রবিবার, ১০ জুন, ২০১২

আদালতের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন, আটকে গেলেন নেতারা



স্টাফ রিপোর্টার: আদালতের জারি করা একটি তলবি পরোয়ানা (প্রডাকশন ওয়ারেন্ট)’র উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ৭ই জুন জারি করা প্রশ্নবিদ্ধ ওই আদেশের জন্য আপাতত আটকে গেছে জোট নেতাদের মুক্তি। তবে আদেশ প্রত্যাহারে তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। বিচারক আংশিক শুনানি শেষে ১৪ই জুন পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন। এর ফলে আজকের সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাদের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের অভিযোগ, সমাবেশে যেন নেতারা অংশ নিতে না পারেন এজন্যই তলবি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতের এ আদেশকে নজিরবিহীন এবং বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের ফসল হিসেবে অভিহিত করেছেন তারা। গত ৭ই জুন গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নেতাদের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি হয় হাইকোর্টে। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনেন আদালত। শুনানি শেষে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ নেতাদের স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করে। ওইদিন আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, আটক নেতাদের কারামুক্তিতে আর কোন আইনি বাধা নেই। কারণ, তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা থাকলেও ওই মামলায় তারা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। ওই মামলায় চার্জশিট গ্রহণের ব্যাপারে ২৬শে জুলাই নিম্ন আদালতে শুনানির দিন ঠিক রয়েছে। ফলে এর আগে তাদের কারামুক্তিতে কোন বাধা নেই। নেতাদের জনসমাবেশে যোগ দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু সরকার পক্ষে ভিন্ন কৌশল দেখা যায় নিম্ন আদালতে। তাদের পক্ষ থেকে ওইদিন পড়ন্ত বেলায় আবেদন দেয়া হয়, কারাগারে আটক নেতাদের বিরুদ্ধে তলবি পরোয়ানা জারির। আদালত পরোয়ানা জারি করে এক মাস ১৯ দিন পর তাদের হাজির হতে বলেন। এ কারণে জোট নেতাদের মুক্তি আটকে যায়। আইনজীবীরা বলছেন- এ আদেশ শুধু নজিরবিহীনই নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। আদালতের এ আদেশে ‘ন্যাচারাল জাস্টিস’ অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, এ আদেশের মাধ্যমে প্রতিকারের সুযোগ না দিয়েই দীর্ঘ সময় কারাভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকটি বিষয়ও খুবই প্রণিধানযোগ্য। ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় ১৪ই মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ নেতাকে জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট। তাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, আন্দালিব রহমান পার্থ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আসিফা আশরাফী পাপিয়াসহ কয়েকজন এখন মুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। আইনের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ীই তারা ২৬শে জুলাই পর্যন্ত মুক্ত থাকবেন। অথচ একই আদেশে জামিন পাওয়া অন্যরা কারাগারে আটক থাকবেন। এটাকে আইনের ব্যত্যয় হিসেবে অভিহিত করেছেন আইনজ্ঞরা। এদিকে, নেতাদের আদালতে হাজির করার পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করেছেন তাদের আইনজীবীরা। গতকাল সকালে আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ আবেদন দাখিল করলে মহানগর সিনিয়র বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আক্তারুজ্জামান তা শুনে আরও শুনানির জন্য ১৪ই জুন তারিখ দেন। জোট নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, চার্জশিট গ্রহণের আগে আসামি বা রাষ্ট্রপক্ষের কোন আবেদন দাখিলের নিয়ম নেই। কিন্তু হাইকোর্ট গত বৃহস্পতিবার অন্য মামলায় বিরোধী দলের নেতাদের জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ হঠাৎ করেই বোমা বিস্ফোরণের মামলায় তাদের আদালতে হাজির করার পরোয়ানা জারির আবেদন করে বসেছে। ওদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনের দক্ষিণ হলে এক প্রেসব্রিফিং করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এ ধরনের আদেশ জেলে পৌঁছাতে সাধারণত ২-৩ দিন সময় লাগে। এ আদেশের বিষয়ে দেখা গেল ওইদিনই তারা জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, এ সকল লোকদের বিষয়ে আদালতে হাজির করার আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে- যেদিন অন্য আসামি আসবেন, সেদিন তারাও আসবেন। সরকারের পিপি সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এটা করেছেন। হাইকোর্টে আদেশ ও আইনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ কাজটা করিয়েছেন। আমরা সবসময় আদালতের স্বাধীনতার কথা বলেছি। এ সরকারও বলছে, আদালত স্বাধীন। কিন্তু এ আদেশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়- নিম্ন আদালত স্বাধীন নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads