বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

পদ্মা সেতু প্রকল্পে মন্ত্রীর ১০% ঘুষ কেলেঙ্কারি : স্বীকার বা অস্বীকার করছেন না দুদক চেয়ারম্যান



পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রী-সচিবসহ ৩ কর্মকর্তা ১০ শতাংশ ঘুষ চেয়েছিলেন। ঘুষের বিষয়টি মধ্যস্থতা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মরহুম ইলিয়াস আহমদ চৌধুরীর ছেলে নিক্সন চৌধুরী। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির সত্যতা যাছাইয়ে তারা ব্যাপক অনুসন্ধান করছেন। তবে তিনি বলেন, মন্ত্রী-সচিবের ১০ শতাংশ ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে পত্রিকায় যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা দুদকের কাছে বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের সঙ্গে গরমিল রয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান অবশ্য ১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সরাসরি স্বীকারও করেননি আবার অস্বীকারও করেননি।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তার কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা বিধিসম্মতভাবে হয়নি। বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী অনেকেরই নাম এসেছে। তাদের বিষয়ে দুদকের তদন্ত অনুসন্ধান চলছে। কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তাদের প্রতিনিধিরা এই অর্থ কমিশন হিসেবে চান।
এদিকে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের মাসিক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গত মে মাসে দুদক ১ হাজার ১৩১টি অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। এ সময় ১৬টি মামলার অনুমোদন, ৬১টি মামলার চার্জশিট দাখিল ও ২২টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া গতকাল এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির ১২ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক দুদককে লিখিতভাবে কিছু তথ্য দিয়েছে। ওই তথ্যের সত্যতা যাছাইয়ের জন্য আমরা অনুসন্ধান করছি। কিছু কিছু মিডিয়ায় এমন কিছু তথ্য এসেছে, যা বিশ্বব্যাংক থেকে দুদকে পাঠানো তথ্যের সঙ্গে আমার জানা তথ্যের সঙ্গে যথেষ্ট গড়মিল আছে। তবে তিনি ওইসব তথ্যকে অসত্য বলতেও চাননি। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষেই এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত অবগত করা হবে।
১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ যে তিন ব্যক্তির নামে ১০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দরপত্র মূল্যায়নে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যেসব দরপত্র পড়ে সেগুলো প্রথমে ইভালুয়েশন কমিটির কাছে যায়। তারা মূল্যায়ন করে আমাদের যে ন্যাশনাল ইভালুয়েশন কমিটি আছে তাদের কাছে পাঠাবে। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে যাদের নাম এখানে বলা হয়েছে ইভালুয়েশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা যুক্ত নন। তারা অন্য কোনোভাবে প্রকল্পের কাজ প্রভাবিত করেছেন বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাবে, তা-ই আপনাদের জানানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা বিধিসম্মত ছিল না। এই অভিযোগে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের অনেক কর্মকর্তার নাম এসেছে। তাদের সবার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। তিনি বলেন, দুদকের প্রধান হিসেবে এখানকার সফলতা-ব্যর্থতার দায়ভার যেমন আমার, তেমনি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে ওই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম আসবে, এটাই স্বাভাবিক। যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রধান, যিনি প্রকল্প পরিচালক তাদের প্রতিই মানুষ আঙুল তুলবে। সত্যিকারে তারা ছিলেন কি-না সেটা অনুসন্ধানের বিষয়। আমরা চেষ্টা করছি সত্য উদঘাটন করার। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা যাকে যাকে প্রয়োজন, তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ ক্ষেত্রে ইভালুয়েশন কমিটির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করাটা স্বাভাবিক।
১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে যে তথ্য মিডিয়ায় এসেছে ওই প্রসঙ্গে তিনি সত্য বা মিথ্যা কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন, নিশ্চয় তাদের কোনো সোর্স আছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক কোনো প্রতিবাদ জানাবে কি-না এ প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দুদক প্রতিবাদ করার প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি সুংক্ষুব্ধ হয় বা কারও যদি ক্ষতি হয়, তারা চাইলে প্রতিবাদ করতে পারে। প্রয়োজনে মন্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে কানাডার পুলিশ। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও দুদকে কিছু তথ্য পাঠানো হয়েছে। ওই তথ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছে একটি চিঠিতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকার নতুন কোনো কমিটি গঠন না করলেও দুদক নতুন করে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ১৪ জুন দুদক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভাই ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ওরফে দাদা ভাইয়ের ছেলে নিক্সন চৌধুরীকে। নিক্সন চৌধুরী দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, এসএনসি-লাভালিনের হয়ে ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। দুদক তার কাছ থেকে আরও বেশকিছু তথ্য জানতে চায়। কেন এবং কী সুবিধা পেয়ে তিনি এসএনসি-লাভালিনের হয়ে তদবির করেছিলেন এর তেমন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা সই করলেও সরকার এখন বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের ঋণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায়। এরই অংশ হিসেবে দুদক তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে দুদক তথ্য চাইলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয় সরকারকে। ওই প্রতিবেদন থেকেই দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানতে পারে দুদক। প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিষ্টতা এবং সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়।
দুদকের তদন্ত দলের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ‘এসএনসি-লাভালিনের কাছে ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কানাডীয় তদন্ত দল। কিন্তু কানাডার আইন আর বাংলাদেশের আইন এক নয়। কানাডার আইনে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে কথা বলাই অপরাধ। কিন্তু বাংলাদেশে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।’ ফলে দু’দেশের আইনের পার্থক্যে প্রতিবেদনের গরমিল হতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল এসএনসি-লাভালিন, যুক্তরাজ্যের হালক্রো গ্রুপ, নিউজিল্যান্ডের একম অ্যান্ড এ জেড এল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান হাই পয়েন্ট রেন্ডাল। এর মধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এরপরই এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা স্থগিত করে দেয়। এ নিয়ে কানাডা পুলিশ এখনও তদন্ত করছে। আর তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী তার আত্মীয় জিয়াউল হককে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে সেতু ভবনে পদ্মা সেতু সম্পর্কিত একটি বৈঠক করেন। জিয়াউল হক ছিলেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও রয়েছে প্রতিবেদনে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ৭/৪, এ ব্লক, লালমাটিয়া। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও জিয়াউল হক ওই বেঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাতে কোনো অর্থের লেনদেন বিষয়ে অস্বীকার করেন তিনি।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ফুফাত ভাই ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ওরফে দাদা ভাইয়ের ছেলে নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। কানাডা ও বাংলাদেশের যেসব হোটেলে তাদের নিয়মিত সাক্ষাত্ হতো তার ঠিকানা ও সময়সূচি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিক্সন চৌধুরী তার বাবা মরহুম সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর রেখে যাওয়া পারিবারিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিতা কনস্ট্রাকশন ও মহাখালীতে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন দেখাশোনা করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর দরপত্রে অংশগ্রহণ করার পরই উভয়ের মধ্যকার দেখা-সাক্ষাত্ শুরু হয়। এসব বৈঠকে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব এবং প্রকল্প পরিচালকও উপস্থিত থাকতেন বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম তুলেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই সময়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়ে এই দুর্নীতির সঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা জানানো হয়। এরপর সরকার মন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে অন্যত্র সরিয়ে দিলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে সাহায্য স্থগিত করে রাখে। এরপর গত এপ্রিলে দুর্নীতির প্রমাণ দিয়ে আবার একটি চিঠি দেয় বিশ্বব্যাংক। তাতেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সবশেষ চলতি মাসে আবার একটি চিঠি দেয়ার পর তদন্ত শুরু করে দুদক।
ডেসটিনির ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ : এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির শীর্ষ পর্যায়ের ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। বুধবার দুদক কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা জানিয়েছেন, গণমাধ্যমে ডেসটিনি বিষয়ে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর বিষয় নিয়েই মূলত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে ডেসটিনির পরিচালকদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর সঙ্গে গতকালের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে দুদক। গতকাল যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালক জামশেদ আরা চৌধুরী, শেয়ারহোল্ডার শাহ আলম, বি বিকাশ শীল, মাহবুবুর রহমান, আশরাফুল আমিন, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন রানা, সদস্য আহসানুল কবির বিপ্লব, আযাদ রহমান, শান্ত সিকদারসহ আরও দু’জন সদস্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ডেসটিনির পরিচালকদের জবানবন্দি মিলিয়ে দেখতে ওই প্রতিষ্ঠানের ১১ কর্মকর্তাকে তলব করে কমিশন।
দুদকের ব্রিফিং : এদিকে গতকাল ব্রিফিং করেছেন দুদকের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। তিনি দুদকের মে মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মে মাসে দুদকে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১১৩১। যাছাই-বাছাই শেষে কমিশন অনুসন্ধানের জন্য ৭৯টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে প্রেরিত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৮০টি। কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়া ও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না থাকায় অগৃহীত অভিযোগ ছিল ৯৭২টি। মে মাসে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিবেচ্য প্রতিবেদন ছিল ৪১টি। অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ৯টি।
মামলা সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়েছে, মে মাসে মামলা দায়েরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৬টি। মামলায় সম্পৃক্ত হয়েছে ১৮ সরকারি চাকরিজীবী, ৯ ব্যবাসয়ীসহ মোট ৩৭ জন। চার্জশিট দাখিল হয়েছে ৬১টি। অভিযুক্ত আসামির সংখ্যা ৯৭। এদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৩৫, জনপ্রতিনিধি ৪, ব্যবসায়ী ৪৫ ও অন্যান্য ১৩ জন। মামলার বিচার সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়েছে মে মাসে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৬টি, সাজা হয়েছে ১ জনের ও সাজা হয়েছে ৫ জনের।
মামলায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অভিযোগ ছিল ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় হাতে-নাতে গ্রেফতার হওয়ায় চট্টগ্রাম-২ পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির ডিজিএম মো সলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহেযাগিতায় তৈরি পোশাক রফতানি দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব আত্মসাত্ ও প্রতারণার অভিযোগে বেস্টওয়্যার গার্মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড চেয়ারম্যান ফজলুল হক খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা ঘুষসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার হওয়ায় রংপুরের মিঠাপুুকুর উপজেলার জায়গিরহাট উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩৬০ টাকা তথ্য গোপন এবং ৭০ লাখ ২৪ হাজার ২৪১ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকার উত্তরার প্রতীক ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের মালিক একেএম আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কমিশন ক্ষমতা অপব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমানে মাঝারি শহর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শাহবাজ সহ ১৮ জনের রুিদ্ধে ১৭ মামলায় চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে।
দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে ৫০ লাখ ৫২ হাজার ১০৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ডেসা বর্তমানে ডিপিডিসি রাজারবাগ মো. আবদুুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে।
এছাড়া ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক সিলেটের সুবিদবাজার শাখার জুনিয়র অফিসার মো. ইলিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads