শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ধাবমান


বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ওয়াশিংটনের উড্র উইলসন সেন্টারে সিনিয়র স্কলার উইলিয়াম বি মাইলারের একটি লেখা গত ৭ জুলাই দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, সম-রাজনৈতিক অধিকারের প্রবল আকাক্সা থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল বাঙালিরা; কিন্তু গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একদলীয় সরকারের উত্থান ঘটেছে। এর মাধ্যমে সে সম-রাজনৈতিক অধিকার তারা হারিয়ে ফেলেছে। যদি এই একদলীয় সরকারব্যবস্থা একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তবে বাঙালি সে অধিকার স্থায়ীভাবে হারাতে পারে। অনেক দেশের মধ্যে যারা কর্তৃত্বপরায়ণতায় ফিরে গেছে, তাদের খুব কমসংখ্যকই আবার শুরুর জায়গায় ফিরতে পেরেছে। 

কর্তৃত্বপরায়ণতা নিয়ে উইলিয়াম বি মাইলাম আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন। তার আশঙ্কা, এতে রাষ্ট্র-জনগণ যা হারাবে, সেটি ফিরে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। আসলেই ইতোমধ্যে তা দুঃসাধ্যের দিকে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। জনগণের প্রত্যাখ্যাত ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা এখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারা মুখে যতই গলাবাজি করুন না কেন, বিচ্ছিন্ন উল্কাপিণ্ডের মতো ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে পথে এরা অগ্রসর হচ্ছেন, সে পথ যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথ এটি অনুধাবন করার মতো যোগ্যতা ও মেধা এ সরকারের ভেতরে কারো আছে বলে মনে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করা। এর পরিণতি কী দাঁড়াবে, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কি সঙ্কটে পড়বে, সেটি ভাবার অবসর তাদের নেই। বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রহীন এক দুঃশাসনের তাল। 

ভারতের নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার গবেষণাপত্র রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ুধায় লিখেছিলেন, গণতন্ত্রের অভাব মানবসৃষ্ট কী ভয়াবহ বিপদ যে ডেকে আনতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ। ওই দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের পাঁচ লাখ লোক না খেয়ে মারা গিয়েছিলেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকত ুধার্ত মানুষের লাশ। তাদের দাফন করারও অবস্থা ছিল না। পচাগলা লাশের দুর্গন্ধে ও প্রভাবে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছিল মহামারী। তখন যারা ক্ষমতায় ছিল (শেখ মুজিবুর রহমান সরকার) তারা মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রতি তাদের যে দায়িত্ব আছে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার ছিল। একই সাথে তারা দেশব্যাপী সৃষ্টি করেছিল ত্রাসের রাজত্ব। রাজনৈতিক বিরোধীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যখন যাকে খুশি গ্রেফতার করা হতো। বিচারপ্রক্রিয়া ছিল গোপন। আটক রাখার ব্যবস্থাও ছিল ভয়াবহ। 

এসব অপকর্ম সম্পাদনের জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তার পেটোয়া রক্ষীবাহিনীর পাশাপাশি গড়ে তুলেছিল বেসরকারি লালবাহিনী। তাদের কাজই ছিল রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা কিংবা তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য করা। এরও লক্ষ্য ছিল এক ব্যক্তি ও এক দলের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আর এই একদলীয় শাসনের জাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট ছিল গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগ। স্বাধীনভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করার ব্যবস্থা লুপ্ত হয়েছিল। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। একদলীয় আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নেয়া হয়েছিল উৎপাদনব্যবস্থা। দেশ হয়ে পড়েছিল ক্ষমতাসীনদের নিজস্ব সম্পত্তি। 

ক্ষমা নাহি মনে মোর

তৎকালীন সরকারের অপশাসন আর দুর্ভিক্ষের ক্ষত মানুষের মন থেকে পরবর্তী ২০ বছরেও মুছে যায়নি। সম্ভবত এখনো নয়। সে সময় সাধারণ কৃষক বেঁচে থাকার তাগিদে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন জমিজমা, সম্পদ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওইসব সম্পদ পূর্বতন মালিকদের ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। শেখ হাসিনা সম্ভবত সেটি উপলব্ধি করেছিলেন। আর তাই মাথায় হিজাব পরে, ফুলহাতা জামা গায়ে দিয়ে, হাতে তসবিহ নিয়ে জায়নামাজে বসে, মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন এই বলে যে, শেখ মুজিবের শাসনকালে তাদের ওপর যে অত্যাচার, অবিচার হয়েছে, সেগুলোর জন্য তারা ক্ষমাপ্রার্থী। মানুষ যেন তাদের ক্ষমা করে একবারের জন্য সরকার পরিচালনার সুযোগ দেয়। তিনি ওয়াদা করেছিলেন যে, ওই সময়ের মতো পরিস্থিতির আর কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না। সাধারণ মানুষ সম্ভবত তাকে ক্ষমাসুন্দর চোখেই দেখেছিলেন। সেভাবেই তিনি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে এক আঁতাতের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবার ক্ষমতায় আসীন হন এবং ১৯৭২-৭৫-এর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে শুরু করেন। 

পরবর্তী বছরগুলোতে অন্তরে-বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো পরিবর্তনই ঘটেনি। ক্ষমতার শীর্ষে যারা আরোহণ করেন, তারা ১৯৭২-৭৫-এর মতোই, একই কার্যধারা পরিচালনা শুরু করেন। নারায়ণগঞ্জের নৃশংস ৭ হত্যাকাণ্ডএবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে পুড়িয়ে কয়লা করা, আমাদের ৭২-৭৫-এর দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যেন অপরাধের সেসব ভয়াবহ দিন আবার হাজির হচ্ছে। 

এর পরবর্তী ৫ বছরে বাংলাদেশ তেমনি হতাশাজনকভাবেই অসুস্থ  দিকনির্দেশনাহীন এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যে শাসনের কেন্দ্রে আছে একনায়কতান্ত্রিক পুলিশ শাসিত সরকার। আবারো যেন সেই সোনার বাংলাকায়েম করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে দলীয় দুর্বৃত্তদের। বাকশাল আমলে যেমন দ্বিতীয় বিপ্লব কায়েমের নামে সরকারি-বেসরকারি বাহিনী ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে লুটের আয়োজন করা হয়েছিল, এখনো তেমনি চলছে। জনগণের এখন একটাই কাজ আর তা হলো, ক্ষমতাসীন দলের ভোগবিলাসের জন্য করস্বরূপ অর্থের জোগান দিয়ে যাওয়া, সরকারি দুর্বৃত্তদের চাঁদা বা মুক্তিপণ দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে হাওয়াই প্রতিশ্রুতি পাওয়া। এরকম প্রতিশ্রুতির একটি পদ্মা সেতু। আর সরকার কাজ একটিই করছে নিজেদের সাফল্যের উল্লম্ফিত গীত, নিজেদের সাফল্যের স্লোগান, আত্মপ্রশস্তিমূলক বক্তৃতা, নিজেরাই নিজেদের ক্রেস্ট দেয়া, বিদেশী বন্ধুদের অসম্মান করা, নির্বাচনের সময় সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা তৈরি করা আর রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র ব্যবহার করে অবিরাম মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া। ক্ষমা চেয়েছিলেন বটে, কিন্তু মনে তার ক্ষমা নেই। 

এখন পুলিশি রাষ্ট্র

গত পাঁচ বছরে আওয়ামী শাসনে এ দেশের মানুষ ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে শুধু দুটি জিনিসই প্রত্যক্ষ করল, তা হলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। গোলযোগ, হত্যাযজ্ঞ, অর্থনৈতিক দুর্নীতি, রাষ্ট্র আয়োজিত প্রতারণা সর্বব্যাপী হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের সশস্ত্র মাস্তান ও সন্ত্রাসীরা সারা দেশকে এক আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। দূরবর্তী গ্রামেও শান্তিপ্রিয় কোনো সাধারণ মানুষ এদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না। নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর তো আছেই, এখন সাধারণ মানুষের আত্মরক্ষার উপায় এসব সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী, মাস্তান, অস্ত্রধারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। 

পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, যথেচ্ছ খুন সাধারণ মানুষের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। এর কোনোটিরই কিনারা করার মতো সদিচ্ছা সরকার দেখাতে পারেনি। তারা এমন একটি ভাব নিয়ে থাকে, যেন কিছুই ঘটেনি। নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি সরকার আর এড়িয়ে যেতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আদালতের আদেশে এর একটি তদন্ত করতে বাধ্য হয়েছে; কিন্তু সেখানেও গডফাদারদের আড়াল করার চেষ্টা ধারাবাহিকভাবেই লক্ষ করা যাচ্ছে। কখনো কখনো সরকারপ্রধান নিজে দাঁড়াচ্ছেন খুনের নেপথ্য হোতাদের পাশে। সরকার পুলিশ ও র‌্যাবকে যেন যেকোনো হত্যাকাণ্ড থেকেই দায়মুক্তি দিয়ে দিয়েছে; কিন্তু এই প্রথম তারা বড় ধরনের আঘাতের শিকার হলো। আগে অপরাধীদের বিবেচনা করা হতো সমাজের অস্পৃশ্য হিসেবে; কিন্তু তারা এখন আর অস্পৃশ্য নেই। সম্মিলিতভাবে এসব অপরাধী এখন সামাজিক শক্তি। এর ভেতরে আইন ভঙ্গকারী যেমন আছে, তেমনি আছে আইন প্রণয়নকারীও। আছে আইন বাস্তবায়নকারী। এরা সব মিলে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, নিজেরাই এখন নিজেদের খুবলে খাচ্ছে। 

ওলট-পালট করে দে মা, লুটেপুটে খাই

২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়ে এই সরকার যেন লুণ্ঠনের ব্রতই গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্ত বিদেশে পাচার করা হয়েছে। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের অর্ধেক টাকা উধাও। তার ওপরে সরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ মুখথুবড়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক দুর্যোগ এবং ব্যাংক লুটের এই প্রক্রিয়া যেন ১৯৭২-৭৫ সালেরই উত্তরাধিকার। সোনার বাংলাগঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। ওই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে গিয়ে সাড়ে ৬০০ কোটি ডলার হাওয়া হয়ে গেছে। এ বছর বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে ২১.৩ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণদান কমেছে শুধু এপ্রিল মাসেই ১১.৪৬ শতাংশ। জুলাই-মেতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩.৫৪ শতাংশ। এর কারণ বিদেশের শ্রমবাজার বাংলাদেশের ভুল পররাষ্ট্রনীতির কারণে সঙ্কীর্ণ হয়েছে। 

এই সময়ের মধ্যে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের লোকদের যোগসাজশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে সাত হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারি ভালো ঋণগ্রহীতাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কুঋণ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতে উচ্চহারে সুদ দাবি করতে হচ্ছে। তারও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। গত জুলাই-মার্চে কর্ম পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা দাঁড়িয়েছে ৯১.৬ শতাংশ। তার আগের বছর এই সময়ে এই নির্ভরতা ছিল ৭২ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে, কর আদায় এবং বৈদেশিক সাহায্যের বর্তমান অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে সরকারি ব্যয়ের অর্থ জোগান দিতে হিমশিম খেতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালক পদে রাজনৈতিক নিয়োগ দেয়ার ফলে এগুলো লুণ্ঠনের অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসব পরিচালক অযোগ্য লোকদের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কাগজপত্র জাল করে ঋণ দিতে বাধ্য করেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং নীতিমালা মোটেও অনুসরণ করা হয়নি। জুনের শেষ নাগাদ বেসিক ব্যাংকের তামাদি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত মার্চ থেকে এর পরিমাণ ১৩ শতাংশ বেশি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারেই ঝুঁকি মেটানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ পুঁজি মজুদ রাখতে হয়; কিন্তু মার্চের শেষ নাগাদ বেসিক ব্যাংকে তা দাঁড়িয়েছিল ৪.৫ শতাংশ। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক ছিল দেশের অন্যতম সেরা একটি ব্যাংক; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেয়ার পর থেকে বেসিক ব্যাংকের সেই সম্মানে ধস্ নেমেছে। জানা যায়, তার প্রকৃত নাম সৈয়দ আবদুল হাই বাচ্চু; কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন একটি ধারণা সৃষ্টির জন্য তিনি সৈয়দকেটে শেখবসিয়েছেন। এই ব্যক্তির নিয়োগের পর প্রথম বছরেই এই সচ্ছল ব্যাংকটি ৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, গত তিন বছরে এই বাচ্চু অবৈধভাবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। ব্যাংকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক স্বৈরশাসক। এই পরিস্থিতিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়কে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। তার আগে অবশ্য ২৪ মে ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়; কিন্তু বাচ্চু থেকেই যান। কেননা এই বোর্ড ভাঙতে নাকি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের দরকার ছিল। 

তার ওপর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক ঋণের দায় কখনো কখনো সরকার গ্রহণ করে থাকে। যেমন মার্কিন এক্সিম ব্যাংক থেকে বোয়িং কেনার জন্য নেয়া ঋণের ২০ হাজার কোটি টাকার দায় সরকার গ্রহণ করেছিল। বিমান ওই ঋণ শোধ করতে পারেনি। ফলে এগুলো শোধ করতে হবে সরকারকে। সেটাও অর্থনীতির জন্য কম আপদ নয়। 

সকল দুয়ার রুদ্ধ আজি

সুইস ব্যাংকে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে তার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের জমার পরিমাণ বেড়েছে ৬২ শতাংশ। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা বেশ কমেছে। এখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আছে তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ হিসাব করলে এই অঙ্ক ভয়ঙ্কর। এই পরিস্থিতি শেখ হাসিনার মতো বৈধতাহীন দুর্বল সরকার আর মোকাবেলা করতে পারবে বলেই মনে হয় না। ফলে তাদের লক্ষ্য দাঁড়াবে করদাতাদের কিভাবে আরো বেশি করে শোষণ করা যায়। এসব দুর্নীতির দায় ইতোমধ্যেই করদাতাদের বহন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। সে কথা অবশ্য শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার উপায় কী? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সে উপায় সরকারের কারো জানা নেই।

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads