রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

কেন এই হুমকি-ধমকি ও উগ্রতা


ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র। দেশটির নেতারা গৌরবের সাথেই বলে থাকেন যে, ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রও বটে। তাঁরা বৈচিত্র্যের ঐক্যের কথাও খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরে থাকেন। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের নেতাদের এইসব কথা আমাদের ভাল লাগে এবং আমরা চাই দেশটি যেন সেভাবেই বেড়ে ওঠে। তবে মাঝে মাঝে ভারতে যখন সাম্প্রদায়িক কিংবা বর্ণবাদী দাঙ্গার ঘটনা ঘটে তখন আমাদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কোনো কোনো নেতা যে ধরনের উগ্র ভাষায় কথা বলেছেন এবং সেখানকার সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় কারণে যে ধরনের বৈষম্য ও পীড়নের শিকার হচ্ছেন তাতে বিবেকবান মানুষরাও বিস্মিত হয়েছেন। আমরা জানি না ভারতের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদরা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নে এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে কতটা সক্ষম হবেন। তবে প্রতিবেশী দেশের নাগরিক হিসেবে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সাথে অবলোকনের চেষ্টা করবো।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংস্থাকে ভিসা দেয়নি ভারত সরকার। এ নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে চাপা টানাপোড়েন। এদিকে ভিসা নাকচ করলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসে মার্কিন সরকারের উক্ত সংস্থা থেকে। জি-নিউজের বিশ্লেষণে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস অব ফ্রিডম বিভিন্ন দেশে সফরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তা নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে সংস্থাটি। সংস্থাটি ভারত সম্পর্কে এর আগে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছিল। এছাড়া নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতে ধর্মীয় সংঘাত আগের চেয়ে বেড়েছে, এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সংস্থাটির ওপর ভারত সরকার নাখোশ হয়েছিল। এ কারণে তাদের ভারতে আসার ভিসা দেয়া হয়নি। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান রবার্ট জর্জ বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যখন ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান তখন ভিসা না দেয়াটা হতাশাজনক। তিনি আরও বলেন, ভারত তো একটি অসাম্প্রদায়িক, বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের প্রতি তাদের আস্থা থাকা উচিত এবং আমাদের সেখানে যাবার অনুমতিও দেয়া উচিত। রবার্ট জর্জ আরও বলেন, ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়, নাগরিক সংগঠন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, গত দু’বছরে দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিবেশে অবনতি হয়েছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই সংস্থাটিকে কেন ভিসা দেয়া হলো না তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ভারতীয় কনস্যুলার বিভাগ। ভারতের পররাষ্ট্র দফতরও এ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এ বিষয়ে তারা নীরব রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংস্থাকে ভারত ভিসা না দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে মোদি সরকার নাখোশ হয়েছে। কিন্তু ভারতে ধর্মীয় সংঘাত আগের চাইতে বৃদ্ধি পাওয়ার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়গুলো তো খোদ ভারতের লেখক, বুদ্ধিজীবী ও বিবেকবান মানুষরা তুলে ধরছেন। আমরা মনে করি, ভারতের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা সংকটের বিষয়গুলো উপলব্ধি করবেন এবং সঙ্গত পদক্ষেপ গ্রহণেও এগিয়ে আসবেন। তবে বর্তমান সময়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতাই যেভাবে হুমকি-ধমকিসহ উগ্র ভাষায় কথা বলছেন, তা ভারতের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে মিলে না। যেমন গত ৩ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বীরভূম জেলার সিউড়িতে রীতিমত হুমকির সুরে বললেন- যেসব নেতা, অভিনেতা, লেখক, গায়ক, শিক্ষাবিদ, উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেবে তাদের ধরে এনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বিজেপি নেতা দম্ভের সাথে আরও ঘোষণা করলেন, বোমার বদলে বুলেট দিয়ে পাকিস্তানকে ঠা-া করে দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে। এখানে বাংলাদেশকে কেন টেনে আনা হলো তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিকটতম রাজ্যের একজন নেতার এমন বক্তব্যকে মেনে নেয়া যায় না। বন্ধু রাষ্ট্রের নেতাদের বক্তব্য এমন হলে অঞ্চলের শান্তিকামী মানুষরা আশাবাদী হবে কেমন করে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads