মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মন্ত্রীর ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য


হজ্ব হলো ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ্ব পালন করা ফরয। কাজেই কোনও মুসলমান ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ অস্বীকার করতে পারেন না। আমাদের একজন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আমেরিকা গিয়ে পবিত্র হজ্ব সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিশ্ব মুসলিমের অন্তরে চরম আঘাত দিয়েছেন। এছাড়া তিনি হজ্বের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কেও খুব আপত্তিকর কথা বলেছেন। মন্ত্রী তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাষায় বলেন, ‘আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ জাজিরার লোকদের জন্য আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন হজ্বের প্রচলন করে।’ মহানবীর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের নিয়ম রয়েছে। আমাদের মন্ত্রী সাহেব তাও করেননি। এটা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি চরম বেয়াদবি। শুধু তাই নয়, তিনি নবীজী (সাঃ) সম্পর্কে অন্যায় ও অশোভন মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাস যারা পড়েছেন তারা সবাই জানেন কাবায় মানুষ অনেক আগ থেকেই সমবেত হতো এবং তোয়াফ করতো। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের ইতিহাস ও হজ্ব সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চেষ্টা করেছেন।
শুধু মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী নন, আমাদের রাজনীতিকদের অনেকেই মাঝে-মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করেন। বিশেষত বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলাটা যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা মুছে দেবার পর থেকে এ প্রবণতা আরও জোরদার হয়েছে। শুধু মন্ত্রীরাই নন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম নারীদের বোরকা নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষী মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, ব্লগার সবারই যেন ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বেশ তৃপ্তি অনুভব হওয়া শুরু হয়েছে কিছু দিন যাবত। মন্ত্রীর হজ্ব নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য সেই ধারাবাহিকতারই বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করছি। এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছিল তখন খবর আসে আলোচ্য মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অব্যাহতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এমনটি প্রত্যাশাও করছিলাম। কারণ, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মন্ত্রী হিসেবে মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যাচার ও হজ্বের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনি উল্লেখিত বক্তব্য দিতে পারেন না। আর তা স্বাভাবিকও নয়। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে অব্যাহতি দিলেই তার অপরাধ মাফ হয়ে যেতে পারে না। পবিত্র হজ্বের বিরুদ্ধে ও মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য মন্ত্রীর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া খুব জরুরি বলে আমরা মনে করি। কারণ, হজ্বের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলে কেবল আমাদের দেশ ও জাতিকে শুধু আঘাতই করেননি, ইসলামী বিধানেরও অবমাননা করেছেন তিনি। মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়াই তার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত নয়, তাকে আরও জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড় করানো প্রয়োজন।
ব্যক্তিগতভাবে কেউ ইসলাম ও এর আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে শোভন ভাষায় কথা বলতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে কেউ সীমা লংঘন করতে পারেন না। মুসলিমপ্রধান দেশের মন্ত্রিত্বের আসনে থেকে হজ্বের মতো পবিত্র অনুষ্ঠান ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর এবং অশোভন ভাষায় বক্তব্য প্রদান কেউ করতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তিনি হজ্ব¡ ও মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে যে ভাষায় মন্তব্য করেছেন তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য অবমাননাকর। সমগ্র মুসলিম জাতির ধর্মবিশ্বাস বা ঈমানের প্রতি আঘাতকারী। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads