শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ঢিল এবং পাটকেলের রাজনীতি


‘ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’ বলে এদেশে একটি প্রবাদ রয়েছে। আগ বাড়িয়ে বেশি বলতে গিয়ে সম্প্রতি তেমন এক পাটকেলই খেতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পাটকেলটি ছুঁড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারণ, খালেদা জিয়ার পাটকেলটি সহজে হজম করা এই সময়ে সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া অবশ্য হজমের কষ্ট এড়ানোর জন্য পথও বাতলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সে পথটিতেই পা বাড়ানো। তাহলে তাকে আর পাটকেল হজম করার অতি কঠিন চেষ্টায় সময় নষ্ট করতে হবে না।
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে ‘ঢিল’ আর ‘পাটকেল’ প্রসঙ্গ সেরে নেয়া যাক। কোনো কথা নেই বার্তা নেই, জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেরদিন, গত ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে বসেছেন। বলেছেন, ‘ওনাকেও’ গ্রেফতার করা হতে পারে। এরপর থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলের অন্য নেতারাও দাবির আড়ালে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার আবদার জানাতে শুরু করেছেন। এরই জবাবে পাটকেলটি ছুঁড়েছেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ দলীয় জোটের বিশাল জনসভায় তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ, হুমকিতে ভয় পান না তিনি। খালেদা জিয়া বরং প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদেরই উল্টো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, তাদের উচিত যার যার পাসপোর্টে অন্য দেশের ভিসা লাগিয়ে প্রস্তুত থাকা। কারণ, তাকে গ্রেফতার করা হলে জনগণ তো বটেই, আলেম-ওলামারাও রাজপথে নেমে আসবেন। ক্ষমতাসীনরা তখন পালানোরও পথ পাবেন না। সুতরাং অন্যকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের উচিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল এবং গুম-খুন ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। এসব দাবি না মানা হলে একের পর এক হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বিদায় করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন-পরবর্তী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গত বিভিন্ন কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার উচ্চারিত হুঁশিয়ারি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। উস্কানি যদি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে না দেয়া হতো তাহলে হয়তো বিষয়টিকে কথার কথা হিসেবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শুধু উস্কানি দেননি, তার আগে-পরে এমন কিছু কথাও বলেছেন, যেগুলোকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। যেমন জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি হঠাৎ বলে বসেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়- শুধু শেখ হাসিনাকে ছাড়া।’ রাজনৈতিক তাৎপর্যের কারণে শুধু নয়, কথাটার মধ্যে একটু অন্য ধরনের ব্যঙ্গ-তামাশা লুকিয়ে রয়েছে বলেই সাধারণ মানুষও প্রধানমন্ত্রীর ‘সবাইকে কেনা যায়’ কথাটুকু শুনে কৌতুক অনুভব করেছে। একটু বুদ্ধিমানরা এর মধ্যে আবার রহস্যেরও গন্ধ পেয়েছেন। এ নিয়ে রসাত্মক আলোচনাও কম হচ্ছে না। এর কারণ, যে কোনো বিষয়ে অতি চমৎকার বলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখনো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া সহজ নয়। শব্দ চয়ন থেকে মুখের এক্সপ্রেশন বা অভিব্যক্তিসহ অঙ্গভঙ্গি পর্যন্ত কোনো ব্যাপারেই তার সঙ্গে সহজে পেরে উঠতে পারেন না বিরোধীরা। ব্যঙ্গ-তামাশার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে একহাত নেয়ার ও ধোলাই করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তো অতুলনীয় অবস্থানেই রয়েছেন। বলার উপলক্ষ পেলে তিনি সাধারণত দু-একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, কঠিন অনেক সত্যও অবলীলায় উচ্চারণ করে বসেন। তেমন কোনো উপলক্ষেই তিনি কেনাবেচা সংক্রান্ত মন্তব্যটুকু করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। দলের এবং মহাজোটের ঠিক কোন কোন ব্যক্তিকে শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘সবাইকে কেনা যায়’ কথাটা বলেছেন তাদের নামও বেরিয়েছিল পত্রপত্রিকার রিপোর্টে। কথা শুধু সে কারণে ওঠেনি। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনারই অন্য একটি মন্তব্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। পাঠকদেরও নিশ্চয়ই মনে পড়বে, গত বছরের আগস্ট মাসে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জোয়ারের পরই ভাটার টান আসে। এই ভাটা দেখে কেউ নৌকা থেকে লাফ দেবেন না। লাফ দিলে কিন্তু কাদায় পড়তে হবে। একইসঙ্গে দুর্বল ও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে হলেও আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, চিন্তা নেই, নৌকার হালটা আমাদের ঠিকই ধরা আছে। আমরা তীরে ভিড়বো এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবোই। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, জোয়ার-ভাটার দেশ বলে এদেশের পানিতে জোয়ার যেমন আসে তেমনি ভাটাও টান দেয়। ভাটার টানে নৌকা বোধহয় ঠেকে যাচ্ছে মনে করে কেউ যদি তাড়াতাড়ি লাফিয়ে পড়ে তাহলে তাকে কিন্তু কাদায় পড়তে হবে। 
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাটা এবং নৌকা থেকে লাফ দেয়া বিষয়ক বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই এবার ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়’ মন্তব্যটুকুকে মিলিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। বলা হচ্ছে, মুখে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়াসহ বলিষ্ঠতা দেখানোর এবং অনড় অবস্থানে থাকার চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়া যে অকারণে পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেননি সেকথাটাও তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তাকে আরো বুঝতে ও জানতে হয়েছে, নিশ্চিত অশুভ পরিণতি এড়ানোর এবং নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই গোপনে গোপনে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের প্রকৃত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ গড়ে তোলার চেষ্টায় ঘর্মাক্ত হতে শুরু করেছেন। ব্যঙ্গাত্মকভাবে রাজনৈতিক পরিভাষায় এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কেই বলা হয়, তারা ‘লাইন’ দিতে শুরু করেছেন! প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেও সে সত্যটাই বেরিয়ে এসেছে। আশঙ্কারও জানান দিয়েছেন তিনি। ‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া’ যোগ করে অল্প কথায় সারলেও প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন, তার সরকারের প্রতি জনসমর্থন কমে গেছে। এখনো শুধু কমছেই। একই কারণে অনেকে তার দল ও জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। না হলে নৌকা থেকে লাফ দেয়ার ব্যাপারে যেমন সতর্ক করতেন না তিনি, তেমনি বলে বসতেন না, ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়।’
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কথার মারপ্যাঁচে প্রধানমন্ত্রী শুধু আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজদের নয়, একইসঙ্গে আরো অনেককেও খোঁচাটা মেরেছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম এসেছে বিশেষভাবে। শেখ হাসিনাকে ‘নিজের বোন’ মনে করলেও এরশাদ বহুদিন ধরেই সরকারের সমালোচনা তো করছেনই, মহাজোট ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরশাদ একথা পর্যন্ত বলেছেন, তার দল জাতীয় পার্টি যদি মহাজোট থেকে সরে যায় তাহলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হবে এবং আগামী আর কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না। কথা আরো আছে। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী দলের অনেককেই ‘ছেঁটে ফেলার’ ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে কারণে আওয়ামী লীগের ভেতরে শুধু নয়, আওয়ামী মহাজোটেও উথাল-পাতাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দোল খাচ্ছেন বিশেষ করে রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুর মতো বামপন্থী কমরেডরা। বলা হচ্ছে, ভেতরে ভেতরে আরো অনেক কিছুই ঘটছে বলেই প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ কেনা-বেচার কথা বলতে হয়েছে। তাছাড়া ‘ভাটার টানের’ কথাও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছেন। যেমন মন্ত্রীদের সতর্ক করতে গিয়ে মাত্র কিছুদিন আগেও তিনি বলেছেন, সরকারের গায়ে এখন ‘ভাটার টান’ লাগবে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ এজন্য যে, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারলে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য আগত কোনো সরকারের বেলায় সাধারণত পঞ্চম বছরে ‘ভাটার টান’ শুরু হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু এক বছরও শেষ হওয়ার আগেই ‘ভাটার টান’ অনুভব করেছেন! এ এক বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। কারণ, অনেক উপলক্ষেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ২০২১ সালের আগে ক্ষমতা ছাড়ার কোনো ইচ্ছাই নেই তার। বয়স, কর্মক্ষমতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি নিজে না থাকতে পারলে সজীব ওয়াজেদ জয় কিংবা শেখ রেহানার মতো অন্য কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, মাঝখানে এমন কি হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ সংশয় ও হতাশা আচ্ছন্ন করেছে? তিনি বিক্রি হওয়ার এবং ভাটার টানের কথাই বা বলেছেন কেন?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তায় তেমন ভুল নেই। তিনি বরং সঠিকভাবেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছেন। ভুল রয়েছে কেবল তার নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। তিনি যেখানে ‘তীরে’ তথা কথিত ‘অভীষ্ট লক্ষ্যে’ প্রায় পৌঁছে গেছেন বলে বোঝাতে চেয়েছেন সেখানে সত্য হলো, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় তার নৌকা আসলে মাঝ নদীতেই প্রচ- ঢেউয়ের মধ্যে ডুবি-ডুবি অবস্থায় পড়েছে। সেজন্যই যে কোনো সময় শুরু হতে পারে নৌকা থেকে প্রকাশ্যে লাফিয়ে পড়ার পালা। যারা লাফিয়ে পড়বেন অর্থাৎ বিক্রি হয়ে যাবেন বা তলে তলে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে এরশাদের মতো ‘ভাই’ যেমন থাকতে পারেন, তেমনি পারেন ইনু-মেননদের মতো এককালের আওয়ামী লীগ ও মুজিব বিরোধী বহিরাগতরাও। সে কারণে যতো ভয়-ভীতিই প্রধানমন্ত্রী দেখান না কেন এবং যতো শক্ত হাতেই ‘হালটা’ ধরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, ডুবন্ত নৌকায় খুব বেশিজনকে তিনি বেশিদিন আর ধরে রাখতে পারবেন না। স্বল্প সময়ের মধ্যে নৌকা তো ডুববেই, তাকেও ডুবতে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবনায় ঠিক কি রয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে বলা দরকার, যদি সত্যিই ‘মিন’ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে, প্রথমবারের মতো তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক অনুধাবন করতে পেরেছেন। কারণ, রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই তার সরকার উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে পারেনি। গুম-খুন ও দমন-নির্যাতনের মতো বিভিন্ন প্রসঙ্গ বাদ দিয়েও বলা দরকার, সব উপলক্ষেই প্রমাণিত হয়েছে, সিন্ডিকেট করে এবং নানা ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজ লোকজন এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। একযোগে চুটিয়ে চলছে কমিশন বাণিজ্যও। এজন্যই কথায় কথায় ‘রাবিশ’ বলার জন্য ‘বিখ্যাত’ হয়ে ওঠা অর্থমন্ত্রীকেও সম্প্রতি স্বীকার করতে হয়েছে, ‘উই হ্যাভ ফেইলড টোটালি।’ অর্থাৎ তারা সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছেন। ওদিকে ‘চাহিবা মাত্র’ স্টাইলে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দেয়া থেকে শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং রেন্টাল বিদ্যুৎ ও পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক মহাদুর্নীতির মতো এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে কৈফিয়ৎ দিতে হলে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার কথা।
সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়’ কথাটা যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছে। বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। কারণ, একমাত্র ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশই ওই নির্বাচনকে এবং তার মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত বর্তমান সরকারকে বৈধতা ও স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই বরং নতুন এমন একটি জাতীয় নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিয়ে চলেছে, যে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রধান দলগুলো অংশ নিতে পারে। ‘পাটকেল’ ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়াও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে একই পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সেই সাথে নমনীয়তাও যথেষ্টই দেখিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম তত্ত্বাবধায়কই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অন্য যে কোনো নাম দেয়া যেতে পারে, কিন্তু ওই সরকারকে অবশ্যই দলনিরপেক্ষ তথা নির্দলীয় হতে হবে এবং শেখ হাসিনা সে সরকারের প্রধান থাকতে পারবেন না।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার উচিত, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মতো ফ্যাসিস্টসুলভ ঘোষণা দেয়ার পরিবর্তে বাস্তব জগতে ফিরে আসা এবং এই সত্যটুকু অনুধাবন করা যে, বিভিন্ন সংশোধনীসহ তাদের চাপিয়ে দেয়া সংবিধানটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। আমাদেরও ধারণা, বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ও পরামর্শের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার মধ্যেই ক্ষমতাসীনদের জন্য শুভ সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধান নিয়ে বেশি মাতামাতি করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত দেশের প্রকৃত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং অনতিবিলম্বে সংসদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ও নিজে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা। না হলে পরিণতি কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে খালেদা জিয়া তো আগাম ধারণা দিয়ে রেখেছেনই। তাছাড়া জনগণের জন্য ‘এত কিছুই’ যেহেতু তারা করেছেন এবং দেশে যেহেতু উন্নয়নের মহাজোয়ারও বইয়ে দিয়েছেন সেহেতু চ্যালেঞ্জ হিসেবে হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে তাদের নির্বাচন দেয়া উচিত। দেখাই যাক না, নিজেদের কীর্তি ও সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আসলেও কিছুটা সত্য বলেছেন কি না!
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads