সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে ভিত্তিহীন গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানো অবশ্যই একটি অপরাধ। এই অপরাধ আইনত দণ্ডনীয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব আসাদুজ্জামান মিয়া ঠিকই বলেছেন যে, জঙ্গি হামলার গুজব সৃষ্টি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান মিয়া জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তার অফিসে উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, “আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটি কুচক্রী মহল অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট গুজব ছড়িয়ে জনগণের মনে ভীতি এবং আতঙ্ক তৈরি করছে। কখনো বলছে অমুক তারিখে হামলা হবে, কখনো বলছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গি হামলা হবে, কখনো বলছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গি হামলা হবে। স্কুলে জঙ্গি হামলা হবে, রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা হবে, হোটেলে-মার্কেটে জঙ্গি হামলা হবে, শপিংমলে জঙ্গি হামলা হবে। এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। আমি সকলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, এই ধরনের মিথ্যা গুজবে কেউ কান দেবেন না।”
আছাদুজ্জামান বলেন, “এই ধরনের গুজব রটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে যারা দেশকে অশান্ত করতে চায়, দেশের দৃশ্যমান উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চায়, তারা প্রকৃত অর্থে জঙ্গিদেরই পৃষ্ঠপোষক, জঙ্গিদেরই সমর্থক। তাদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর রয়েছি।”
জঙ্গি হামলা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজ করার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার। জঙ্গি হামলার গুজব বিষয়ক যে কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধও করেন তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “যারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি এ ধরনের কোনো তথ্য পান, সরল বিশ্বাসে কারো সঙ্গে শেয়ার না করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। আমরা সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” ‘দেশে কোনো ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “পুলিশ আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্যে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।”
ডিএমপি কমিশনারের সম্পূর্ণ বক্তব্যই আমরা তুলে দিলাম। পুলিশ সম্ভাব্য জঙ্গি আক্রমণ ঠেকানোর জন্য কী কী করছে এবং ভবিষ্যতে যাতে জঙ্গিরা মাথা তুলতে না পারে তার জন্য পুলিশ যে সব বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেসব পরিকল্পনাও জনগণ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে গেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ তার সামর্থ্যের মধ্যে যা যা করা সম্ভব তার সব কিছুই করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ধরনের গুজব এবং আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কারা? যখন বলা হয় যে, আমি খোলাখুলি কিছু বলব না, ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলব আপনারা বুঝে নেন, তখন কি এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয় না? যখন বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আগামীতে ঐ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চক্রান্ত চলছে, আপনারা সতর্ক থাকুন, তখন কি আতঙ্ক ছড়ানো হয় না? যখন বলা হয় যে, গাছের পাতা যখন নড়ে না, প্রকৃতি যখন শান্ত কিন্তু স্তব্ধ থাকে তখন সেটা ঝড়ের ইঙ্গিত দেয়, তখন কি আতঙ্ক ছড়ানো হয় না? এসব কথা বলেছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি আওয়ামী লীগেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আবার সরকারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন এই ধরনের কথা বলেন তখন মানুষ সহজেই তা বিশ্বাস করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এসব উক্তি নিয়ে মধ্যবিত্তদের ড্রইং রুমে এবং অফিস পাড়ায় তুমুল আলোচনা হয়েছে। আমরা এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এই ধরনের উক্তিকে গুজব ছড়ানো বলব না, তবে এটুকু বলব যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য তার ঐসব উক্তি যথেষ্ট। তার ঐসব উক্তির মাধ্যমে শুধু সাধারণ আতঙ্কই ছড়িয়ে যায় না, রীতিমত ভয়াবহ আতঙ্কও ছড়িয়ে যায়।
॥দুই॥
জাতীয় সংসদের দুই সদস্য সেদিন সংসদের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতায় বলেন, আমরা মরতে ভয় পাই না। কিন্তু তাই বলে লজ্জাজনক মৃত্যু চাই না। ডিসি এসপিসহ সচিব পর্যন্ত সকলকেই তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেয়া হয়। অথচ আমরা অর্থাৎ এমপিরা প্রোটোকলের দিক দিয়ে সচিবের ওপরে হলেও আমাদেরকে গানম্যান দেওয়া হয় না। এই দাবি তুলেছেন দুই জন সদস্য। তারা হলেন জাতীয় পার্টির জনাব ফিরোজ রশিদ এবং জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল। তারা সংসদের স্পিকারের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি করেন, জাতীয় সংসদের সকল সদস্যকে গানম্যান দেয়া হোক। তাদের এই দাবির প্রতি জাতীয় সংসদের সমস্ত সদস্য প্রচ- শব্দে টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ‘সরাসরি’ নামে যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে সেই টেলিভিশন চ্যানেলে এই অধিবেশনের পূর্ণ ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এখন দেশের প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলই সরকার সমর্থক। দুয়েকটি চ্যানেল আছে যাদেরকে সরাসরি সরকার সমর্থক বলা যাবে না। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং বিরোধী দলের কোন রকম রাজনৈতিক তৎপরতার অনুপস্থিতিতে ওরাও পরোক্ষভাবে সরকার সমর্থক চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। তাই এই সব প্রাইভেট চ্যানেলসমূহেও ঐ দুই এমপির বক্তব্য এবং সদস্যদের টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থনের দৃশ্য ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। পত্রপত্রিকাতেও প্রথম পৃষ্ঠায় ফলাও করে খবরটি ছাপা হয়েছে। এমপি সাহেবদের এই সব উক্তির মাধ্যমে কি সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে না? টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখে এবং পরদিন পত্রপত্রিকায় অধিবেশনের ধারাবিবরণী দেখে জনসাধারণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, মন্ত্রীরা যদি চলাফেরা করতে ভয় পান, ৩৪৫ জন সংসদ সদস্য যদি চলাফেরা করতে ভয় পান এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য যদি গানম্যান প্রয়োজন হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কত করুণ এবং অসহায় হতে পারে? সুতরাং এসব ঘটনার মাধ্যমেও ভয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে চৌকশ বাহিনী বলা হয়। তবে আওয়ামী লীগ এই বাহিনীকে অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ করার ফলে জনগণের আস্থায় চিড় ধরেছে।
॥তিন॥
দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মন্ত্রীদের সাবধানে চলাফেরা করতে অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন তার মন্ত্রীদের সাবধান থাকার এবং সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দেন তখন সাধারণ মানুষের পক্ষে ঐ পরামর্শকে হালকা ভাবে নেয়া যায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী কেবল সমস্ত ক্ষমতারই অধিকারী নন, তিনি সমস্ত তথ্যেরও আধার। কারণ দেশের যেখানেই বা যে প্রান্তেই যখন কোন গুরুতর ঘটনা ঘটে অথবা ঘটার আশঙ্ক থাকে তখন তাৎক্ষণিকভাবে সে সংক্রান্ত তথ্য যথাযথ সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হয়। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলন থেকে ফিরে বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী। আমার কাছে সব খবরই আসে। এসব খবরের মধ্যে যতটুকু প্রকাশ করা উচিত ততটুকুই আমি প্রকাশ করি। অবশিষ্ট তথ্যসমূহ আমি সাধারণত সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রকাশ করি না। প্রধানমন্ত্রীর এই কথা এক শত ভাগ সত্য। তিনি সমস্ত খবর রাখেন। তাই তিনি যখন তার মন্ত্রীদেরকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেন, তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ ছাড়া তিনি বলেন না। এখন তথ্য প্রবাহের এমন উন্নতি হয়েছে, তথ্য প্রবাহ এমন বেগবান হয়েছে যে, যখন প্রধানমন্ত্রীর পর্যায় থেকে এই ধরনের কোন সংবেদনশীল বক্তব্য রাখা হয় তখন জনগণের মধ্যেও সেটি প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করে। আমরা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যকে কোনভাবেই ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করছি না। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন যে এই ধরনের বক্তব্যে জনগণের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয় কিনা।
॥চার॥
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব আসাদুজ্জামানের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার প্রতি পূর্ণ আস্থা, সম্মান এবং শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, মন্ত্রীদের কাছে সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য তিনি যে এসএমএস বার্তা পাঠিয়েছেন সেটা তিনি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধের আওতার মধ্যেই পাঠিয়েছেন। মন্ত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান অবশ্যই পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু তার এই এসএমএস পাঠানোর খবর এবং টেক্সট ম্যাসেজ সমস্ত পত্র পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং সম্প্রচারিত হয়েছে। আমি আগেই বলেছি যে এটি হয়তো তিনি তার কর্তব্যবোধের আওতার মধ্যেই করেছেন। কিন্তু এদেশে মন্ত্রীদের কাছে উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের এই ধরনের টেক্সট ম্যাসেজ পাঠানো এবারই প্রথম। তাই যেসব পাঠক পত্রিকায় ঐ খবর পাঠ করেছেন অথবা যেসব দর্শক টেলিভিশনে ঐ খবর দেখেছেন তারা বিস্মিত এবং হতচকিত হয়েছেন। জনগণ পুলিশের এই পদক্ষেপকে এ্যাপ্রিসিয়েট করেও বলছেন যে, মন্ত্রী বা এমপিরা পুলিশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন, ভাল কথা। কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে কে? এসব আলোচনাও কি এখন গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর মধ্যে পড়বে?
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের কাছে পাঠানো ডিএমপি কমিশনারের ওই এসএমএসে সালাম জানিয়ে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, যে কোনো সময় যে কোনো মন্ত্রীর ওপর জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। অনুগ্রহ করে সতর্ক থাকবেন এবং আপনার গানম্যান ও নিরাপত্তা দলকে বিষয়টি অবহিত করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালানো হতে পারে- এমন তথ্য দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার সব সদস্য ছাড়াও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত গানম্যান ও হাউস গার্ডকে সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য ব্রিফ করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বাড়িওয়ালাদের ভীতি ভাড়াটিয়া নিয়ে। তাদের ভয়, কখন না জানি কোন ভাড়াটিয়াকে জঙ্গিদেরকে বাসা ভাড়া দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন খবরের কাগজ এবং টেলিভিশন জুড়ে জঙ্গিবাদের এত খবর থাকছে যে এটাই এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি হয়ে গেছে।
কথায় বলে ‘একে তো নাচুনে বুড়ি, তার ওপরে ঢোলের বাড়ি’। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জঙ্গি হামলার গুজব ও আতঙ্কে ঢোলের বাড়ি দিয়েছে। গত ৮ জুলাই কলকাতার এই বহুল প্রচারিত পত্রিকাটি যা লিখেছে তার অংশ বিশেষ নিচে তুলে দিচ্ছিÑ
“বাংলাদেশের ২৪ স্থানে হামলা চালাবে জঙ্গিরা।”
“সন্ত্রাস কৌশলের যে চিরাচরিত ছকের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন ভারত-বাংলাদেশের গোয়েন্দারা, গুলশান কাফে সেই ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। গুলশানের তদন্তে যে সব তথ্য উঠে আসছে, তাতে স্পষ্ট, এখনই সামাল দেওয়া না গেলে আগামী দিনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় নানা মাপের হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিদের একটি বড়সড় রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি হয়ে রয়েছে রাজধানীর ১৫ কিলোমিটার বৃত্তের মধ্যে! আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৪টি স্থানে জঙ্গিরা হামলা চালাবে বলে জানা গেছে। খবর: আনন্দবাজার।” এরপর পত্রিকাটি লিখেছে, “বুধবার বাংলাদেশে ফের হামলা চালানোর হুমকি দেওয়া যে ভিডিওটি সামনে এসেছে, গুলশান এবং কিশোরগঞ্জে হামলা নিয়ে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।” রিপোর্টের অন্য স্থানে বলা হয়েছে, “গুলশান-কিশোরগঞ্জের মতো হামলা যে অদূর ভবিষ্যতে আরও ঘটতে চলেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনকে ফের সতর্ক করেছে নয়াদিল্লি। ভারত জানিয়েছে, ঢাকার মতো বড় শহর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ মডেলে ছোট ছোট জমায়েতে হামলা চালিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবে জঙ্গিরা। সম্প্রীতি নষ্ট করতে হামলা চালানো হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরেও। ভারত-বাংলাদেশ জঙ্গি দমন সমন্বয়কে অকেজো করে দেয়াটাও লক্ষ্য।”
এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলুন, জঙ্গিবাদের হামলার আশঙ্কা ও গুজব ছড়াচ্ছে কারা?
আছাদুজ্জামান বলেন, “এই ধরনের গুজব রটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে যারা দেশকে অশান্ত করতে চায়, দেশের দৃশ্যমান উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চায়, তারা প্রকৃত অর্থে জঙ্গিদেরই পৃষ্ঠপোষক, জঙ্গিদেরই সমর্থক। তাদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর রয়েছি।”
জঙ্গি হামলা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজ করার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার। জঙ্গি হামলার গুজব বিষয়ক যে কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধও করেন তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “যারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি এ ধরনের কোনো তথ্য পান, সরল বিশ্বাসে কারো সঙ্গে শেয়ার না করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। আমরা সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” ‘দেশে কোনো ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “পুলিশ আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্যে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।”
ডিএমপি কমিশনারের সম্পূর্ণ বক্তব্যই আমরা তুলে দিলাম। পুলিশ সম্ভাব্য জঙ্গি আক্রমণ ঠেকানোর জন্য কী কী করছে এবং ভবিষ্যতে যাতে জঙ্গিরা মাথা তুলতে না পারে তার জন্য পুলিশ যে সব বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেসব পরিকল্পনাও জনগণ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে গেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ তার সামর্থ্যের মধ্যে যা যা করা সম্ভব তার সব কিছুই করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ধরনের গুজব এবং আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কারা? যখন বলা হয় যে, আমি খোলাখুলি কিছু বলব না, ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলব আপনারা বুঝে নেন, তখন কি এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয় না? যখন বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আগামীতে ঐ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চক্রান্ত চলছে, আপনারা সতর্ক থাকুন, তখন কি আতঙ্ক ছড়ানো হয় না? যখন বলা হয় যে, গাছের পাতা যখন নড়ে না, প্রকৃতি যখন শান্ত কিন্তু স্তব্ধ থাকে তখন সেটা ঝড়ের ইঙ্গিত দেয়, তখন কি আতঙ্ক ছড়ানো হয় না? এসব কথা বলেছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি আওয়ামী লীগেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আবার সরকারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন এই ধরনের কথা বলেন তখন মানুষ সহজেই তা বিশ্বাস করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এসব উক্তি নিয়ে মধ্যবিত্তদের ড্রইং রুমে এবং অফিস পাড়ায় তুমুল আলোচনা হয়েছে। আমরা এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এই ধরনের উক্তিকে গুজব ছড়ানো বলব না, তবে এটুকু বলব যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য তার ঐসব উক্তি যথেষ্ট। তার ঐসব উক্তির মাধ্যমে শুধু সাধারণ আতঙ্কই ছড়িয়ে যায় না, রীতিমত ভয়াবহ আতঙ্কও ছড়িয়ে যায়।
॥দুই॥
জাতীয় সংসদের দুই সদস্য সেদিন সংসদের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতায় বলেন, আমরা মরতে ভয় পাই না। কিন্তু তাই বলে লজ্জাজনক মৃত্যু চাই না। ডিসি এসপিসহ সচিব পর্যন্ত সকলকেই তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেয়া হয়। অথচ আমরা অর্থাৎ এমপিরা প্রোটোকলের দিক দিয়ে সচিবের ওপরে হলেও আমাদেরকে গানম্যান দেওয়া হয় না। এই দাবি তুলেছেন দুই জন সদস্য। তারা হলেন জাতীয় পার্টির জনাব ফিরোজ রশিদ এবং জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল। তারা সংসদের স্পিকারের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি করেন, জাতীয় সংসদের সকল সদস্যকে গানম্যান দেয়া হোক। তাদের এই দাবির প্রতি জাতীয় সংসদের সমস্ত সদস্য প্রচ- শব্দে টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ‘সরাসরি’ নামে যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে সেই টেলিভিশন চ্যানেলে এই অধিবেশনের পূর্ণ ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এখন দেশের প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলই সরকার সমর্থক। দুয়েকটি চ্যানেল আছে যাদেরকে সরাসরি সরকার সমর্থক বলা যাবে না। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং বিরোধী দলের কোন রকম রাজনৈতিক তৎপরতার অনুপস্থিতিতে ওরাও পরোক্ষভাবে সরকার সমর্থক চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। তাই এই সব প্রাইভেট চ্যানেলসমূহেও ঐ দুই এমপির বক্তব্য এবং সদস্যদের টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থনের দৃশ্য ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। পত্রপত্রিকাতেও প্রথম পৃষ্ঠায় ফলাও করে খবরটি ছাপা হয়েছে। এমপি সাহেবদের এই সব উক্তির মাধ্যমে কি সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে না? টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখে এবং পরদিন পত্রপত্রিকায় অধিবেশনের ধারাবিবরণী দেখে জনসাধারণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, মন্ত্রীরা যদি চলাফেরা করতে ভয় পান, ৩৪৫ জন সংসদ সদস্য যদি চলাফেরা করতে ভয় পান এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য যদি গানম্যান প্রয়োজন হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কত করুণ এবং অসহায় হতে পারে? সুতরাং এসব ঘটনার মাধ্যমেও ভয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে চৌকশ বাহিনী বলা হয়। তবে আওয়ামী লীগ এই বাহিনীকে অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ করার ফলে জনগণের আস্থায় চিড় ধরেছে।
॥তিন॥
দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মন্ত্রীদের সাবধানে চলাফেরা করতে অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন তার মন্ত্রীদের সাবধান থাকার এবং সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দেন তখন সাধারণ মানুষের পক্ষে ঐ পরামর্শকে হালকা ভাবে নেয়া যায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী কেবল সমস্ত ক্ষমতারই অধিকারী নন, তিনি সমস্ত তথ্যেরও আধার। কারণ দেশের যেখানেই বা যে প্রান্তেই যখন কোন গুরুতর ঘটনা ঘটে অথবা ঘটার আশঙ্ক থাকে তখন তাৎক্ষণিকভাবে সে সংক্রান্ত তথ্য যথাযথ সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হয়। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলন থেকে ফিরে বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী। আমার কাছে সব খবরই আসে। এসব খবরের মধ্যে যতটুকু প্রকাশ করা উচিত ততটুকুই আমি প্রকাশ করি। অবশিষ্ট তথ্যসমূহ আমি সাধারণত সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রকাশ করি না। প্রধানমন্ত্রীর এই কথা এক শত ভাগ সত্য। তিনি সমস্ত খবর রাখেন। তাই তিনি যখন তার মন্ত্রীদেরকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেন, তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ ছাড়া তিনি বলেন না। এখন তথ্য প্রবাহের এমন উন্নতি হয়েছে, তথ্য প্রবাহ এমন বেগবান হয়েছে যে, যখন প্রধানমন্ত্রীর পর্যায় থেকে এই ধরনের কোন সংবেদনশীল বক্তব্য রাখা হয় তখন জনগণের মধ্যেও সেটি প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করে। আমরা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যকে কোনভাবেই ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করছি না। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন যে এই ধরনের বক্তব্যে জনগণের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয় কিনা।
॥চার॥
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব আসাদুজ্জামানের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার প্রতি পূর্ণ আস্থা, সম্মান এবং শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, মন্ত্রীদের কাছে সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য তিনি যে এসএমএস বার্তা পাঠিয়েছেন সেটা তিনি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধের আওতার মধ্যেই পাঠিয়েছেন। মন্ত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান অবশ্যই পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু তার এই এসএমএস পাঠানোর খবর এবং টেক্সট ম্যাসেজ সমস্ত পত্র পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং সম্প্রচারিত হয়েছে। আমি আগেই বলেছি যে এটি হয়তো তিনি তার কর্তব্যবোধের আওতার মধ্যেই করেছেন। কিন্তু এদেশে মন্ত্রীদের কাছে উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের এই ধরনের টেক্সট ম্যাসেজ পাঠানো এবারই প্রথম। তাই যেসব পাঠক পত্রিকায় ঐ খবর পাঠ করেছেন অথবা যেসব দর্শক টেলিভিশনে ঐ খবর দেখেছেন তারা বিস্মিত এবং হতচকিত হয়েছেন। জনগণ পুলিশের এই পদক্ষেপকে এ্যাপ্রিসিয়েট করেও বলছেন যে, মন্ত্রী বা এমপিরা পুলিশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন, ভাল কথা। কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে কে? এসব আলোচনাও কি এখন গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর মধ্যে পড়বে?
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের কাছে পাঠানো ডিএমপি কমিশনারের ওই এসএমএসে সালাম জানিয়ে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, যে কোনো সময় যে কোনো মন্ত্রীর ওপর জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। অনুগ্রহ করে সতর্ক থাকবেন এবং আপনার গানম্যান ও নিরাপত্তা দলকে বিষয়টি অবহিত করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালানো হতে পারে- এমন তথ্য দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার সব সদস্য ছাড়াও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত গানম্যান ও হাউস গার্ডকে সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য ব্রিফ করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বাড়িওয়ালাদের ভীতি ভাড়াটিয়া নিয়ে। তাদের ভয়, কখন না জানি কোন ভাড়াটিয়াকে জঙ্গিদেরকে বাসা ভাড়া দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন খবরের কাগজ এবং টেলিভিশন জুড়ে জঙ্গিবাদের এত খবর থাকছে যে এটাই এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি হয়ে গেছে।
কথায় বলে ‘একে তো নাচুনে বুড়ি, তার ওপরে ঢোলের বাড়ি’। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জঙ্গি হামলার গুজব ও আতঙ্কে ঢোলের বাড়ি দিয়েছে। গত ৮ জুলাই কলকাতার এই বহুল প্রচারিত পত্রিকাটি যা লিখেছে তার অংশ বিশেষ নিচে তুলে দিচ্ছিÑ
“বাংলাদেশের ২৪ স্থানে হামলা চালাবে জঙ্গিরা।”
“সন্ত্রাস কৌশলের যে চিরাচরিত ছকের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন ভারত-বাংলাদেশের গোয়েন্দারা, গুলশান কাফে সেই ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। গুলশানের তদন্তে যে সব তথ্য উঠে আসছে, তাতে স্পষ্ট, এখনই সামাল দেওয়া না গেলে আগামী দিনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় নানা মাপের হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিদের একটি বড়সড় রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি হয়ে রয়েছে রাজধানীর ১৫ কিলোমিটার বৃত্তের মধ্যে! আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৪টি স্থানে জঙ্গিরা হামলা চালাবে বলে জানা গেছে। খবর: আনন্দবাজার।” এরপর পত্রিকাটি লিখেছে, “বুধবার বাংলাদেশে ফের হামলা চালানোর হুমকি দেওয়া যে ভিডিওটি সামনে এসেছে, গুলশান এবং কিশোরগঞ্জে হামলা নিয়ে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।” রিপোর্টের অন্য স্থানে বলা হয়েছে, “গুলশান-কিশোরগঞ্জের মতো হামলা যে অদূর ভবিষ্যতে আরও ঘটতে চলেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনকে ফের সতর্ক করেছে নয়াদিল্লি। ভারত জানিয়েছে, ঢাকার মতো বড় শহর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ মডেলে ছোট ছোট জমায়েতে হামলা চালিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবে জঙ্গিরা। সম্প্রীতি নষ্ট করতে হামলা চালানো হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরেও। ভারত-বাংলাদেশ জঙ্গি দমন সমন্বয়কে অকেজো করে দেয়াটাও লক্ষ্য।”
এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলুন, জঙ্গিবাদের হামলার আশঙ্কা ও গুজব ছড়াচ্ছে কারা?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন