মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

সমুদ্রসীমা রায়ে কার লাভ কতটুকু


ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার রায় হয়ে গেল। এ রায়ে কোন দেশের কতটা লাভ কতটা ক্ষতি তার বিস্তারিত ও গভীর বিশ্লেষণ করতে আরো কিছু সময় লেগে যেতে পারে। এ রায়ে একটি লাভের ব্যাপারে কারো কোনো বিতর্ক নেই। সেটি হলো, এর মাধ্যমে সমুদ্র অঞ্চলে বিতর্কহীনভাবে একটি অংশে বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলো। এর আগে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এবার ভারতের সাথে সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তি হলো। এখন বাংলাদেশের জন্য সমুদ্রাঞ্চল থেকে সম্পদ আহরণের পরিকল্পনা নিতে ও তা বাস্তবায়ন করতে আর কোনো বিপত্তি 

থাকবে না। 

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি বাংলাদেশই নিয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আলোচনা শুরু করে। এতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলে ২০০৯ সালের জুলাই, ২০১০ সালের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে মিয়ানমারের সাথে তিন দফা বৈঠক করে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের মার্চ এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের সাথেও সমুদ্রসীমা নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের অনন্য ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমলে নিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের দাবি জানায়। অন্য দিকে মিয়ানমার ও ভারত বাংলাদেশের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণের পে মত দেয়।

সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ দরপত্র আহ্বান করার পর প্রতিবেশী দেশগুলো তাতে আপত্তি জানালে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস ব্লকের ১০টি ভারত এবং ১৭টি মিয়ানমার তার নিজের বলে দাবি করে। এর পরই সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৃতীয় পরে মাধ্যমে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেয়। জাতিসঙ্ঘ সমুদ্র আইন (আনকজ) ১৯৮২ অনুযায়ী সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে সালিশি নোটিশ পাঠায়। মিয়ানমার ও ভারত ওই নোটিশে ইতিবাচক সাড়া দেয়। পাশাপাশি আলোচনার দরজাও খোলা রেখেছিল দেশগুলো। কিন্তু আলোচনায় বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি করতে হয় শেষ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির ল্েয সমুদ্র আইনবিষয়ক জাতিসঙ্ঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২৮৭ ও এনেক্স আট, অনুচ্ছেদ এক অনুযায়ী স্থায়ী সালিশি আদালতের শরণাপন্ন হয়। আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের স্বরণাপন্ন না হলে বিষয়টি অনিষ্পন্নই থেকে যেত অথবা ভারত নিজের ক্ষমতার জোরেই নির্ণয় করে রাখত সমুদ্রসীমা। 

সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভারত ও মিয়ানমার এক হয়েই য্ুিক্ততর্ক উপস্থাপন করে বাংলাদেশের ব্যাপারে। মিয়ানমার যে য্ুিক্ত ও ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সমুদ্রসীমা দাবি করেছিল, ভারতের দাবির ভিত্তিও ছিল অনেকটা একই। ইকোডিস্টেন্স বা সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিল এই দুই প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ বলেছে, এ অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে জাতিসঙ্ঘের বিকল্প হিসেবে স্বীকৃত যে ইকুইটি বা ন্যায়বিচারভিত্তিক সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ব্যবস্থা রয়েছে, তার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে হবে। মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত কোনো পক্ষের যুক্তি এককভাবে গ্রহণ না করলেও বিরোধ নিষ্পত্তির ভিত্তি হিসেবে ন্যায়বিচারভিত্তিক প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করেছে। আর বাস্তবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যে সমুদ্রসীমা দাবি করেছিল, অনেকটা তার মাঝামাঝি একটি রেখা টেনে সীমা নির্ধারণ করে আদালত। এ নিয়ে মিয়ানমার কোনো উল্লাস না দেখালেও বাংলাদেশে সরকার সমুদ্র জয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা করে তোলে দেশকে। দুই দেশের দাবির মাঝামাঝি একটি পয়েন্টে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি করার মধ্যে আসলে সমুদ্র জয়ের কিছু ছিল না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত সমুদ্র জয়ের উল্লাস বেশি দিন থাকেনি। 

মিয়ানমারের তুলনায় ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধের ক্ষেত্রটা ছিল বেশি জটিল। ভারতের সাথে বিরোধের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় যুক্ত ছিল। এর একটি ছিল দণি তালপট্টি বা নিউ মুর দ্বীপের মালিকানা নির্ধারণ। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ১২ নটিক্যাল মাইলের যে আঞ্চলিক সমুদ্রসীমানা, সেটি নির্ধারণ। তৃতীয়টি হলো আঞ্চলিক ১২ নটিক্যাল মাইল পানিসীমাসহ ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক জোন নির্ধারণ।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নিষ্পত্তি। ১৯৭০ সালে ভোলায় জলোচ্ছ্বাসের পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত নদী হাড়িয়াভাঙ্গার সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো দূরে এই দ্বীপ জেগে ওঠে। ১৯৭৪ সালে এক মার্কিন স্যাটেলাইটে ২৫০০ বর্গমিটারের এই দ্বীপের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। বাংলাদেশের সাতীরা জেলা ও ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার মাঝামাঝি সমুদ্র এলাকায় এই দ্বীপের অবস্থান। ১৯৮১ সালে ভারতের সীমান্তরীবাহিনী বিএসএফ এই দ্বীপে ভারতের পতাকা ওড়ায় এবং একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। তারপর সেখানে ভারতীয় নৌবাহিনীর গানশিপ নিয়মিত চলাচল করে। ২০১০ সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুগাতা হাজরা উল্লেখ করেন, জলবায়ুু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এই দ্বীপের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সমুদ্রের স্রোতের নিচে হারিয়ে গেছে দ্বীপটি। 

আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত এই দ্বীপের অস্তিত্ব পরীক্ষার ব্যাপারে সরেজমিন পরিদর্শনে যায়। একাধিক স্যাটেলাইট ছবি নেয় এ অঞ্চলের। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আদালত একমত হয় যে দক্ষিণ তালপট্টি বা নিউ মুর দ্বীপের অস্তিত্ব এখন আর নেই। ফলে এই দ্বীপের মালিকানা নির্ধারণের বিষয়টি সালিশি আদালতের বিবেচনায় আসেনি। দ্বীপটির অস্তিত্ব আছে ধরে নিয়ে আদালত রায় দিলে, সেটি দুই পক্ষের যেকোনো দিকে যেতে পারত। এতে বাংলাদেশের মালিকানা স্বীকৃত হলে তাতে বাংলাদেশ আরো বেশি দাবিকৃত সমুদ্র অঞ্চলের মালিকানা পেতে পারত। আবার এটি ভারতের বলে প্রতিষ্ঠিত হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সমুদ্র এলাকার মালিকানা বাংলাদেশ হারাতে পারত। আদালত এই দ্বীপকে অস্তিত্বহীন ধরে রায় দেয়ার ফলে, অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলো। তবে যে স্থান থেকে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি দৃশ্যমান হয়েছিল, সেই এলাকাটি ভারতের সমুদ্রসীমায় পড়েছে। এই দিকটি বিবেচনায় নেয়া হলে দ্বীপটির ওপর ভারতীয় মালিকানার যে দাবি ছিল, সেটি নৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এটিকে বিদ্যমান দ্বীপ হিসেবে ভারতীয় মালিকানায় দেয়া হলে এখন সমুদ্রসীমারেখা যেভাবে টানা হয়েছে, সেভাবে থাকত না। অবশ্য আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হওয়ায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানার বিষয়টি দুই দেশের মধ্যকার ইস্যু হিসেবে শেষ হয়ে গেল। এতে আদালতে যুক্তি প্রদর্শনের সময় ১৯৪৭ সালে ভারত ও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করে রেডকিফ যে রেখা টানেন, তাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক দেখা গিয়েছিল, সেটি তালপট্টির মালিকানা নির্ধারণে প্রয়োগের আর প্রয়োজন হয়নি। 

তবে আদালত সমুদ্রসীমার যে রেখা টেনেছেন তার সাথে রেডকিফের যে ম্যাপটি বাংলাদেশকে যেখানে উপস্থাপন করেছিল তার সাথে মিল রয়েছে। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোতকে পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্তরেখা হিসেবে উল্লেখ করেন রেডকিফ। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার নিচে রেডকিফের দুই ধরনের রেখা টানা মানচিত্র মামলার শুনানির সময় বাংলাদেশ ও ভারত আদালতে উপস্থাপন করে। রেডকিফের স্বাক্ষর সংবলিত যে ম্যাপটি ভারত উপস্থাপন করে তাতে দেখা যায়, হাড়িয়াভাঙ্গার মোহনা থেকে রেখাটি ডান দিকে বাঁক নিয়ে নেমে গেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ লন্ডন মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ করে যে ম্যাপটি আদালতে উপস্থাপন করে, তাতে দেখা যায় মোহনা থেকে আড়াআড়িভাবে নিচে নেমে গেছে সমুদ্রসীমার রেখাটি। এর ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আদালতে যে দাবিনামা পেশ করেছিল, তাতে স্থলসীমান্ত বিন্দু থেকে ১৮০ ডিগ্রি আড়াআড়িভাবে নিচে নামিয়ে এনেছিল সীমান্ত রেখাটি। অন্য দিকে ভারত যে দাবিনামা পেশ করে তাতে রেখাটি ১৬২ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে নিচের দিকে নেমে যায়। আদালত যে রায় এ মামলায় দিয়েছে, তাতে সীমানা রেখাটি ১৭৭.৫ ডিগ্রি আড়াআড়িভাবে নিচে নেমেছে। ফলে ভারত দাবিকৃত সমুদ্রসীমার পেয়েছে ২৪ শতাংশ আর বাংলাদেশ পেয়েছে ৭৬ শতাংশ। এ পয়েন্টটিতে আদালতের ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিচারপতি ড. পেমারাজু শ্রীনিভাসা রাও ভিন্ন মত প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, এতে ন্যায্যতার নীতির প্রতিফলন হয়নি। বেঞ্চের বাকি চার বিচারপতির মধ্যে সভাপতি বিচারপতি রুডিগার ওয়ালফ্রাম, বিচারপতি জিন পিয়েরি কোট, বিচারপতি থমাস এ মেনসাহ, প্রফেসর ইভান শিরের তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত হননি। 

এই রায়ের ফলে দীর্ঘ দিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ ও আইনি সমাধান হয়েছে, নিশ্চিত হয়েছে দুই দেশের নতুন সমুদ্রসীমা। রায়টি বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের পর ভারতের সাথেও নিশ্চিত হলো সমুদ্র অঞ্চলের ন্যায্য অধিকার। এখন বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদ আহরণ করতে পারবে। বিরোধপূর্ণ এলাকার গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকগুলো পুনর্বিন্যাস করে অনুসন্ধানকার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে পারবে। 

এ রায়ে কোন পক্ষ বেশি লাভবান হয়েছে সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিতর্কিত অঞ্চলে ভারতের স্বল্পমালিকানাপ্রাপ্তির বিষয়টি তাদের খুশি করার কথা নয়। বিচারপতি রাওয়ের এই ইস্যুতে ভিন্ন মত পোষণে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভারতে সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানানো না হলেও সেখানকার পত্রপত্রিকার পর্যালোচনায় ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে রায়টি গেছে বলেই মনে হয়। মিয়ানমারের চেয়ে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে আনুপাতিকভাবে বেশি এলাকার মালিকানা পাওয়ার পরও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের উল্লাস প্রকাশ না করাটা অতীতের ভুল বুঝে শিক্ষা নেয়া বলে মনে হয়। উল্লাস করা হলে প্রতিবেশী দেশের সরকার আরো বেশি বিব্রত হতে পারত। আর এতে বাংলাদেশের সরকার মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার ফলে দিল্লির ক্ষোভ অপ্রকাশ্যে হলেও বাড়তে পারত। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল বঙ্গোপসাগরের ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে। এ বিরোধের মূল বিষয় হলো, দুই দেশের পানিসীমা শুরু হবে কোথা থেকে তা নির্ধারণ করে সেটি কিভাবে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত অগ্রসর হবে সেটি নিয়ে। ভূমিরেখার মূল বিন্দু থেকে সমুদ্রে রেখা টানার পদ্ধতি নিয়েও জটিলতা ছিল। ভারতের যুক্তি ছিল, সমদূরত্বের ভিত্তিতে রেখা টানতে হবে। বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে রেখা টানার পে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশের উপকূলীয় রেখা অবতল আকৃতির হওয়ায় বাংলাদেশ ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিষয়টি নির্ধারণে যুক্তি উপস্থাপন করে। এর আগে ২০১২ সালে সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারের সাথে মামলায় ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। এবার ভারতের সাথেও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের ৭৬ শতাংশ বাংলাদেশ পেল। 

মিয়ানমার ও ভারত সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা দাবি করায় বাংলাদেশের সাগর এলাকা সীমিত হয়ে পড়েছিল মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইলে। মিয়ানমারের সাথে মামলার রায়ে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত হয়। ভারতের সাথে মামলায় অধিকারের এই অঞ্চল অরো বৃদ্ধি পেল। 

বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দ্বিপীয় আলোচনার বাইরে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতকে নিতে পারাটা বাংলাদেশের জন্য একটি সাফল্য ছিল। ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আদালতে না গেলে সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ভারতের জন্য তৈরি হতো না। এখন পছন্দ হোক বা না হোক ভারতকে আদালতের সালিশি রায়টি মেনে নিতে হয়েছে। 

মাসুম খলিলী


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads