রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

ক্ষমতা হাতে পেয়ে একসময়ের আদর্শবাদীরা এখন...



কাদের গনি চৌধুরী
বাম রাজনীতিকদের অনেকেই এখন আর আগের মতো নেই। একসময় ওই বাম নেতাদের দেখা গেছে নির্লোভ থাকতে। গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদের তোয়াক্কা করতেন না তারা। কিন্তু এখন তারা পাল্টে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। চড়ছেন দামি গাড়িতে আর গড়ে তুলছেন সম্পদের পাহাড়।
বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাম নেতাদের অনেকের ভাগ্য খুলে গেছে। জোটের শরিক হিসেবে কেউ পেয়েছেন মন্ত্রিত্ব আবার কেউ সংসদীয় কমিটির সভাপতি। ক্ষমতা পাওয়ার পর পুরোপুরি পাল্টে গেছেন তারা। এখন বিলাসবহুল গাড়ি আর এসি ছাড়া দিন চলে না। বিলাসী জীবনযাপন করতে গিয়ে তাদের কেউ কেউ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। এদের কেউ কেউ ঘুষ-দুর্নীতিতে বুর্জুয়া নেতাদের চেয়েও এগিয়ে আছেন।
সরকারি প্লট নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এখন বেশ আলোচিত। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন আগেই সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ ছিল রাজধানীর অন্যতম সেরা দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ থেকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানোর। যদিও তিনি এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অবশ্য আলোচনায় এখন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে নিজের ও পরিবারের নামে একাই দখল করেছেন ৬টি সরকারি প্লট। এর আগে বিলাসবহুল গাড়ি আর এসি ঘুষ নেয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে। শুধু তাই-ই নয় ক্ষমতার উত্তাপে এ বাম নেতা এখন নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন।
রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এক সময়ের কট্টর বাম নেতা (গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম। এ অভিযোগের কারণে তাকে রেল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে হয়। এখন তিনি দফতরবিহীন মন্ত্রী। রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে হয়। কিছুদিন পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে গাড়িতে পতাকা ওড়ানো আর সরকারি প্রটোকল পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলও কম যান না। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই-ই নয় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদের এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসিও একই অভিযোগ এনেছেন।
মেননের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : মহাজোটের রাজনৈতিক শরিক হওয়ার সুবাদে এ সরকারের আমলে রাশেদ খান মেনন দুটি প্লটের মালিক হয়েছেন। এর একটি সরকারি শিল্প প্লট। অন্যটি রাজউকের পূর্বাচলের আবাসিক প্লট। মেননের পূর্বাচলের প্লট নিয়ে কথা না উঠলেও এরই মধ্যে তার শিল্প প্লট নিয়ে কথা উঠেছে। শিল্প প্লটটি বেআইনিভাবেই পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বেআইনিভাবে শিল্প প্লট নেয়া ব্যক্তিদের আদালত তলব করেছে। ২৬ জনের ওই তালিকায় মেননও ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাদ পড়েছে তার নাম। মন্ত্রণালয় থেকে বেআইনিভাবে প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের যে তালিকা দেয়া হয়েছিল তাতে রাশেদ খান মেননেরও নাম ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ওই তালিকা থেকে পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ খান মেননসহ মোট ৪ জন শিল্প প্লট পেয়েছেন ২০১০-১১ সালে। এ তালিকায় আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। তাদের প্লট দেয়ার জন্য নতুন করে ৪টি প্লট বানানো হয়েছে। প্লট নম্বর হচ্ছে ১৩৩/১/ক, ১৩৩/১/খ, ১৯০/এ/১, ১৯০/এ/২। এ ৪টি প্লটের প্রথমটির মালিক রাশেদ খান মেনন। এটি তিনি নিয়েছেন সুদীপ্ত প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে। এছাড়াও ১৩৩/১/খ প্লটটি পেয়েছেন নীলা কম্পিউটারের নামে, ১৯০/এ/১ প্লটের মালিক মাদার ক্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ১৯০/এ/২ প্লটের মালিক এশিয়া মার্শেল নামের একটি কোম্পানি। এ ৪টি প্লট ওই এলাকায় নতুন করে তাদের দেয়া হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে রাশেদ খান মেনন ও নীলা কম্পিউটারকে প্লট বরাদ্দ দিতে গিয়ে দেখানো হয়েছে তারা ১৭ বছর আগে টাকা জমা দিয়েছেন। সেই হিসেবে তারা প্লট পেয়েছেন। ১৭ বছর আগের দামেই তাদের প্লট দেয়া হয়েছে। এজন্য নতুন করে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, বিএনপি সরকারের আমলে ৩০ লাখ টাকা করে বিঘা নিয়ে শিল্প প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও নতুন প্লটের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় দেড় যুগ আগের দাম হিসাবে। তাছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় ওই প্লটটি পাওয়ায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ এ প্রকল্পে কাউকেই কোনো প্লট দেয়ার কথা নয়।
রাশেদ খান মেনন শুধু একটি শিল্প প্লটের মালিক তাই নন। তিনি একটি আবাসিক প্লটেরও মালিক। রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পেও একটি প্লট পেয়েছেন তিনি। সেই প্লটের আয়তন ১০ কাঠা। তিনি ওই প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হন, তবে ওই প্লট পাওয়ার পর এখনও সব টাকা পরিশোধ করেননি বলে জানা গেছে। তিনি সংসদ সদস্য কোটাতেই প্লটটি পেয়েছেন।
শুধু আবাসিক আর শিল্প প্লটই নয়, মহাজোট সরকারের প্রভাবশালী এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছেন এ বাম নেতা। তার বিরুদ্ধে দুটি সেরা স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্য, বহির্ভূতভাবে গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক নিয়োগ, সভাপতি পদে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্ব সহকারে ছাপাও হয়েছে।
পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ থেকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো। স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি। আর সে সুযোগে ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল স্কুলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ কর্মকাণ্ডে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী স্ত্রী এবং ছেলেও জড়িত বলে জানা গেছে।
ভিকারুননিসার নূন স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম ওই সময় এক সাক্ষাত্কারে আমার দেশ-এর কাছে এ অবৈধ ভর্তির কথা স্বীকারও করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, এ বছর স্কুলে নতুন ভর্তির শতকরা ৩৫ ভাগই সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি এ হার বাড়িয়ে ৫০ ভাগ করতে বলেছিল বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, পরীক্ষার আগে সভাপতি ১৫টি এবং শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সব সদস্য প্রত্যেকে ৭টি করে মোট ৭১টি ফরম স্কুল থেকে স্বাক্ষর করে বাড়িতে নিয়ে গেছেন, যে ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। সেই ৭১ ফরমে আবেদন করা সবাইকে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর সভাপতি রাশেদ খান মেনন কোনো স্বাক্ষর ছাড়া আরও ১৫০ ছাত্রীর তালিকা তৈরি করে পাঠান। এদেরও ভর্তি করা হয়। এর বাইরে টেলিফোনে সুপারিশের ভিত্তিতেও অনেক ছাত্রী ভর্তি করাতে বাধ্য হন তিনি। এসব ভর্তি বাবদ জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে এমন কথা অধ্যক্ষ শুনেছেন বলে আমার দেশকে জানান।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের অভিযোগ, স্কুলের বর্তমান অ্যাডহক কমিটি ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বনশ্রী শাখায় ৪০০ ও মতিঝিল শাখায় ৬০০ জনসহ মোট ১ হাজার শিক্ষার্থী অবৈধভাবে ভর্তি করেছে। আর শিক্ষার্থীপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ওইদিন আমার দেশ-এর সরেজমিন পর্যবেক্ষণেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে ওই বছরের ১৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বর্তমান অ্যাডহক কমিটির পদত্যাগও দাবি করা হয়। প্রথম দুই বছর তিনি যেভাবে ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন এখন সেটা কিছুটা কমেছে।
মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বাগিয়েছেন ছয় সরকারি প্লট, এছাড়া কোটি টাকা দামের গাড়ি ও দুটি এসি উপঢৌকন নেয়ার অভিযোগ : সাড়ে তিন বছর আগের দিলীপ বড়ুয়া আর এখনকার দিলীপ বড়ুয়াকে মেলানো দায়। এখন দামি গাড়ি আর রুমে এসি ছাড়া তার চলে না। প্রায় সময় টাই-স্যুট পরে ফিটফাট থাকেন।
মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে দিলীপ বড়ুয়া এখন নিজে দুটি সরকারি প্লটের মালিক। স্ত্রীর নামে নিয়েছেন আরও একটি। এছাড়া মেয়ের নামে একটি এবং ভাইয়ের ছেলের নামে একটি মিলিয়ে মোট পাঁচটি প্লটের মালিক। তাদের এসব প্লটই হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে। আর মন্ত্রী নিজে পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ বড়ুয়া শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পর প্রথম সরকারি প্লট পান রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে। সেখানে তার নিজের নামে পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় রাজউকের টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্টের ১৩ এ (সি) ধারার আওতায়। এরপর রাজউক পূর্বাচলে জমি বরাদ্দের ঘোষণা দিলে সেখানেও তার স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের অপর সদস্যের নামে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-৬-এর সংশ্লিষ্ট ডেস্ক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রাজউকের ১২তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের আলোকে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৩ এ (সি) ধারার সুপারিশ অনুযায়ী সংরক্ষিত কোটায় মোট ২২ জনকে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ২২ জনের মধ্যে তিনজনই হচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে তার স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানীর নামে পূর্বাচলে বরাদ্দ দেয়া হয় পাঁচ কাঠা জমি। মন্ত্রীর মেয়ে ডা. উপমা বড়ুয়ার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন কাঠা এবং দিলীপ বড়ুয়ার ভাই অলক বড়ুয়ার নামে দেয়া হয়েছে তিন কাঠা। মন্ত্রী পরিবারের এ সদস্যরা মিলে মোট ১১ কাঠা জমি পেয়েছেন পূর্বাচলে। এ জমির বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা। এছাড়া মন্ত্রীর আত্মীয় ও এপিএস পুলক বড়ুয়ার নামেও তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পূর্বাচলে।
জানা গেছে, দিলীপ বড়ুয়া তার নিজের নামে কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে যে প্লটটি পেয়েছেন তার বর্তমান বাজারমূল্য আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ কাঠার একটি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। তার এই প্লটটি পাওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা একের অধিক সরকারি প্লট নিতে পারেন না, কিন্তু এ বাম নেতার ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।
অবশ্য পত্রিকায় এ ব্যাপারে খবর প্রকাশিত হলে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমি পূর্বাচলে একটি প্লট পেয়েছি। আমার স্ত্রী পেশাজীবী হিসেবে আবেদন করে একটি প্লট পেয়েছে। কিন্তু স্বচ্ছতার জন্য আমি আমার নিজের প্লট রেখে স্ত্রীর নামে বরাদ্দ পাওয়াটা ছেড়ে দিয়েছি। এছাড়া আমেরিকা প্রবাসী আমার ছোট ভাই অলক বড়ুয়া এবং আমার মেয়ে উপমা বড়ুয়া একটি করে প্লট পেয়েছে। তারা প্রবাসী কোটায় আবেদন করে প্লট পেয়েছে। এতে নিয়ম-নীতির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা তার পরিবারের সদস্যদের প্লট প্রাপ্তির বিষয়ে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে প্রশ্ন করলে তিনি বারবার সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।
শুধু প্লটই নয়, যমুনা সার কারখানায় কোটি কোটি টাকা লুটপাট আড়াল করতে দিলীপ বড়ুয়াকে ৯১ লাখ টাকা দামের গাড়ি ও দুটি এসি উপঢৌকন দেয়ার ঘটনা ঘটে। মিতসুবিসি কোম্পানির দামি এ গাড়ি এবং দুটি এয়ারকন্ডিশনার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার অফিসে পৌঁছেও দেয়া হয়। গাড়ির নম্বর জামালপুর ১১-০০২০। তবে মন্ত্রী গাড়ির চাবি বুঝে নেয়ার আগেই সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশ হয়ে যায়। এ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের মে মাসে।
জানা যায়, যমুনা সার কারখানা বন্ধ করে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারহোলিংয়ের কাজ শুরু হলে শ্রমিক নিয়োগ ও মালামাল কেনা বাবদ কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার উপস্থিতিতে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। যমুনা সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) এক অভিষেক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তারাকান্দিতে এলে মঞ্চে তার উপস্থিতিতেই বক্তৃতায় এসব অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু মন্ত্রী ওভারহোলিংয়ের নামে দুর্নীতি বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি অনুষ্ঠানে; বরং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল্লাহ এবং স্থানীয় জনগণ ওই সময় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ওভারহোলিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট আড়াল করতেই মন্ত্রীকে এসব উপঢৌকন দেয়া হয়।
দিলীপ বড়ুয়া শুধু নানা অনিয়মেই জড়াননি। তিনি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্যার ফজলে হাসান আবেদকে রাজনীতিতে এসে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরামর্শ দেন দিলীপ বড়ুয়া। বিরোধীদলীয় নেতাকেও কটাক্ষ করেন। এমনকি টিভির টকশোতে অংশ নেয়া বুদ্ধিজীবীদের অন্ধ আখ্যায়িত করে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এক অনুষ্ঠানে বলেন, গভীর রাতে যারা টকশো করেন, তারা আসলে জেগে ঘুমান বলেই সরকারের কোনো উন্নয়ন দেখতে পান না। শুধু সরকারের সমালোচনা করতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কটাক্ষ করে দেয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছিলেন, আমি তার (শিল্পমন্ত্রী) প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, তিনি ড. ইউনূসের নখের সমান হওয়ার যোগ্যও নন। তার মুখে এমন মন্তব্য মানায় না। একজন মন্ত্রী যদি এ রকম বেকুবের মতো কথা বলেন, তাহলে তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হয় না।
নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্যার ফজলে হাসান আবেদকে রাজনীতিতে এসে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরামর্শদাতা দিলীপ বড়ুয়া এ পর্যন্ত যতবারই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রতিবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের দুটি নির্বাচনেই তার জনপ্রিয়তা ছিল শূন্যের কোটায়। ’৯৬-এর নির্বাচনে তার সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে অংশ নেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০০৮ সালে অংশ নেয়ার সুযোগই পাননি। তবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হয়েছেন। সংসদ সদস্য তো দূরের কথা, এ পর্যন্ত তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রতিবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ১৯৯৬ সালের চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে চেয়ার প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারান। মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৩ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৩ জন ভোট প্রদান করে। এর মধ্যে দিলীপ বড়ুয়া পান মাত্র ৫৭৭ ভোট, যা মোট ভোটের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। ওই আসন থেকে ৬৬ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
২০০১ সালের নির্বাচনে একই আসনে মোট ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার জন ভোট দেন। এর মধ্যে মাত্র ৩০৭ ভোট পান দিলীপ বড়ুয়া; যা মোট ভোটের মাত্র শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই আসন থেকে ৮৬ হাজার ৮৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আর দু’বারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয় দিলীপ বড়ুয়ার।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীকে তার নির্বাচনী আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। সারা জীবন তিনি বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে গগণবিদারী স্লোগান দিলেও মন্ত্রী হওয়ার পর পুঁজিবাদের পক্ষেই সাফাই গাইছেন তিনি।
সারা জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস গত বছরের ৩০ আগস্ট এক তারবার্তা ফাঁস করে। ওই তারবার্তায় দিলীপ বড়ুয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে দিলীপ বড়ুয়াকে কম হুমকি বলে মনে করেছিলেন। এ কারণেই বাম রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে বাদ দিয়ে তিনি তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় এ কথাই উল্লেখ করেন।
রেলের চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেংকারির কারণে রেল মন্ত্রণালয় হারান সুরঞ্জিত : এক সময়ের তুখোড় বাম রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। হালে আওয়ামী লীগের নেতা। দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। আজীবন জোর গলায় বড় বড় কথা বলতেন তিনি। সুযোগ পেলে কাউকে ছাড়তেন না। বিশেষ করে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলকে বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক হাত নিতেন। অথচ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মন্ত্রিত্ব হারাতে হয় তাকে।
নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার টাকার বস্তাসহ বিজিবি সদর দফতরে আটক হওয়ার ঘটনায় তুমুল বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করতে হয় তাকে।
৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম মতো মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
গত ৯ এপ্রিল রাতে সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থসহ রেলের দুজন কর্মকর্তা ধরা পড়েন। জানা যায়, ঘুষের এ টাকা নিয়ে তারা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, সুরঞ্জিত ওই রাতে তদবির করে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা যাতে নেয়া না হয়, সেজন্য তিনি তদবির করেন। রেলওয়ের চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেংকারি নিয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলে ৬ দিনের মাথায় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন সাড়ে চার মাস আগে মন্ত্রিত্ব পাওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অবশ্য একদিন পর নাটকীয়ভাবে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়।
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তাকর্মী এনামুল হক ৯ এপ্রিল গভীর রাতে ৭০ লাখ টাকাসহ ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে ধরা পড়েন। প্রায় ১২ ঘণ্টা বিজিবির হাতে আটক থাকার পর রেলমন্ত্রীর চাপে ১০ এপ্রিল দুপুরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তারা জানান, ওই টাকাসহ রেলমন্ত্রীর জিগাতলার বাসায় যাচ্ছিলেন এবং তাদের অপহরণ করার লক্ষ্যেই চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির গেটে ঢুকিয়ে দেন। এরপর বিজিবি সদস্যরা তাদের টাকাসহ আটক করেন। পরে এপিএস ও রেল কর্মকর্তারা ছাড়া পেলেও চালক আলী আজম এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
জানা যায়, রেলওয়েতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগবাণিজ্যের মন্ত্রীর ভাগের একটি অংশ প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা তার জিগাতলার বাসায় পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তারা আটক হন। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সরকারি দলের একাধিক এমপি, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন মহল থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলে। বিরোধীদলীয় সংসদীয় কমিটি সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। একইদিন রাতে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তাকে জরুরি তলব করেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাকে দুটি অপশন দেন। এক. নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা; দুই. পদত্যাগ করা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করেই পদত্যাগ করেন।
এক সময়ের এ বাম রাজনৈতিক নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে এখন সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের মালিক। সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের মালিকানাধীন ‘সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডকে’ সম্প্রতি ‘ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ’ বা আইসিএক্স লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নতুন এ লাইসেন্স নেয়ার জন্য তাকে বিটিআরসিতে ফি বাবদ জমা দিতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির দুই দিন পর সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনের নামে অত্যন্ত লোভনীয় এ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এর ফি বাবদ পরিশোধিত টাকার উত্স নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ চাকরিজীবী সৌমেন এত টাকা কোথায় পেলেন? কীভাবে পরিশোধ করলেন আইসিএক্স লাইসেন্স ফির ৫ কোটি টাকা? তাছাড়া আইসিএক্স অবকাঠামো তৈরিতে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
জাসদ নেতা বাদলের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিজ জোটের : চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই-ই নয়, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। মিছিল সমাবেশ করে তাকে মহাজোট থেকে বের করে দেয়ারও দাবি জানিয়েছে তারা। মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদের এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসিও একই অভিযোগ এনেছেন।
মইনুদ্দিন বাদলের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৭ আসনে মহানগর এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ভয়াবহ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বাদল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া, নামসর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন ক্লাব, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের নামে গম ও নগদ অর্থ সহায়তা দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার সরকারি তহবিল নয়-ছয় করেছেন। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৭ আসনে মহানগর এলাকায় সরকারি পরিপত্র লঙ্ঘন করে নিবন্ধনবিহীন বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই ঠিকানা নেই, ওয়ার্ডের নাম নেই।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের মহানগরী এলাকার চান্দগাঁও-পাঁচলাইশে টিআর প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দকৃত গম ও অর্থের ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দুদকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে ২০১০-১১ অর্থবছরে অর্থ ও গম বরাদ্দপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি ভুঁইফোড় সংগঠনের মধ্যে রয়েছে—বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ। এটির উন্নয়নে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয় ৮০ হাজার টাকা। এভাবে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শ্রমকল্যাণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসংঘ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নামেও গম ও অর্থ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের দু-একটি ছাড়া কোনোটিরই ঠিকানা নেই, অস্তিত্বও নেই। এ জন্য একটি এলাকায় কিংবা ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধুর নামে কয়টি সংগঠনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সংগঠনের পরিচিতি ও নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই বরাদ্দ তালিকায়। একইভাবে নব দিগন্ত ক্লাব উন্নয়ন নামের আরেকটি সংগঠনকে দেয়া হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো ঠিকানা নেই। সবুজ সংঘের নামে দেয়া হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো ঠিকানা নেই। এ ধরনের আরও শত শত অনিয়ম হয়েছে বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে। যদিও সরকারি পরিপত্রে বলা হয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের কোনো না কোনো বিভাগের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধিত হতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads