সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০১৪

জার্মানিতে সরকারি বিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষা অনুমোদন


বিপুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দেশ বাংলাদেশে কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল যখন ইসলামকে চরমপন্থী ও জঙ্গিবাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত দেখাতে পরিকল্পিত প্রয়াস চালাচ্ছে, তখন ইউরোপের অন্যতম অগ্রণী এবং খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশ জার্মানি ইসলামের শান্তি ও সহিষ্ণুতার দিকগুলো তুলে ধরা জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রথম পদক্ষেপে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিক শ্রেণী পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের ইসলামি পাঠ্যক্রমে শিক্ষা গ্রহণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জার্মানি এড্স্ ইসলাম ইন স্কুলস’ (জার্মানি বিদ্যালয়ে ইসলামকে সংযোজিত করেছে) এই হেডলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপ হচ্ছে  বিদ্যালয়ে প্রাথমিক প্রথম শ্রেণী থেকেই শিশু-কিশোর ছাত্রছাত্রীদের ইসলামি পাঠদানের মাধ্যমে ইসলামে যে সহনশীলতা এবং গ্রহণশীলতার বাণী রয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের তাতে শিতি করে তোলা। জার্মান কর্র্তৃপ মনে করে, ইসলামি পাঠদানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে সরকার যে সঙ্কেত দিচ্ছে তাতে  ইসলামের চরমপন্থী ভাবধারাকে যারা প্রচার ও বিস্তার করতে চায় তাদের অপপ্রয়াস প্রতিরোধ করা যাবে। 

জার্মানির অন্যতম অঙ্গরাজ্য হেসএর সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দশক ধরে ইসলাম এ রাজ্যে অবহেলিত থাকার পর এখানকার মুসলিম অধিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মান সমাজের সাথে অধিকতর সংযুক্ত ও সমন্বিত করার জন্য সরকারের অনেক দায়িত্ব আছে। ক্রমবর্ধমান এ দায়িত্ববোধ হতে সরকারি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শ্রেণীতে ইসলামি শিক্ষা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।  

হেস স্টেটের শিামন্ত্রী নিকোলা বিয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি, এখন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এত বছর ধরে অধিবাসীদের এক অংশকে (মুসলমানদের) বিযুক্ত রেখে আমরা ভুল করেছি।যেসব রাজনৈতিক নেতা, অধ্যাপক ও শিক স্কুলে ইসলামি শিা প্রবর্তনের জন্য সোচ্চার ছিলেন, শিামন্ত্রী নিকোলা বিয়ার তাদের অন্যতম। কর্মকর্তারা বলছেন, ইসলামী পাঠদান কর্মসূচি আরো আগে চালু করতে পারলে ভালো হতো। জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ মুসলিমদের জার্মান সমাজের সাথে সুসংহত করলে ইসলামে চরমপন্থী চিন্তাধারার বিস্তার ও প্রভাবকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 

নিকোলা বিয়ার আরো বলেন, ‘(মুসলিমদের ব্যাপারে) জার্মানরা এখন এটা স্বীকার করে যে, ‘আমরা এখানে একত্রে রয়েছি, একত্রে কাজ করি এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদের একত্রে শিাদান করি।ইসলামের  বেশি কট্টর দিকগুলোকে তুলে ধরার যে একটি ব্যাপক অপপ্রয়াস চলছে, মূলত  তাকে প্রতিরোধ করার জন্যই হেস সরকার প্রাথমিক শ্রেণীতে ইসলামি শিাদান চালু করেছে। 

তবে পর্যবেক মহলের ধারণা, জার্মানির মুসলিমরা যে সমআচরণ পাওয়ার আকাক্সা করে সরকারি স্কুলে ইসলামি পাঠদান শুরু করার মাধ্যমে তার কিছু চাহিদা পূরণ হলেও জার্মানির ফেডারেল পর্যায়ে এবং আইন প্রণয়ন মহলে কাজটি অত সোজা হবে না।

জার্মানির ইসলামিক ফেডারেশনের সভাপতি ও আইনবিদ ফাজিল আলতিন বলেন, রাজধানী বার্লিনের প্রশাসন ও মুসলিম অধিবাসীরা স্কুলে ইসলামি পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে কোর্টে মামলা করে অযথা ২০ বছর সময় নষ্ট করেছে। শেষ পর্যন্ত এই মামলার রায় মুসলিমদের পে গেলেও জার্মান ফেডারেশন সরকারি স্কুলে সপ্তাহে মাত্র ৪০ মিনিট ইসলামি পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, মুসলিম ও স্থানীয় অধিবাসী জার্মানদের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের অতিরিক্ত, আরো কিছু প্রয়াস চালাতে হবে। 

 বার্লিনের জার্মান অধ্যাপিকা এবং শিক্ষাবিদ সাবিন আচুর---যার স্বামী মরক্কোর একজন মুসলিম---বলেন যে, ‘এমন কি যেসব ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া আইনের অনেক বিধান জার্মানদের সামাজিক অনুশাসনের সাথে মিলে যায়, সেসব ক্ষেত্রে ও জার্মানরা সেসব বিধান প্রয়োগ করতে দ্বিধা করে।তিনি বলেন, ‘এর কারণ, শরিয়া আইনকে জার্মানরা খুব বেশি প্রাচীন সংস্কারভিত্তিক এবং এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের সহজাত জীবন বিধানের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন মনে করে।’ 

 একটি প্রাথমিক শ্রেণীতে শিক তিমুর কমলু সম্প্রতি ১৯ জন ছয় বছর বয়সের ছাত্রছাত্রীকে একটি উলের বল থেকে এক এক টুকরা করে উলের সুতা কেটে নিতে বলেন। এরা আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, মরক্কো ও তুরস্ক থেকে আগত মুসলিম মা-বাবার সন্তান-সন্ততি। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উলের সুতা থেকে আঁশগুলো খুলে দেখতে বললেন কিভাবে আঁশগুলো পরস্পরকে জড়িয়ে একটি উলের সুতায় পরিণত হয়েছে। তিনি বললেন, ‘আমরা এই আঁশগুলোর মতো পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একটি উলের সুতায় আবদ্ধ হয়েছি।তিনি বলেন, ‘তোমাদের মা-বাবারা বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছেন। আমাদের শিতি হতে হবে এমনভাবে লেখাপড়ার মাধ্যমে, যাতে জার্মানির এবং ইসলামের সংস্কৃতির গভীর শিকড় থেকে আমরা আমাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারি।’ 

মঈনুল আলম


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads