। এরপর আসুন আমরা সবাই মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করি। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এখন অনেকেই ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে নিন্দামন্দ করেন। কিন্তু ওই নির্বাচন ঘোষণার প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের একমাত্র দায়িত্ব হবে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা। সংবিধানের সে সংশোধনী পাস করার পর এই সংসদ বিলুপ্ত করে দেয়া হবে। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন করা হবে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে গঠিত সংসদ বিলুপ্ত হবে। তিনি যথারীতি তাই করেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে অস্বীকার করে।
বিষয়টি অদ্ভুত। এরাই দাবি করলেন, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। অথচ সংবিধান সংশোধনের সে প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া থেকে শেখ হাসিনা দূরে রইলেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকেও স্পষ্ট হয় যে, প্রকৃতই এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চেয়েছিলেন, নাকি চেয়েছিলেন সামরিক হস্তক্ষেপ? বরাবরই দেখা যায়, বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকলে সামরিক হস্তক্ষেপ শেখ হাসিনার কাছে অতি প্রিয়।
বেগম খালেদা জিয়া কথা রেখেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন সম্পন্ন করে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। এখন যারা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির সমালোচক, তারা জ্ঞানপাপী। এরা এ কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন, বিএনপি ওই নির্বাচন করেছিল শুধু আওয়ামী লীগ জামায়াতের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার জন্য। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। সেটিকেও ষড়যন্ত্রমূলক বলে অভিহিত করা যায়। কিন্তু শুধু বিএনপির সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত ফেব্রুয়ারির সংসদে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণীত হয়, তাতে অংশগ্রহণ করে ১৯৯৬ সালেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। জামায়াত তখন তাদের অতি প্রিয় সংগঠন ছিল। যুদ্ধাপরাধ, রাজাকারÑ এসব শব্দ আওয়ামী অভিধান থেকে মুছে গিয়েছিল। আওয়ামী নেতারা গিয়ে গোলাম আযমকে সালাম করেছেন। মতিউর রহমান নিজামীকে পাশে বসিয়ে নানা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। তখন সেটা পাপ ছিল না। পাপ হলো তখনই, যখন জামায়াতে ইসলামী আওয়ামী লীগের সঙ্গ ছেড়ে বিএনপির সাথে জোট বাঁধল।
কিন্তু শেখ হাসিনা সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, এ দেশে যদি কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় আসীন থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাবিকাঠি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফলে এই ব্যবস্থা কিভাবে ধ্বংস করা যায়, তার সামগ্রিক আয়োজন তিনি করতে শুরু করেন। এ দেশে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে আঁতাতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটা সবাই অবগত আছেন। সে সময়কার মইন উ আহমেদের সামরিক সরকার আওয়ামী লীগ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঁতাত করে নিজেদের চামড়া বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। মইন উ আহমেদ ছিলেন উচ্চাভিলাষী। কিন্তু তার বিদ্যা-বুদ্ধি ও সাধারণ জ্ঞানের অভাব ছিল। তার কথাবার্তা শুনে সে সময় তাকে অনেকেই প্রতিবন্ধী বলে অভিহিত করত। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হয়েছেন। আর ২০০৭-২০০৮ সালে ক্ষমতায় থেকে এমন সব ইতর কর্মকাণ্ড করেছেন ও করিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাও তাকে নিজের লোক বলে স্বীকার করছেন না। তার প্রসঙ্গ এলেই তিনি অভিযোগ করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ছয়-সাত জনকে ডিঙিয়ে তাকে সেনাবাহিনী প্রধান করেছিলেন। তার দায়িত্ব আমরা নেবো কেন? অথচ রক্ষীবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ করা মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিনকে শেখ হাসিনা কী যে ভালোবাসেন, তার প্রমাণ চলছেই। মাসুদউদ্দিনকে তিনি অবিরাম অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েই যাচ্ছেন। বলিহারি।
এসব কিছুই অতীত। কিন্তু বর্তমানে আমরা নাগরিকেরা বড় বেশি বিপন্ন হয়ে পড়েছি। কারণ শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করে ইতোমধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন বা জানেন যে, আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে যে পরিমাণ অপকর্ম করেছে, তাতে ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। আর নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা শূন্য। তাই শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগের অপশাসন, দুঃশাসন, লুণ্ঠন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সুযোগ পেত। সংবিধানে যতই বলা থাক না কেন জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, আওয়ামী লীগার হিসেবে রাষ্ট্রের মালিক-মোক্তার তারাই। সংবিধান সেটাই, যা শেখ হাসিনা বলবেন।
এর মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছে, শেখ মুজিবকে হত্যার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একাধিক ব্যক্তি যারা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার এবং মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনার কাছে তাদের ডিকটেশনের মূল্য অনেক বেশি। আওয়ামী লীগের বনেদি নেতা তোফায়েল, আমু, সুরঞ্জিত এখন নিজেদের ট্র্যাকে রাখতে খুব ব্যস্ত। কারণ শেখ হাসিনা ফরগেট করেছেন, ফরগিভ করেননি। টাকার বস্তা ও কালো বিড়াল খ্যাত সুরঞ্জিতকে নিয়ে ভাবি না, আমির হোসেন আমুও ব্যাপার নন, সবচেয়ে কষ্ট হয় তোফায়েল আহমেদের জন্য। শেখ হাসিনা যখন দৃষ্টিসীমার অনেক দূরে ছিলেন, তখন তোফায়েল আহমেদই ছিলেন তারুণ্যের অন্যতম কণ্ঠস্বর। হাহ, কী নগ্ন আত্মসমর্পণ! ভাবতে লজ্জা লাগে। তবুও আওয়ামী লীগ মানেই আওয়ামী লীগ। সত্য তাদের কাছে বিরক্তিকর। তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযোদ্ধা সাজার কাহিনীও এখন অনেক স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাতেও শেখ হাসিনার ভালোবাসা পাওয়া যায়নি। হাছান মাহমুদ, সুরঞ্জিত বা হানিফের মতো অমন জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছেন তোফায়েল আহমেদ। ব্যক্তিগতভাবে আমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
কিন্তু কোথায় আটকে গেলাম? আটকে গেছি এইভাবে যে, সরকার একের পর এক এমন সব আইন প্রণয়ন করছে যে, সত্য প্রকাশ অসম্ভব হয়ে গেছে। সরকার একের পর এক আইন জারি করছে। জারি করেছে বিচারপতিদের অভিশংসন আইন, জারি করেছে সাইবার অপরাধ আইন, জারি করেছে সম্প্রচার নীতিমালা, সংশোধন করছে প্রেস কাউন্সিল আইন। তার ওপর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বামী-স্ত্রীর রাজনীতি করার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। এসবই এ দেশের মানুষকে শিকলবন্দী করার পরিকল্পনা। ৫ জানুয়ারির অনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে যেসব আইন পাস করা হচ্ছে, তার বৈধতার দায়দায়িত্ব কার? শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যে হাসানুল হক ইনু গণবাহিনী গঠন করে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যমন্ত্রী। তার কথায়ই শেখ হাসিনা সংসদে টুঁ শব্দ ছাড়াই পাস করে নিলেন সম্প্রচার নীতিমালা। পুলিশ অন্যায় করলে প্রকাশ করা যাবে না। র‌্যাব খুন করলে প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে তাদের ভাবমর্র্যাদা নষ্ট হবে। এসব বাহিনীর ভাবমর্যাদা নষ্ট করা কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য সঙ্গত হবে না। তাদের জন্য শাস্তি। আচ্ছা, শাস্তি দিলে বিচার বিভাগ যদি মনে করে এই শাস্তি যথোপযুক্ত নয়, সেটাও তো মেনে নেয়া যায় না। অতএব যে বিচারক এ রকম মনে করবেন, তাকে অভিশংসন করবে একটি অনির্বাচিত সংসদ।
ইতোমধ্যে আর এক আইন পাস হয়ে গেছে। তার নাম সাইবার অপরাধ। কী আশ্চর্য, এক তরুণ শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান লিখে এখন সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে। সাইবার অপরাধে তার এই দণ্ড হয়েছে। কটূক্তি করা যাবে না। সমালোচনা করা যাবে না। সরকার যা চায়, তার বাইরে কিছু বলা যাবে না। কটূক্তি কাকে বলে, আমরা জানি না। ওই গানে শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনা সম্পর্কে সাইবার তরুণ কী লিখেছিলেন, তাও আমার দেখতে ইচ্ছে করেনি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করা যাবে না। এতে যদি সাত বছরের জেল হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, কাদের সিদ্দিকী, এ কে খন্দকার, তাদের বিরুদ্ধে যেসব কটূক্তি করা হচ্ছে এদের বিরুদ্ধে কি ৭০০ বছর জেল হওয়া দরকার? সরকারকে সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
সর্বশেষ, এত দিন পর্যন্ত এর সবই ছিল ইলেকট্রনিক মিডিয়াসংক্রান্ত। অনলাইন সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে আসবে। বেসরকারিভাবেও যদি টিকে থাকতে হয়, তাহলে সরকারি কীর্তন করতেই হবে। সরকারের তল্পিবাহক মিডিয়াগুলোও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট সংশোধনের মাধ্যমে সরকার যখন প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর হামলার উদ্যোগ নিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই যে, প্রেস কাউন্সিল, যে প্রতিষ্ঠান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই সংবাদপত্রের ডিকারেশন বাতিল, জরিমানা করা, শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির সুবিধা রদ করা ইত্যাদি ক্ষমতা
দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে যে, কেউ যদি সাংবাদিক হতে চায়, তবে
তাকে পরীক্ষা দিয়ে প্রেস কাউন্সিল থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। কে কল্পনা করেছিল যে, বাংলাদেশে এমন মগের মুল্লুক চালু হবে!
কথা এখানেই শেষ নয়। আরো একটি আইন করছে সরকার। যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। তার অর্থ দাঁড়াল এই যে, কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক কেউ সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। আমার স্ত্রী বা স্বামী যদি রাজনীতি করেন, তবে তাকে হাজারবার বিবেচনা করতে হবে তিনি কোন দল করবেন। অর্থাৎ স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন, স্বামী রাজনীতি করেন এটি সম্ভব হবে না। নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায় যে, সেই স্বামী যদি সরকারি দল সমর্থক হন, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু তিনি যদি বিরোধী দল সমর্থক হন, তাহলে তার চাকরি থাকবে না। এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। সরকার তেমন উদ্ভট আইনই প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
তাহলে নাগরিকদের কী উপায়? তারা কি জিঞ্জিরাবদ্ধ হয়েই থাকবেন? এসব অত্যাচার উৎপীড়নের বিরুদ্ধে তারা কি কোনো প্রতিবাদই করবেন না? সাধারণ নাগরিকেরা জীবন-জীবিকা নিয়ে দৈনন্দিন ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু যখন তারা প্রতিবাদ করেন, সে প্রতিবাদ মহাসমুদ্রের বিশাল জলোচ্ছ্বাসের মতো গোটা দেশ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। শেখ হাসিনা সরকার এখন সেই দুর্দিনের অপেক্ষায়। 
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads