(শিরোনাম পড়েই অনেক পাঠক হয়তো চাকরি পাওয়ার আশায় সাংবাদিক নির্যাতন করার প্লান-প্লোগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন কিন্তু পাঠককে হতাশ করে শুধু বিবেকের তাড়নায় আজ কেন আমি এ ধরনের শিরোনাম দিলাম তার একটি সত্য ঘটনা উল্লেখ করবো এবং সেই সাথে থাকবে হৃদয় গহীনের কিছু প্রস্ফুটিত আর্তনাদ...। তবে আগেই বলে রাখছি কেউ যদি আমার এই লেখা পড়ে ঘটনার সতত্য নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আমি আনন্দ চিত্তে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবো)
বিবেক যখন প্রতিবাদের স্বপ্ন দেখে: আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য। অনেক আশা আর বুক ভরা ভালবাসা নিয়ে ২০০৮ সালে ভর্তি হলাম সবুজ আরণ্যকের ছায়াঘেরা মতিহারের সবুজ ক্যাম্পাসে। দিন যায়, মাস যায়, ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে আমার জীবনের চাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর শুরু হলো এক নতুন জীবন। যেদিকে তাকাই - দেখি শুধু কতশত সংগঠন। অবশ্য এত সংগঠনের নাম মনে রাখা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনগুলিতে একটু কষ্টের ব্যাপারই ছিলো।
সুস্থ-সামাজিক আর মননশীল পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে ছোট থেকেই ছিল অন্যায়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধা আর সত্যের প্রতি ছিল অগাধ ভক্তি এবং ভালবাসা। সেই ভাললাগা আর ভালবাসার জায়গা থেকে মনে মনে পরিকল্পনা করলাম কলম সৈনিক হবো। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কলমযোদ্ধা হিসেবে যাত্রা শুরু করলাম। সাংবাদিকতায় এসেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধারাবাহিক বিভিন্ন অন্যায় অনিয়ম আর সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় অল্প সময়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হই ক্যাম্পাসের প্রতিবাদী সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ভীত হয়ে উঠে সরকারদলীয় প্রশাসন নামক যন্ত্র আর তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কথিত নেতারা। বিচ্ছিন্ন দুই একটি হুমকি-ধমকি ছাড়া বেশ স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে আমার হাত নামক কম্পিউটারের কী বোডর্টি।
খ. সাংবাদিক নির্যাতনের মহোৎসব শুরু :- ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বাংলোর সামনে বিডি ন্যাশনাল নিউজের নীরবকে প্রক্টরের হাতে লাঞ্ছিত হতে দেখে তাকে উদ্ধার করতে প্রতিবাদী কণ্ঠ নিয়ে এগিয়ে আসে তৎকালীন রাবি প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ও দৈনিক নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শামছুল ইসলাম কামরুল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারদলীয় কয়েকজন শিক্ষক সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। যা পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের লিড ক্যাপশন ছিল।
শুরু হয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মুূখোমুখি অবস্থান; বিজ্ঞাপিত পদের তিনগুণ শিক্ষক নিয়োগ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় মেধাবী ছাত্রদের মৃত্যুর মিছিলসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সাংবাদিক দমনে ছাত্রলীগের সাথে গোপন আঁতাতে বসে মহাজোট সরকার সমর্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুরু করে সাংবাদিক নির্যাতনের মহোৎসব। ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডার কর্তৃক ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক লাঞ্ছিতের ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের হামলার শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিন সাংবাদিক সায়েম সাবু (দৈনিক যুগান্তর), আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ (নিউজ টুডে) এবং আসাদুর রহমান (ফোকাস বাংলা)। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষক প্রহৃতের ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকার রাবি প্রতিনিধি আলী আজগর খোকনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং প্রক্টর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা দৈনিক দিনকাল ও অনলাইন সংবাদ সংস্থা রেডটাইমস্ বিডি ডটকম-এর সাংবাদিক মুনছুর আলী সৈকতকে পিটিয়ে আহত করে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্যাম্পাসে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পেটানোর সময় ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী জুয়েল, রকি, মিন্নাত, রনি, ডিলস, বিল, মাসুদ, নয়ন এবং মনির বিভিন্ন মিডিয়াতে কর্মরত ১১ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত সাংবাদিকরা হলেন চ্যানেল আই’র বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক, ক্যামেরাম্যান মইন, আমার দেশ’র ফটো সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রথম আলো’র আজহার উদ্দিন, নিউ এইজ’র সৌমিত্র মজুমদার, কালের কণ্ঠ’র নজরুল ইসলাম জুলু, সানশ্ইান’র রুনি, জনকণ্ঠের রাবি প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, যুগান্তরের সায়েম সাবু ও দি এডিটরের আতিকুর রহমান তমাল। এসময় প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধির ক্যামেরা ভাংচুর করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি সামসুল আরেফিন হিমেল ও বাংলা বাজার পত্রিকার শাহজাহান বিশ্বাসকে পিটিয়ে আহত করে। এর আগে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন শীর্ষনিউজ’র লুৎফর রহমান, ডেসটিনি’র আব্দুর রাজ্জাক সুমন, বাংলাদেশ টুডে’র আওরঙ্গজেব সোহেল, আরটিএনএন’র এস এম সাগর। এছাড়া সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক ডেইলি সান’র প্রতিনিধি সোহেল রানা যুবলীগ কর্মী ও দৃর্বত্তদের হামলার শিকার হন।
২০১১’র ১২ জুলাই ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ ওরফে ভাগ্নে মাসুদ, আসাদ, মাহাবুসহ ৪/৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বর্তমান রাবি প্রেস ক্লাব সভাপতি আজিবুল হক পার্থকে পিটিয়ে আহত করে এবং ২ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন দৈনিক জনতা’র রিপোর্টার আকিব জাভেদ।
সাংবাদিক নির্যাতন ও নিপীড়নের সবচেয়ে বড় নিদর্শন সৃষ্টি করে বর্তমান রাবি প্রশাসন ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ওইদিন প্রক্টর তাদের দলীয় ক্যাডারদের সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রাণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব সিলগালা করে দেয়। পরে প্রক্টরের অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে আদালত প্রক্টরের ওই অবৈধ হস্তক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে প্রশাসনের প্রতি রুল জারি করে।
এছাড়া ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের আরেকটি সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া প্রক্টরিয়াল বডি ও বিপুল সংখ্যক পুলিশের সহায়তায় সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সমিতির তালা খুলে দেয়া হলেও প্রশাসনের সাথে সমঝোতা না করায় এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে প্রেস ক্লাব।
পাঠক উপরে যা পড়লেন এটি শুধু সারাদেশের সাংবাদিক নির্যাতনের একটি খণ্ড চিত্র মাত্র। “বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি - ২০১২” নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনায় উঠে এসেছে ২০১২ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনটিতে উল্ল্যেখ করা হয় ২০১২ সাল ছিল সাংবাদিক নির্যাতনের বছর। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিক নির্যাতনের উপর প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালে অন্তত ৪৪২ সংবাদকর্মী বিভিন্নভাবে নিযার্তনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৭৪ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা, ৮৭ জন সন্ত্রাসী দ্বারা, ৭২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তির হাতে নির্যাতনের স্বীকার হন এবং ৫ জন খুন হন। এছাড়া গেল বছর ২০১২ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী কতৃক হামলার শিকার হয়েছেন। ২০১২ সালে গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত সংবাদ ছিল মাছরাঙ্গা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকা-ের ঘটনা। অন্যদিকে ২০১১ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের মোট সংখ্যা ছিল ৩০৬ জন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ছিল ১২ দলাশেমিক ৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে এই হার হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর প্রায় ২৩ শতাংশ নির্যাতনই হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন আর্টিকেল-১৯ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্ল্যেখ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ১০৬ ভাগ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
প্রতিবেদনে গত বছর ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮জন ব্লগার নানাভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালে বিভিন্ন সময়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা হত্যা, নির্যাতন, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী ২০১৫ সালে তিনজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া মোট ২৪৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ বছর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি। অভিযোগ ওঠে যে প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বার্থবিরুদ্ধে অবস্থান নেবার কারণে তাকে আটক করা হয় ও রিমান্ডে নেয়া হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
গ. সাংবাদিক নির্যাতনের পুরষ্কার পুলিশের এসআই পদে চাকরি....(!)
২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও মর্মান্তিক বেদনার একটি দিন। এই দিনটির ঘটনা বলার আগে আমাকে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ঘরানার একজন প্রভাবশালী সংস্কার পন্থী শিক্ষক যার নামের আদ্যক্ষর (হ); তিনি আমাকে সাংবাদিক হিসেবে একটি তথ্য দিলেন হ’ স্যারের তথ্যটি ছিল এমন ‘প্রক্টর মহোদয় নিজে মাদক সেবন করেন এবং মাদক সেবনকারীদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি আমাকে যতটুকু প্রমাণ দেখিয়েছিলেন তা ঐ প্রক্টর মহোদয়কে ঘায়েল করতে যথেষ্ট ছিল। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমি ১৩ আগস্ট ২০১১ রাতে নিউজটি সেন্ট করি বার্তা সংস্থা নিউজ আওয়ার্স বিডি ও রাজশাহী স্থানীয় প্রভাবশালী দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকায়। ঐ দিন রাতেই নিউজটি প্রকাশ করে বিউজ আওয়ার্স বিডি আর পরের দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট ১১’ লালগোলাপ পত্রিকায় “মাদক সিন্ডিকেটের খপ্পরে রাবি ক্যাম্পাস” শিরোনামে প্রথম পেজে লিড সংবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়। এছাড়া নিউজের প্রধান শিরোনামের উপরে “এসব বিষয় দেখার জন্য আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি : প্রক্টর” এমন একটি মিনি শিরোনাম দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা সবাই জানেন যে, আইনশৃংখলা রক্ষাসহ ক্যাম্পাসের সকল অবৈধ কর্মকা-ের দমনের জন্য প্রক্টরকে নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু রাবি প্রক্টর আমার সাথে সে বিষয়টি অস্বীকার করেন। যাই হোক রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকায় নিউজটি প্রকাশ হওয়ায় এবং নিজের মানসম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ায় প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে প্রক্টর নাম ধারণকারী সরকার দলীয় ঐ ক্যাডার।
১৪ ই আগষ্ট ২০১১ দুপুর আনুমানিক ৩টায় আমার সেলফোনে একটি সংবাদ আসলো রাবির সৈয়েদ আমীর হলে ছাত্রলীগের রুম থেকে একটি ককটেল ও শিবিরের তৈরীকৃত হিটলিস্ট পাওয়া গেছে। ঐ সংবাদ সংগ্রহের জন্য ক্যামেরা নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে যায়। অতঃপর উদ্ধারকৃত ককটেলের ছবি তুলতে গেলে তৎকালীন ছাত্রলীগের মাদার বখশ হলের আহবায়ক রুহুল আমিন বাবুর নেতৃত্বে ক্যম্পাসের ত্রাস আব্দুল আলিম (আইসিটি), কামাল (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আরাফাতসহ ১৫/২০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার পুলিশ ও গোয়েন্দতা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ইট দিয়ে তারা আমার মাথায় আঘাত করে এবং মুখ ও শরীর থেঁতলে দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সৎ কর্মকর্তা ও আমার সহকর্মীরা উদ্ধার করে আমাকে রামেক হাসপাতালের ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
ঘটনার পরপরই আমার সহকর্মী সাংবাদিকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ঝড় ওঠে প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে এ হামলার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে স্বারকলিপি দেওয়া হয় ভিসি-প্রোভিসি ও প্রক্টরকে। এছাড়া নিজের জীবনহানির আশঙ্কায় আমার পক্ষ থেকে আমার সহকর্মীরা মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করতে গেলে তৎকালীন ওসি আকবর মামলা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে সাংবাদিকদের চাপে ঐ ওসি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে একটি জিডি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
পাঠক একটি কথা আপনাদের বলতে ভুলে গিয়েছিলাম “আমার সহকর্মী সাংবাদিকরা যখন নিরাপত্তার দাবিতে প্রক্টরকে স্মারকলিপি পেশ করতে যায় তখন তিনি (প্রক্টর) আমাকে ইঙ্গিত করে নাকি বলে ছিলেন, অনেক সাংবাদিকতো মরে যায় তয় আমার ক্যাম্পাসে দু’একজন মরে না কেন ?” এছাড়া এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সাময়িকভাবে লোকদেখানো বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের।
সময়ের ব্যবধানে আজ অনেকদিন অতিবাহিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা আর যাই না। কিছুদিন আগে হঠাৎ (হ) স্যার ফোন করেছিলো.....তানিম..কিছু শুনেছ “সাংবাদিক পেটানোর পুরস্কার স্বরূপ দলীয় বিবেচনায় ছাত্রলীগের মাদার বখশ হলের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবু এখন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর। স্যারের কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম; নিঃশব্দে অশ্রুফোঁটা পড়তে লাগল..তবে প্রক্টরের বদদোয়ায় এখনও মরে যায়নি আল্লাহ আমাকে খুব ভালভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন। (বাবু-বর্তমানে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিংরত)
ঘ. কবে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ?
৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪’র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ-৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব ইতিহাস-সংগ্রামে ছিল স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা। যখনই সরকার গণমাধ্যমকে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে তখনই জনগনই তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিটি কন্টকাকীর্ণ মুহূর্তে লেখক-সাংবাদিক ও কলামিস্টরা অসামান্য অবদান রেখেছেন।
আজ প্রত্যাশার প্রহর গুনতে থাকি কবে বন্ধ হবে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের ওপর সরকারের অবৈধ খড়গ হস্তক্ষেপ। পরিশেষে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আমরা এগিয়ে যায়...বিদায় বেলায় ফরাসি সাহিত্যের দিকপাল লুই আরাগঁর সেই অমর বাণী “মহত্তম অভীষ্টের জন্য এক চিৎকার” - আসুন গণমাধ্যম নিপীড়নের প্রতিবাদে নির্ভয়ে সত্য অভীষ্টের জন্য কোটি কোটি কণ্ঠ এক সাথে প্রতিবাদ করি।
হাসান ইলিয়াছ তানিম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন