বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬

কারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই


বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার উধাও করে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে শুরু করেছে। সেইসাথে একদিকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের ভূমিকা নিয়ে যেমন অসংখ্য প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি তদন্ত, বিচার এবং শাস্তির ব্যাপারেও দেখা দিচ্ছে গভীর সংশয়। প্রসঙ্গক্রমে বেশি আলোচিত হচ্ছে গবর্নর আতিউর রহমানের আকস্মিক পদত্যাগ এবং সরকারের কিছু পদক্ষেপ। কারণ, কোনো রকম কারণ না দেখিয়ে এবং ব্যাখ্যা না দিয়েই গত সোমবার হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন গবর্নর আতিউর। তিনি অবশ্য পরদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। বলেছেন, তিনি নাকি কিছুই জানতেন না এবং জানার পর নাকি ‘পাজল্ড’ তথা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন! এটা নাকি তার জন্য ছিল ‘ভূমিকম্পের’ মতো একটি ভয়ংকর বিষয়। ড. আতিউর আরো একটি তথ্যও প্রকাশ করেছেন। সে তথ্যটি হলো- অর্থ পাচারের ঘটনা গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হলেও তিনি তা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেননি এবং জানার পর পর ১ মার্চই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এখানে ঘটনাক্রমের তারিখগুলো লক্ষ্য করা দরকার। কারণ, সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জানার পরও দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন ১৪ মার্চ তারিখে। আর গবর্নর পদত্যাগ করেছেন ১৫ মার্চ।
এখানে অন্য একটি খবরও রহস্যের সৃষ্টি করেছে। এত বড় একটি চুরির ঘটনা জানার পরও গবর্নর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে ভারত সফরে গেছেন, যে সফর তার স্থগিত করা উচিত ছিল। এদিকে গবর্নর আতিউর পদত্যাগ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’জন ডেপুটি গবর্নরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সরিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যাংকিং সচিবকেও। আরো কিছু শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে তথ্যাভিজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদসহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘটনার বিশালত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের পদক্ষেপ মোটেও যথেষ্ট হতে পারে না। কারণ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলেও ধরে নেয়া যায়, গবর্নর ও ডেপুটি গবর্নরসহ উচ্চ পদস্থরা নিশ্চয়ই সরাসরি অপরাধটি সংঘটিত করেননি। এর পেছনে রয়েছে সংঘবদ্ধ কোনো বিরাট দেশী-বিদেশী চক্র। তারাই আসলে মূল হোতা। এদের পরিচিতি সম্পর্কেও জানিয়েছেন তথ্যাভিজ্ঞরা। চক্রটির লোকজন নাকি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিজেদের পছন্দমতো লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ সকল পদে নিযুক্তি দিয়েছে।  সব মিলিয়েই তারা এমনভাবে ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে যাতে অর্থ পাচারের মতো অপরাধ সংঘটনে তাদের কোনো অসুবিধা না হয়। এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সরকারের অবস্থান। কারণ, চক্রটির নানা অপকর্ম সম্পর্কে সরকারের জানা না থাকার কারণ নেই। এজন্যই বলা হচ্ছে, যত ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন, সবই লোক দেখানোর জন্য। রাঘব-বোয়ালরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
আমরাও বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ার পক্ষপাতী নই। কারণ, বিশ্বের কোনো দেশেই এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এত বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেনি। এমন ঘটনা তাই অস্বাভাবিক শুধু নয়, বিস্ময়করও। একই কারণে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এটা অসম্ভবও নয়। কারণ, এরই মধ্যে এমন কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, উদ্দেশ্যে সততা থাকলে যেগুলোর ভিত্তিতে সহজেই অপরাধীদের পাকড়াও করা যেতে পারে। 
একই কারণে আমরা মনে করি, পদত্যাগের মাধ্যমে কেউই দায় এড়াতে পারেন না। চুরির ঘটনা সংঘটিত হবার মাসখানেকেরও বেশি পরে তদন্ত কাজ শুরুর ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক আলামত হারিয়ে গেছে, মুছে ফেলা হয়েছে। এটা কিভাবে ঘটল। গভর্নর আতিউর রহমান সব জানেন। তার সব কথা বলা উচিত। মানুষের সব জানা উচিত। যার ফলে চোর চক্রকে ধরা সম্ভব হবে। এই সম্ভব-সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে হলে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কথিত রাঘব-বোয়ালসহ জড়িত কারো পক্ষেই শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হয়। বলা বাহুল্য, শাস্তি হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। একইসঙ্গে লুণ্ঠিত সমুদয় অর্থ ফিরিয়ে আনারও জোর চেষ্টা চালাতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads