শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ত্রাহি অবস্থা


টিভির টকশোর আলোচকদের মতে নীতিজ্ঞান বিসর্জন দেয়া দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, তেলবাজ, চাদাবাজ, প্রতারক, চোর, ডাকাত, লুটেরা, দুর্বৃত্ত, দুর্জন, স্বজনপ্রীতিবাজ, আগ্রাসী মানসিকতার কিছু ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে ১৮ দফা কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় পার্টিকে। সরকারের দালালি ও তোষামোদি করে প্রচুর অর্থকড়ির মালিক হওয়া এই নেতারা জাতীয় পার্টির আদর্শ নীতি, নৈতিকতার কাছে দায়বদ্ধহীন। তারা দায়বদ্ধ আওয়ামী লীগের কাছে। এরশাদকে কখনো ভুল বুঝিয়ে কখনোবা জেলের ভয় দেখিয়ে এবং রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে পাপেট বানিয়ে রেখে দলকে পরিচালিত করছেন ইচ্ছামতো।
১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি সাত্তার যখন সেনাবাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন, সেদিন কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কথায় কথায় ইতিহাস চলে আসে কিনা। কারো মনোক্ষুণ্ন হবার কারণ নেই। এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় নিজের করে দল চালিয়েছেন। দল ক্ষমতায় থাকার সময় পার্টির ভিতরে নেতাদের মধ্যে তেমন মতভেদ দেখা যায়নি। কখনও কখনো হলেও তা বেশিদূর পর্যন্ত গড়াতে পারতো না। আর দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এরশাদ তা মিটিয়ে বলতেন। মন্ত্রিত্ব হারানোর ভয়েই এরশাদের সকল সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির নেতারা মেনে নিতেন।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠনের প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার দড়ি টানাটানি পর্ব শেষ হলে ১৯৮৬ সালের ৭ মে সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এ নিয়ে আবারও নেতৃত্ব নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। প্রফেসর এমএম মতিন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও কাজী জাফর আহমদ-এ পদের জন্য প্রকাশ্য লবিং শুরু করেন। এরশাদ বর্ষীয়ান নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। বাকি তিনজন উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। কিন্তু এর পরেও জাপায় এই অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়নি কখনোই।
প্রকৃতপক্ষে গোড়াতেই গলদ ছিল জাতীয় পার্টির মধ্যে। এই গলদ হচ্ছে দলছুট নেতাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ভিন্নতা। ক্ষমতায় থাকার সময়ও জাতীয় পার্টির ভেতরে ছিল এই ভাঙার খেলা। কিন্তু ক্ষমতার ভারে সকল অনৈক্য তখন আড়ালে ছিল। দলের ভেতরে বিপরীতমুখী রাজনৈতিক উপাদানের ক্যাটালিস্ট ছিলেন এরশাদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জাতীয় পার্টিতে নেমে আসে অন্ধকারের ঘনঘটা। এরশাদসহ সিনিয়র অনেক নেতাই কারাগারে যান। ১২ ডিসেম্বর এরশাদ চলে যান জেলে। কাণ্ডারিহীন এই দলটিতে শুরু হয় নতুন করে দ্বন্দ্ব।
প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী জাতীয় পার্টিকে নতুনভাবে দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই পার্টিতে উপদলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। দলের প্রবীণ নেতা শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. এম এ মতিন দলের ভিতরে উপদল সৃষ্টি করেন। এক সময় তারা পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন।
 এরশাদ পাঁচ বছর কারাগারে ছিলেন। সেখানে নানা রকম তথ্য তার কাছে পৌঁছাতো। এ সময় জাতীয় পার্টি পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো জিনাত হোসেনের মাধ্যমে। শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা তথ্য তখন এরশাদের কাছে পৌঁছতো। ফলে কারাগার থেকে নীতি-নির্ধারণের ব্যাপারে সঠিক কর্মকৌশল দিতে পারেন নি। দেখা গেছে, রওশন এরশাদ, মিজান চৌধুরী, কাজী জাফর বা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দলে এ সময় তৈরি হয়েছে বহু বিতর্ক। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে এ পদ থেকে বিদায় দেয়ার পর বেশ কয়েকজনের কাছে হাত বদল হয়েছে এ পদের। এবিএম শাহজাহান, শ্রমিক নেতা হাসানউদ্দিন সরকার, যশোরের খালেদুর রহমান টিটোর মতো নেতারাও এ পদে স্থির থাকতে পারেননি। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জুর, রহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু মহাসচিব নিযুক্ত হলেও জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করাতে সক্ষম হননি।
১৯৯০-২০১৬ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি থেকে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং চট্রগ্রামের জনপ্রিয় নেতা মাহমুদুল হাসানের মতো মানুষও দলত্যাগ করে চলে গেছেন। পরে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এমপি নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে মাহমুদুল হাসান দল ত্যাগের পর বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এ পার্টি থেকে দলত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ার জাহিদ, মোর্শেদ খান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মওদুদ আহমদ ও ঢাকার এক সময়ের মেয়র ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত। এরা প্রত্যেকেই এখন বিভিন্ন দলের নেতা। নাজিউর রহমান মঞ্জু দীর্ঘ দিন বিদেশে পলাতক থাকার পর দেশে ফিরে কোর্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার নামে মামলা থাকায় কোর্ট তাকে জেলে প্রেরণ করেন।
তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে জেল থেকে ছাড়া পান। প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমা করার পর নাজিউর রহমান মঞ্জুর উপদল গঠন করেন। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে পছন্দ করতেন। কিন্তু তার অর্থের কাছে পরাজিত হয়ে সবাই নাজিউরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
জেল থেকে বের হয়ে এসে দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। বড় ধরনের ভাঙনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। মাঝখানে জাতীয় পার্টি জিনাত সিনড্রোমে ভুগেছেন দীর্ঘ দিন। পরে বিদিশার জ্বরে বেশ কয়েকবছর আক্রান্ত ছিল। আবার জিনাত হোসেন- বিদিশারা সরে গেছেন দূরে। এ ইস্যুতে রওশন এরশাদও জাপা ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েছিলেন। এরশাদের ব্যক্তিজীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। এভাবেই একদল নেতা-নেত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে লবি তৈরি করে জাতীয় পার্টির মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছেন ফলে এই গৃহবিবাদের চিত্র সেখানে নিত্যদিনের।
ক্ষমতাসীন বিএনপির বাধার কারণে ১৯৯১ সালের পর জাতীয় পার্টিকে ঢাকায় কোনও সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হতো না। এরই এক পর্যায়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সরদার আমজাদ হোসেন, শেখ শহীদুল ইসলাম আওয়ামী বলয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এই ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি বিরোধিতা করায় সুকৌশলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
তখনই জাতীয় পার্টির ভিতরে জিনাত মোশারফ, কাজী জাফর আহমদ, রওশন এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে চারটি উপদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জিনাত কারাবন্দী এরশাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দলের ভিতরে সমর্থক গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আওয়ামী বলয়ের লোকজনকে নিয়ে উপদলের জন্ম দেন। কাজী জাফর আহমেদ ১৯৭৪ সালের ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানী ন্যাপ ভেঙ্গে গঠিত ইউনাইটেড পিপলর্স পার্টি (পিপিপি), বাম ও জাতীয়তাবাদী ধারায় বিশ্বাসী নেতাদের সমন্বয়ে উপদল গঠন করেন। ফলে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। কারাবন্দী এরশাদ সেসব বুঝতে পেরে নিজ পরিবারের সদস্য, ছোট দুই ভাই জি.এম কাদের, গোলাম মোহাম্মদ লালু, বোন মেরিনা রহমান ও এক-বোন জামাই ডাঃ আসসাদুর রহমানকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। দলের ভিতরের উপদলীয় কোন্দল আর এরশাদের কিছু স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের কারণে অনেক পরীক্ষিত নেতা দলত্যাগ করেন। অনেকেই নিষ্ক্রীয় হয়ে যান।
এক পর্যায়ে জিনাত মোশারফ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীর ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। ফলে দলে তীব্র কোন্দল ও মতভেদের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর গ্রুপ। মঞ্জু ক্ষমতাসীন বিএনপি ও প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে পার্টিতে নিজ গ্রুপকে শক্তিশালী করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লিগের সঙ্গে আঁতাত করে মন্ত্রী হন এবং এক পর্যায়ে পৃথক জাতীয় পার্টি গড়ে তোলেন।
এরশাদ যখন কারাগারে ছিলেন তখন গোটা দলের চালিকাশক্তি ছিল মিজান চৌধুরীর হাতে। কিন্তু নেতা কারামুক্ত হবার পর গোটা দৃশ্যপট বদলে যায় দ্রুত। দেখা যায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কোন ধরনের দায়িত্ব তাকে দেয়া হচ্ছে না। কর্তৃত্বহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। এরশাদ কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর দলে যেসব রদবদল ঘটে তাতে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন মিজান চৌধুরী।
দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক মিজান চৌধুরী গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিত থাকায় তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়া হয় এবং পদ দুটি বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক সেল ও প্রচার সেল। এ দুই সেলের দায়িত্ব পান জিনাত হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট দুজন সাবেক সেনা অফিসার। মিজান চৌধুরীর সমর্থক বলে পরিচিত দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বাবুল বাদ পড়েন। তার জায়গায় বসানো হয় এক সময়ে জাসদ নেতা ও আসম রবের ঘনিষ্ঠজন হুমায়ুন কবীর হিরুকে। এসব সিদ্ধান্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তো দূরের কথা মহাসচিবকেও জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রক্তাক্ত পল্টন থেকে খাদিজা পর্যন্ত আওয়ামী জঙ্গিপনা


 আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের কথা। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টন ময়দানে আওয়ামী-বামরা প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে যে পৈশাচিক কায়দায় জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার পর লাশের উপর নৃত্য করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল!  ২৮ অক্টোবর এটি একটি কালো অধ্যায়ের দিন। এ দিন মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার দিবস, লগি-বৈঠার তান্ডব দিবস, আওয়ামী বর্বরতার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
যুগে যুগে ইতিহাসের কালো অধ্যায় জুড়ে রয়েছে ক্ষমতার লিপ্সা, ভূমি দখল, সম্পদ আহরণ। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্বযুদ্ধ, ক্রুসেড (ত্রিপলী), চায়না বিপ্লব, বসনিয়া/চেচনিয়া, ইরাক, আফগান মুসলিম গণহত্যা, লেলিন বিপ্লব, স্ট্যালিন বিপ্লব, হিরোশিমা নাগাসাকি, ২৫ মার্চের কালো রাত্রি, এপ্রিল ফুল দিবসের ঘটনা, ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ’০৯ বিডিআর হত্যাযজ্ঞ সমূহ। হিটলার, মুসোলিনী, চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, তৈমুর লং, কুবসাই খান, খেমারু হত্যা ইত্যাদির মতো বীভৎস সব চিত্র ফুটে উঠে চোখে। এ রকম অনেক জঘন্য ঘটনার সাথে ২৮ অক্টোবর ও স্থান করে নিয়েছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে পল্টনে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য স্মরণ করলে এখনো শিউরে উঠে মানুষের শরীর, বাকরুদ্ধ হয় বিবেক। পৈশাচিক ও অমানবিকভাবে মানুষ হত্যার দৃশ্য এখনো কাঁদায় সকলকে। বিশ্বমানবতা শতাব্দীর পর শতাব্দী খুনীদের প্রতি ঘৃণা ও অভিশাপ দিতে থাকবে। ২৮ অক্টোবর আওয়ামী জঙ্গিপনার এক রক্তাক্ত দলিল হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। Terrorism এর সংজ্ঞায় Britannica R.R. ENCYCLOPEDIA-তে বলা হয়েছে-errorism Systematic use of violence to create a general climate of fear in a population and thereby to bring about a particular political objective.
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে। এই হামলা চালানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এ জমিন থেকে ইসলামী আন্দোলন নিশ্চিহ্ন করে ও নেতৃত্বকে হত্যা করাই ছিল উদ্দেশ্য। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ পাঁচজনকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দুইজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২৮ অক্টোবর মানবতার বিরুদ্ধে যে জঘন্য ইতিহাস দিয়ে আওয়ামীলীগ-বামরা যাত্রা শুরু করেছে অপরাধের মাত্রা দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে সিলেটে এমসি কলেজে খাদিজার উপর নগ্ন হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল। আওয়ামী লীগের শাসন আজ আইয়্যামে জাহেলিয়াতকে ও হার মানাতে বসছে।
২৮ অক্টোবর সেদিন ঘটনার শুরু যেভাবে-
আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের কথা। ২৮ আক্টোরর-০৬ ছিল চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার ৫ বছর বর্ষপূর্তির দিন। ক্ষমতা হস্তান্তরের এই দিনে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে আয়োজন করা হয়েছে জনসভার। মূলত ২৭ আক্টোরর থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে অনেককে হত্যা করে। ২৮ অক্টেবর সকাল ১০টা আমরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পল্টনস্ত কেন্দ্র্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত। হঠাৎ গেটের সামনে চিৎকার। বেরিয়ে দেখি একজন ভাইকে রিকশায় করে রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে আসা হচ্ছে তার মাথায় এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে মাথার এক পাশ ঝুলছে! দেখে শরীর শিউরে উঠছে!।
অফিস থেকে বেরিয়ে আহত-রক্তাক্তদের দেখতে দেখতে আমরা পল্টন মসজিদের গলিতে এসে দেখি একদিকে ৪০-৫০ জন নিরীহ নিরস্ত্র, অপরদিকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত চার থেকে পাঁচ হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে অস্ত্র, লাঠি, বোতল, বোমা ইত্যাদি নিয়ে। এমন কোনো অস্ত্র নেই যা তারা ব্যবহার করেনি। এভাবে ৭ ঘণ্টা মরণপণ লড়াই। তাদের উদ্দেশ্য জনসভা ভ-ুল করা, নেতা-কর্মী ও আমাদের দলীয় অফিসের উপর আক্রমণ, কিন্তু ওরা এক ইঞ্চি জায়গা থেকেও সরাতে পারেনি আল্লাহ্র দ্বীনের গোলামদের। এ যেন শাহাদাতের প্রতিযোগিতা। আগামীর পথে এক দুরন্ত সাহস। ২৮ অক্টোবরের আল্লাহ্র প্রত্যক্ষ মদতের বাস্তব সাক্ষী। ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া চলছে। কেউ কেউ আহত হয়ে বিদায় নিচ্ছে আমাদের কাতার থেকে। নতুন করে, দু’-একজন করে আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সংখ্যা এর থেকে বাড়ছে না। কারণ বিজয় তো সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল নয়।
হঠাৎ সামনের দিক থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রচ- আক্রমণ শুরু করে। আমরা ২০/২৫ জন নারায়ে তাকবির ধ্বনি দিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম তখন দেখি আওয়ামী লীগের ৪-৫ হাজার সন্ত্রাসী অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পেছনের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ্র ওপর তাওয়াক্কুল করলে তাঁর সাহায্য অনিবার্য। এটাই তার প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোনো মু’মিন মুজাহিদ জিহাদের ময়দানে নারায়ে তাকবির উচ্চারণ করলে বাতিলের মনে চার হাজার লোক তাকবির উচ্চারণ করলে যে আওয়াজ হয় তার সমপরিমাণ ভীতি সৃষ্টি হয়।’ ২৮ অক্টোবর হাতেনাতে তার প্রমাণ পেয়েছি।
আমরা সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি গলির একটু ভেতরে পড়ে আছেন আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ মুজাহিদের লাশ। তার দেহ এখন নিথর নিস্তব্ধ। তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে পাড়ি জমিয়েছেন তার কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে। শাহাদাতের যে মৃত্যুর জন্য তিনি প্রায় তার মায়ের কাছে দোয়া চাইতেন। মা’বুদ আজ তার আকাক্সক্ষা পূর্ণ করেছেন আলহামদুলিল্লাহ্। 
মুজাহিদ তাঁর মাকে বলতেন, ‘মাগো বেশি বেশি কুরআন পড়ো, তাফসিরসহকারে, আমল করার লক্ষ্যে কুরআনকে হৃদয়ে ধারণ করো। তিনি রেগুলার তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন, নফল রোজাও রাখতেন। মাগো, শহীদ হতে চাইলেই কি শহীদ হওয়া যায়? যায় না মা। শহীদ হতে হলে অনেক বড় ভাগ্য লাগে, সত্যিকারার্থে আমার কি সেই ভাগ্য আছে মা, মাগো শহীদ হলে কর্মফলের কোন হিসাব দিতে হয় না, কোন শাস্তি হয় না কবরে, জাহান্নামে যেতে হয় না। শাহাদাত হলে সরাসরি জান্নাতে যাওয়া যায়’।
শহীদরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েও তারা যেন অমর! আল্লাহ্তায়ালা তাদেরকে নিজের মেহমান হিসেবে জান্নাতে থাকতে দেন। আল্লাহ্ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না, প্রকৃত পক্ষে তারা জীবন্ত, কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমরা অনুভব করতে পারো না’ (আল-বাকারা: ১৫৪)। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,  ‘তাদের প্রাণ সবুজ পাখির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ্র আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে তাদের আবাস, ভ্রমণ করে বেড়ায় তারা গোটা জান্নাত, অতঃপর ফিরে আসে আবার নিজ নিজ আবাসে।’ (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্) প্রিয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন: ‘শাহাদাত লাভকারী ব্যক্তি নিহত হবার কষ্ট অনুভব করে না। তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে, কেবল ততটুকুই অনুভব করে মাত্র।’ (তিরমিযী)
হায়েনারা আমাদের প্রিয়ভাই শহীদ মুজাহিদকে হত্যার পর ফেলে রেখেছে গলির মধ্যে। কয়েকজন মিলে যখন কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে তার মৃতদেহ। কিন্তু রক্তপিপাসু আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্তের পিপাসা তখনও থামেনি। লাশের ওপর তারা ছুড়ে মারছে ইট, পাথর, বোতল ও লাঠি। আল্লাহর প্রিয় বান্দা মুজাহিদ আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহর জান্নাতের মেহমান হিসেবে তাকে কবুল করেছেন। পরে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে শুনলাম প্রিয় ভাই মুজাহিদ আর নেই। তখন স্মৃতিতে ভেসে উঠলো সব ঘটনা।
এ পর্যায়ে দীর্ঘ ৫/৬ ঘণ্টা পর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পিস্তলের গুলি আমার বাম পায়ে আঘাত হানল। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। গাড়ির চাকা পাংচার হওয়ার মতো লুটিয়ে পড়লাম। কয়েকজন ভাই কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। পায়ের যন্ত্রণায় যতটুকু কাতর তার থেকে বেশি কষ্ট লাগছে এই ধন্য মানুষগুলোর কাতার থেকে এই অধমের বিদায় নিতে হচ্ছে এজন্য। তখন নিজেকে খুব স্বার্থপরই মনে হচ্ছিল। সবাই যখন জীবনবাজি রেখে ভূমিকা রাখছেন তখন আমি চলে যাচ্ছি অন্যের কাঁধে ভর করে। গুলিবিদ্ধ পা’টি ঝুলছে আর সেই সাথে রক্ত ঝরছে। কষ্টের মধ্যে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলাম। অনেক ভাই পেরেশান হয়ে গেল এবং আমার সাথে আসতে লাগল। ভাইদের বললাম, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন।
আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। এ যেন আরেক কারবালা। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে দারুণ শৃঙ্খলা শহীদী কাফেলার ভাইদের মাঝে। এখানেও ইয়ামামার যুদ্ধের সেই সাহাবীদের মত অপর ভাইকে অগ্রাধিকারের দৃষ্টান্ত। নিজেদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে তবুও ডাক্তারকে বলছেন, ঐ ভাইকে আগে চিকিৎসা করুন। এ যেন ‘বুন ইয়ানুম মারসুস’ এর উত্তম দৃষ্টান্ত। এ যেন আনসার মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্বের জীবন্ত দলিল। জোহরের নামাজ আদায় করলাম অপারেশন থিয়েটারে গুলিবিদ্ধ পা প্লাস্টার করা অবস্থায়। নিজের অজান্তেই ভাইদের জন্য দোয়া করতে লাগলাম। প্লাস্টার করছেন ডাক্তার। এক্স-রে রিপোর্ট ঝুলানো দেখা যাচ্ছে পায়ের হাড় দ্বিখ-িত হয়ে গেছে। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম এই এক্সরে টি আমার? কেউ যেন বলতে চেয়েও আমি ভয় পাবো সে জন্য আর কিছু বলতে চায়নি। আমি বললাম, এই গুলিটি আমার জন্য আল্লাহ্ কবুল করেছিলেন। শুধু তাই নয়, গুলিটি আমার পায়ের নামেই লেখা ছিল। এ বিশ্বাস থাকতে হবে প্রতিটি আল্লাহ্র দ্বীনের সৈনিকের। এই বিশ্বাসের ইমারতের ওপর যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তার ওপর আঘাতের পর আঘাত এলেও তাকে কখনো স্তব্ধ করা যাবে না ইনশাআল্লাহ্।
পল্টনে এ জাতি আরেকবার দেখে নিয়েছে আমাদের পরীক্ষিত নেতৃত্ব। শ্রদ্ধেয় আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে। মুহুর্মুহু গুলি আর বোমা স্তব্ধ করতে পারেনি তার বলিষ্ঠ কণ্ঠকে। যা ছিল তেজোদীপ্ত, নিশ্চল, অবিরত আর অবিচল। শহীদ নিজামী সহ সে স্টেজে যে শীর্ষ নেতাদেও রক্ষা করতে অনেকে জীবন দিয়েছে, তাঁরা অনেকেই আজ নিজেই শাদাদাতের অমিয় সুধা পান করে চলে গেছেন আমাদের মাঝ থেকে।
কিন্তু আমি জানি না ২৮ অক্টোবরের ঘটনা পর্যালোচনা ১৪ দল কিভাবে করছে। আজ যদি বলা হয়, এই দুনিয়ার বিবেচনায় ২৮ অক্টোবর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কে? কেউ বলবে, শহীদ মাসুম, শহীদ শিপন, শহীদ মুজাহিদ, শহীদ রফিক, শহীদ ফয়সলের পরিবার।
কিন্তু না। এটি আমার-আপনার হিসাব হতে পারে। তবে শহীদ পরিবারের অনুভূতিতো ভিন্ন। কিন্তু তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।
শহীদ মুজাহিদের মায়ের অনুভূতি’ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আমার জীবনের সবেচেয় বড় স্মরণীয় দিন, সবচেয়ে বেদনার দিন এবং সবচেয়ে বড় শুকরিয়া আদায়ের দিন। এই দিনে আমার রক্তের বাঁধন ছিন্ন করে মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করলো। সে ছিল আমার অতিপ্রিয় সন্তান। সে ছিল পরম প্রিয় বন্ধু। আমার জীবনের যত কষ্ট, যন্ত্রণা, বোবাকান্না তা শুধু তার সাথে শেয়ার করেছি, অন্য কারো সাথে নয়। আজ সে নেই তাই আমার অব্যক্ত বুকফাটা আর্তনাদ। তার মত ভালো আমলের ভালো ছেলে পরকালে আমি পাবো তো? এই জীবনে তাকে আমি কিছু দিতে পারিনি তাই আল্লাহ্কে বলি, হে আল্লাহ্ এই জীবনে যতটুকু পুণ্য করেছি এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যা পুণ্য অর্জন করবো, তার সবটুকু সওয়াবই আল্লাহ্ যেন তার আমলনামায় যোগ করে দেন’।
শহীদ ফয়সালের মায়ের অনুভূতিÑ ‘সেই ভয়াবহ ২৮ অক্টোবর সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটা ভোলার মত নয়, ফয়সালকে হারিয়ে আর স্ব^াভাবিক জীবনে ফিরে আসা ‘মা’ হয়ে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে ছিল খুবই নরম স্বভাবের। এমন ছেলেকে লগি-বৈঠা দিয়ে জীবনে শেষ করে ফেলা এটা মানুষের কাজ নয়, এরা নরপশু, ওদের মায়ামমতার লেশমাত্র নেই। আল্লাহ্র পছন্দনীয় সবদিক থেকে সুন্দর বান্দাটিকেই তার কাছে নিয়ে গেলেন। শহীদদের স্বভাবটা এরকমই হয়ে থাকে। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন ওদেরকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন’।
শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন মা বলেনÑ ‘সে দাখিলে ১১তম স্থান অধিকার করে। মানুষের যেকোন বিপদ কিংবা সমস্যা সমাধানে সে দ্রুত সাড়া দিত। এক ছেলের অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির পর দেখা গেল তার ওষুধের টাকা নেই। সে তার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঐ ছেলের ওষুধ কিনে দেয় এবং সারারাত তার বিছানার পাশে থেকে শুশ্রƒষা প্রদান করে ভোরে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরে। এলাকার এক বৃদ্ধ লোকের কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিলে ঐ লোকটিকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে তার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। সরকারি বিজ্ঞান কলেজে অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তার আচরণে মুগ্ধ হয়ে হিন্দু ছেলেরা পর্যন্ত বায়তুলমালে অর্থ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করত। শিপন এলাকার অনেক ছেলেকে কুরআন শরিফ পড়তে শিখিয়েছে।
এলাকার ছেলেরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ভাল করতে হবে এই চিন্তায় সে সারাক্ষণ ব্যস্ত ছিল। সে সবাইকে মসজিদে নামাজ এবং কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তাগিদ দিতে ব্যতিক্রম আয়োজনের মাধ্যমে তাদেরকে দাওয়াত পৌঁছাতো। যেমনÑ ব্যায়াম, ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন। ফজরের নামাজের সময় ছেলেদেরকে নামাজের জন্য ডাকতো।
আমার শিপনকে যেরকম নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে আমার ছেলে কুরআনে হাফেজকে তারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার দাঁত পর্যন্ত শহীদ করেছে- তাই আমি এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয় এবং কোন সন্তানকে যেন এভাবে না মারা হয়’।
শহীদ রফিকুল ইসলাম-এর মা  বলেন- ‘রফিকুল শিবির করার পর থেকেই নামাজ পড়তে বলত, গ্রামের মানুষ ঝগড়া করলে সে আমাদের সেখান থেকে দূরে থাকতে বলতো। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর খাওয়া শেষ করে রফিকুল যখন চলে যাচ্ছে তখন ওর খালা ও আমি বাড়ি থেকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম। কে জানত যে, সেটাই তার শেষ দেখা? 
আমার ছেলেকে হারানোর দু’-একদিন পর এক রাতে ঘুমের মাঝে আমার ছেলে আমার সাথে দেখা করতে এলো। আমি তার সাথে কথা বললাম। আমি বললাম ‘তুই না মরে গেছিস?’ সে বলল- ‘আম্মা, এ কথা আর কক্ষণো তুমি বলবে না। আমি মরে যাইনি, আমি শহীদ হয়েছি।’
হ্যাঁ সে ইসলামের জন্যই শহীদ হয়েছে, আর আমি তার গর্বিত মা। আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না। সে এলাকার ছেলেদের কুরআন শেখাতো, নামাজ পড়াতো। এতো সুন্দর সোনার টুুুুুুকরো ছেলেকে যে আওয়ামী হায়েনারা আঘাতের পর আঘাতে আমার বুক খালি করিয়েছে আমি তাদের বিচারের অপেক্ষায় আছি। যদি দুনিয়ায় দেখে যেতে নাও পারি তবে অবশ্যবই সবচেয়ে বড় ন্যায়বিচারক মহান আল্লাহ্র দরবারে বিচার দেখবো ইনশাআল্লাহ্।
শহীদ মাসুমের মায়ের অনুভূতি এমন ‘মাসুম লেখাপড়ার পাশাপাশি কুরআন-হাদিসের চর্চা করে এবং আমল করে। ছাত্রশিবিরের একজন ছাত্রকে পিতামাতার চক্ষুশীতলকারী সন্তান হিসেবে সমাজে উপহার দেয়। অভাবীদের ও গরীব ছাত্রের ভর্তির টাকার ব্যবস্থা করে নিজের প্রিয় পছন্দের জামাটি পরিয়ে দিয়ে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল শহীদ মাসুম।
লেখাপড়ায়ও মেধাবী ছিল। মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে প্রথম বিভাগ ৩টি লেটারসহ ও বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইএসসি পাস করে ইংলিশে অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। আওয়ামী-সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলল এ কথাটি এখনো এলাকাবাসী সহ্য করতে পারছে না।
আল্লাহ্র কাছে চলে যাওয়ার পর এখন বুঝি কী সম্পদ হারিয়েছি। ওকে আমি একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না। সেই মাসুমকে ছাড়া আমি চোখের পানিকে সাথী করে বেঁচে আছি। সব আছে মাসুম নেই।
আমাদের সন্তানরা নিহত হয়েছে তার সোনার ছেলেদের লগি-বৈঠার আঘাতে। আওয়ামী লীগ কোনভাবে অস্বীকার করতে পারবেন না। তিনি বলেছিলেন, লগি-বৈঠা, ঢল নিয়ে আস।’
আল্লাহ্পাক অবশ্যই তার বিচার করবেন। এই জন্য আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জানাই আমরা শহীদের মা হতে পেরেছি। আল্লাহ্র পথে বাধা দিতে গিয়ে তারাই ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে ফেরাউন ও নমরূদের মত।
এই আটাশে অক্টোবরে নতুন করে শহীদদের আত্মদানের কথা স্মরণ করে আমাদের দ্বীন কায়েমের পথ চলা হোক আরো বেগবান।”।
বাংলার জমিনে প্রতিটি মুহূর্তে আজ শাহাদাতের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সন্তান হারা পিতা-মাতার আহাজারি, ভাই হারা বোনের আর্তনাদ, পিতা হারা সন্তানের করুণ চাহনী, মা হারা সন্তানের অব্যক্ত বেদনা বাংলার আকাশ বাতাসকে প্রকম্পিত করছে। এবার শাহীদের তালিকায় যোগ হচ্ছে সমাজের শ্রেণী পেশার মানুষ। আমীওে জামায়াত থেকে শুরু কওে বৃদ্ধ বণিতা এমনকি অনেক নিষ্পাপ শিশুও শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করেছেন। আর এর মধ্যে দিয়ে ইসলামী আন্দোলন অনেক বেশী জনপ্রিয় ও জনমানুষের আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। হক ও বাতিলের এই দ্বন্দ্ব কোন সাময়িক বিষয় নয়, এটি চিরস্থায়ী শাহাদাত ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবের সিঁড়ি, কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর, উজ্জীবনী শক্তি, নতুন করে পথচলার সাহস।
২৮ অক্টোবর পল্টনে শাহাদাতের নজরানার মধ্য দিয়ে রাজপথে যে যাত্রা শুরু হয়েছে তা এ জমিনে বিজয়ের সূচনা করবে ইনশাআল্লাহ। হে বিস্তীর্ণ আকাশ ও জমিনের মালিক! তুমি আমাদের ফরিয়াদকে কবুল কর। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে সকল ত্যাগের বিনিময়ে বাংলার জমিনে দ্বীন কায়েমের তাওফিক দাও। আমীন।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম 

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে জাতির প্রাপ্তি ও কিছু কথা


ব্যাপক জৌলসপূর্ণ ও কোটি কোটি টাকা খরচ করে পালন করা হলো আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। টানা দুইদিন ছিল এ সম্মেলন। কাউন্সিলরদের বিপুল সমর্থনে টানা অষ্টমবারের মতো দলের সভাপতি হলেন শেখ হাসিনা। আর আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এই প্রথম দলীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সৈয়দ আশরাফ এ পদ থেকে ইস্তেফা দিয়েছেন। চমক দেখাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন এক নেতা, কিন্তু জাতি কী পেল এ সম্মেলন থেকে? এ পাওয়া তো আওয়ামী লীগের। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে জাতিকে কিছু দিতে পেরেছেন কি? গোটা ঢাকাকে ছেয়ে ফেলা হয়েছিলো আলোকসজ্জায়। বন্ধ ছিল প্রায় সব যানবাহন। জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে দলের বরাদ্দকৃত বাজেটের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে না। দলের জাতীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সম্মেলন উপলক্ষে সর্বমোট ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। অথচ শুধু ঢাকায় আলোকসজ্জার খরচই প্রায় তিন কোটি টাকা। যাই হোক, ঘোষিত কমিটির প্রেসিডিয়ামে স্থান পেয়েছেন নতুন সাত মুখ। প্রধান দুই পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেন। তবে এবারও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে স্থান পাননি আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাদ পড়েছেন নূহ-উল আলম লেলিন। শেখ হাসিনা সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চাইলে সব কাউন্সিলর দাঁড়িয়ে ‘নো নো’ বলতে থাকেন। আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার পর পর তিনবার এ পদে আর কোনো প্রস্তাব আছে কিনা জানতে চান। কাউন্সিলররা ‘কেউ নেই, কেউ নেই’ বলে সমস্বরে বলতে থাকেন। সভাপতি পদে অন্য কোনো প্রস্তাব না থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে এ পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। প্রথম দিন অনুষ্ঠানাদি পালনের পর সভার সভানেত্রী এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক তার লিখিত বক্তৃতা না পড়ে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনিও কিছু সময়ব্যাপী এক হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য পেশ করেছেন। তার বক্তব্য শুনে মনে হলো যেন শেখ হাসিনাও কেঁদেছেন। তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বিদায় নিলেন। তাতে অনেকে ব্যথিত হয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। এমনকি বিরোধী দল বিএনপিও তার প্রশংসা করতো। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির আকার কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে এতে যোগ হয়েছে কিছু নতুন মুখ। এটাই ছিল চমক। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে নতুন গঠনতন্ত্র ও কমিটি অনুমোদন হয়। ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আকার করা হয়েছে ৮১। এর মধ্যে বেড়েছে প্রেসিডিয়ামে ৪, যুগ্ম ১, সাংগঠনিকে ১ ও সদস্যের ২টি পদ। আওয়ামী লীগে নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার পর দুঃসময়ে দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসা আশরাফ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বহু বিদেশী অতিথিও নিমন্ত্রিত হয়ে সম্মেলনে যোগদান করেছেন। অতিথিরা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরই নেতা। তারাও বক্তব্য রেখেছেন। তাদের বক্তব্য অবশ্য শুভেচ্ছা বক্তব্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দেশেরও প্রধানমন্ত্রী। তার সুন্দর ও সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশের অগ্রগতি হয়েছে বহু ক্ষেত্রে এবং দেশের অগ্রগতি দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ায় তিনি শুধু দেশে নন বিদেশেও বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। অতিথি বক্তারাও তাই তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাকে বিশ্ব জননেত্রী বলেছেন একজন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, ‘আমি আশা করি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক হবে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক থাকলে দেশে রাজনীতি থাকবে। যেভাবেই হোক দেশে যদি রাজনীতি না থাকে আওয়ামী লীগ থাকবে না। তাই আওয়ামী লীগকে নিজের স্বার্থেই গণতান্ত্রিক হতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই।’ ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরকারের নামে খুতবা দেয়ার ফতোয়া দিয়েছে। মসজিদে খুতবা সরকারের হবে না, হবে আল্লাহর ও ইসলামের।’ ৭১-এ বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শত শত, লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জতহানি করেছে কিন্তু সন্তানের দ্বারা মায়ের ইজ্জতহানির চেষ্টা করেনি। যুবকদের ইন্ডিয়ার ফেনসিডিল, ইয়াবা ও তথ্যপ্রযুক্তির নামে ইন্টারনেটে ডুবিয়ে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। সভ্যসমাজে মানুষরূপী জানোয়ার ছাত্রলীগের বদরুল খাদিজাকে কোপায়, আর নেত্রীরা সেলফি তোলে। জীবনের চেয়েও ছবির মূল্য বেশি।’ বিএনপি এ কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করেননি, তাদের ভাষ্য বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কোনো পরিবেশ নেই। তাহলে কী করে তাদের কাউন্সিলে গিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা জানাবেন। আমরা একটা আত্মমর্যাদাশীল রাজনৈতিক দল। আমরা গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদিত। আজকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতো, নিশ্চয়ই বিএনপি নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেতেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির নেতা রিজভি বলেন- আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আমাদের যে প্রতিনিধি যায়নি, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই আমি মনে করি। গণতন্ত্রে সঠিকভাবে যদি একটা সরকার থাকতো, এখানে গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের জন্য যে উপাদানগুলো সক্রিয় থাকা দরকার সেটা যদি থাকতো তাহলে কথা ছিল না যে, যাওয়াটা ঠিক না। বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি যেকোনো স্তরের মানুষকে জিজ্ঞেস করবেন, যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা আটকিয়ে রেখেছেন, যারা নিজেদের শাসক বলে দাবি করছেন, সকল ধরনের বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই অন্যায্যভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন, তারা তো আর জনগণের প্রতিনিধি নন। ঘোষণাপত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না রাখা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, ব্লু ইকোনমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ (৮০ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বেসরকারি ও সরকারি খাতে শিল্পায়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে দলের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান, দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও অঙ্গীকার আছে ঘোষণাপত্রে। 

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আমরা যুদ্ধে যাবো কী মজা!


সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দৃশ্যত তাদের নানা ধরনের অস্ত্রে শান দিচ্ছে। কাশ্মীরে ভারত একজন জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করার পর সেখানে চরম সংঘাতের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনী সেখানে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বহুসংখ্যক মুসলমান নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তো আসেইনি, বরং সংঘাত আরও বেড়েছে। ফলে গত তিন মাস ধরে ভারতের বর্বর সরকার কাশ্মীরে কারফিউ জারি করে রেখেছে। আর মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীরে চালাচ্ছে নিষ্ঠুর নির্যাতন। তার সচিত্র প্রতিবেদন সারা বিশ্বের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। দিল্লী সরকারের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে গোটা পৃথিবী। সেদিক থেকেও দৃষ্টি সরানো দরকার ভারতের। তাই যুদ্ধের জিগির তুলছে মোদি সরকার। উপরন্তু আগামী বছর আছে ভারতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের নির্বাচন। সে নির্বাচনে জেতার জন্য খানিকটা বেটাগিরি দেখাতেও বলা হচ্ছে, পাকিস্তানকে একেবারে ধরাশায়ী করে দেয়া হয়েছে। এ রকম সময়ে কাশ্মীর সীমান্ত বরাবর এক ভারতীয় সেনা ছাউনিতে গেরিলা হামলায় নিহত হয় ১৮ জন ভারতীয় সেনা। যার জন্য ভারত চিরাচরিতভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে বসে। এটা ভারতের সকল সরকারেরই পুরানা রোগ। এরপর ভারত বলে যে, তারা পাকিস্তানের তিন মাইল ভেতরে ঢুকে পাকিস্তানে প্রভুত ক্ষতি সাধন করেছে। পাকিস্তান বলছে, ভারত তাদের সীমানার এক ইঞ্চিও ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ভারতের বিরাধী দলগুলো বলেছে, যদি ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে ঢুকে থাকে, তবে তার প্রমাণ দেখাও। ভারতের চরম হিন্দু সাম্প্রদায়িক মোদি সরকার বলেছে যে, প্রমাণ এখন দেখানো যাবে না।
তবে পাকিস্তান একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছে যে, ভারত যদি বেশি বাড়াবাড়ি করতে চায়, তবে তাদের মনে রাখা উচিত, পাকিস্তানের যে পরমাণু অস্ত্রভা-ার রয়েছে, সেগুলো তারা শুধু প্রদর্শনীর জন্য রাখেনি। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো সময় প্রয়োগ করবে। হ্যাঁ, এ কথাও সত্য যে ভারতও পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী। পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে ভারতও চুপ করে বসে থাকবে না। তারাও পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পারমাণবিক হামলা চালাবে। এতে ভারত পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার কমপক্ষে ২০০ কোটি লোকের জীবন বিপণœ হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বলেছে, তারা এই উত্তেজনা অবসানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে চায়। ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও এই উত্তেজনার মধ্যেও রাশিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছে। চীন বলেছে, তারা পাকিস্তানের পাশে থাকবে। আর ইরান ও সৌদি আরব বলেছে, তারা যোগ দিতে চান চীন-পাকিস্তান জোটের সঙ্গে। অর্থাৎ ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বে একটা মেরুকরণ ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে। ফলে ভারত এখন তার জিগির খানিকটা থামিয়েছে বলে মনে হয়।
মোদি সরকার যখন জোরেশোরে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে তাদের সৈন্যদের হত্যা করার গল্প বলতে শুরু করেছিল, তখন ভারতের বিরোধী রাজনীতিকরা সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, ভারতে যদি পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে তাদের সৈন্যদের ঘায়েল করেই থাকে, তবে তার ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হোক। কিন্তু দিল্লী সরকার বাংলাদেশ সরকারের মতোই বলে যাচ্ছে যে, এখন তা প্রকাশ করা যাবে না। ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, দিল্লী সরকারের এই দাবি একেবারে ধোকা। এদিকে পাকিস্তানের সীমান্ত লঙ্ঘন করায় পাকিস্তান ভারতের একজন সৈন্যকে আটক করেছে। মোদি সরকারও সেটা কবুল করে নিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া মনে হচ্ছে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার জন্য একেবারে আদাজল খেয়ে নেমেছে। সরকার যতো বলছে, ভারতীয় মিডিয়া সেসব গুজব ছড়াচ্ছে শত গুণ করে।
তবে এই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীরই। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় হায়দরাবাদ ছাড়া ভারতের সকল মুসলমান অঞ্চল পাকিস্তানে যোগ দেয়। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও কাশ্মীরের হিন্দু শাসকরা ভারতে যোগ দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেন। তা নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হলে পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর গঠন করে কার্যত সেটাকেই কাশ্মীর সীমান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৭২ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয়। তাতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনী যেখানে থেমেছিল সেটাকেই উভয় দেশের সীমান্ত বলে মেনে নেয়া হয়। এর আগেও ভারত ও পাকিস্তান তিনবার যুদ্ধ করেছে। অনেক প-িত এও বলেছেন যে, এবার ভারত-পাকিস্তান চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হলো বলে। এর মধ্যে হঠাৎ করেই গত ১ অক্টোবর ভারত দাবি করে যে, তারা পাকিস্তানের সীমান্তরেখা বরাবর ৩ মাইল ভেতরে ঢুকে কিছু জঙ্গি আস্তানা ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান ভারতের এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। এবং পুনরায় বলেছে, তারা কোনো জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। দিল্লীর হম্বিতম্বির মাঝখানেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সকল বিরোধী দল, বিভিন্ন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। পারমাণবিক অস্ত্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
এর মধ্যে ভারত একদিকে যেমন উস্কানিমূলক আচরণ করেই যাচ্ছে, অপরদিকে তেমনি চালাচ্ছে সীমান্ত লঙ্ঘন। ভারতীয় মিডিয়া জানিয়েছে, গত ৩ অক্টোবর পাল্লাঅলা সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘসময় ধরে বন্দুকযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, ভারত সীমান্ত ও যুদ্ধবিরতি উভয় লঙ্ঘন করছে। ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীর সেনাছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বসে। আবার ২ অক্টোবর উরি থেকে ৫০ মাইল উত্তরে বারামুল্লা রাষ্ট্রীয় রাইফেলের সদর দফতরে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাতে একজন বিএসএফ জওয়ান মারা যায়। তিনজন সৈন্য ও চারজন বিএসএফ আহত হয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে পাকিস্তান একদম মুখ বন্ধ করে আছে। বরং তারা নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএন-এর মতো সংবাদ মাধ্যমগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ভারত পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে হামলা চালানোর যে দাবি করছে, তা ভুয়া, মিথ্যা ও কাল্পনিক। এর মাধ্যমে ভারত শুধু তার দেশের জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। ভারতের কংগ্রেস নেতা সেঞ্জয় নিরূপম ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ভারতের হামলা চালানোর ঘটনাকে মসকরা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই দাবি করে আসছে। তবে সীমান্তে গোলাগুলী চলছে। ৯০ দিন কারফিউ জারি রাখলেও কাশ্মিরীদের স্বাধীনতার আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উঠেছে। ফলে সংঘাত চলছেই।
আরেকটি বিষয় হলো, ভারতের মতো পাকিস্তানী মিডিয়া যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে না। তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং ঠা-া মাথায় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তারপরও ভারত ভাবছে যে, এ ধরনের সীমান্ত হামলা চালিয়ে কাশ্মীর ইস্যু থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি তারা সরিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু পাকিস্তান মনে করে যে, কাশ্মীর আন্দোলন আরও বেগবান হলে, তারা কাশ্মীরকে ভারতে থেকে বিচ্ছন্ন করে ফেলতে পারবে। ভারতের সমস্যা শুধু কাশ্মীর নিয়ে নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামীদের দমাতে তাদের দশকের পর দশক ধরে বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন রাখতে হচ্ছে। চীনের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশের বিরোধে সেখানেও সেনা মোতায়েন বাড়াতে হয়েছে। পাকিস্তানের অন্যান্য সীমান্তেও আছে ভারতীয় বাহিনী। পাকিস্তানের একজন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বলেছেন, ‘ভারতেকে অনেক বিরোধপূর্ণ সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখতে হচ্ছে এবং হবে। আমাদের সে সমস্যা নেই। আমাদের হাত মুক্ত।’
কিন্তু সত্যি সত্যি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাধলে তা গোটা অঞ্চলের বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাকিস্তানী বন্দর ও সড়ক দিয়ে চীনের যে সাপ্লাই লাইন, ভারত সেটা বন্ধ করে দেবার চেষ্টা করতে পারে। এটি আরও আশঙ্কাজনক হতে পারে, যদি এই কাজে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন দেয়। তাতে করে চীন বিকল্প পথ হিসেবে মালাক্কা প্রণালী ব্যবহার করতে পারে। চীনের ১১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষমতাশালী অর্থনীতির জন্য এ দু’টি রুটই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি তা করেই বসে, তবে চীন অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের কিছু অংশÑ যা তারা অনেকদিন ধরে নিজেদের বলে দাবি করছে, তাতে হাত দিতে পারে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে।
এর মধ্যে গত ৩ অক্টোবর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে রামের লঙ্কা বিজয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, লঙ্কা জয় করে রাম যেমন তার শাসনভার বিভীষণকে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের যে স্বাধীনতা যুদ্ধ সেটিকে অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন করেছেন মনোহর পারিকর। লক্ষ লক্ষ মানুষের শাহাদাৎ বরণ ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করলাম, সে স্বাধীনতা ভারত এনে দিয়েছেÑ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেনি বাংলাদেশ সরকার, প্রতিবাদ করেননি চেতনাওয়ালারা, প্রতিবাদ করেনি শাহবাগের লাফাঙ্গাদের দল। যেসব বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লাফালাফি করেন, মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, তাদের মুখেও কোনো প্রতিবাদ শুনতে পেলাম না। তবে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ মিথ্যে হয়ে গেলো? আর ক্ষমতা দিলো বিভীষণকে? বিভীষণ লঙ্কা রাজা রাবনের ভাই ছিলেন। রামায়নের কাহিনী ইতিহাস নয়, কাব্য মাত্র। এর কাহিনী নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনা করেন। এতে তিনি রাবনকে দেশপ্রেমিক হিসেবে চিত্রিত করেন। আর রাবনের ভাই মেঘনাদকে বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত করেন। মেঘনাদই রামের ভাই লক্ষ্মণকে গোপনে রাবনের ছেলে মেঘনাদের যজ্ঞ কক্ষে নিয়ে যান এবং লক্ষ্মণ সেখানে মেঘনাদকে হত্যা করে। এর এক পর্যায়ে রাবনের পতন হয়। রাম লঙ্কা ছেড়ে চলে যাবার সময় ঐ বিশ্বাসঘাতক মেঘনাদের হাতে লঙ্কার শাসনভার তুলে দিয়ে যান। বাংলাদেশে তাহলে সেই বিশ্বাসঘাতটি কে?
আর এর পরদিনই এক আশ্চর্য সংবাদ পড়লাম, ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলে বসলেন যে, কোনো যুদ্ধে ভারত আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের পুরানো ও বিশ্বস্ত বন্ধু। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা তা কোনোদিন ভুলবো না। তাই ভারত যদি কারও দ্বারা আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকবে। এই কার মধ্য দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে কোথায় ঠেলে দিলেন, সেটা তিনি বোঝেন কিনা জানি না। কিন্তু সম্প্রতি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতি বিশ্লেষণমূলক ম্যাগাজিন ‘ডিপ্লোম্যাট’ এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেই নিবন্ধে এসাম সোহাইল মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ একটি ভারতের প্রজারাষ্ট্রে (ভ্যাসাল স্টেট) পরিণত হয়েছে। আর সে কারণেই ভারত সার্কে গেলো না বলেই ভুটানের মতো বাংলাদেশও সার্কে না যাবার ঘোষণা দিয়েছে। সেই নিবন্ধটির শিরোনাম হলো, ‘Bangladesh Just Became a Vassal State’। আগ্রহীরা ঐ গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে খাটো করেছেন


ইন্ডিয়া টুডে/টাইমস অব ইন্ডিয়া/ এনডি টিভি/ এবং টাইমসের খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়কে রামের লঙ্কা বিজয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকার। তিনি বলেছেন, লঙ্কা বিজয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে। সোজা কথায়, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের দয়ার দান। এই কথা বলে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ কারো দয়ার দান নয়। ৩০ লক্ষ মানুষ শাহাদৎ বরন করে, ২ লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়ে, ১ কোটি লোক নয় মাসের জন্য বিদেশে আশ্রয় নিয়ে তারপর স্বাধীনতা হাসিল করেছেন। সেটিকে তিনি বিভীষণকে দেয়া রামের দানের সাথে তুলনা করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তাচ্ছিল্য করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আগরতলা এবং কলকাতার ক্যাম্পে ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা এবং শরনার্থীদের কষ্ট এবং যন্ত্রণা আমি আজও উপলব্ধি করি। তাই আমি এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি। সেই সাথে আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারাও অযুত কন্ঠে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। ভারত থেকে প্রায়শই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসন্মান প্রদর্শণ করা হয় এবং একে খাটো করা হয়। ভারতের বিখ্যাত ছবি “গুন্ডেতে” ও মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা হয়েছে। গুন্ডে ছবিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকে কেমন হেয় করা হয়েছে সেটি নিচে বর্ণনা করছি।
দুই
ছবিটি যে কতখানি আপত্তিকর সেটা আমি নিজে বোঝার জন্য এবং পাঠক ভাইদের অবগতির জন্য এই ছবিটি আমি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করি। অন্যান্য ছবিতে যেভাবে দেখানো হয় এই ছবিতেও ঠিক সেভাবেই পর্দা জুড়ে লেখা বের হয় Yash Raj Films. অতঃপর ছবিটি শুরু হয়েছে এইভাবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ততকালীন পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইষ্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেঃ অরোরা কাছে আত্মসমর্পন করছেন ঢাকার ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে)। এই দৃশ্যের সাথে সাথে ছবিটির ধারা বর্ননা শুরু হয়েছে এইভাবে,
“হিন্দুস্থান আওর পাকিস্তান কে বিচ মে তেসরা ইয়ুধ(যুদ্ধ) খতম হুয়া। সত্তর হাজার পাকিস্তানী সোলজার্স নে হিন্দুস্তানী আর্মিকে পাস সারেন্ডার কিয়া।” (প্রথম দৃশ্যে ভারতীয় কামানের গোলাবর্ষন এবং ঢাকার আকাশে মিগ-২১ জঙ্গী বিমানের চক্কর দেখানো হয়। অতঃপর দেখানো হয় জেঃ নিয়াজীর আত্মসমর্পনের দৃশ্য। তারপর দেখানো হয় কয়েকটি লাশের ছবি)।
আবার শুরু হয় ধারা বিবরনী। বলা হয়, “দুসরে বিশ্ব ইয়ুধ (যুদ্ধ) কে বাদ কিসি ভি দেশ সারেন্ডার কিয়া উসমে ইয়ে সারেন্ডার সাবসে বড়া সারেন্ডার থা। আওর পয়দা হুয়া এক নয়া দেশ, বাংলাদেশ। যব হিন্দুস্থানী আর্মি ঢাকা ছোড় থা রাহি থি, তো কাঠিলে কি বাহার গেয়ারা ইয়া বারা সালকে (১১ বা ১২ বছরের) দো অনাথ দোস্ত, বিক্রম আওর বালা ইয়ে নাহি সামঝ পা কে উনকে সাথ জো হুয়া ও সাহি ইয়া গলত। কিয়া নয়া দেশ উনে নয়া জিন্দেগী দেগা? উনকে আঁখো মে সেরফ এহি সওয়াল থা”।
এরপর একটি গেটের ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকটি জিপ প্রবেশ করে। ক্যামেরাটি জুম করলে দেখা যায়, গেটের ওপর উৎকীর্ণ হয়ে আছে, ‘জেনেভা রেফিউজি ক্যাম্প’। এরপর আবার ধারা বর্ননা শুরু হয়,
“যাব বাংলাদেশ বানা, তো উঁহা হিন্দুস্থানী মূল্ককে হাজারো লোগ থে জিনকি পাস খানেকো কোয়ি রোটি থি, না মাথে কি উপর কোয়ি ছাদ।” একটু দম নিয়ে, “আকছার হর দেশ বড়ি সমস্যা সুলঝানে কি চক্কর মে ইয়ে ভুল যাতা হ্যায় কে উনকি কিতনি বড়ি কিমত উতনি আপনি লোগে পার চুকানি পাড়তি হ্যায়। হাজারো লোক মওত কি আন্ধেরি মে গুম হো যাতি হ্যায়। বিক্রম আওর বালা কি তরফ ছে ভি ইয়ে আন্ধেরি তেজ ছে বাড় রাহা থা। য়ব হর তরফ ভূখ না রাহি থে তো এয়সে মে কোয়ি ছওয়াল কি কেয়া জওয়াব দেতা?”
কাহিনী এগিয়ে যায়। হরিহর আত্মার দুই বন্ধু বিক্রম এবং বালা অস্ত্র চোরা চালানীদের খপ্পরে পড়ে। এই পর্যায়ে কিশোর বিক্রমের পিস্তলে একজন অস্ত্র ব্যাবসায়ী খুন হয়। তখন একজন হৃদয়বান ব্যক্তির সহায়তায় ওরা দুই বন্ধু ঢাকায় একটি ট্রেনে ওঠে। ওই ট্রেনে করে তারা কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশানে নামে। ধীরে ধীরে ওরা বড় হয় এবং ধারা ভাষ্যকারের ভাষায় ‘হিন্দুস্তানী’ নাগরিকত্ব লাভ করে। অতঃপর তারা কলকাতার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় এবং দুর্ধর্ষ গ্যাংষ্টারে পরিনত হয়। এরপর কাহিনীর অবশিষ্টাংশে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আর নাই।
তিন
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় আপত্তিকর দিকটি হলো এই যে, ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধকে ভারত এবং পাকিস্তানের ৩য় যুদ্ধ হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে। সকলেই জানেন যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পূর্ববর্তি যে দুটি যুদ্ধ (১৯৪৯ এবং ১৯৬৫ সালে) সংঘঠিত হয়েছে সেটা ছিলো কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। এটি যদি পাক ভারতের মধ্যে সংঘঠিত ৩য় যুদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে সেটি কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে? বলাবাহুল্য, এই বক্তব্যের এবং উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের মা বোনের সম্ভ্রমহানি এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কোরবানীকে অস্বীকার করা হয়েছে।
যে বিষয়টি বোধ্যগম্য নয় সেটি হলো, যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন নাকি এই দেশে হাজার হাজার হিন্দুস্তানী মানুষ ছিলো, যাদের এক বেলার খাবার ছিলো না এবং যাদের মাথার ওপর কোন ছাদ ছিলো না। এই হিন্দুস্তানীরা কারা? সেই লোক গুলিকে দেখানোর জন্য ক্যামেরা চলে গেলো জেনেভা ক্যাম্পের ওপর। আমরাতো জানি, বিভিন্ন জেনেভা ক্যাম্পে ছিলো হাজার হাজার নয়, কয়েক লক্ষ বিহারী। ওরা ছিলো পাকিস্তানী। এখনো ওদের কিয়দংশ মিরপুরের ক্যাম্পে আছে। গুন্ডের প্রযোজক যশ চোপড়ারা কি ওইসব বিহারীদেরকে হিন্দুস্তানী নাগরিক বলছেন? যদি তাই হয় তাহলে এখনো সময় আছে, ওদেরকে ভারতে নিয়ে যাক। বাংলাদেশের কোন আপত্তি নাই। বিক্রম এবং বালা ও ওই বিহারী ক্যাম্পেই ছিলো। একজন জালিমকে হত্যা করার পর ওরা ভারতে পালিয়ে যায়। তাহলে বাংলাদেশীরা বিভিন্ন ক্রিমিনাল অফেন্সে জড়িত আছে, তেমন অপবাদ দেওয়া হয়েছে কেন?
চার
এই সিনেমাটির প্রযোজক কোম্পানির নাম ‘যশো রাজ ফিল্মস’। তারা তাদের ব্লগে পরবর্তীতে এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে বলা হয় যে বাংলাদেশীদের প্রতি কোন অশ্রদ্ধা দেখানো হয়ে থাকলে আমরা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যশো রাজ ফিল্মসের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেভাবে কাহিনিটি উপস্থাপন করা হয়েছে সে ব্যাপারে অনেক বাংলাদেশী আমাদের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের প্রতি এই কাহিনীর মাধ্যমে কোন অশ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়ে থাকলে অথবা তাদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়ে থাকলে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে আমরা বলতে চাই যে এটি একটি কল্প কাহিনী। সমাজের কোন অংশ অথবা কোন ব্যক্তি অথবা কোন জাতির প্রতি বিন্দু মাত্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য আমাদের ছিলো না।
পাঁচ
ছবির নির্মাতা দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঠিকই। কিন্তু এই ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে ড্যামেজ হয়ে গেল সেটা কি আর রিপেয়ার করা সম্ভব? ড্যামেজ যা হবার তাতো হয়েই গেছে। এছাড়াও এই ছবিটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ফলে ভারতের কোটি কোটি মানুষ এবং ইউটিউবের মাধ্যমে বাংলাদেশেরও কোটি কোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি ভুল বর্ণনা এবং তথ্য চিত্র দেখলেন।
গুন্ডে ছবিটি ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তি পায় ২০১৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এই ছবিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলভাবে উপস্থাপন করার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের প্রবাসী বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশের ভেতর থেকেও প্রতিবাদ উত্থিত হয়।২১শে ফেব্রুয়ারী একটি ইংরেজী দৈনিকে সর্বপ্রথম গুন্ডে ছবি নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরে বলা হয় যে পৃথিবী ব্যাপী বাংলাদেশীরা, বিশেষ করে তরুণরা আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত বলিউডের হিন্দি ছবি গুন্ডের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানায়। প্রবাসী বাংলাদেশীরা খেয়াল করেন যে এই ছবিতে বাংলাদেশের জন্মকে পাক ভারত যুদ্ধের ফসল হিসেবে ভূলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি ইংরেজী দৈনিকের খবরে বলা হয়, এই ছবিতে দেখানো হয়েছে যে অস্ত্রের চোরা চালানসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে বাংলাদেশীরা জড়িত। ছবিতে দেখানো হয়েছে যে বাংলাদেশ থেকে দুইটি বালক ভারতে পালিয়ে যায় এবং সেখানে তারা বড় হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের প্রতি কটাক্ষ করে বলা হয়েছে যে তারা নিজেদেরকে ভারতীয় হিসাবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। ঐ ইংরেজী পত্রিকার মতে, ঐ ছবির একস্থানে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তার অর্থ এই দাড়ায় যে “There is also insinuation that Bangladeshis prefer identifying themselves as Indians.” পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী গুন্ডেতে যা বলা হয়েছে তার অর্থ হল এই যে বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ১৩ দিনের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের ফলশ্রুতি। যেসব বাংলাদেশী প্রতিবাদ করেছেন তাদের বক্তব্য হলো, ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ৮ মাস ধরে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো এবং যে ৮ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী শহীদ হয়েছেন সে যুদ্ধের কথা ছবিটিতে বিন্দু মাত্র উল্লেখ নাই।
২০১৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এই ছবিটি ভারতে মুক্তি পেয়েছে। যশো রাজ ফিল্মসের ভাইস প্রেসিডেন্ট যশো রাজের ইমেল আক্যাউন্টে প্রতিবাদ সম্বলিত অসংখ্য ইমেল পাঠানো হয়। বাংলাদেশীদের প্রতিবাদ লিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশীরা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে আসছে। ভারত সেখানে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ৮ মাস পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর। যদিও ছবিটির প্রযোজক আদিত্য চোপড়া অথবা পরিচালক আলী আব্বাস জাফরের তরফ থেকে এই সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি তৎসত্বেও বাংলাদেশীরা দাবী করে আসছেন যে বাংলাদেশ সম্পর্কিত আপত্তিকর অংশটি ছবি থেকে বাদ দেয়া হোক এবং কোম্পানি কতৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করুক।
এবার প্রগতিবাদীদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মূখে ফেনা তোলেন। গন জাগরন মঞ্চ তো সেই চেতনার সোল এজেন্ট। এখন তারা মূখে গোমাই লাগিয়ে বসে আছেন কেন? ভারতের প্রভূত্বের মূখে আপনারা চুপসে যান কেন? আসলে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ-এইসব কিছুই কি ভারত কেন্দ্রিক?
আসিফ আরসালান

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিবিসি’র সেই বিখ্যাত সাংবাদিক


ক’দিন আগে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম প্রধান দিশারী আতাউস সামাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগে জীবনের শেষদিনগুলোতেও দৈনিক আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন এই পরিশ্রমী সাংবাদিক। মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দৈনিকটির অফিসে এসে কাজ করে গেছেন তিনি। টেলিফোনে যোগাযোগ তো রেখেছেনই। তবে অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি বিবিসি’র সংবাদদাতা হিসেবে। ১৯৫৯ সালে সাংবাদিকতা শুরু করার পর আতাউস সামাদকে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়েছিল সামরিক ও স্বৈরশাসনের অধীনে- প্রথমে (১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত) পাকিস্তানের তথাকথিত ‘লৌহ মানব’ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের এবং পরবর্তীকালে (১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে।
শ্বাসরুদ্ধকর সেই বছরগুলোতে দুর্দান্ত সাহসী ছিল আতাউস সামাদের ভূমিকা। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দারা বিরামহীনভাবে তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে, প্রলোভনও কম দেখানো হয়নি। কিন্তু ভয়-ভীতি বা প্রলোভন দেখিয়ে এবং প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন চালিয়েও তাকে সত্য প্রকাশ করা থেকে নিবৃত্ত করা যায়নি। জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি এমনকি গ্রেফতারও বরণ করেছেন। ১৯৮০-র দশকের ওই দিনগুলোতে মানুষ আতাউস সামাদের পাঠানো খবর শোনার জন্য সাগ্রহে বিবিসি রেডিও খুলে বসে থাকতো। তার নিজের কণ্ঠেও অনেক খবর শোনা যেতো। সে সময় মোবাইল দূরে থাকুক, সাধারণ বা ল্যান্ড টেলিফোনও খুব কম মানুষেরই ছিল। ফলে স্বৈরশাসকের প্রচণ্ড দমনমূলক পদক্ষেপের মুখে দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেন। আন্দোলনের কর্মসূচী সম্পর্কেও তারা জানার সুযোগ পেতেন না। এ ধরনের পরিস্থ’তিতে আতাউস সামাদই প্রধান ভরসা হয়ে উঠতেন। বিবিসিতে প্রচারিত তার খবরই নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উজ্জীবিত করতো। সেদিক থেকে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনে আতাউস সামাদের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। জীবনের শেষদিনগুলো পর্যন্তও গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি তার এই অবস্থানকে বজায় রেখেছিলেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রত্যক্ষ কাণ্ডও পালন করেছেন তিনি।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ছিল আতাউস সামাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বেশি গুরুত্ব দিতেন তিনি ঘটনা ও তথ্যকে। কোনো বিষয়ের সঙ্গে ভিন্নমত থাকলেও সে সংক্রান্ত সঠিক তথ্য বা খবর প্রকাশের ব্যাপারে তিনি সৎ থাকতেন। কোনো তথ্যেরই বিকৃতি ঘটাতেন না। তার সঙ্গে বা অধীনে যারা সাংবাদিকতা করেছেন তাদেরও তিনি সঠিক তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সততা বজায় রাখার তাগিদ দিতেন। অনুসন্ধান বা খবর খুঁজে বের করার ব্যাপারে তার দৃষ্টি ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। এমন অনেক বিষয়েই তিনি রিপোর্ট করেছেন ও অন্যদের দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছেন- যেগুলো সহজে কারো চোখেই পড়তো না। এরকম অনেক খবরই পরবর্তীকালে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসবের মাধ্যমে দেশ ও জাতিও যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে।
সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের যে কোনো সংকট ও দুঃসময়ে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন আতাউস সামাদ। ১/১১-এর অবৈধ অভ্যুত্থান এবং জেনারেল মইন-ফখরুদ্দিনদের অসাংবিধানিক  স্বৈরশাসনের দিনগুলোতে দৈনিক আমার দেশকে বাঁচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন, চরম বিপদের মুখেও সাংবাদিকদের আগলে রেখেছেন পরম আদরে। হুমকির তিনি পরোয়াই করেননি কখনো। মইন-ফখরুদ্দিনদের সময় দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার ও অর্থনৈতিক অবরোধসহ বিভিন্ন কারণে আমার দেশ-এর অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল তখনও আতাউস সামাদই এগিয়ে এসেছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে মাহমুদুর রহমানকে তিনি শুধু আমার দেশ-এর সঙ্গে যুক্তই করেননি, তাকে সাংবাদিকতায়ও এনেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমার দেশ যখন দফায় দফায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মিথ্যা মামলার আড়ালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সরকার যখন কারাগারে ঢুকিয়েছে তখনও অভয়ের বাণীমুখে দুর্দান্ত সাহসে এগিয়ে এসেছেন আতাউস সামাদ। বস্তুত তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বই আমার দেশকে প্রায় নিশ্চিত ধ্বংসের পরিণতি থেকে রক্ষা করেছিল। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিও আতাউস সামাদের নেতৃত্ব পেয়েছিল বলেই সে সময় টিকে থাকতে পেরেছে।
অতুলনীয় ছিল তার দেশপ্রেম। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং সীমান্তে হত্যাকা- থেকে ফারাক্কা বাঁধের কুফল ও পানি আগ্রাসন পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থের বিভিন্ন প্রশ্নে তিনি আপসহীন দেশপ্রেমিকের কাণ্ড পালন করেছেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় স্বার্থেই ভারতকে করিডোর দেয়ার কঠোর বিরোধিতা করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও অত্যন্ত সহজ-সরল ছিলেন আতাউস সমাদ। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। বিভিন্ন প্রসঙ্গে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোতে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এজন্যই দলনির্বিশেষে সবাই তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছিলেন।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও আতাউস সামাদ ছিলেন খোলা মনের মানুষ। ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করতেন তিনি নিয়মিতভাবে। রোযাও রাখতেন, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ভান করতেন না। সংস্কৃতির নামে জাতীয় জীবনের বহু কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় তিনি ছিলেন নির্ভীক ও দ্বিধাহীন। বিবিসি’র সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠা আতাউস সামাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে  প্রচুর লেখালেখি রয়েছে। অসাধারণ ছিল তার দেশপ্রেম। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তো বটেই, সব সরকারও তাকে যথেষ্ট সমীহ করতো। অনেকেই পরামর্শের জন্য তার কাছে যেতেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি বর্তমানে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ দৈনিক আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইন্তিকালের কয়েকদিন আগেও তিনি কলাম লিখেছেন।
দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনে আতাউস সামাদ কতটা আন্তরিক ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যাবে একটি ঘটনা থেকে। এটা ২০১১ সালের কথা। সেবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সম্পাদকীয় লেখার ব্রিফিং দেয়ার সময় আতাউস সামাদ সেই বিশেষ গোষ্ঠীর বিষয়ে বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন, পহেলা বৈশাখে যারা ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার মাধ্যমে উৎসব করেন, আনন্দ-স্ফূর্তিতে মেতে ওঠেন। আতাউস সামাদ তাদের ‘ফিলদি রিচ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশের কৃষক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন এই গোষ্ঠীর লোকজন আসলে নোংরা রকমের ধনীÑ‘ফিলদি রিচ’। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রঙিন কাপড়-চোপড় পরা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া এবং গান-বাজনা করাসহ যা কিছু তারা করেন সে সবের সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। বাঙালিয়ানার নামে তারা আসলে অর্থ-বিত্ত প্রদর্শনের নোংরা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। বিষয়টিকে আতাউস সামাদ সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে কৃষকদের সঙ্গে তামাশা বলে মনে করতেন। সম্পাদকীয় লিখতেও বলেছিলেন সেভাবে। তার অভিমতেরই প্রতিফলন ঘটেছিল ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল সংখ্যা দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদকীয়তে। যিনি লিখেছিলেন তার কাছেই ঘটনাটি শুনেছি।
বস্তুত সাংবাদিক আতাউস সামাদ সামান্যও বাড়িয়ে বা অসত্য বলেননি এবং তার ব্যাখ্যায়ও কোনো ভুল ছিল না। পহেলা বৈশাখের উৎসব-আনন্দের দিকে লক্ষ্য করলে পাঠকরাও বুঝতে পারবেন, কেন তিনি এই ঢাকার পার্টিকে ‘ফিলদি রিচ’ বা নোংরা রকমের ধনী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন, বাংলা সনের প্রথম দিন বলে পহেলা বৈশাখে যারা মাটির শানকিতে পান্তা-ইলিশ খেয়ে ‘ঐতিহ্যবাহী’ ও ‘সর্বজনীন উৎসব’ করেন, নাচ-গানের মধ্য দিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন, লাল-হলুদসহ নানা রঙের কাপড় পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় অংশ নেন এবং প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দিনভর বৈশাখী মেলায় ঘুরে বেড়ান, তাদের সঙ্গে গ্রামের গরীব কৃষকসহ সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আসলে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সঙ্গে উপহাসের পাশাপাশি ফাজলামোই করেন। সাম্প্রতিক কোনো বছরই এর ব্যতিক্রম হয়নি। সব মিলিয়েই ফিলদি রিচদের উদ্যোগে পহেলা  বৈশাখ বিশেষ করে শহুরে অবস্থাপন্নদের জন্য নোংরা আনন্দের একটি দিনে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে জনগণ বলতে যাদের বোঝায় সেই সাধারণ মানুষের পক্ষে কিন্তু এই আনন্দ উপভোগ করার কোনো সুযোগই থাকে না। তারা যথারীতি বঞ্চিতই থেকে যায়।
ইতিহাসের পর্যালোচনা করলেও বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বঙ্গাব্দ তথা বাংলা বর্ষের ইতিহাস জানাতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, বাংলা এই সালের সূচনা করেছিলেন মুসলিম মুঘল সম্রাট আকবর। উদ্দেশ্য ছিল ফসলের ঋতুর ভিত্তিতে খাজনা আদায় করা। এর ফলে কৃষকের পক্ষে খাজনা দেয়ার সময় অর্থাৎ কখন খাজনা দিতে হবে তা মনে রাখা সহজ হতো। সরকারও বছরের বিশেষ সময়ে কম ঝামেলায় খাজনা আদায় করতে পারতো। নববর্ষের উৎসবও শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। ঐতিহাসিক এই তথ্যের আলোকে বলা যায়, নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ সম্পূর্ণরূপেই ছিল কৃষিভিত্তিক একটি দিন। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল সেটাও ছিল কৃষিভিত্তিকই। এদেশের মানুষের জীবনেও এর রয়েছে নানামুখী প্রভাব। দিনটিকে শুভ মনে করা হয় বলে অনেক কৃষক পহেলা বৈশাখে জমিতে হাল দেয়। অনেকে ফসলের বীজ বোনে, রোপণ করে শস্যের চারা। দোকানদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা হালখাতার মাধ্যমে পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাবের সূচনা করে। গ্রাম থেকে শহর-নগর-বন্দর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় হরেক রকমের পণ্য নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে কামার-কুমার ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। মেলায় থাকে মাটির পুতুলসহ খেলনা এবং দই ও মুড়ি-মুড়কির মতো উপাদেয় নানা খাবার। মেলা পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। এখানে গ্রামীণ অর্থনীতিই প্রধান হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে ‘ফিলদি রিচ’ তথা নোংরা রকমের ধনীদের উদ্যোগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে রাজধানী ও বড় বড় কিছু শহরের বৈশাখী মেলা ও অনুষ্ঠানমালা নববর্ষের এই মূল চেতনা ও অবস্থান থেকে অনেকটাই এবং বহু দূরে সরে গেছে। বলা চলে, সুচিন্তিতভাবেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যেমন রাজধানীতে নববর্ষের উৎসব শুরু হয় রমনার বটমূলে। সেখানে পান্তা-ইলিশ ভোজনের মধ্য দিয়ে বাঙালিয়ানা দেখানোর বিলাসিতা করেন ওই নোংরা রকমের ধনীরা। তারা পহেলা বৈশাখকে বেছে নিয়েছেন টাকা দেখানোর এবং বিলাসিতা করার উপলক্ষ হিসেবে। অথচ পান্তা-ইলিশ খাওয়া কখনো গ্রাম বাংলার তথা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ছিল না। এটা চালু করেছেন ফিলদি রিচেরা। বিষয়টিকে বাংলা নববর্ষের মূল চেতনার সঙ্গেও মেলানোর উপায় নেই। কারণ, গ্রাম বাংলার কোনো অঞ্চলেই বছরের এই সময়ে ইলিশ পাওয়া যায় না। এটা ইলিশের মওসুমও নয়। সরকার তো বরং জাটকা ইলিশ নিধন বন্ধ করার জন্য এ সময় ইলিশ শিকারই নিষিদ্ধ করে থাকে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ বিশেষ করে ওই ‘ফিলদি রিচ’ তথা নোংরা রকমের ধনীরা নিষিদ্ধ সে ইলিশকে নিয়েই মেতে ওঠেন। সঙ্গে আবার খান পান্তা ভাত! অথচ গ্রাম বাংলার মানুষ কখনো ইলিশ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার কথা কল্পনা করতে পারে না। তারা পান্তা খায় নুন-পেঁয়াজ আর শুকনো মরিচ দিয়ে। সেটাও খায় বাধ্য হয়ে- ভালো কিছু খাওয়ার উপায় নেই বলে। একটু অবস্থাপন্নরা হয়তো সঙ্গে সবজি ও ছোট মাছ খায়। কিন্তু কেউই ইলিশ খায় না, পায় না বলে খেতেও পারে না।
এখানে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কেও বলা দরকার। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নামে যেসব জীব-জন্তুর কুৎসিত মূর্তি এবং বীভৎস নানান প্রতিকৃতি নিয়ে রাজধানীতে মিছিল করা হয় সেগুলোর সঙ্গে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষের চিন্তা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। এগুলো বরং মূর্তি পূজার কথাই মনে করিয়ে দেয়- ইসলাম যার বিরোধিতা করে। এজন্যই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমানদের চিন্তা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটানো দরকার। এটাই ছিল আতাউস সামাদের মূল কথা। তিনি মনে করতেন, একই দেশে নববর্ষ উদযাপনের এই বৈষম্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার এবং নববর্ষ উদযাপনের মূল অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে।
মানুষের ‘মঙ্গল’ সত্যি কাম্য হলে নতুন বছরের শুরুতে বরং জাতীয় জীবনের অন্যসব দিকে দৃষ্টি ফেরানো উচিত। হত্যা-গুম ও রাজনৈতিক দমন-নির্যাতনের পাশাপাশি লোডশেডিং এবং গ্যাস ও পানির সংকট মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খুনের তথা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যেন মানুষের জীবন কোনো ছেলেখেলার বিষয়! কথায় কথায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জীবন ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আইনের চোখে প্রতিটি মানুষেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার রয়েছে। এজন্যই বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংস্থাই শুধু নিন্দা-সমালোচনা করছে না, সর্বোচ্চ আদালতও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আতাউস সামাদও মনে করতেন, অপরাধ দমন ও নির্মূল করা সত্যি উদ্দেশ্য হয়ে থাকলে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পুলিশকে যদি বিরোধী দলকে দমনের কাজে ব্যস্ত না রাখা হয় এবং পুলিশ যদি সরকারদলীয় গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পায় তাহলে দেশে হত্যা-সন্ত্রাসসহ অপরাধ দমন ও নির্মূল করাটা সময়ের বিষয়ে পরিণত হতে পারে।
অন্যদিকে সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা এখন শোচনীয়। এজন্যই নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে কেবলই উৎসব আনন্দ না করে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেও নতুন করে অঙ্গিকার করা এবং উদ্যোগী হওয়া দরকার। প্রকৃতির প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, সামনে থাকে কাল  বৈশাখীর পালা। ওদিকে ভারতের পানি আগ্রাসনের পরিণতিতে বাংলাদেশের নদ-নদী খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে। দেশ মরুভূমি হওয়ার পর্যায়ে এসে গেছে। আর কিছুদিন পর ‘সাধের’ ইলিশও হয়তো পাওয়া যাবে না। অথচ ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরোধিতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো লক্ষণ ও প্রস্তুতিই কখনো লক্ষ্য করা যায় না। ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিহত করার এবং ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের চেষ্টাও করছে না সরকার। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করনেওয়ালারাও ভারতের ব্যাপারে মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে থাকেন। কারণ অবশ্য সহজবোধ্য। এমন অবস্থা অবশ্যই চলতে পারে না। এজন্যই ভারতের কাছে নতজানু থাকার এবং পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আড়ালে ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমানদের মূর্তিপূজারী বানানোর কৌশলী কিন্তু ভয়ংকর প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করে গেছেন আতাউস সামাদ। বস্তুত সব দিক থেকেই তার কাণ্ড ছিল আপসহীন এক দেশপ্রেমিকের। মুসলমান হিসেবেও তার অবস্থান ছিল বলিষ্ঠ। সে কারণেই যারা দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী তাদের উচিত ফ্যাসিস্ট শাসন এবং ভারতের সম্প্রসারণবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার অন্যতম প্রধান এই দিশারী পুরুষের দেখিয়ে যাওয়া পথে এগিয়ে যাওয়া। মরহুম আতাউস সামাদকে বাঁচিয়ে রাখা।
আশিকুল হামিদ 

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জাতীয় নির্বাচন ও পুতুল নাচ!


“রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।” আমাদের দেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি যেভাবে চলছে তাতে মনে হয় উল্লেখিত বাক্যটি এক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত। আমাদের দেশে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ক্ষমতাধররা নানা কূটকৌশল গ্রহণ করে থাকে। তারা নিজেরা জনসম্মুখে নানা কায়দায় সাধু সাজার চেষ্টা করে, কিন্তু জনগণ তাদের ভনিতা সহজে বুঝতে পারে। আমাদের দেশে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটি অন্যতম। যেমন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে, নির্বাচনী নিয়ম রক্ষার দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ২০ দলীয় জোটকে ঘায়েল করেছে। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী বৈধতা নিয়ে শুধু দেশে-বিদেশে নয় খোদ নিজ দলের মধ্যেও আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। ভারত ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোন রাষ্ট্র ঐ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি। বিরোধী দল প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ তেমন সরব রাখতে না পারায় সময়ের পরিক্রমায় মহাজোট সরকার দেশের বাইরে শক্তিশালী লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে কিছুটা কোমর সোজা করে দাঁড়িয়েছে। সেই শক্তি বলে সরকার ও সরকারি দল বিভিন্ন দেশ সফর করে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরছে। এরপরেও প্রকৃত সত্য দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার যদি জনগনের রায়ে নির্বাচিত না হয়েও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে, সে সরকারের নৈতিক মনোবল বলতে কিছু থাকে না।
বিরোধী দল তাই সরকারের দুর্বলতার সুযোগে মাঝে সাঝে এই পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবী তুলেছে। তবে সভা-সমিতিতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতৃবৃন্দ ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয় বলে কঠোর ভাষায় বক্তৃতা দিয়েই চলেছেন। তবে এরি মধ্যে মহাজোটের অন্যতম শরিক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর লক্ষ্যে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারাত পরবর্তি সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিয়েছেন। কারণ আওয়ামী লীগের ইশারা ইঙ্গিত ছাড়া হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ রাজনৈতিক ময়দানে নির্বাচনের প্রায় দু’বছর আগে নির্বাচনী কাজ শুরু করার কোন অর্থ থাকতে পারেনা।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো বড় রাজনৈতিক দলেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। জাতীয় পার্টি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরপর অনেক দিন থেকে দলটি ক্ষমতার বাইরে। তবে যারাই এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতায় এসেছে তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় গেছে। এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলকে শক্তিশালী করবে। এজন্য তারা আগেভাগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই শনিবার সিলেটে সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন পথে যাত্রা করবে জাতীয় পার্টি” (সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর ১/১০/২০১৬)। এথেকে সহজে অনুমেয় যে আওয়ামী লীগ উপরে উপরে ২০১৯ সালের পূর্বে নির্বাচন হবেনা বল্লেও এখন থেকেই ভেতরে ভেতরে তারাও ৫ জানুয়ারির কিছুটা বদনাম গুছিয়ে বর্হিবিশে^র কাছে সাধু সেজে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিজেদের করায়ত্তে রাখার প্রয়াসে সমস্ত আয়োজন করে চলেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আগামী নির্বাচনেও যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনা ব্যক্ত করছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচ টি ইমাম বলেন- “আগামী জাতীয় নির্বাচনে তো বটেই, পরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে”। শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। (সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন -১/১০/২০১৬)। তবে বিএনপির পক্ষ থেকেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করে দলের ভাইস-চেয়্যারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, “দেশে ৫ জানুয়ারির মত নির্বাচন আর হতে দেয়া হবে না।” (সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১/১০/১৬)। বিএনপির অপর শীর্ষ নেতার মতামত থেকে বুঝা যায় তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে দৈনিক যুগান্তরকে বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটাই হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে কোনো ভোটই হয়নি। দেশে ও বিদেশে এ সরকার কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সবাই জানে, এ সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই আমরা বলে আসছি, সবার অংশগ্রহণে দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্রও ফিরে আসবে। সরকার বলছে, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। আর সেখানে এরশাদ নির্বাচনের প্রচারে নামছেন। তারপরও বলব, এরশাদের এ নির্বাচনী প্রচার যদি অতি শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ওয়েলকাম জানাই।” বিএনপি এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চাইলে ড. মোশাররফ বলেন, “বিএনপি হচ্ছে মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল, ইলেকশনের দল। বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে।” (সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর ১/১০/১৬)। 
বিএনপি বেশ কিছুদিন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে নিরব থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ের বক্তৃতা বিবৃতিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পুনরায় আওয়াজ তুলেছে। এছাড়াও সামনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলছে। সব মিলিয়ে ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী দৌড়-ঝাপ সব মহল দেশের ভিতরে বাহিরে শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সফরের শেষে ২ অক্টোবর’১৬ সংবাদ সম্মেলনে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করেছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার তরফ থেকে বরাবরের মত তাদের প্রত্যাশাকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় যদিওবা বিএনপির নেতারা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও আশাবাদী তিনি শান্তভাবে চিন্তা করলে আমাদের কথায় সাড়া দিবেন।” (সূত্রঃ আমাদের সময়.কম, ২/১০/১৬)
আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংবিধান সমুন্নত ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে এক পাতানো নির্বাচন আয়োজন করে। সে নির্বাচন ২০দলীয় জোট প্রত্যাখ্যান করায় আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধী দল বানিয়ে যে কান্ড কিত্তি করেছে তা দেশের রাজনীতিতে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে, যে নির্বাচনে ১৫৪টি সংসদীয় আসনে কোন ভোটই অনুষ্ঠিত হয়নি। আর বাকী আসনগুলোতে ভোটারদের অংশগ্রহণ হার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের অন্তঃকলহের (আওয়ামী লীগ) খতিয়ান কারো অজানা নয়। যে নির্বাচনটি দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণœ করেছে।
রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক দল হিসেবে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যোগ দেবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য প্রয়োজন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। এখন ক্ষমতাসীন মহাজোট কিভাবে পুনরায় ক্ষমতা বাগিয়ে নিবে আর সরকারের দমন নিপিড়নে মাঠছাড়া ২০ দলীয় জোট রাজনীতির ময়দানে ফিরে ক্ষমতায় যাবে এটাই এখন দু’পক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই দু’পক্ষের মাঝে নির্দলীয় না দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এটা নিয়ে সুরাহা এবং নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই সবচেয়ে জটিল কাজ। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ হতে লেবেল প্লেয়িং ফ্লিড তৈরির জন্য যতই ক্ষমতাসীন দলকে তোড়-জোড় করুক না কেন, আওয়ামী লীগ নিজদের স্বার্থে যা করার তাই করে চলেছে। 
জনসমর্থনের দিক দিয়ে বিএনপি জামায়াত জোট এগিয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ বিরোধী মতকে ইতোমধ্যে রাজপথে কোনঠাসা করতে সক্ষম হয়েছে। রাজনীতির মাঠ থেকে বিরোধী জোটকে অবদমিত করতে তারা হেন কোন পদক্ষেপ গ্রহন বাকী রাখেনি যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রতিষ্টানকে দলীয়করণ করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্টা করে চলছে। বিরোধী মতের অসংখ্য নেতা-কর্মী সরকার কর্তৃক গুম-খুন শিকারের অভিযোগ উঠেছে । বাড়ী-ঘর ছাড়া লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী। রাজনৈতিক বিবেচনায় হাজার হাজার মামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে দিনাতিপাত করছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে অপব্যাবহার করে নানা অভিযোগ এনে বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে মাঠ লেভেলের সাম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদের মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে নির্বাচনে অনুপযুক্ত করার কাজ প্রায় শেষ করেছে। গণমাধ্যমের প্রচার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের ফলে আমজনতার কাছে সরকারের ফ্যাসিজমের অনেক ঘটনা অজানাই রয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এর মাশূল স্বরূপ জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে সাজানো ট্রাইব্যুনালে বেশকজন শীর্ষ নেতৃত্বকে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রেও মাধ্যমে হত্যা করেছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ স্বরূপ সরকার জামায়াত নিষিদ্ধের ফন্দি ফিকির করছে। এরপরও ২০ দলীয় জোট দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজেদের ঐক্যকে অটুট রেখেছে। জোট ভাঙ্গনের মূল রহস্য হল ভোটের রাজনীতিতে জয়লাভ করা এবং দেশাভ্যন্তরে চিরতরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ চালু করা। যা দেশের মানুষের চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা।
আওয়ামী লীগের অধিনে ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন করা মানে বিপক্ষকে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার শামিল। তাই ২০ দলীয় জোট আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে কোন কম্প্রমাইজ করা ঠিক হবে কিনা তা খুব চিন্তার বিষয়। 
১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন “পুতুল নাচে” অবতীর্ণ হয়েছিল। পুতুলের ব্যাপারে -“যেমনি নাচাও তেমনি নাচে, পুতুলের কি দোষ?” গানটি প্রযোজ্য, ঠিক তেমনি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারেও গানটি প্রযোজ্য বল্লে খুব বেমানান হবেনা। কারণ দেশের নির্বাচনী (জাতীয় ও স্থানীয়) ইতিহাসে এতবেশী সহিংসতা ও দলীয়করণ অতিতে কখনো হয়নি। এই কমিশনের বিরদ্ধে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনের অপব্যাবহার করে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা পালনের অহরহ অভিযোগ উঠেছিল। এখন নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ফের ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে মাত্র চার মাস পরে, আগামী বছর ৮ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছিল ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। তাই নতুন নির্বাচন তথা সংসদের একাদশ নির্বাচন হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি এ কমিটি গঠন করেছিলেন। যদিওবা চলতি কমিশনের উপর ২০ দলীয় জোটের অস্থা ও বিশ্বাস না থাকায় তারা ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিল। 
তাই বিএনপি নেতারা সরকারী দলকে আগামী নির্বাচনের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের ব্যাপারে মতও ব্যক্ত করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “কেবল সার্চ কমিটি নয়, অতীতে জাতীয় সংসদে যেসব রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিত্ব করেছে, তাদের মতামত নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে” (সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৬ সেপ্টেম্বর’১৬)। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “এবারো আগের প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ করা হবে। ২০১২ সালে যেভাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, এবারো সেভাবে হবে।”
সরকারী দল বা বিরোধী দলের বক্তব্য যাই হোকনা কেন আমজনতা এমন নির্বাচন কমিশন চায়, যে কমিশনন হবে সাংবিধান মাফিক। সব দিক থেকে স্বাধীন। এ স্বাধীনতা প্রয়োগ করে ইসিকে নির্বাচনের ব্যাপারে তার ওপর জাতির আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন তাদের মতামত প্রয়োগ করে পছন্দের নেতৃত্ব বাছাই করে নেয়, আর দলীয় মদদপুষ্ট নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি জনগনের সেই প্রত্যাশা পুরণ করতে না পারে তখন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা জগদ্দল পাথরের মত জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। তখনই দেশে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে। আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা এমন ব্যাধিতেই আক্রান্ত, যাদের কারণে দেশ তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এসব নেতারা ক্ষমতালোভী। দেশের জনগন তাদের ক্ষমতায় আনতে না চাইলেও তারা নানা কলাকৌশলে ক্ষমতায় আসতে চায়! ঠিক যেন এমন, কেউ কাউকে সম্মান করতে না চাইলেও জোর করে নিজের সম্মান নিজের আদায় করার মত! লাজ লজ্বা যাদের আছে তারা কখনো এধরনের অন্যায় অবিবেচকের মত আচরণ করতে পারেনা। অনেক হয়েছে, ক্ষমাধরদেরকে এবার থামানো দরকার। দেশবাসী নির্বাচনের মত নির্বাচন চায়, আর বেহুদা পুতুল নাচ দেখতে চায়না, অসৎ ও অযোগ্য ব্যক্তির কবল থেকে মুক্তি চায়।
মুহাম্মদ আবদুল জব্বার 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এ কেমন কাণ্ড?


জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন, এটাই তো প্রত্যাশা। কিন্তু কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি এমন আছেন, যারা কল্যাণের বদলে অকল্যাণের কাজেই নিয়োজিত থাকেন। এমন একজনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কাঞ্চন-কুড়িল ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের (বিশ্বরোড) পাশে ভোলানাথপুর এলাকায় রাজউকের প্রায় হাজার কোটি টাকার জমি জবরদখল করে ‘নীলা মার্কেট’ গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম নীলা রাজউকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই মার্কেটটি গড়ে তুলেছেন। কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই এখানে তাঁতবস্ত্র, কুটিরশিল্প ও বিনোদন মেলার নামে চালানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক ব্যবসা। এসব থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের চোখের সামনে জবরদখলসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও তারা চোখ বুজে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নীলা মার্কেটে পাকা, আধাপাকা মিলিয়ে কয়েকশ দোকান। এসব দোকান থেকে রোজ প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। নীলা মার্কেটকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এ সব আস্তানায় অতি সহজেই মিলছে মরণ নেশার জন্য বিভিন্ন মাদক। শুধু তাই নয়, এই মার্কেটের আশপাশ নির্জন এলাকা বলে সেখানে প্রতিদিন শত শত যুবক-যুবতী ঘুরতে এসে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। নীলা মার্কেটের সামনেই কবরস্থান। কবরস্থানের ভেতরেই ‘মাদক ভাণ্ডার’ গড়ে তুলে খুচরাভাবে ক্রেতাদের কাছে হরদম বিক্রি করা হচ্ছে মাদক।
একজন জনপ্রতিনিধির বেআইনী ও সমাজবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হবার সুবাদে নীলার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না। এছাড়া তার ভাই বকুল এলাকার নিরীহ মানুষজনকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার বাণিজ্য থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নীলার নামে মাসে ৫০ লক্ষাধিক টাকা আদায় হচ্ছে বলে চাউর রয়েছে। নীলাকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নীলার কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে যে প্রতিবেদনটি মুদ্রিত হয়েছে তাতে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। একজন জনপ্রতিনিধি আইন অমান্য করে কিভাবে রাজউকের জমি জবরদখল করে? আর অবৈধভাবে সেখানে মার্কেট গড়ে তুলে সেখানে জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ যেসব অশ্লীল কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, তা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে পড়ছে না?
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজউকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নীলা এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা জানি, ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিদের পরিচিতি ও প্রভাবটা একটু বেশিই থাকে। তাই বলে কি তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করবেন? জনগণ তো তাদের কাছ থেকে কল্যাণকর এবং দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণে প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়ে তারা যদি জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন তাহলে কি তাদের আর জনপ্রতিনিধি থাকার কোনো যুক্তি থাকে? সরকার তো কথা কথায় বিরোধী দলের মেয়র কিংবা জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করেন কিংবা নিয়ে আসেন আইনের আওতায়। কিন্তু সরকার দলীয় এসব জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কেন? এ কারণেই দেশে আইনের শাসন তথা সুশাসনের সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি সরকার উপলব্ধি করে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Ads