রবিবার, ৬ জুলাই, ২০১৪

মানবাধিকার লংঘন পরিস্থিতি


পত্র-পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে যায়। প্রিয় স্বদেশে এসব কী ঘটছে? যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি এতদিন পরেও তা পূর্ণ হচ্ছে না কেন? বরং দেশ জুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফায়ার, সীমান্তে হত্যাকা-, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমন পরিবেশ কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিক মেনে নিতে পারে না। নানাভাবে এখন যেহারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তাতে সম্মানজনক জীবন-যাপনের আকাক্সক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এমন দুরবস্থায় আমরা কেন পতিত হলাম? দুর্বল আইনের শাসন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণ, মন্দ-গণতন্ত্র, ব্যবসায়িক রাজনীতি ও সরকারি সংস্থার উদাসীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে সারা দেশে খুন হয়েছেন ১,৯৯১ জন। শুধুমাত্র গত জুন মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭৩৩টি। চলতি বছরে মে মাসের তুলনায় জুনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসেবে গত ৬ মাসে রাজনৈতিক  সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১৩২ জন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের হিসেবে জুন মাসে সারা দেশে হত্যাকা- ঘটেছে ৪২৬টি। পরিসংখ্যান মতে, গত ৬ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৮ জন।
এমন চিত্র একটি গণতান্ত্রিক দেশের চিত্র হতে পারে না। মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সুশাসনের সঙ্কট শুধু বিরোধী দলের জন্যই খারাপ সংবাদ নয়, অনাকাক্সিক্ষত এমন চিত্র সমগ্র জাতির জন্যই এক অশনিসঙ্কেত। হতে পারে বর্তমান সময়টা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জন্য খুবই অসহনীয় হয়ে উঠেছে, কিন্তু সুশাসনের সঙ্কট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও জান-মালের নিরাপত্তার অভাব সাধারণ জনগণের জীবন-যাপনেও আতঙ্ক ও দুঃখের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় ব্লেমগেম, দমন-পীড়ন, ভাংচুর ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি জাতির কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বেশ দীর্ঘ। তারা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এবং প্রত্যক্ষ করেছে অপশাসনের পরিণাম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে, বাংলাদেশের জনগণ কিছুটা সময় নীরব থাকলেও যথাসময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা ভুল করে না। বাংলাদেশের জনগণকে নিরীহ কিংবা দুর্বল ভেবে যখন শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতার দাপটে যা ইচ্ছে তাই করার তৎপরতা চালিয়েছে, তখনই রুখে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণ। তাই ইতিহাসের আলোকে দেশের জনগণকে মূল্যায়ন করা উচিত আমাদের রাজনীতিবিদদের। দেশটা তো আসলে সরকার কিংবা বিরোধী দলের নয়। এদেশ ১৬ কোটি মানুষের। দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অব্যাহত থাকলে, সুশাসনের বদলে অপশাসনের মাত্রা বাড়তে থাকলে, খুন-রাহাজানি ও দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের জনগণ বেশি দিন চুপ করে থাকবে না। দেশের মালিক জনগণ তখন নিজেদের অধিকারের হিসেব নেবে, হিসেব নেবে সরকারের দায়-দায়িত্বের। তাই জনগণের শক্তিকে আমলে নিয়েই সরকারের দেশ শাসন করা উচিত। বিরোধী দলের সাময়িক দুর্বলতায় সরকারের আস্ফালনের কিছু নেই। কারণ জনগণ কখনও পরাজিত হবার নয়, অবশেষে হিসেবটা তাদের কাছেই দিতে হবে সরকারকে। আর বিরোধী দল যদি ক্ষমতার রাজনীতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তুলতে পারে, তাহলে জনগণকে তারা সাথে পাবে। এমন অবস্থা দেশ, জনগণ এমন কি সরকারের জন্যও কল্যাণকর বলে পরিগণিত হতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads