শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

এটিএম কার্ড জালিয়াতি


প্রথমে বলা হলো মাত্র লাখ বিশেক টাকা লুটে নিয়েছে এটিএম জালিয়াতচক্র। এখন সে অংকটা আরও অনেক বড়। শত কোটি টাকা। রিমান্ডে নেয়া পোলিশ নাগরিক পিওটর জালিয়াতি ও এ বিপুল পরিমাণ টাকা লুটের কথা স্বীকারও করেছে। কেবল ডেবিট কার্ডই নয়, ক্রেডিট কার্ডও জাল করে এ টাকা লুটে নিয়েছে। জালিয়াতচক্রের কয়েকজন লুটের টাকা নিয়ে দেশ থেকে ভেগেও গেছে ইতোমধ্যে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর এ পিওটরের দেয়া তথ্যের প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। লুটের টাকার কিছু অংশ বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে বলে জানা যায়। এতে অনেকেই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। কারণ প্রথমদিকে জানানো লুটের টাকার অংকটা তেমন বড় ছিল না। কিন্তু পরে যখন জানা গেল যে, এটিএম জালিয়াতি করে লুণ্ঠিত টাকার অংক শত কোটিরও বেশি। তখন তা ভয়াবহ বৈকি। এ বিপুল অংকের টাকা এটিএম বুথ থেকে লুট হয়ে যাবে আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টেরই পাবে না, তা সত্যি অভাবনীয় বৈকি। গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখেন কেন? নিশ্চয়ই নিরাপত্তার জন্য। আর এই এটিএম সিস্টেম হচ্ছে চটজলদি করে যেখানে যখন প্রয়োজন সেখান থেকেই স্বল্প পরিমাণ টাকা তুলে গ্রাহকদের জরুরি কেনাকাটা ইত্যাদি সেরে নেয়া। কারণ ব্যাংক সাধারণত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে না। তাছাড়া সবখানে ব্যাংকের শাখাও থাকে না। এটিএম হচ্ছে ছোট একটি বক্সঘরে যন্ত্র বসিয়ে সেখানে গ্রাহকের টাকা রেখে দেয়া। আর গ্রাহক সেই বক্সঘর বা বুথ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা যখন-তখন তুলে নিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। কিন্তু একি ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলো ব্যাংকিং-এর এটিএম সিস্টেমে?
ধারণা করা হচ্ছে, বিদেশী ব্যাংকের এদেশের শাখাগুলো থেকে এ জালিয়াতদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া এখানকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে যথাসময়ে পাকড়াও করে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হবে। অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। যারা পালিয়ে গেছে দেশ থেকে তাদেরও ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিন্তু লুণ্ঠিত টাকা কিভাবে ফেরত পাওয়া যাবে তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না।  গ্রাহকরা যদি তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরত না পান, তাহলে এদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি গ্রাহকদের আস্থার ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় একরকম সংকটই চলছে। বিশেষত সরকারি ব্যাংকে সাধারণ মানুষ টাকা রাখতে চান না। কারণ সরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়তো কয়েক বছর লেগে যাবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবার নাম করে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একশ্রেণির লুটেরা যেমন বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, ঠিক তেমনই ব্যাংকের কোনও কোনও কর্মকর্তাও নামে-বেনামে ব্যাংকের টাকা লুটে নিয়ে নিজেদের পকেটে পুরেছে। এমনকি বিদেশে পাচারও করেছে এ লুটের টাকা। দেরিতে হলেও এদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারি ব্যাংক থেকে অর্থলুটের মূল হোতা বা রাঘববোয়ালদের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার করা যাবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তার কারণ হচ্ছে, এদের অনেকেই ক্ষমতাবান। এমনকি রাজনৈতিক দলের অনেক হোমড়া- চোমড়াও রয়েছে ব্যাংকের অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িত।
ব্যাংকের লুণ্ঠিত অর্থ যদি গ্রাহকরা ফেরত না পান, ব্যাংক অথবা এটিএম বুথ থেকে খোয়া যাওয়া রোধ করে সংশ্লিষ্টদের শায়েস্তা না করতে পারলে আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেমে ধস নেমে আসবে অচিরেই। গ্রাহকরা ইতোমধ্যে শংকিত। এর প্রভাব অর্থনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
কাজেই ব্যাংকের মর্যাদা ও আস্থা ফেরাতে হলে লুটেরাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনানুগভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফেরত দিতে হবে গ্রাহকের সমস্ত লুণ্ঠিত অর্থও।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads