শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৬

সুচি’র আর একদিক


আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। দেশটির কিছু কর্মকা- মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। দেশের নেতৃবৃন্দও এই প্রশ্নের বাইরে নয়। তবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচিকে নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের আশাবাদ ছিল। নিজ দেশ মিয়ানমারের কল্যাণে ১৫ বছর গৃহবন্দী থাকায় পশ্চিমাদের কাছে ন্যায় পরায়ণতার বিশুদ্ধ বাতিঘর হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছেন সুচি। কিন্তু তার অন্য একটি দিক আছে যা তার দেবীতুল্য ইমেজের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিবিসি টুডের বিখ্যাত উপস্থাপক পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত সাংবাদিক মিশাল হুসেনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সুচি তার চরিত্রের অপর দিকটি নিজেই উন্মোচন করে দেন। ফলে বিষয়টি বিশ্বের গণমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পায়।
বিবিসি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে সুচি মেজাজ হারান এবং তাকে বিড় বিড় করে ক্রোধের সাথে বলতে শোনা যায়, ‘একজন মুসলিম যে আমার সাক্ষাৎকার নেবে এটা আমাকে কেউ বলেনি’। এশিয়ার এই দুই বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় মিশাল যখন সুচিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বৌদ্ধদের নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন করেন। সুচিকে এই নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান মিশাল। উল্লেখ্য যে, ৭০ বছর বয়সী সুচি তার দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অমানুষিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কখনও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সুচির অন্ধ সমর্থকরাও এ কথা স্বীকার করেন যে, রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বৌদ্ধদের বর্বর নির্যাতনের ব্যাপারে সুচি’র আচরণ সন্দেহজনক।
সাক্ষাৎকারে মিশাল যখন সুচিকে ইসলাম বিরোধিতা ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার ব্যাপারে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান তখন তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। সুচি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি অনেক বৌদ্ধও বিভিন্ন কারণে দেশত্যাগ করেছে। এটা আসলে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের ফল’। ভাবতে অবাক লাগে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী একজন নেত্রী কী করে প্রকৃত সত্যকে এভাবে অস্বীকার করেন? বৌদ্ধদের দেশত্যাগের সাথে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশত্যাগের বিষয়টিকে তিনি এক কাতারে সামিল করলেন কোন কাণ্ড-জ্ঞানে? আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তার সাম্প্রদায়িক চেতনা। তিনি কী করে বললেন, ‘একজন মুসলিম যে আমার সাক্ষাৎকার নেবে এটা আমাকে কেউ বলেননি’। বিবিসিতে তো নানা ধর্মের লোকজন কাজ করেন। কিন্তু তিনি আপত্তি প্রদর্শন করলেন একজন মুসলিম উপস্থাপকের বিরুদ্ধে। এমন চেতনার মানুষ কী করে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তা এখন এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে? বর্তমান সভ্যতার চিত্রটা কি এমন যে, এখানে কথা ও কাজে মিল না থাকলেও চলে? স্বার্থের যোগ-বিয়োগই কী বর্তমান সভ্যতার চালিকা শক্তি? পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষই তো চায় মানুষের বসবাস-উপযোগী ন্যায়ভিত্তিক এক বিশ্ব-সমাজ। এমন আকাক্সক্ষার অনুকূলে যারা কাজ করবেন তারাই হবেন আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। বর্তমান পৃথিবীর ভ্রষ্ট রাজনীতির কারণে ইতোমধ্যে ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ার জনগণের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারেও শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে বহু নর-নারী ও শিশু ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন এবং অনেকে উদ্বাস্তু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। মানুষের সমাজে মানুষের এমন করুণ পরিণতি তো কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারেন না। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচিও বিষয়টি না বোঝার কথা নয়। তিনি হয়তো মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের অন্যায় আচরণকে সমীহ করে চলছেন। ভোটের রাজনীতির কারণেই হয়তো তিনি অন্যায়ের কাছে মাথানত করেছেন। তবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে ধৈর্য ও ত্যাগের কিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন তাতে আমরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও তিনি ন্যায়ের দৃষ্টিতে কিছু করার চেষ্টা করবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads