মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি


এখন থেকে প্রায় ৪৭ বছর আগে যখন এসএসসি পাস করে চুঙ্গা মারতে শুরু করেছিলাম, তারপরে বাকি সবটাই চোখের সামনে ঘটেছে। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা দখল, সামরিক শাসন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এক পর্বের ইতিহাস। তখনও এমন মনে হয়নি যে, ঘোর অন্ধকারের ভেতরে আছি। এমনকি ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা সামনে অনন্ত অন্ধকার দেখিনি। মনে হয়েছে, অন্ধকারেই আছি। কিন্তু আলো ফুটতে দেরি নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। এই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ল্যাটিন আমেরিকার বিপ্লবীদের মতো জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-কৃষক-বুদ্ধিজীবী ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে গেছে। কোথায় যুদ্ধের প্রস্তুতি, কোথায় ট্রেনিং ক্যাম্প, সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ নিজেরাই তা খুঁজে বের করে নিয়েছে।
বিপরীত চিত্র মোটেও ছিল না এমন দাবি করি না। আমি এবং আমার দু’বছরের বড় খালাত ভাই একই সঙ্গে সা’দত কলেজে ১৯৬৮ সালে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছিলাম। ঊনসত্তর সাল পর্যন্ত আমি সা’দত কলেজে পড়াশোনা করেছি। পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ঐটুকু বয়সেই ভাল বক্তৃতা দিতে পারতাম। হুলিয়া হয়েছিল। চলে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম। তারপর দু’বছর লস্। ১৯৭০ সালে এসে আবার ঢাকার জগন্নাথ কলেজে এসে ভর্তি হয়েছিলাম। দিনে কাজ করি। রাতে ক্লাস। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত এলো। মে’র কোনো এক সময় আমি আমার খালার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। লক্ষ্য আমার ঐ বড় ভাইকে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করা। রাতভর দুই ভাই তর্ক। রীতিমতো চীৎকার-চেঁচামেচি। তাকে বললাম, কাদের সিদ্দিকী ট্রেনিং ক্যাম্প খুলেছে। বাতেন ভাইরা ট্রেনিং ক্যাম্প করেছে। চলেন, কোনো এক জায়গায় চলে যাই। তিনি বললেন অসম্ভব। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভারতের দাস হয়ে যাবে। তোর যেদিকে খুশি যা। আমি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিবো। মধ্যরাতে খালা এসে কান্নাকাটি করলেন। যেদিকে যাও, দুই ভাই এক সঙ্গে যাও। বড় ভাই কিছুতেই রাজি হলেন না। তিনি পাকিস্তান রক্ষা করার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন। পরদিনই টাঙ্গাঈল গিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিলেন। আমি শেষ রাতের দিকে বারো মাইল হেঁটে বাতেন ভাইদের ক্যাম্পের দিকে রওয়ানা হলাম। তারপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। ঐ গ্রামে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি আর কখনও যাইনি। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর পরই এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমার ঐ ভাই পরীক্ষা দিতে সা’দত কলেজে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তারপর পরীক্ষার হলের সামনেই সাধারণ ছাত্ররা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।
তার এই রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ভুল কি সঠিক ছিল, সেটি আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমি যা বলতে চাইছি তা হলো, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়েও তরুণ সমাজে হয়তো ভিন্নমত ছিল। কিন্তু তাদের সংখ্যা এতই নগণ্য ছিল যে সেটাকে কেউই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেনি। দলে দলে সর্বস্তরের মানুষ জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। তখনও সামনে কেবলই সম্ভাবনা ও আলোর আভা দেখতে পেয়েছি। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করার রেওয়াজ তখনও চালু ছিল। কিন্তু তখনও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু পাঠ্য ছিল, তার বেশির ভাগই ছিল হিন্দু সাহিত্যিকদের লেখা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়-এসব পড়েই আমাদের পাস করতে হয়েছে। সেখানে মনন ছিল, মেধা ছিল, চিন্তাশীলতা ছিল যা ছিল একটি জাতির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব অনন্য সাধারণ লেখককে হেয় করে দেখেনি কেউ কিংবা হেয় করার পরামর্শও দেয়নি। সামনে কেবলই আলোকিত পথ দেখেছি, অন্ধকার দেখিনি।
কিন্তু স্বাধীনতার পর দৃশ্যপটে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হলো। মনন কিংবা মেধা, যোগ্যতা কিংবা দক্ষতা এর চাইতেও বড় হয়ে দেখা দিল কে অনন্ত মনে মনে হলেও পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, আর কে করেনি তার মধ্যে ভেদ রেখা। এটি করা হলো জাতির মেধা ও মননের ক্ষেত্রে। যারা নীতিগতভাবে পাকিস্তানের অস্তিত্বের সমর্থক ছিলেন তারা গণহারে রাজাকার বলে চিহ্নিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত হতে থাকলেন। এরা যুদ্ধ করেননি কিংবা রাজাকার বাহিনীতেও যোগ দেননি। গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তারাও শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই মনে করেছিলেন যে, পাকিস্তান ছাড়া এই উপমহাদেশে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। দোষ সেটুকুই ছিল কেন তারা তা মনে করবে? কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, এই ঘটনাটি ঘটল শুধুমাত্র মেধাবী ও মননশীলদের ক্ষেত্রে। তাদের দূরে ঠেলে দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সহযোগী আমলাদের কদর করা হলো বহুগুণ বেশি। সে কথাই বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বার বার বলছেন। তিনি বলছেন, যে রাজাকার হয়েছিল তার চাইতে বেশি অপরাধী যে ডিসি, এসপি রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতা করতে পাকিস্তান বাহিনীকে সমর্থন করেছিল। যেমন: ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরকম উদাহরণ শ’য়ে শ’য়ে দেওয়া যাবে। মনন বন্দী হলো চাতুর্য ও শঠতার জয় হলো। বাংলাদেশে অন্ধকার যুগের সূচনা তখন থেকেই শুরু হয়েছে।
১৯৭২-’৭৫ শেখ মুজিবের শাসনকাল এদেশে এক ভয়াবহ অন্ধকার যুগের সূচনা করেছিল। দুর্নীতি, লুণ্ঠন, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি তখন জাতীয় নীতিতে পরিণত হয়েছিল। তারপর একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত দলীয়করণের নিগঢ়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। ভিন্নমত স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য হেন কোনো পন্থা নেই যা অবলম্বন করা হয়নি। আর অপরিমেয় লুণ্ঠনের ফলে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম, নিষ্ঠুর নির্যাতন। একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল ভিন্নমতের সংবাদপত্রগুলোকে। সম্পাদকদের গ্রেফতার করা হচ্ছিল। শুধু সম্পাদক নয়, সাধারণ সাংবাদিকরাও এই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
এরকম একটা প্রেক্ষাপটে আরও ভয়াবহ অন্ধকার যুগের সূচনা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যে গণতন্ত্রের জন্য, মত প্রকাশের যে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানকালে শেখ মুজিবুর রহমান ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন, সেই গণতন্ত্রের কবর রচনা করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে তিনি গঠন করেছিলেন “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)”। সে গঠন প্রণালী এমন ছিল যে, তাতে স্বাভাবিক পথে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার কোনো পথ ছিল না। এ নিয়ে উদ্বেগের অন্ত ছিল না তাজউদ্দীন আহমদের। তিনি শেখ মুজিবকে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে, এই বাকশাল ব্যবস্থায় শেখ মুজিব যেমন শেষ হয়ে যাবেন, তেমনি শেষ হয়ে যাবেন তাজউদ্দীন আহমদরাও। তিনি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ এও বলেছিলেন যে, এই ব্যবস্থা হবে খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু ক্ষমতার মদমত্ততায় সেটি উপেক্ষা করেছিলেন শেখ মুজিব। এমনকি নিজ দল আওয়ামী লীগকেও তিনি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন। আর তারপর ভিন্নমত চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ যে, একটি সরকারের জন্য কতটা বিপজ্জনক সেটি উপলব্ধি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কেননা সংবাদপত্রের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হলে সরকার যে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সে বোধও তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার চারদিকে ছিল চাটুকারেরা যারা জো হুকুম, ঠিক-ঠিক-ঠিক বলে শেখ মুজিবকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। তার পাশে তখন এমন কেউ ছিল না যে সাহস করে বলতে পারে রাজা আপনি যে ন্যাংটা। সেই কাজটিই সংবাদপত্র করতে পারতো। অর্থাৎ রাজা যে ন্যাংটা সেটি বলবার চোখ ও অধিকারও তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন। দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ, সন্ত্রাস, খুন, গুম, ধর্ষণ, নিরাপত্তাহীনতা, প্রতিপক্ষ দলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, শেখ মুজিবের কাছে সে খবর কেউ কখনও দিতে পারে না। ফলে তিনি রক্তকরবীর আত্মবিমোহিত রাজার মতো সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যই সত্য হয়েছিল। স্বাভাবিক পথে তার আর বের হবার কোনো উপায় ছিল না।
সে একটা সময় আমরা চরম অন্ধকার দেখেছিলাম। সারা দেশে রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। কী হবে, কী করি, কোথায় যাই, কোথায় নিরাপদ আশ্রয়, বস্ত্র কিংবা খাদ্য। আহা! দুর্ভিক্ষে রাজধানীসহ শহরে বন্দরে মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। এর কোনো কিছুই শেখ মুজিবকে স্পর্শ করেনি। স্পর্শ করার পরিবেশ তিনি নিজেই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে সাপ্তাহিক হলিডে’র সম্পাদক এনায়েতউল্ল্যাহ খান তার “শেখ মুজিবের উত্থান ও পতন” শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকা- একদিকে নাটকীয়তায় চমকপ্রদ, অন্যদিকে দ্বৈততায় খ-িত। তার ক্ষমতারোহনের অভিযাত্রা বিগত এক দশকে অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছিল। অগণিত আত্মদান ও একঝুড়ি রূপকথা মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল তার স্বর্গের সিঁড়ি। ব্যক্তিত্বের অপরিমিত শৌর্য ও অনুকূল ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর রাজ-কাহিনী। তিনি ছিলেন, রূপকের রাজা। সত্যিকারের মুকুটের ভার তাই তিনি বইতে পারেননি। বরং মুকুটের ভারে তিনি ন্যূব্জ হয়েছেন। রক্তকরবীর আত্মবিমোহিত রাজার মতো দুঃশাসনের অচলায়তন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যাঁরা প্রাণ দিলো, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে পদাঘাত করে নির্দ্বিধায় অস্ত্র তুলে নিলো, যাঁরা দেশপ্রেমের সুমহান অঙ্গীকারে রক্ত দিয়ে মাতৃভূমির ঋণ শোধ করলো, তাদেরই রক্ত-মাংস-হাড়ের বিনিময়ে  তিনি গড়তে চেয়েছিলেন এক অলৌকিক ক্ষমতা দেউল যেখানে দেবতা একক, কিন্তু পূজারী নেই। পরদেশী পটুয়ার হাতে সৃষ্টি হলো পুতুলের রাজা শেখ মুজিবুর রহমান। আমার এ কথা নিষ্করুণ জানি কিন্তু ইতিহাস আরও বেশি নির্মম। এবং তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ ১৫ আগস্ট। হঠাৎ দ্রিম দ্রিম শব্দে বিদীর্ণ হলো নিস্তব্ধ প্রভাত। একঝাঁক আগ্নেয় শিসে লক্ষ-কোটি মানুষের সীমাহীন রোষের আকস্মিক বিস্ফোরণের মতো নিপাত করলো পুতুলের রাজত্ব।”(ঈদসংখ্যা বিচিত্রা ১৯৭৫)।
এখন তেমনই এক অন্ধকার যুগের সূচনা হয়েছে। অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতন, লুণ্ঠনের মাত্রা শেখ মুজিবের শাসনকালকেও ছাড়িয়ে গেছে। একই কায়দায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ সরকার নিজের চোখে নিজেই লৌহ শলাকা ঢুকিয়ে অন্ধ হবার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্ধ হলে প্রলয় কি বন্ধ থাকবে?
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads