শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১২

দিশেহারা হয়ে বেসামাল মন্তব্য : পেছনের দরজা ফোবিয়া



শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতারা এবং মহাজোটভুক্ত তাদের মিত্ররা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে লক্ষ্য করে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে মনে হয় যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন ব্যর্থতায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং এর ফলে অসহায় আস্ফাালন ধ্বনিত হচ্ছে সরকারের রথি-মহারথিদের কণ্ঠে। দুঃখজনক হলো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বদভ্যাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি থেকে নিজেকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারছেন না। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সভায় বিরোধী দলের বর্তমান আন্দোলনের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা যে বুমেরাং হতে পারে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী এই স্বল্পকালের ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধির অগভীরতা প্রকাশ পেয়ে যাবে তা বোধ হয় তিনি ভেবেই দেখেননি। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ‘পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা’ পরিহার করতে বলে তিনি তাকে ‘এতে ফল ভালো হবে না’ বলে যে ধমক দিয়েছেন সেটা দেশের রাজনীতির প্রতি হুমকি হিসেবে ধরে নেয়া যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে পেছনের দরজা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন এমন আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রী করছেন কেন? তা কি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পেছনের দরজা খোঁজে বলে? অনুমান হয় এ যাত্রায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ও তাঁর শরিক দলগুলোর জনবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং লুটতরাজের যে মচ্ছব চলেছে তাতে তাঁদের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক ভিত্তির পাটাতনগুলো যে পায়ের নিচ থেকে ক্রমেই আলগা হয়ে যাচ্ছে মূলত সেই দুর্ভাবনাই বিচলিত করে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁকে অবশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, বেগম জিয়া কখনোই পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাননি এবং কোনো স্বৈরশাসকের সঙ্গে আপসও করেননি।
ইতিহাস ঘাঁটলে তা আওয়ামী লীগের বিপক্ষেই কথা বলবে। বাংলাদেশ দখলদার পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সরকার গঠন করেছিলেন তা ছিল কেবলই আওয়ামী লীগের সরকার। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোকে সরকারে না নিয়ে তাদের আত্মত্যাগ ও অবদান অস্বীকার করা হয়েছিল। অতঃপর ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখজনকভাবে নিহত হওয়ার মুহূর্তেই ক্ষমতা দখল করেন তাঁরই বন্ধু ও মন্ত্রী আওয়ামী ঘরানার খোন্দকার মোশতাক। রক্তাক্ত ক্যু’র মাধ্যমে খোন্দকার মোশতাক ক্ষমতা দখল করার পর আওয়ামী লীগাররাই যে তার মন্ত্রিসভায় যোগ দেন শুধু তাই নয়, এমনকি কোনো আওয়ামী লীগ সদস্য তত্কালীন জাতীয় সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেননি তখন। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই স্বৈরশাসক এরশাদও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই মইন-ফখরুদ্দীনের দু’বছরের যে অসাংবিধানিক সরকার জাতির ঘাড়ে সওয়ার হয়েছিল তাকে বৈধতা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ভয়ে আক্রান্ত বর্তমান মহাজোট সরকার। তারা এ ব্যবস্থা তড়িঘড়ি করে তুলে দিয়েছে পেছনের দরজা দিয়ে অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্যই, তা জনগণ ভালোভাবেই বোঝেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads