রবিবার, ২০ জুলাই, ২০১৪

এভাবে সমাজচ্যুত করা যায় না


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণধর্ষণে নিহত এক স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বললে দশ জুতোপেটা এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ওই পরিবারকে। মহল্লার মসজিদে নামায পড়া নিষিদ্ধ তাদের। পুকুরেও গোসল করা যাবে না। আড়ালে-আবডালে নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাটানিসার গ্রামে স্কুলছাত্রী তানিয়া আক্তারের পরিবারের ওপর এমনই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন স্থানীয় সমাজপতিরা। ১৯ জুলাই এমন খবর মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর রাতে কাটানিসার গ্রামের আনসার সদস্য আবদুর বারেকের কন্যা তানিয়া আক্তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরের দিন ২০ নবেম্বর বাড়ি থেকে ৪০০ গজ দূরে পূর্বদিকের খালে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। গণধর্ষণ শেষে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অমানবিক নির্যাতনের আলামত পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা আবদুল বারেক বাদী হয়ে সড়াইল থানায় মামলা করে। নিহতের পরিবার বলছে, সমাবেশ ডেকে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছে। আর গ্রামের মাতব্বররা বলছেন, মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করায় নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই বাদীপক্ষের লোকজনের ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গণধর্ষণে নিহত এক স্কুলছাত্রীর পিতা সুবিচারের আশায় বাদী হয়ে মামলা করায় এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিস্মিত হতে হয়। যে মাতব্বররা নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন তারা বর্তমান থাকতে সেই সমাজে এমন গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে কেমন করে? অপরাধীরা এতটা নির্ভয় হলো কাদের প্রশ্রয় পেয়ে? মাতব্বর তথা সমাজপতিরা সমাজের নিরীহ লোকদের ওপর দাপট দেখাবেন কিন্তু সন্ত্রাসী কিংবা গণধর্ষণকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তা মেনে নেয়া যায় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কিংবা সুবিচারের আশায় মামলা দায়ের করা খুবই সঙ্গত কাজ। আর মামলা দায়েরের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার কিংবা কোনো পদক্ষেপ নিলে তার দায়দায়িত্ব তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তাবে। এ কারণে মজলুম পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হবে কেন? সমাজপতিরা নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে কারো সাথে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, এমনকি পুকুরে গোসল করার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সব চাইতে অবাক ব্যাপার হলো, মহল্লার মসজিদে নামায পড়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই পরিবারের সদস্যদের জন্য। মসজিদ তো আল্লাহর ঘর। কোনো মানুষকে মসজিদে নামায পড়তে যেতে বাধা দিতে পারেন না কোনো মাতব্বর। ইসলামবিরোধী এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে মাতব্বররা তাদের কাছে সুবিচার আশা করা যায় না। আমরা মনে করি, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব। সমাজকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে গণধর্ষণকারী নরপশুদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। আর কোন্্ আইন বলে মাতব্বররা নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করলো, পুকুরে গোসল করা নিষিদ্ধ করলো, মসজিদে নামায পড়ার অধিকার কেড়ে নিল, তাও তদারক করে দেখা প্রয়োজন। আর মজলুমের পক্ষে না দাঁড়িয়ে জালেমদের প্রশ্রয় দিয়ে যায় যেসব মাতব্বর, সমাজে তাদের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সমাজে বসবাসকারী নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে। নাগরিকরা যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হন তাহলে আগামীতে তাদের কারো পরিবারের মেয়ে যে ভিকটিম হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে কি? আসলে সমাজকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে বিবেকবান নেতা প্রয়োজন, প্রয়োজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। নাগরিকদেরও তাদের কর্তব্যের কথা ভুলে গেলে চলে না।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads