সোমবার, ১১ জুন, ২০১২

বাধা ডিঙিয়ে জনসমুদ্র : তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হবে না : খালেদা জিয়া



বিরোধীদলীয় নেতা ও ১৮ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া গতকাল ঢাকায় বিশাল এক গণসমাবেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহালে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত সরকারকে আবারও আলটিমেটাম দিয়ে বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। অবশ্য ঈদের আগে কঠোর কর্মসূচি না দিলেও জুন ও জুলাই দুই মাস বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকারের শত বাধা ডিঙিয়ে ১৮ দলীয় জোটের নির্ধারিত গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসমুদ্রে আলটিমেটাম ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, রোজা ও ঈদের কারণে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছি না। এ সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা সমস্যার সমাধান করতে হবে । আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আমি বলতে চাই, এই দেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাউকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না।
একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরি করে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে সমানে সমান হয়ে এসে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। অবশ্য ক্ষমতায় থাকতেই বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের লোক জনরোষের শিকার হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান সরকারকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার আখ্যা দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের শুধু মন্ত্রী নয়, প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতিতে ডুবে গেছে পদ্মা সেতু। এটা একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। তাই তাদের হাতে দেশ ও জনগণ নিরাপদ নয়।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগরের সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে কারাগারে রেখে এই জনসভা হয়। হরতালের একটি মামলায় তারা কারাবন্দি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালে গত ১২ মার্চ নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে তিন মাস সময় বেঁধে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তা না হলে ১২ জুন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা সেদিন বলেছিলেন তিনি। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল নয়াপল্টনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
জনসভায় যে কয়েকটি বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তা হলো—নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন, গণবিরোধী বাজেটের প্রতিবাদে ২৪ জুন, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান, সাংবাদিক সাগর-রুনি ও সৌদি কূটনীতিক খুনের বিচার দাবিতে ১ জুলাই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সার-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদের ১৫ জুলাই সারাদেশে সমাবেশ।
এছাড়া দুর্নীতি, গ্যাস-বিদ্যুত্-পানি-যানজট সমস্যার প্রতিবাদে ৮ জুলাই দেশের সব মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে।
খালেদা জিয়া গণসমাবেশস্থলে পৌঁছে বিকাল ৪টার কিছু সময় পর তিনি মঞ্চে উঠলে মুহুর্মুহু করতালিতে তাকে স্বাগত জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি পরা খালেদা হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। দল ও জোটের নেতারা বক্তব্য রাখার পর ৫টা ৫৮ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করে ৬টা ৪৫ মিনিটে শেষ করেন।
খালেদা জিয়া তার দীর্ঘ পৌনে একঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেয়া বক্তব্যে সরকারে ব্যর্থতা, বিরোধী দলের ওপর সরকারের নির্যাতন, সমাবেশ করতে না দেয়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহালসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে কী করবে, তা তুলে ধরেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়। খালেদা জিয়ার দুই পাশে বসেন ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। সরকারি বাধা উপক্ষো করে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল সড়ক জনাকীর্ণ হয়ে যায়। অগণিত নেতাকর্মী ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল, পল্টন, আরামবাগ ও দৈনিকবাংলার মূল সড়ক এবং অলিগলিতে। ২টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টনের চারপাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ভোর থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মঞ্চের পাশ ঘিরে দু’দিকে ব্যাপক জায়গায় অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা ও থানার ব্যানার নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অসংখ্য মানুষ সমাবেশে যোগ দেন। প্রচণ্ড রোদ ও তাপের মাঝেও মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা ও বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
খালেদা জিয়া জনগণের ওপর বর্তমান সরকারের কোনো আস্থা নেই উল্লেখ করে বলেন, এর কারণ হচ্ছে, দেশ ও জনগণের জন্য বর্তমান সরকার কিছুই করেনি। তারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি। সেজন্য দেশের মানুষ আপনারদের (আওয়ামী লীগ) আর ক্ষমতায় দেখতে চান না।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে বলে সরকারি দলের নেতানেত্রী যে অভিযোগ উত্থাপন করেন প্রায়ই, তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়া পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই আমরা ক্ষমতায় গিয়েছি। পেছনের দরজা দিয়ে বরং আপনারই (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় গিয়েছেন। যারা এভাবে ক্ষমতায় গেছেন, তাদেরও আপনারাই সমর্থন দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া ’৮২ সালে তত্কালীন সেনাবাহিনী প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, তখন আপনিই (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, আই অ্যাম নট আনহ্যাপি (আমি অখুশি নই)। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আপনারই বলেছিলেন, তারা আপনাদের আন্দোলনের ফসল। ক্ষমতায় গেলে তাদের সব কার্যক্রমের বৈধতা দেবেন।
বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাড়ে ৩ বছরে দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে বলেন, এখন দেশে বিনিয়োগ নেই। রফতানি নেই। জিডিপি কমে গেছে। উত্পাদন কমে গেছে। রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থা। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। অনেকে দুবেলা অন্নের সংস্থান করতে পারে না, পেট পুরে খেতে পারে না। তিন বছরে শুধু লুটপাট করেছে তারা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাস নেই, বিদ্যুত্ নেই, পানি নেই। বার বার দাম বাড়ানোর পর মানুষ গ্যাস-বিদ্যুত্ পাচ্ছে না। দলীয়করণ করে বিচারবিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ পাওয়ার প্লান্ট প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এ খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল। দলীয় ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের পকেটে এ টাকা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বর্তমান সরকারের আমলে কোনো গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে বলেন, এ সরকারের আমলে সংসদ সদস্যদের কোনো মর্যাদা নেই। স্পিকারকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। এ অবস্থায় সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় বর্তমান সরকারের।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। তাই আবার তারাই সংবিধান সংশোধন করে ওই সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। এ দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়।
খালেদা জিয়া আর বেশি দেরি না করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ভুলে যাবেন না, এদিন দিন নয়, আরও দিন আছে।
তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী, রমনা থানা বিএনপি সভাপতি সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিবির নেতাসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের গুম, হত্যার ঘটনা তুলে ধরে এসব বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে। ১৪ সাংবাদিক এরই মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হলো কেন। ওদের কাছে দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল।
এ প্রসঙ্গে তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গটি তুলে ধরে বলেন, সত্য কথা বলায় মাহমুদুর রহমানকে জেল খাটতে হয়েছে। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি।
খালেদ জিয়া বিডিআর বিদ্রোহে ৫৮ সেনা কর্মকর্তার নিহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। অথচ ৫৮ সেনা কর্মকর্তার খুনিদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। শেরাটন থেকে খাবার নিয়ে একসঙ্গে খেয়েছেন।
তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেফতারকৃত ১৮ দলীয় জোট নেতাদের মুক্তির দাবি জানান।
খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শুরুতে সমাবেশ উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে কার্যত অঘোষিত হরতাল হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ১২ মার্চেও সরকার এ অবস্থা করেছিল। সরকার বলে হরতাল করলে ক্ষতি হয়। তাহলে ওইদিন ক’দিন সরকারের কত ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে (১৯৯১-৯৬) আওয়ামী লীগের দেয়া ১৭৩ দিনের হরতালের কথা উল্লেখ করে বলেন, যমুনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দিন ও বিনিয়োগ ফোরামের বৈঠকের দিনও তারা হরতাল আহ্বান করেছিল। এতে দেশের ক্ষতি হয়নি। ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি।
খালেদা জিয়া ভারতের সাহারা গ্রুপের কাছে দেশের লাখ লাখ জমি দিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। তবে যেখানে আমাদের প্রয়োজন সেখানেই কেবল বিদেশি বিনিয়োগ আনব। সহযোগিতা করব।
তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যুবকদের ভবিষ্যত্ অন্ধকার উল্লেখ করে যুবকদের উদ্দেশে বলেন, এজন্য ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে তাড়াতে যুবকদের দায়িত্ব রয়েছে। আওয়ামী লীগকে তাড়াতে না পারলে দেশ বাঁচবে না, আমরাও বাঁচব না। আমরা ঘরে-বাইরে কেউ নিরাপদ নই। অত্যাচারে চোখের পানি ফেলার সময় নয় এখন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখনই তাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শেষে ক্ষমতায় গেলে কী করবেন তাও তুলে ধরেন। বলেন, ক্ষমতায় গেলে আমরা যুবকদের কর্মসংস্থান করব। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা বিপ্লব ঘটিয়েছিলাম। এ সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াব। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। রাস্তাঘাট উন্নয়ন করব, বিদ্যুত্-গ্যাস দেব। কৃষকদের সমস্যার সমাধান করব। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনব।
১৮ দলীয় জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা এক হয়েছি। এতে ফাটল ধরাতে ষড়যন্ত্র হতে পারে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতিতে পদ্মা সেতু ডুবে গেছে। এ সরকারের আমলে এ সেতু হবে না। বিএনপি জোট ক্ষমতায় গেলে একটি নয় দুটি পদ্মা সেতু হবে। মাওয়া দিয়ে হবে একটি পদ্মা সেতু, অপরটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে হবে।
স্মরণকালের সেরা গণজমায়েত : তিন মাসের আলটিমেটাম শেষে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও গতকাল নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকাজুড়ে বিশাল মহসমাবেশে লাখ লাখ জনতার স্রোত নেমেছিল। সরকারি বাধা উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল সড়ক জনাকীর্ণ হয়ে যায়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর অগণিত নেতাকর্মী ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল, পল্টন, আরামবাগ ও দৈনিক বাংলার মূল সড়ক এবং অলিগলিতে। বেলা ২টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টনের চারপাশ ঘিরে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ভোর থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মঞ্চের পাশ ঘিরে দু’দিকে ব্যাপক জায়গায় অবস্থান নেন। এ নিয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা ও থানার ব্যানার নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অসংখ্য মানুষ সমাবেশে যোগ দেন। প্রচণ্ড রোদ ও তাপের মাঝেও মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা ও বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
বেগম খালেদা জিয়া জনগণের ওপর বর্তমান সরকারের কোনো আস্থা নেই উল্লেখ করে বলেন, এর কারণ হচ্ছে দেশ ও জনগণের জন্য বর্তমান সরকার কিছুই করেনি। তারা দেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি। সে জন্য দেশের মানুষ আপনারদের (আওয়ামী লীগ) আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিএনপির অঙ্গ দল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা টি শার্ট ও নানা রঙের ক্যাপ পরে পাশাপাশি সারিবদ্ধভাবে বসেন। তাদের হাতে ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলতি নানা রঙের ফেস্টুন। অনেকের হাতে বিএনপির কারাবন্দি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীর ছবি সংবলিত ফেস্টুন দেখা গেছে। আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মাথায় ছিল লাল ফিতা বাঁধা। তাদের হাতে জামায়াতের আটক নেতাদের ছবিসহ ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে।
সমাবেশে অঙ্গ দলগুলোর পাশাপাশি বিএনপির চট্টগ্রামের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালের মজিবর রহমান সরোয়ার, রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার ও সাভারের ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিনের সমর্থকদের পৃথক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায় বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমান, নাসির উদ্দিন পিন্টু, তৃণমূল দলের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন ভূঁইয়া নান্টুসহ অনেকের সমর্থকদের। বিএনপির সব জেলা ও নির্বাচনী আসনভিত্তিক পৃথক মিছিল এবং জমায়েত ছিল।
গণসমাবেশে ৮টি সমাবেশ : ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত মঞ্চে নেতারা বক্তৃতা করলেও পুরো এলাকায় ৮টি টিভি স্ক্রিনে বক্তৃতা দেখানো হয়। সকাল ১০টার মধ্যেই বেশকিছু মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেশকিছু মাইক পুলিশ খুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন আয়োজকরা। এতে বিজয়নগর, কাকরাইল, আরামবাগসহ অনেক এলাকার মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড় ও সংলগ্ন সড়কে স্থাপিত ৮টি টিভি স্ক্রিনেই বক্তৃতা শুনেছে অধিকাংশ মানুষ। এছাড়া কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিএনপির এই সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করে।
সমাবেশে ৪৭ মিনিট বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে আল্টিমেটাম নিয়ে সরকারের দায়িত্বহীন আচরণের প্রতিবাদ করেন।
শীর্ষ নেতারা যা বললেন : ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা সরকারের জুলুম-নির্যাতন, জনগণের দুর্ভোগের চিত্র এবং তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তৃতা করেন।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত সাড়ে তিন বছরে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নৈরাজ্য, খুন ও গুম ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। দেশের সব অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী সরকারের পৃষ্ঠপোষক ছিল বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। জনগণের কাছে এই সরকারের দায়বদ্ধতা নেই বলেই তারা লুটতরাজ ও দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশের মানুষ এক অসহনীয় জুলুমের শিকার। তারা দেশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চায়। সাহারা গ্রুপের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জাতি কখনও মেনে নেবে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ গ্যাস ও বিদ্যুত্ পাচ্ছে না অথচ সরকার দাম বাড়াচ্ছে। আমরা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না। জামায়াত ও বিএনপি এসবের প্রতিবাদ করে বলেই যুদ্ধাপরাধের কথা বলে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে বর্তমান সরকারের সময় যেসব মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার বিচার আগে করতে হবে। মিথ্যা অভিযোগে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমসহ দলের শীর্ষ নেতাদের জেলে পুরে নির্যাতন করার খেসারত অবশ্যই এ সরকারকে দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশের মানুষ মানবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মনে করেছিলেন ১৮ দলীয় জোট নেতাদের জেলে পুরে ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা চালিয়ে এই সমাবেশ বন্ধ করবেন। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে ২০ লাখের ঊর্ধ্বে লোক এতে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। এ সময় আমাদের সাবধানে এগোতে হবে। সরকার বাকশালী কায়দায় দেশ শাসন করতে চায় মন্তব্য করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, শেখ মুজিবও বাকশালী কায়দায় দেশ পরিচালনায় সফল হননি, আপনিও সফল হবেন না। তাই সাবধান হোন।
খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের ঘাড়ে কালো বিড়াল সওয়ার হয়েছে। কল্পকাহিনী সৃষ্টি করে বিরোধীদলের নেতাদের জেলে পুরে রাখা হয়েছে। র্যাবকে নিন্দিত রক্ষীবাহিনী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে চললে সাংবাদিকদের গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না। তিনি বলেন, এ সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা উঠিয়ে দিয়েছে। খুন, গুম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করছে না। এসবের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে তারা ধ্বংস করছে। তাই এ সরকারের পতন চাই।
বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জাতিদ্রোহী। দুর্নীতির মাধ্যমে তারা শেয়ারবাজার, ব্যাংক, টেলিকম, বিদ্যুত্ সেক্টর ধ্বংস করেছে। আমরা জাতির পক্ষে দাঁড়িয়ে জেল খেটেছি। মানুষের জন্য প্রয়োজনে আবার জেলে যাব। তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের জেলে নিয়ে ছাড়বেন। তাদের ছাড় দিতে পারবেন না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, কথায় কথায় সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি নাকি সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একথা শুনে পুলিশও হাসে। এ ধরনের কথা আর বলবেন না। রাজনীতিকদের সবাইকে শত্রু হিসেবে গণ্য না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কারাবন্দি শীর্ষ নেতারা এ সমাবেশে যোগদান করবেন বলে দেশবাসী আশা করেছিল। কিন্তু সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েও নেতারা মুক্তি পাননি। আমরা আগেই বলেছিলাম, এ মামলা মিথ্যা মামলা। উচ্চ আদালতেও তা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের জামিন দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের মুক্তি দেয়নি। তিনি বলেন, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে কিছু লেখা নেই। তাই দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা চালু করলেও বিএনপি সে নির্বাচন হতে দেবে না।
সমাবেশের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকার অঘোষিত হরতাল ঘোষণা করে দেশ অচল করে দিয়েছে। গণসমাবেশ ঠেকাতে সারা দেশে লঞ্চ-বাসসহ সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
বাধা দিয়ে জনস্রোত ঠেকানো যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেও জনগণের দাবির এ সমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। নদীর স্রোতের মতো চারদিক থেকে মানুষ এসেছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, অনেক জায়গায় মাইকের তার কেটে দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারকে শুধু একটি কথা বলতে চাই, আপনারা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করলেন, তা আপনাদের জন্য বুমেরাং হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এই সরকার শেখ হাসিনার ১০টি দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছে। জনগণের সরকার এলে এসব মামলায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, এই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির সময়ে ৪৫ টাকার সয়াবিন তেল এখন ১৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে।
এম কে আনোয়ার বলেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সংসদ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া বন্ধ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করুন, নইলে পালাবার পথ পাবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে সরকারকে ৯০ দিনের সময় দেয়া হয়েছিল। সরকার নিজের ভুলের কারণে শান্তিপূর্ণভাবে তা মেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি হবে, দেশের মানুষ তাদের তত্ত্বাবধায়কে ফিরতে বাধ্য করবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪১ বছরে যে নজির সৃষ্টি হয়নি, আওয়ামী লীগ একসঙ্গে বিরোধী দলের ৩৩ জন সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করে সে নজির সৃষ্টি করেছে। এটা কালো ইতিহাস। এতে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ ’৭৫-এর মতো বাকশাল গঠন করতে চায়। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন গণতন্ত্রকামী মানুষ পূরণ হতে দেবে না। তিনি সরকারকে হত্যা এবং গুমের পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে আসারও আহ্বান জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সমাবেশ বানচাল করতে সরকার দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ বন্ধ করেছে। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা অচল করে দিয়েছে। এসব করে সরকার নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে। সুপথে না ফিরলে সরকারের পরিণতি হবে গণঅভ্যুত্থানে পতন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, অন্যায়, অবিচার, হত্যা, গুমে জনগণ এ সরকারকে ‘না’ বলে দিয়েছে। এর মাঝেও কেবল গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করতে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে সরকারকে তিন মাসের সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। বরং হত্যা, গুম, জেল-জুলুম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক বলেন, বর্তমান সরকার সাহারা গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে দেশকে সাহারা মরুভূমি বানাতে চায়। দেশের মানুষ তা বানাতে দেবে না। তিনি দেশ, দেশের মানুষ, ঈমান, ধর্ম, সম্মান বাঁচাতে তরুণদের, বিশেষ করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কর্মীদের খালেদা জিয়ার পেছনে একতাবদ্ধ হওয়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তরুণদের রাজপথে শুধু মিছিল-মিটিং নয়, দখল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। না পারলে জানিয়ে দিলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আবার রাজপথে যাব।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আইনের শাসন ও সংবিধান অনুযায়ী চলছে না। আন্দোলন দমাতে বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরে রাখা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আটক রাখা হয়েছে। এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরে অতীতেও কেউ আন্দোলন দমন করতে পারেনি এসরকারও পারবে না। পুলিশ ও বিচার বিভাগে দলীয়করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চোরের দল। শেখ মুজিব চোরের খনি পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছিলেন। বর্তমান চোর কালো বিড়াল ধরা পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, যে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইমান-আকিদা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়, তাদের দিয়ে আল্লাহ ভালো কাজ করাবেন না। তাই আওয়ামী লীগ দিয়ে এদেশে ভালো কোনো কাজ হবে না। তারা সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ দিয়েছে, আল্লাহও তাদের বাদ দিয়েছে। দেশ থেকে ইসলামকে ধ্বংস করতে তারা তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের নামে ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিনা অপরাধে জেলে পুরেছে। এ সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি সবসময় দেশের ক্রান্তিকালে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সারাদেশের মানুষের দাবিতে তিনি আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের মতো এবারও তিনি এই আন্দোলনে বিজয়ী হবেন। এ বিজয় হবে তরুণ প্রজন্মের। তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রশংসা করে বলেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে একমাত্র খালেদা জিয়া স্বৈরাচার পতন অবিচল থেকে আন্দোলন করেছেন। বলেছিলেন, আমি স্বৈরাচারের পতন চাই। এরপর অন্যান্য রাজনৈতিক দল তার এ আন্দোলনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নব্বইতে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল। তাই ওই সময় থেকে তিনি জাতীয় ঐক্যের নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সঙ্গে তার দলের একাত্মতার কথা ঘোষণা দিয়ে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ইনশাল্লাহ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আবার রাজপথে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক কারা নির্যাতিত নেতা অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পরিচয় হলো ব্যর্থ সরকার। তারা জুলূম-নির্যাতন চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরছে। জামায়াতের আমির মাওলানা নিজামীসহ শীর্ষ নেতাদের বিনা অপরাধে জেলে রাখা হয়েছে। আমি ৮ মাস বিনা অপরাধে জেল খেটে এসেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া এমপি ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল।
আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু ও মুহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা জহিরুল হক ভুঁইয়া, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, মুসলিম লীগের সভাপতি এইচএম কামরুজ্জামান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুুল মোবিন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. রেদওয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো: তাসনীম আলম, ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুুল্লাহ মো. তাহের, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
জনসমুদ্রে ১১টায়ই শুরু অনানুষ্ঠানিক সমাবেশ : সাড়ে ১০টার দিকেই সমাবেশ পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। প্রচণ্ড রোদে এ জমায়েতের সামনে মঞ্চে গণসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান ও থেমে থেমে বক্তৃতা চলতে থাকে। জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান, শিল্পী নাসির ও সাইমুমের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
চিকিত্সাসেবা দেয় ২০টি মেডিকেল টিম : সমাবেশে অসুস্থদের চিকিত্সা দেয় বিএনপিসমর্থিত চিকিত্সক সংগঠন ড্যাবের ২০টি মেডিকেল টিম। ড্যাবের মহাসচিব ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ২০টি মেডিকেল টিমে ১৫৬ জন ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান কাজ করেছেন। মেডিকেল টিমে নেতৃত্ব দেন প্রফেসর ডা. আবদুস সালাম, ডা. রফিক আল কবির, ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads