বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জেলা পরিষদ নির্বাচন

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান এবং ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও প্রতিবাদের প্রতি চরম উপেক্ষা দেখিয়ে নির্বাচন কামিশনের মাধ্যমে সরকার জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর আয়োজিত নির্বাচন নামের এই কার্যক্রমে অংশ নেয়নি এমনকি আওয়ামী জোটের কোনো দলও। শুধু তা-ই নয়, এরশাদের জাতীয় পার্টি এর বিরোধিতা করে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে। অর্থাৎ একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরো একটি একদলীয় নির্বাচনের নজীর স্থাপিত হয়েছে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নির্বাচন তাই বলে ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হতে পারেনি। কারণ, অন্য কোনো দল অংশ না নিলেও ছড়াছড়ি ছিল ‘বিদ্রোহী’ নামে পরিচিত প্রার্থীদের- যারা আসলে আওয়ামী লীগেরই লোকজন। এই ‘বিদ্রোহী’রা জিতেছেনও ১২টি জেলা পরিষদে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তরা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ২৫টিতে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেছে। 
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো দল বা ব্যক্তি অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীতরা আগেই ২২টিতে চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষিত হয়েছিলেন। সে হিসাবে ৫৯টির মধ্যে দলটির মনোনীতজনেরা জিতেছেন ৪৭টিতে। চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও সব মিলিয়ে ২৫৬ জন আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে রয়েছেন। এদের সঙ্গে এবার যুক্ত হবেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসা প্রার্থীরা। খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো দুই থেকে চারজন ব্যক্তিও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এদের গণনায় নিলে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানের সংখ্যা কিছুটা কমে আসবে। এই কম-বেশিতে অবশ্য কোনো পার্থক্য ঘটবে না। কারণ, যেভাবেই হিসাব করা হোক না কেন, সকল চেয়ারম্যানই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোকজনই হবেন। প্রকৃতপক্ষে হয়ে গেছেনও। কারণ, অতীতে দেখা গেছে, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সসম্মানে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। 
কেবল একতরফা নির্বাচনের কারণে নয়, জেলা পরিষদের এই নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্য কিছু বিষয় নিয়েও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেমন কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও এ নির্বাচন উপলক্ষে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। আগের দিন একটি জাতীয় দৈনিক তো প্রধান শিরোনামই করেছে, ‘জেলায় জেলায় উড়ছে টাকা’। অর্থাৎ ভোট কেনাবেচা হয়েছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে। এরই পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে সংঘাতের বিষয়টি। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে সংঘাত ঘটেছে। কোনো কোনো জেলায় কয়েকটি পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতও করতে হয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, সংঘাত-সহিংসতায় আসলে আওয়ামী লীগই এগিয়ে রয়েছে। 
আমরা মনে করি, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় এবং বিপুল টাকার লেনদেন থেকে সংঘাত-সহিংসতা পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ২৮ ডিসেম্বরের জেলা পরিষদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। তারও আগে রয়েছে নির্বাচনের বিশেষ পদ্ধতির বিষয়টি। কারণ, এই নির্বাচন প্রচলিত নিয়মের অনেক বাইরে গিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল। প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ মানুষকে এতে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। এর ভোটার ছিলেন শুধু ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা। মাস কয়েক আগে আইন সংশোধন করে সরকার এই ইলেক্টোরাল কলেজের প্রবর্তন করেছে। নতুন আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর, সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন করা হয়েছে। জেলা পরিষদের নির্বাচনে শুধু তারাই ভোট দেয়ার অধিকার পেয়েছেন যারা কোনো না কোনো স্থানীয় সরকার সংস্থায় নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করে নতুন এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার ফলে সাধারণ মানুষ তো সংবিধান প্রদত্ত ভোটাধিকার হারিয়েছেই, একই সাথে গণতন্ত্রকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনীতিকদের পাশাপাশি বিশিষ্টজনেরাও বলেছেন, সরকার দেশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খানের প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্রের অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে, যে ব্যবস্থায় প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আইয়ুব খান পাকিস্তানের দুই প্রদেশে ৪০ হাজার করে ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী বা বেসিক ডেমোক্র্যাট নির্বাচিত করার উদ্ভট পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন, যাদের বিডি মেম্বার বলা হতো। এই ৮০ হাজার বিডি মেম্বারই পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসহ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে ভোটার হতো। তাদের নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে কেনা যেতো। কেনা হতও। একই কারণে বিডি মেম্বাররা সব সময় সরকারের পক্ষে থাকতো।
এই ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতেই বলা হচ্ছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও পাকিস্তানের নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পদাংক অনুসরণ করতে শুরু করেছে। পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনকে পরীক্ষামূলক মহড়া হিসেবে ব্যবহার করে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই ইলেক্টোরাল কলেজকে ভোটার বা ইলেক্টর বানানোর চেষ্টা করতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের বিনাশ তো ঘটবেই, জনগণও হারিয়ে ফেলবে তাদের ভোটের অধিকার। আমরা তাই সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনটি বাতিল করার দাবি জানাই। সরকারকে একই সাথে ২৮ ডিসেম্বর আয়োজিত নির্বাচনও বাতিল করতে হবে। ইলেক্টোরাল কলেজ বা নতুন কোনো গণতন্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা নয়, আমরা চাই সকল বিষয়ে সংবিধানের বিধি-বিধান মেনে চলা হোক। সংবিধান জনগণকে যে ভোটের অধিকার দিয়েছে কোনো অজুহাতেই সে অধিকার কেড়ে নেয়া চলবে না।

বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

যিশুখৃস্টও একজন অভিবাসী ছিলেন

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত সোমালি বংশোদ্ভূত প্রথম রাজনীতিবিদ ইলহান ওমরকে এক ট্যাক্সি চালক লাঞ্ছিত করেছেন। উল্লেখ্য যে, ইলহান যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসোটা হাউজের নবনির্বাচিত প্রতিনিধি। ইলহান তাঁর হোটেল থেকে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। ইলহান তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, হোটেল থেকে তিনি ট্যাক্সি করে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ট্যাক্সিচালক তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তাঁকে আইএস বলে কটূক্তি করেন এবং তাঁর হেজাব খুলে ফেলার হুমকি দেন। এমনকি ভবিষ্যতেও তাঁকে হিজাব পরতে নিষেধ করেন ওই ট্যাক্সিচালক। 
ইলহান ওই ঘটনায় ভীষণ মর্মাহত হন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, যখন ছোট ছিলাম তখন সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে শৈশবে কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরেও আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ট্যাক্সিতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা তাকে আবারও ছোটবেলার সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে ইলহান উল্লেখ করেন। তিনি প্রার্থনা করেন মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়।
ইলহান প্রার্থনা করেছেন, মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত এই প্রতিনিধির প্রার্থনায় মার্কিন সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি। মার্কিন নেতারা সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে থাকেন। বর্ণবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তো তারা রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করেছেন। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, প্রদীপের নিচেই যেন অন্ধকার। সাম্প্রতিককালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ও বর্ণবাদী বিদ্বেষের ঘটনা লক্ষ্য করেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই উগ্র প্রবণতা আরো বেড়ে চলেছে। তারই শিকার হলেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম রাজনীতিবিদ ইলহান ওমর। আমরা জানি, মানবাধিকার যে কোনো মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার গ্যারান্টি দেয়। তা হলে মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ট্যাক্সিচালক কী করে একজন মুসলিম মহিলা রাজনীতিবিদকে শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে লাঞ্ছিত করার সাহস পান? যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের সংজ্ঞা কি বদলে গেছে? একজন সামান্য ট্যাক্সিচালকের এমন ঔদ্ধত্যে উপলব্ধি করা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম ও বর্ণবিদ্বেষ কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পতো এমন বিদ্বেষের পালে হাওয়া দিয়েছেন। এখন তা সামলাবার দায়িত্বটাও তার ঘাড়েই বর্তিয়েছে। দেখার বিষয় হলো, তিনি সঙ্গত দায়িত্ব পালনে সমর্থ হন কিনা।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে তো নেতিবাচক প্রচারণার কোনো কমতি নেই। তাই আজ এখানে একটি ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরতে চাই। লন্ডনের কয়েক হাজার মুসলিম ১০ টন খাদ্য বিতরণ করলেন গৃহহীনদের সাহায্যার্থে। গত শুক্রবার নামাযের পর পূর্ব লন্ডন মসজিদে এই খাবার সংগ্রহ করা হয়। খাবার বিতরণের এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন হাজারো মুসলিম। খাবার তৈরি ও বিতরণের কাজে সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫শ’। জুমা নামায পড়ার পর স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার সরবরাহ শুরু করেন। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার পাঠানো হয়। সমস্ত খাবার অভাবী মানুষদের মধ্যে, বিশেষ করে রাস্তায় বসবাস করা মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। আর খাবার যারা গ্রহণ করেন তাদের ৯০ ভাগই ছিলেন অমুসলিম। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের নেতারাও মুসলমানদের এই সেবাকর্মে অংশগ্রহণ করেন। খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি বলেন, মানবতার খাতিরে সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার চমৎকার উদাহরণ এই খাবার বিতরণ কর্মসূচি।
আমরা জানি পাশ্চাত্যে বড় দিনের উৎসব হলো সবচাইতে বড় উৎসব। সমগ্র খৃস্টজগতে এই সময় সাড়া পড়ে যায়। বড় দিনকে কেন্দ্র করে আলোকসজ্জা হয়, ঝলমলে উৎসব হয়, খাবার-দাবারেরও ব্যাপক আয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এমন উৎসবের সময়ও কিছু মানুষের খাবার থাকে না, থাকে না মাথা গোঁজার ঠাঁইও। ফলে তাদের জীবনযাপন করতে হয় রাস্তাতেই। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের। বঞ্চিত ওইসব মানুষের সাহায্যে এই সময় লন্ডনের মুসলমানরা এগিয়ে এসে এক উজ্জ্বল মানবিক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা এমন মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
লন্ডনের খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি মুসলমানদের ওই সেবাকর্মের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, মানবতার সেবায় সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার এটি একটি চমৎকার উদাহরণ। তিনি যথার্থই বলেছেন। হযরত আদম (আ:) ও হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স:)সহ সব নবী-রাসূলের মূল আহ্বান ছিল একই। সবাই মহান স্রষ্টার আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নাজিলকৃত বিধিবিধানের আলোকে জীবন পরিচালিত করতে বলেছেন। আর সেই বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের সেবা করা। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ বিশেষ করে বিশ্ব নেতারা যদি মহান স্রষ্টার নির্দেশনার আলোকে মানুষের সেবায়, কল্যাণে ব্রতী হন, তাহলে এই পৃথিবী আবার সব মানুষের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত এখানে পোপ ফ্রান্সিস-এর বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। খৃস্টীয় বড়দিনের প্রকৃত তাৎপর্য বস্তুগত ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার ভ্যাটিকানে বড়দিনের আগের দিনে সন্ধ্যার প্রার্থনা সভায় রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বব্যাপী শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন দুর্ভোগেরও নিন্দা জানান। বিবিসি পরিবেশিত খবরে আরো বলা হয়, ক্ষুধার্ত, অভিবাসন রুটগুলোতে বিপন্ন মানুষ এবং আলেপ্পোসহ সিরিয়ার শহরগুলোতে বোমাবর্ষণের শিকার মানুষদের কথাও স্মরণ করেন পোপ। তিনি আরো বলেন, বস্তুগত বিষয়গুলো ক্রিসমাস পর্বকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাই এবারের পর্বে আরো নম্রতা আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন বাণিজ্যের আলো স্রষ্টার আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। আমরা গিফটের জন্য অধীর থাকলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে করি শীতল ব্যবহার। বিগত বছরগুলোতেও অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ। এবারও একই আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, যিশু ও একজন অভিবাসী ছিলেন, বিষয়টি যেন খৃস্টানরা স্মরণে রাখে। বড়দিন উপলক্ষে পোপ যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে পাশ্চাত্যের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ মনোভঙ্গি ও জীবন চেতনা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, বড়দিনের তাৎপর্য বস্তুগত ভোগবিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেছেন, বাণিজ্যের আলো খোদার বা স্রষ্টার  আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে বস্তুগত ভোগবিলাস ও বাণিজ্যলিপ্সা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষের মনে স্রষ্টার আলোকিত বার্তা পৌঁছতে পারছে না। বস্তুবাদী এমন স্বার্থান্ধ মানুষ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে কেমন করে? এমন চেতনার ক্ষমতাধর মানুষদের কারণেই এখন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধ-বিগ্রহ। ফলে প্রতিদিনই পৃথিবীতে বাড়ছে অভিবাসীদের সংখ্যা। অথচ তাদের প্রতিও মানবিক আচরণে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান সভ্যতা। এ কারণেই হয়তো পোপ খৃস্ট জগতকে স্মরণ করতে বলেছেন যে, যিশুখৃস্টও একজন অভিবাসী ছিলেন। এখন দেখার বিষয় হলো, খৃস্ট-জগৎ তথা পাশ্চাত্য পোপের বার্তা কতটা উপলব্ধি করে এবং নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ সভ্যতার সংস্কারে কতটা সক্রিয় হয়।

মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আমার দেখা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’

আগামীকাল ২৯ ডিসেম্বর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। এই দিন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী তৎকালীন ১৮ দলীয় ঐক্যজোট বর্তমান ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জোট নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একতরফা প্রহসনের নির্বাচনকে ‘না’ ও গণতন্ত্রকে ‘হ্যাঁ’ বলতে জাতীয় পতাকা হাতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানান। ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঠেকাতে নজিরবিহীনভাবে গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখে সরকার। যানবাহন, রেল ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে সরকার যেমন রাজধানী থেকে গোটা দেশকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তেমনি রাজধানী ছিল যান শূন্য। রাজধানীর প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি, যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া, সরকারি দলের মারমুখী লাঠি মিছিল রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি করে চরম আতংকজনক পরিস্থিতি। নজিরবিহীনভাবে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশী পাহারায় আ’লীগ লাঠিয়ালরা হামলা চালায়। কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বের হওয়ার চেষ্টা করলেও আইনশৃংখলা বাহিনী বালির ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে তাঁকে বের হতে দেয়নি। একদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শান্তি ও গণতন্ত্রপ্রিয় নিরস্ত্র জনতার উপর হামলা চালানোর সরকারি বেপরোয়া নির্দেশ অন্যদিকে ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী সহ আওয়ামী লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা ঢাকার ওলি-গলিতে হিংস্র ও মারমুখী অবস্থান গ্রহণ করে। যার ফলে ঢাকা হয়ে ওঠে যেন এক অসম রণাঙ্গন। যার একদিকে রয়েছে জনগণের টেক্সের পয়সায় পরিচালিত আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যারা মূলত নিরীহ শান্তিপ্রিয় দেশপ্রেমিক জনতার বিরুদ্ধে কার্যত অবস্থান নিয়ে আওয়ামী সরকারকে স্থায়িত্ব দেয়ার জন্য অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই একপেশে ও বেপরোয়া আচরণ শাসকগোষ্ঠীর জন্য একদিন এরাই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের ভূমিকায় আবির্ভূত হবে। অন্যদিকে দেশপ্রেমিক জনতা ভোট ও বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮ দলীয় জোটের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো প্রতিকূলতা মাড়িয়ে সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসলেও মিছিল করার জন্য কোন এক জায়গায় সমবেত হওয়া তো দূরের কথা কার্যত জনতা যে যেখানে ছিল সেখানেই অবরুদ্ধ হয়ে যায়। কার এতো সাধ্য! নিরীহ জনতাকে টার্গেট করে রাখা বন্দুকের নল উপেক্ষা করে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হিং¯্র থাবার মুখে জীবন বাজি রেখে সামনে এগুবে? নিঃসন্দেহে ঐ কঠিন সময়ে দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম সফল করতে ফ্যাসিবাদী সরকারেরর হিমালয়সম প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে রাজপথে হাজির হয়ে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেয়া ছিল সময়ের দাবি। ইতিহাস সাক্ষী যুগে-যুগে যারাই সত্য-ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা ছিলেন সেই সময়ের তরুণ ও যুবসমাজের অগ্রসেনানী। আর এই দুঃসাহসী তরুণদের আত্মত্যাগের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আলোকিত সমাজ আর মূলোৎপাটিত হয়েছে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও নির্যাতন। মানুষ ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো অধিকার। আর এভাবেই সূচিত হয়েছে নতুন সভ্যতার। নিকট অতীতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ ৯০’এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা যুগ-যুগ ধরে তরুণ ও যুব সমাজকে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের কি এমন হয়েছে যে, তারা আজ সমাজ জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, খুন, গুম, শোষণ-বঞ্চনা, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, দুর্নীতি, অপশাসন, বাক-স্বাধীনতা হরণ ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন সহ প্রকাশ্যে দিবালোকে অসংখ্য ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পরও তরুণ ও যুব সমাজ আজ নির্বাক, নিশ্চুপ। মনে হয় তরুণ সমাজ আজ এতটাই নির্জীব হয়ে পড়েছে যে, তাদের চোখের সামনে সংগঠিত হওয়া এসব লৌমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখেও না দেখার এবং শুনেও না শুনার ভান করছে। অসংখ্য মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ, সন্তান হারা পিতার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, ভাই হারা বোনের ক্রন্দন, স্বামী হারা স্ত্রীর অসহায় আহাজারিতে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও এসব অমানবিক ঘটনা ভোগবাদী সমাজের তরুণ সমাজের হৃদয়কে একটুখানিও নাড়া দিতে পারছে না। তাহলে কি গোটা তরুণ সমাজই আজ ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধটুকু হারিয়ে ফেলেছে? 
না, তেমনটি হওয়ার কথা নয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে সমাজে এর ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। যা সত্যিই আমাদেরকে আশায় বুক বাঁধতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তরুণ সমাজের মধ্য থেকে একটি বড় শক্তির উত্থান হয়েছে যারা সত্য ও সুন্দরকে বুকে ধারণ করে সম্মুখ পানে ছুটে চলেছে অবিরাম। তাদের আদর্শ হচ্ছে মহান আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ দ্বীন আল-ইসলাম। তাদের নেতা হচ্ছেন বিশ্বনবী ও বিশ্বনেতা মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)। তাদের মঞ্জিলে মাকসুদ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে জান্নাত লাভ করা। তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়-‘তোমার সৃষ্টি মানবকল্যাণের নিমিত্তে। তোমার কাজ হলো সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা এবং মিথ্যা ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তোমার চরিত্র হবে নিষ্কলুষ পবিত্র। তুমি নিজে সেবা গ্রহণ করে নয়, অন্যকে সেবা করে আনন্দ পাবে। নিজের প্রাপ্য অধিকারের চাইতে কমের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে অন্যকে তার প্রাপ্যের চাইতে বেশি দিতে প্রস্তুত থাকবে। তোমার শত্রুরাও তোমার ওপর এই আস্থা রাখবে যে, কোন অবস্থায়ই তুমি ভদ্রতা ও ন্যায়-নীতি বিরোধী প্রতিশোধ পরায়ণ কোন আচরণ করবে না। তাই তো দেখা যায় এই আদর্শকে ধারণ করে ও উল্লেখিত চরিত্রের আলোকে এই ব্যতিক্রমী আদর্শবাদী ছাত্র ও যুব কাফেলার কর্মীরা তাদের প্রিয় ও নিরপরাধ দায়িত্বশীলদের সাথে ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সম্পূর্ণ অন্যায়, অবিচার ও বাড়াবাড়িমূলক আচরণের পরও তারা আইনকে হাতে তুলে নেয়নি। এমনকি এরকম নিরপরাধ, নির্দোষ, জননন্দিত নেতৃবৃন্দকে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যার পরও তারা উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষ দলের কোন নেতা-কর্মী এমনকি কোন সমর্থকের গায়েও সামান্যতম আঁচড় লাগায়নি। এটাই এই আদর্শবাদী দলের ছাত্র যুব কাফেলার এক ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। যার ফলে অসংখ্য অপপ্রচার, মিথ্যাচার, কুৎসা রটনা ও জুলুম-নির্যাতনের পরও আজ এই কাফেলা বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি-কোটি অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের হৃদয়ে আশার আলো জাগাতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে এদেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী তরুণরা দলে দলে এই কাফেলার পতাকাতলে সমবেত হচ্ছে। তাই তো সমাজের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী সহ সমাজের প্রত্যেক শ্রেণী ও পেশার অভিজ্ঞ ও বিদগ্ধজন এই তরুণ কাফেলাকে তাদের হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসা পোষণ করেন এবং বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে সমৃদ্ধ ও আলোকিত করে চলেছেন। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যে ধরনের মেধাবী ও আদর্শবাদী নেতৃত, ত্যাগী এবং যোগ্য কর্মী বাহিনী প্রয়োজন এই তরুণ কাফেলা ইতোমধ্যেই সে ধরনের নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী গঠনে অনেক দূর পথ অগ্রসর হয়েছে একথা সত্যি কিন্তু তাদেরকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে, একথা সত্য, ঘুণে ধরা এ সমাজের পরিবর্তন করে, সকল প্রকার জালিম-জুলুম ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জন্য প্রয়োজন আরো মজবুত ঈমান, ঐকান্তিক নিষ্ঠা, মজবুত ইচ্ছাশক্তি এবং ব্যক্তিগত আবেগ উচ্ছাস ও স্বার্থের নিঃশর্ত কুরবানী। এ কাজের জন্যে এমন একদল দুঃসাহসী যুবকের প্রয়োজন, যারা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি ঈমান এনে তার উপর পাহাড়ের মতো অটল হয়ে থাকবে। অন্য কোনো দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে না। পৃথিবীতে যাই ঘটুক না কেন, তারা নিজেদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পথ থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত হবে না। পার্থিব জীবনে নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নতির সকল সম্ভাবনাকে অকাতরে কুরবানী করে দেবে। স্বীয় সন্তান সন্ততি, পিতা মাতা ও আপনজনের স্বপ্ন সাধ বিচূর্ণ করতে কুণ্ঠাবোধ করবেনা। আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদের বিচ্ছেদ বিরাগে চিন্তিত হবেনা। সমাজ, রাষ্ট্র, আইন, জাতি, স্বদেশ, যা কিছুই তাদের উদ্দেশ্যের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে, তারই বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ ও নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। অতীতেও এ ধরনের লোকেরাই সমাজ পরিবর্তন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছে। আজও কেবল এ ধরনের বৈশিষ্ট্যম-িত লোকেরাই মানুষের মৌলিক অধিকার তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। 
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য ও আদর্শকে বুকে ধারণ করে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সবুজ ভূখ-ে যাত্রা শুরু করে যে সংগঠনটি সেটিই হচ্ছে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাওয়া গণতন্ত্রপ্রিয় অসংখ্য মানুষের আশা-ভরসার স্থল, কোটি ছাত্রের হৃদয়ের স্পন্দন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মানুষের অতিপরিচিত, মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ছাত্রসমাজের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বরাবরই দায়িত্বশীল ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ তরুণ কাফেলা। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত ২০ দলীয় জোটের বিগত আন্দোলনে এক ঐতিহাসিক ও দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এরই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ১৮ দলীয় বর্তমান ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে একতরফা প্রহসনের নির্বাচনকে ‘না’ ও গণতন্ত্রকে ‘হ্যাঁ’ বলতে জাতীয় পতাকা হাতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিলিত হওয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই তরুণ কাফেলার শহীদ মনসুর আহমদ শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে জীবনের সকল পিছুটানকে পিছনে ফেলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে মিছিলে অংশ নিয়ে রাজধানীর ঢাকার মালিবাগে পুলিশের গুলীতে নিহত হন। সেদিন সরকার ও তার বাহিনী মনে করে থাকতে পারে এই হত্যাকা-ের মাধ্যমে তারা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’-কে ব্যর্থ করে দিতে পেরেছে। না, আসলে তা নয়। বরঞ্চ সেদিনের একমাত্র শহীদ নির্ভিক সেনানী মনসুরের শাহাদাত, সরকারের আন্দোলন বানচালের অপচেষ্টাকেই প্রকৃত অর্থে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ সফলতার ভিতকে মজবুত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই সেদিনের এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে শহীদ মনসুর ‘ধ্রুব তারার’ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন। যুগ-যুগ ধরে গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সংগ্রামী মানুষের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন। একই সাথে তার এ বীরত্ব গাঁথা অবদান গণতন্ত্রকামী মানুষকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি ভোটাধিকার হরণকারী, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনে মাইলফলকের ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র কার্যত অনুপস্থিত। অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেকোন সময় গণতন্ত্রের জানাযা শেষে দাফন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। গণতন্ত্রের নামে আজ বাংলাদেশে যার চর্চা হচ্ছে তাকে গণতন্ত্র বলে না- একথা যখন কোন দলের এক্টিভিস্টের মুখে নয়, উচ্চারিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত সম্মানিত উচ্চস্তরের এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মুখে তখন বুঝা যায়, কি ধরনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে, বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সাথে কথা বলার সময় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন, যা সম্প্রতি প্রচারিত হয়। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর মানুষ আশা করেছিল যে, কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তির নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসহ সকল প্রকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। সব ধরনের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে ব্যক্তি স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, ধর্ম পালন ও বক্তব্য প্রদানের স্বাধীনতার অধিকারের চর্চা করবে স্বত:স্ফূর্তভাবে। একটি নবীন স্বাধীন দেশের নব অভিযাত্রা দেশকে নতুন যুগে নিয়ে যাবে। কিন্তু ৪৪ বছরেও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতা অব্যবহিত পর যারা ক্ষমতা লাভ করেছিলেন তারা নতুন দিক নির্দেশনা তৈরি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক বরঞ্চ তাদের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নবীন এ রাষ্ট্রটি তলাবিহীন ঝুড়ির অভিধায়ে অভিহিত হয়। ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে না দিয়ে ’৭৫সালে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদের পতন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে পরপর তিনটি অভূতপূর্ব নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিশু গণতন্ত্র যখন হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে কৈশর পেরিয়ে যৌবনের পানে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই গণতন্ত্র বিরোধী বাকশালী চক্র তাদের দেশি-বিদেশি দোসরদের সাথে নিয়ে গণতন্ত্র ও দেশ বিরোধী চক্রান্তের নতুন জাল বুনতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত ৪ দলীয় জোট সরকারকে অন্যায় ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা থেকে হটাতে একের পর এক দেশ বিরোধী ও নাশকতামূলক কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এতে ব্যর্থ হয়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ৪ দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দিন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাক্কালে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে সারা দেশ থেকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী সংগ্রহ করে লগি-বৈঠাধারী দলীয় ক্যাডার সমেত একযোগে নিরীহ ছাত্র জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বায়তুল মোকারম উত্তর গেটে পূর্ব ঘোষিত জামায়াতের জনসভার প্রস্তুতি চলাকালে লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা পল্টন মোড়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র জামায়াত-শিবির কর্মী ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলে পড়ে। প্রকাশ্য দিবালোকে সাপ পিটিয়ে মারার মতো উপর্যুপরি আক্রমণের মাধ্যমে ঘটনাস্থলেই অনেককে হত্যা করাসহ অসংখ্য বনী আদমকে আহত করে। যা মিডিয়ার মাধ্যমে সমস্ত বিশ্ববাসী অবহিত। এসব প্রকাশ্য অপকর্মের পরও বাকশালীচক্র যখন মহান মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদেরকে হত্যায় মেতে ওঠে তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। তারা মানবতাবাদী হতেন কিংবা ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধ যদি তাদের মধ্যে থাকতো, তাহলে তাদের উচিত হতো ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে পল্টনে তাদের দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ যার লাইভ সাক্ষী দেশ-বিদেশের অসংখ্য মিডিয়াসহ কোটি বনী আদম। এই ঘটনার বিচার না করে ৪৪ বছর পূর্বে সংঘটিত ঘটনাকে সামনে এনে মিথ্যা অভিযোগ ও প্রহসনের মাধ্যমে জাতীয় ও ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। এরাই ধারাবাহিকতায় ২০০১-২০০৬ সালের জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক জোট সরকারকে সন্ত্রাসী আন্দোলনের মাধ্যমে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁকা পথে ক্ষমতায় আসার ফন্দি আঁটে। তারই অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনে নমিনেশন দাখিল করার পরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তাদেরই ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশে ১/১১ সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং এই সরকারকে তাদেরই আন্দোলনের ফসল বলে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়। তারপর তাদেরই আন্দোলনের ফসল অবৈধ ১/১১ সরকারের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আঁতাতের মাধ্যমে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করে বাকশাল ও ইতিহাসের সকল স্বৈরশাসনকে হার মানিয়ে কঠিন একদলীয় ও একব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন কমিটিতে নিজ দলের অধিকাংশ নেতার বিরোধিতা সত্ত্বেও কেয়ারটেকার সরকারের জনপ্রিয় ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১৫৩টি আসনে কোন প্রকার নির্বাচন ছাড়াই ও বাকী আসনগুলোতে প্রহসনের মাধ্যমে ঘোষণা দিলেও জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে গায়েব জোরে আবারো সরকার গঠন করে। তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে প্রহসনের মাধ্যমে বহু জাতীয় নেতাকে হত্যা এবং আরো নেতাদেরকে হত্যার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করেও সুবিধা করতে না পেরে আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন পাওয়ার মানসে পরিকল্পিত জঙ্গি কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে দেশকে আজ এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেছে যা অকল্পনীয়। 
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়ার্টকিন্স “আমাদের স্বাধীনতা আমাদের অধিকার চিরন্তন” নামে একটি বিশেষ নিবন্ধ লিখেন- যা ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপা হয়। তার নিবন্ধে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বক্তব্য রয়েছে যার অংশবিশেষ নিচে উল্লেখ করা হলো-
“বাংলাদেশ স্বত:স্ফূর্তভাবে আটটি আন্তর্জাতিক মানবধিকার চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর ফলে দেশটি কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তির নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু মানবাধিকার বলতে শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচরণকে বুঝায় না, যদি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার না থাকে, তাহলে মর্যাদাপূর্ণ জীবন-যাপন করা যায় না। ভয় থেকে মুক্তি ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। বাংলাদেশ একটি নবীন রাষ্ট্র, যেটি এখনো তার অতীতের সঙ্গে সংগ্রাম করছে, যার দেশটির নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সামগ্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, গ্রেফতার ও নিরাপত্তা হেফাজত থেকে সুরক্ষা, বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, চলাফেরার স্বাধীনতা, একত্র হওয়া, দল বা ও ধর্ম পালন এবং বিবেক-বুদ্ধি ও বক্তব্য প্রদানের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ আছে। এ বিষয়গুলো যেমন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, তেমনি আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ ও অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে এবং কিছু বিষয়, যেমন-গ্রেফতার করার সময় অথবা আটকাবস্থায় মৃত্যু, তদন্তকালীন এবং আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় হস্তক্ষেপ, গুম ও নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, সাংবাদিক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সুশীল সমাজের মানুষের বিধিবহির্ভূত গ্রেফতার ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, উত্ত্যক্তকরণ ইত্যাদি এখনো রয়ে গেছে। স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য সংস্থার দ্বারা এ অভিযোগগুলোর তদন্ত হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা পদ্ধতির অংশ বিশেষ এবং উন্নয়রে প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য অনস্বীকার্য।” 
আজ প্রয়োজন দেশের তরুণ ছাত্র-যুবকদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত আত্মপ্রত্যয়ী যুবক শহীদ মনসুরের ন্যায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠা। শাসক শ্রেণীর সকল অন্যায়ে ও জুলুমের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি মানুষের ইস্পাত প্রাচীর ঐক্য সৃষ্টি ও রুখে দাঁড়াবার সাহস প্রদর্শন করতে পারলেই কাক্সিক্ষত মুক্তির সম্ভাবনা সুনিশ্চিত।





মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন 

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্ন-

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিরাপত্তা রাষ্ট্রের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী মতের মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। গুম ও অপহরণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার গ্রুপ ও গুম হওয়া পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতে পারে। কিন্তু তাদের পরিবার জানে না তাদের অবস্থান কিংবা তারা জীবিত না মৃত। গেল ৫ বছরে শত শত বাংলাদেশী বিশেষ করে বিরোধী মতের মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছে বলে তাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে অথবা জেলে আছেন, তাদের পরিবার এখন নজরদারিতে রয়েছেন বলে ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর ফরেন পলিসিতে মুদ্রিত ‘বাংলাদেশে কি বিরোধী মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়- “যখন সাদা পোশাকধারী পুলিশ মীর আহমেদ বিন কাসেমের কাছে আসলো, তখন তাকে জুতা পরার সময়ও দেয়া হয়নি। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ৯ আগস্ট রাত ১১টায় তাদের ঢাকাস্থ এ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। এ সময় তাদের দুই মেয়ে চিৎকার করে দৌড়াচ্ছিল। এর ৫ দিন আগে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে তার মায়ের সাথে আদালতে শুনানিতে যাওয়ার সময় একদল মানুষ তাদের গাড়ি আটকে অন্য একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। সমসাময়িক সময়েই অন্তত ৩০ জন সাদা পোশাকধারী লোক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর বাসায় যায় এবং ওই দু’জনের মতোই তাকে গুম করে। তার ভাই সালমান আল আযমীর ভাষ্যমতে, অস্ত্রের মুখে তার ভাইকে এ্যাপার্টমেন্ট থেকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এ সময় তারা জানিয়েছিল তারা পুলিশের একটি বিভাগ থেকে এসেছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এই তিন ব্যক্তিই বিরোধী দলের তিনজন সিনিয়র নেতার সন্তান। তাদের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে যায়। যদিও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করছে।”
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা ভেবে দেখার মতো। আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক চেতনায় ন্যায়, সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। এ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত থাকবে এটাই তো জনগণের আকাক্সক্ষা। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে দেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এরপরও কিছু বিষয় আমাদের এইসব অহংকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। পত্র-পত্রিকায় হত্যা, গুম ও অপহরণের যে চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। হয়তো এই কারণেই ফরেন পলিসি শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে কি বিরোধী মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?’
আমরা জানি, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যে পুষ্ট। বর্তমান সরকারও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের মর্যাদা ও গুরুত্বে খুবই সচেতন। এই সরকারের শীর্ষনেতারাও বহুবার বলেছেন, তারা গুম-অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধী। তাই এইসব ক্ষেত্রে যে প্রশ্নগুলো এখন উঠেছে তার ন্যায়ভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন। আমরা মনে করি গুম-অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ন্যায়ভিত্তিক বিধি বিধানের আলোকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিলে সরকারের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সময়ের দাবি পূরণে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার কতটা এগিয়ে আসে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঘরে বাঘ পুষে বনের মোষ তাড়াই

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে সরকার এ পর্যন্ত যা করেছে, তাতে সুস্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, এই টাকা চুরির সঙ্গে দেশের খুব প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছেন। আর তারা এতই প্রভাবশালী যে, তাদের টিকিটি স্পর্শ করার ক্ষমতা ‘রাবিশ-স্টুপিড’খ্যাত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের অন্তত নেই। তার নানাবিধ আচরণে এখন আর অস্পষ্ট নেই যে, তিনি এই চুরির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের ও বাইরের চোরদের রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই শেষ বার তিনি রাগত স্বরে বলে দিয়েছেন যে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে দেরি হবে, অনেক দেরি হবে।’ ভাবখানা এমন যে, এ টাকা তার পৈতৃক সম্পত্তি। তিনি এই টাকার বিষয়ে যা খুশি তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
কিন্তু তা তিনি পারেন না। তিনি এ টাকার আমানতকারী ছিলেন, খেয়ানত করেছেন। হিসাব অনুযায়ী অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টার জন্য এতোদিনে তার জেলে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু আজব দেশ এই বাংলাদেশ। এখানে  চোরেরাই কেবল সিনাজুরি করে বেড়ায়। মুহিত কেন তদন্ত রিপোর্ট একেবারে তার কোলের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন, প্রকাশ করছেন না, তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেন না। কেবল বলেন, প্রকাশ করা যাবে না। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পর্যন্ত কঠোর মন্তব্য করলো। কোনো কিছুই জনাব মুহিতকে স্পর্শ করলো না। এটা মাসতুতো ভাইদের গল্প ছাড়া আর কী হতে পারে। 
এখানে এক আজব ঘটনা লক্ষ্য করা গেল। টাকাটা চুরি হলো এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান প্রায় এক মাস এই ঘটনা লুকিয়ে রেখে টাকাটা ফিলিপিন্সের জুয়াড়িদের মাধ্যমে লাপাত্তা হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে মার্চের মাঝামাঝি প্রকাশ করলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে গেছে। তারপর অর্থমন্ত্রীর কাছে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ‘বীরের মতো’ পদত্যাগ করে চলে এলেন। আর প্রধানমন্ত্রী তার জন্য না টাকার শোকে অঝোর ধারায় কাঁদলেন। কেঁদেছেন যে, সেটা আতিউরই বলেছেন। তখন অর্থমন্ত্রীর সে কী নাচন-কুদন!  গভর্নর আতিউরের ওপর তিনি এক হাত নিলেন। অন্য কোনো দেশ হলে আতিউরের কী কী হতে পারতো না পারতো, বললেন। রাগে অগ্নিশর্মা হলেন। শেষে মিশে গেলেন সেই গড্ডালিকা প্রবাহেই।
সরকার লোক দেখানোর জন্য আওয়ামী ঘরানার ব্যাংকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে এই চুরির ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করলো। এই কমিটি মে (২০১৬) মাসে নির্ধারিত সময়েই তাদের রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। অর্থমন্ত্রী জানান যে, শিগগিরই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সে ‘শিগগিরই’ এখন পর্যন্ত আসেনি। আর অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ কথায় মনে হলো, আর কোনোদিন আসবেও না। ড. ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে স্পষ্ট করেই বলা হয় যে, রাজকোষ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা জড়িত। এদিকে সিআইডি’র তদন্ত টিমের প্রধান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অসাধু চক্রের সহায়তায় রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। ঐ অসাধু চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র মিলে ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে। সিআইডি’র তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির আগেই পর্যায়ক্রমে ২৩ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেছিলেন। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রিজার্ভ সার্ভার ব্যবহার করেন। চলতি মাসের জানুয়ারিতে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেন। তারা ব্যাংকের সার্ভার ব্যবহার করে ধীরে ধীরে এটিকে অরক্ষিত করে ফেলেন।
সিআইডি’র রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভারের সঙ্গে কোনো ইন্টারনেট যোগাযোগ ছিল না। হ্যাকারদের সহযোগিতা করতেই ঐসব বিদেশি নাগরিক সার্ভারে ইন্টানেট সংযোগ দেন। এরপর সুবিধামতো সময়ে রিজার্ভ সরিয়ে নিতে মাঠে নামেন। রিজার্ভ চুরি করতে তারা বিশ্বের অন্যতম দুর্বল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক’কে বেছে নেন। তারপর টাকা রিজাল ব্যাংকে চলে যায়। আর সেখান থেকে জুয়াড়িদের হাত হয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা। সিআইডি’র সূত্রমতে বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় রিজার্ভ সার্ভার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তারপর ৫ ফেব্রুয়ারি টাকা সরিয়ে ফেলে। সিআইডি বলেছে, এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা জড়িত।
এরপর থেকে যতো লাফালাফি হচ্ছে, তার সবই হচ্ছে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত আনা নিয়ে। সেখানকার জুয়াড়িদের নিয়ে। টাকা কীভাবে হাওয়া হয়ে গেল, তা নিয়ে। সরকারের কথাবার্তায় মনে হতে থাকলো, একেবারে উড়োজাহাজ ভর্তি করে ফিলিপিন্স থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল টাকা ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরিতে কে সহায়তা করলো, কোন কোন বিদেশি এতে জড়িত ছিল, তার আর কী দরকার। টাকা তো আমরা পেয়েই গেছি।
 আবার আমরা এই নিয়ে গবেষণায় বসেছি যে, কী কায়দায় পুরো টাকাটা জুয়াড়িদের হাতে গেলো। যেন, জুয়া খেলা একটি অত্যন্ত সৎ ও মহান পেশা। এখানে কোনো চালিয়াতি-জালিয়াতির ঠাঁই নেই। অথচ জুয়ার ব্যবসা মানেই জালিয়াতির ব্যবসা। কে কাকে কীভাবে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে, এ ব্যবসা তারই প্রতিযোগিতা। তাই ২৩ ফেব্রুয়ারি খেলাটা এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে পুরো টাকাটাই হ্যাকারদের অর্থাৎ চোরদের হাতে চলে যায়। এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। এই হলো আমাদের ‘বিবি তালাকের’ ফতোয়া খোঁজা! কিন্তু ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংক বাংলাদেশকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির কোনো দায়-দায়িত্ব নেবে না এবং সে টাকার এক পয়সাও ফেরত দেবে না।
রিজাল ব্যাংকের বক্তব্য হলো, এই টাকা চুরির জন্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দায়ী। টাকা চুরি হতে পেরেছে এসব কর্মকর্তার সহযোগিতায়। রিজাল ব্যাংক এই চুরির সঙ্গে কোনো পর্যায়েই জড়িত নয়। ক্লায়েন্টের টাকা এসেছে। তারা টাকা রেখে দিয়েছে। আবার ক্লায়েন্ট তার সুবিধাজনক সময়ে টাকাটা তুলে নিয়েছেন। এটাই ব্যাংকিং। আর তাই যতো দীর্ঘমেয়াদিই হোক, রিজাল ব্যাংক এই ফেরত দাবির বিরুদ্ধে তাদের আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। রিজালের আইনজীবী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের সামনে আনতে স্বচ্ছভাবে তদন্ত ও প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চুরির ঘটনার জন্য রিজাল দায়ী নয়। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাই এর জন্য দায়ী। এর আগে ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ জানিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিজাল ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে। এ প্রেক্ষিতেই রিজালের আইনজীবী জানালেন যে, ক্ষতিপূরণের প্রশ্নই ওঠে না। কারণ চুরির তিনটি ধাপ পার হয়ে অর্থ তাদের ব্যাংকে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন তাদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান। তবে অর্থমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই তাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এতই যদি আপনাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হবে, তবে চুরি-যাওয়া টাকার জন্য ফিলিপিন্সে ঘোরাঘুরি করছেন কেন? আবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বলেছেন যে, প্রয়োজনে প্রতিবেদন তাদের দেয়া হবে।
এখানে গুরুতর প্রশ্নটি অনালোচিতই থেকে যাচ্ছে। ড. ফরাসউদ্দিন ও সিআইডি’র তদন্ত প্রতিবেদনে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে যে, এই চুরির ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে চোরদের সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ বা ৬ কর্মকর্তা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোনো রিপোর্টেই ঐ কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। আর এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও শোনা যায়নি। কারণ কী? তবে কি এই চোরেরা বা চোরদের সহযোগীরা অর্থমন্ত্রী, পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি প্রভৃতি সংস্থার চেয়েও অধিক শক্তিশালী? সে রকম শক্তিশালী কে আছে বাংলাদেশে? এ বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দিন রয়টার্সকে বলেছেন যে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন যে, যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি, সেহেতু ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেশ ভালো আছেন এই কর্মকর্তারা।
এবার আসা যায় চুরির ঘটনায় জড়িত ২৩ বিদেশি প্রসঙ্গে। আমরা এখন পর্যন্ত এসব ভাশুরেরও নাম নেইনি। কেন বলা যাবে না ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানা ও তার ফটকা প্রতিষ্ঠান ‘ফায়ার আই’ সম্পর্কে? গভর্নর আতিউর রিজার্ভ চুরির কয়েক মাস আগে এই রাকেশ আস্তানাকে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায় আস্তানা কোনো আইটি বিশেষজ্ঞই নন। তার লোকজন যথেচ্ছ সার্ভার রুমে ঢুকে এবং নানা কারসাজি চালায়। তারা কারা ছিলেন, সেটা নিশ্চয়ই সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড আছে। ধরে ধরে তাদের নামও প্রকাশ করা যাচ্ছে না কেন? আবার এই চুরির ঘটনা ঘটার পর দেশের ভেতরে সে কথা গোপন রেখে গভর্নর আতিউর ভারতে গিয়েছিলেন কিসের পরামর্শের জন্য? ফিলিপিন্সে তোলপাড়ের আগে কেন তিনি প্রকাশ করেননি চুরির ঘটনা? এত বড় ঘটনার পরও আতিউর কী করে ধোয়া তুলশি পাতা রয়ে গেলেন?
সব কিছু আছে ঘরের ভেতরেই। কিন্তু ঘরের ভেতরে বাঘ প্রশ্রয় দিয়ে আমরা তাড়াচ্ছি বনের মোষ। ভূত রয়েছে সরষের ভেতরেই, আর আমরা ভূত খুঁজছি বনে বনে।





ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গুম প্রসঙ্গে

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও গুমের প্রসঙ্গ ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এর কারণ তৈরি করেছেন নিকট অতীতের বিভিন্ন সময়ে গুম হয়ে যাওয়া ২০ জনের পরিবার সদস্যরা। গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গুম হওয়াদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কারো কারো মায়েরাও উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তাদের স্বজনদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে এবং তারপর থেকে গুম হয়ে যাওয়াদের কোনো খোঁজ-খবর পাচ্ছেন না স্বজনরা। তারা প্রত্যেককে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, ফিরিয়ে না দেয়া হলেও গুম হওয়াদের বিষয়ে সরকার যেন অন্তত সঠিক তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করে। গুম হওয়ারা বেঁচে আছেন কি না সে ব্যাপারেও জানানোর দাবি তুলেছেন স্বজনরা। 
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে গুমের বিষয়টিকে যথারীতি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই লক্ষ্য করা গেছে। রোববার গুম ব্যক্তিদের স্বজনরা যখন জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন ঠিক তখনই রাজধানীতে অন্য এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাজধানীতেই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে গুম বলে কোনো শব্দ নেই। কেউ গুম হয়েছে এটা নাকি তার জানা নেই। মন্ত্রী আরো বলেছেন, যারা গুম হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা বিভিন্ন কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন। অতীতে যারা গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল তাদের অনেকেই আবার ফিরেও এসেছেন। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সর্বশেষ এই বক্তব্যের মাধ্যমেও জাতিকে নিরাশই করেছেন। কারণ, মাননীয় মন্ত্রীর গুম শব্দটি জানা না থাকলেও বর্তমান সরকারের আমলে গুম শুধু হচ্ছেই না, গুম হয়ে যাওয়াদের প্রায় কারো খবর পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেখানে আবারও ফিরে আসার কথা বলেছেন, বাস্তবে সেখানে সত্য কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য রকম। গুম হওয়াদের অনেকের লাশই পরবর্তীকালে নদী-খাল ও নালা- ডোবার কিংবা সড়ক-মহাসড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এখনো, এমনকি গত কয়েকদিনেও এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরকম এক খবরে বলা হয়েছে, নাটোরের তিন যুবকের লাশ পাওয়া গেছে দিনাজপুরে। এই তিনজন অবশ্য আওয়ামী যুবলীগের কর্মী ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সত্য হলো, তিনজনকে গুমই করা হয়েছিল এবং করেছিল সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়দানকারী লোকজন। 
এ ধরনের আরো অনেক ঘটনারও উল্লেখ করা যায়। অন্যদিকে সব জেনে-বুঝেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু তার কথা পাল্টাননি। একটি জাতীয় দৈনিকের জিজ্ঞাসার জবাবে সোমবার তিনি বরং বলেছেন, এটা তো প্রমাণিত, এর আগে অনেকেই গুম হয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তাদের অনেকে ফিরেও এসেছেন। অনেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে কিংবা পুলিশের সঙ্গে মারামারি করে আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ফিরেও আসেন। এর আগে এরকম কয়েকটি ঘটনা দেখা গেছে। আমি তো সে কথাই বলেছি। 
মাননীয় মন্ত্রীর কথার পিঠেও কিন্তু কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে, তিনি ঠিক কাদের ফিরে আসা বা আত্মগোপনে চলে যাওয়া সম্পর্কে বলেছেন তাদের নাম-পরিচয় জানানো হলে জনগণ সঠিক তথ্য জানার সুযোগ পেতো। অন্যদিকে মন্ত্রী কেবল ঢালাও মন্তব্য করেই থেমে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে বড় কথা হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানেন না বললেও বাস্তবে গুম হয়ে যাওয়াদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবারও প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে বিগত তিন বছরে গুম হয়েছেন ১৯৬ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে গুম হয়েছেন ৩৪ জন। এই হিসাবে চার বছরে গুম হয়ে যাওয়াদের সংখ্যা অন্তত ২৩০ জন। এর অর্থ, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্য এড়িয়ে গেছেন। ওদিকে মন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী গুম হওয়াদের অনেকে যে ফিরে আসেননি তার সর্বশেষ প্রমাণ তো ২০ পরিবার সদস্যদের সংবাদ সম্মেলনই।
আমরা মনে করি, সরকারের উচিত সত্য এবং দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া। কারণ, কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বিএনপি নেতা ও সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী এবং ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অনেকেরই আজ পর্যন্ত কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেয়ার পরও কেউ ‘ফিরে’ আসেননি। দেশে উল্টো বরং গুমের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করছি এজন্য যে, বিশ্বের সব দেশেই গুম ও গুপ্তহত্যার মতো বিচারবহির্ভূত কর্মকা-কে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে শুধু নয়, অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গেও দেখা হয়। গণতান্ত্রিক কোনো দেশে রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা বা কর্মীকে গুম করা হবে এবং পরে এখানে-সেখানে তার লাশ পাওয়া যাবে এমনটা কল্পনা করা যায় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন বাংলাদেশে গুম ও খুনের কোনো হিসাবই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা চলছে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-নির্যাতন তো বটেই, হত্যার নিষ্ঠুর অভিযানও ক্রমাগত শুধু বেড়েই চলেছে। বিদেশের গণমাধ্যমেও এসব বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সোচ্চার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায়ের কোনো অর্থপূর্ণ উদ্যোগ নেয়নি সরকার। সরকারের সর্বশেষ তথা বর্তমান মনোভাব সম্পর্কে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় জানান দিয়েছেন তা শুনেও নিশ্চয়ই আশাবাদী হওয়ার উপায় থাকে না।
আমরা মনে করি, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই এমন অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। সরকারের উচিত কালবিলম্ব না করে গুম ও খুনের চলমান অভিযান বন্ধ করা। সেই সাথে গুম হওয়াদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়াও উচিত, যদি অবশ্য তাদের এখনো বাঁচিয়ে রাখা হয়ে থাকে!

শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে


দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের ব্যাপারে জোর আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। কারণ, চলতি মাস ডিসেম্বরে বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নিয়ম ও আইন অনুযায়ী তার আগেই নতুন ইসি গঠন করতে হবে। বিষয়টি খুব সহজে মীমাংসা করা যাবে বলে সচেতন কেউই কখনো মনে করেননি। কারণ, একদিকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো সুনির্দিষ্ট দাবি ও প্রস্তাব উপস্থিত করেছে। মাঝখানে আবার ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে নিন্দিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। 
এসব নিয়ে বিতর্ক জমে উঠতে না উঠতেই সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা। কারণটি অবশ্য গর্বিত হওয়ার মতো ছিল না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদসহ পাঁচ কমিশনার গত ২৬ নবেম্বর হাইকোর্টে গিয়ে ‘নিঃশর্ত’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে ১৪ নবেম্বর হাইকোর্ট পুরো কমিশনকেই সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়েছিলেন। ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যেই পাঁচ কমিশনার গিয়েছিলেন হাইকোর্টে। তারা তাই বলে কোনো বেঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়াননি। বরং চুপিসারে গিয়েছিলেন ছুটির দিন শনিবারে। শুধু তা-ই নয়, তারা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে ক্ষমার জন্য দরখাস্ত জমা দিয়ে এসেছেন।
প্রকাশিত খবরে কারণ সম্পর্কেও জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ২২ মার্চ থেকে ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, চরম অনিয়ম ও জালিয়াতি এবং ফলাফল পাল্টে ফেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার আবেদন জমা দেয়া হলেও কোনো একটি বিষয়েই নির্বাচন কমিশন বিচার বা নিষ্পত্তি করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য আইন থাকা সত্ত্বেও কোনো ট্রাইব্যুনালও গঠন করেনি। নিজেদের আইনত করণীয়র প্রতি উপেক্ষা দেখিয়ে কমিশনাররা বরং সকল সংক্ষুব্ধ প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। ফলে প্রায় সকল আসনেই ‘নির্বাচিত’ হয়েছে সরকারদলীয় প্রার্থীরা, বঞ্চিত কোনো প্রার্থীই সুবিচার পাননি। নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ না নেয়ায় ১৪ নবেম্বর এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, নির্দেশ অমান্য করার মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশন আদালত অবমাননা করেছে। আদালত অবমাননা করায় হাইকোর্ট পুরো কমিশনকে সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা চাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশ অনুযায়ী ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য চার কমিশনার হাইকোর্টে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। 
তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানালেও কথা উঠেছে কিছু বিশেষ কারণে। তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করেন, হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চের সামনে হাজির হওয়ার পরিবর্তে রেজিস্ট্রারের অফিসে দরখাস্ত জমা দিয়ে আসাটা আদৌ যথেষ্ট এবং আইনসম্মত হতে পারে না। তাছাড়া চাতুরিপূর্ণ কৌশল নিয়ে তারা ছুটির দিনে গিয়ে নামকা ওয়াস্তে একটি দরখাস্ত ফেলে রেখে এসেছেন। এজন্যই দাবি উঠেছে, সর্বোচ্চ আদালতের উচিত কোনো পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সামনে তাদের হাজির হওয়ার আদেশ দেয়া, যাতে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষও জানতে পারে। গণতন্ত্রসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এটা দরকারও। কারণ, পুরো কমিশনের ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনায় পরিষ্কার হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন তথা ‘কাজী রকিবউদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি’ আসলেও গুরুতর অপরাধ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ প্রত্যেক নির্বাচন কমিশনারই সংবিধান এবং কমিশন ও নির্বাচন সংক্রান্ত আইন লংঘন করেছেন। নিজেদের সুবিধামতো আইনের ব্যাখ্যা হাজির করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। যেমন নির্বাচনী আইনের ২২ ও ২৩ ধারার সঙ্গে বিধির ৫৩ ও ৯০ ধারা মিলিয়ে পড়া হলে যে কোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে তার নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব কমিশনের ওপর বর্তায়। সে ক্ষমতাও কমিশনকে আইনেই দেয়া আছে। কিন্তু কমিশনাররা আইনের ধারে-কাছে যাওয়ার পরিবর্তে অভিযোগকারী সকলকে ঢালাওভাবে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, যে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দিয়েছিলেন, তার ব্যাপারেও কমিশন যথারীতি মৌনতা অবলম্বন করেছে। এজন্যই কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে এবং পাঁচ কমিশনারকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়েছে। তারা অবশ্য দোষ স্বীকার করতে চাননি। বরং বলেছেন, এটা নাকি তাদের ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুল!
সেটা তারা বলতেই পারেন কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের তথা ইউপি নির্বাচনের বিষয়টিকে কোনোভাবেই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে না। অন্যদিকে ছয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের ব্যাপারে প্রথম থেকেই অমার্জনীয় উপেক্ষা দেখিয়েছেন কমিশনাররা। তারও আগে যদি শুধু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের নামে আয়োজিত কর্মকান্ডের উল্লেখ করা যায়, তাহলেও এ অভিযোগ অনস্বীকার্য হয়ে উঠবে যে, সরকারের গঠন করা ইসি কতটা নির্লজ্জভাবে ক্ষমতাসীনদের আদেশ পালন করে থাকে। ওই নির্বাচনে তিনশ’ আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনেই আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক দলগুলোর প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হয়েছিলেন। অন্য আসনগুলোতেও বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার ধুম পড়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে দেশের ভেতরে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নেয়নি। স্বীকৃতি দেয়নি এমনকি ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারকেও। কিন্তু ‘মেরুদন্ডহীন’ হিসেবে বর্ণিত ইসি সংশোধনমূলক এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। 
এরই প্রতিফলন দেখা গেছে ইউপি নির্বাচনের সময়। ক্ষমতাসীন দলের বাইরে আর কোনো দলের প্রার্থীদের মনোননয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি। অনেকের মনোননয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অনেককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা। তারা ভোটকেন্দ্র দখল করেছে, ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে ইচ্ছামতো। গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দেড়শ’র বেশি নিরীহ মানুষ, আহত হয়েছে কয়েক হাজার। সবকিছুই ঘটেছে নির্বাচন কমিশন তথা কমিশনারদের চোখের সামনে। অভিযোগও এসেছে তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু কোনো একটি বিষয়েই কমিশন বা কমিশনারদের তৎপর হতে দেখা যায়নি। তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালেও বিচারের পদক্ষেপ নেননি। কমিশনাররা বরং আদালতে যাওয়ার উপদেশ খয়রাত করেছেন। তারা লক্ষ্যই করেননি যে, নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধের বিচার এবং অভিযোগের নিষ্পত্তি করার জন্যই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিধান করা হয়েছে। একই কারণে আদালতে যাওয়ার উপদেশ দেয়ার কোনো অধিকার তাদের থাকতে পারে না। অন্যদিকে আদালতে যাওয়ার উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের কর্তব্যের বিষয়ে অবহেলা তো করেছেনই, কমিশনাররা এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকেও পাত্তা দেননি। এতটাই ক্ষমতাধর ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন নির্বাচন কমিশনাররা! 
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আপত্তিও উঠেছে অনেক আগে থেকে। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা অবশ্য জনগণের দাবি ও প্রত্যাশার পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। তারা একই সাথে বিতর্কের কারণও সৃষ্টি করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ওই কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করবে তাদের সমন্বয়েই নতুন ইসি গঠন করা হবে। প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে পরিকল্পিত এই সার্চ কমিটিকে কেন্দ্র করে। কারণ, অতীতে বিভিন্ন উপলক্ষে দেখা গেছে, যে ব্যাপারে বা যে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই গঠন করা হোক না কেন, এ ধরনের কমিটিতে সব সময় সরকার সমর্থকদের প্রাধান্য থাকে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, যে কোনো সার্চ কমিটিই বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে গঠন করা উচিত। 
একই কারণে নতুন ইসি গঠন করার ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি উঠেছে। এই দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রধান ও ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলো। গত সেপ্টেম্বরে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। দলটির নেতারা প্রধান দলগুলোর প্রতিটি থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত হতে পারে না। বিএনপির নেতারা এই বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো ইসি গঠন করা হলে সে ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনকে জনগণ তো মানবেই না, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রও অমন কোনো নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। সুতরাং সরকারের উচিত প্রথমে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা এবং তারপর ওই কমিটির তৈরি তালিকা থেকে বাছাই করা ব্যক্তিদের নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। এখানে উল্লেখ করা দরকার, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অন্য সকল বিরোধী দল এবং সুশীল সমাজও তুলেছে। 
এরপর দু’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ১৮ নবেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ঠিক কোন পর্যায়ের কতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে সে কথা তো রয়েছেই, প্রস্তাবে নির্বাচনের দিন করণীয় সম্পর্কেও বলেছেন খালেদা জিয়া। যেমন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেসির তথা বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়োজিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। আরো বলেছেন, ভোট কেন্দ্রে বাড়তি বা অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স পাঠানো হলে সেগুলোকে আগে থেকেই প্রকাশ্য স্থানে রাখতে হবে। কোনো ব্যালট বাক্স ভোটারদের দেয়া ভোটে ভর্তি হয়ে গেলে সেটাকে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের বাইরে আনা চলবে না এবং ভোট গণনা শেষে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের কাছে স্বাক্ষরিত বিবরণী না দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার কেন্দ্র ছেড়ে চলে আসতে পারবেন না। 
প্রতিক্রিয়া জানাতে ক্ষমতাসীনরা অবশ্য দেরি করেননি। চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়া সদিচ্ছার পরিচয় দিলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক কথায় ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলে তার সকল প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন। অন্য ক্ষমতাসীনরাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেনে নেয়া দূরে থাকুক, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার ব্যাপারেও ন্যূনতম ইচ্ছা নেই সরকারের। এরপর দৃশ্যপটে হাজির হয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ‘অধিকার’ নিয়েই প্রশ্ন তোলেননি, ঝামেলা বাধানোর সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে ২৭ নবেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কেও গুরুগম্ভীর প্রস্তাবনা রেখেছেন। নিজের পাঁচ দফা তুলে ধরে এরশাদ দাবি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন পাস করতে হবে বর্তমান সংসদে, যেখানে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানে রয়েছে। কথার মারপ্যাঁচে এরশাদ আরো একবার বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটকে বাইরে ঠেলে দিয়েছেন। অর্থাৎ এসব দলকে আলোচনায় যেমন সুযোগ দেয়া চলবে না তেমনি তাদের কোনো দাবি বা পরামর্শও মেনে নেয়া যাবে না। পরামর্শ যা কিছু দেয়ার সবই জাতীয় পার্টি একাই দেবে! উল্লেখ্য, এর আগে তিনি বলে রেখেছেন, যেহেতু সংসদের ভেতরে নেই সেহেতু নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে কোনো কথা বলার অধিকারই বেগম খালেদা জিয়ার নেই! 
এভাবেই একে-ওকে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান দিয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীনরা। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, অন্য অনেক বিষয়ের মতো নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নেও ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছারই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালানো হবে। তেমন ইচ্ছা তাদের থাকতেই পারে, কিন্তু মাঝখানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলোর পাশাপাশি রয়েছে আরো কিছু শক্তি বা ফ্যাক্টরও। এসবের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করতেই হবে। মাত্র ক’দিন আগেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। গত ২৮ নবেম্বর কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় পরবর্তী সংসদ নির্বাচন এমন হবে যেখানে প্রত্যেক ভোটার নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবে এবং তাদের প্রতিটি ভোট গণনা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, অমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা। 
পরবর্তী সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য, পরামর্শ ও আশাবাদের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করা দরকার। কারণ, এমন এক জটিল সময়ে তিনি দলীয় প্রভাবমুক্ত ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য পরামর্শের আড়ালে আহ্বান জানিয়েছেন, যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও পরামর্শের মধ্য দিয়েও কিন্তু এ সত্যেরই প্রকাশ ঘটেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শুধু সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনই চায় না, একই সঙ্গে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনও দেখতে চায়। 
এজন্যই দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কোনো কৌশলি পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ও প্রস্তাব মেনে নেয়া এবং কালবিলম্ব না করে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কারণ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত হঠাৎ করে বা বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কথা বলেননি। বাস্তবে নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার এবং দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এসেছে। মাস কয়েক আগে ঢাকা সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও একই পরামর্শ ও তাগিদ দিয়ে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে এ সত্যই প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকার দাবি করলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না। স্মরণ করা দরকার, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধতা দেয়নি। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের শীতল সম্পর্কের বিষয়টিও গোপন নেই। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় জানিয়ে এসেছে, সব দলকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিভিন্ন সময়ে একই তাগিদ দিয়েছে। অন্যদিকে সরকার কেবল সংশয়ের কারণই সৃষ্টি করে চলেছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ নামের এমন এক ভোটার গোষ্ঠী তৈরি করার পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে, যার ফলে গণতন্ত্রই শুধু বিতাড়িত হবে না, গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দেবে। 
দেশকে অমন অশুভ পরিণতির দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। একই কারণে সরকারের উচিত দলীয় প্রভাবমুক্ত এমন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা, যার অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে সরকারকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। আমাদের ধারণা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনকেন্দ্রিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই সরকার বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার এবং দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার পরিচয় দেবে।

আশিকুল হামিদ 

শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে বর্মী হায়েনাদের হাতে ঠেলে দেবেন না


গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আলোচনা সভায় সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রধান অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী রোহিঙ্গা বিতাড়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাশের দেশের মুসলমানদের আমরা আশ্রয় দেই না, এর চেয়ে মর্মান্তিক কি হতে পারে। আমরা কেমন করে ভুলে যাই, একাত্তর সালে এক কোটি মানুষ আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম, এটা কেন আমাদের মনে আসে না।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের এই অগ্রহণযোগ্য অবস্থান এবারেই প্রথম নয়; ২০১২ সালে যখন বার্মার সামরিক সরকার মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালায় তখনও নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশি হিসেবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ এবং আরাকান বা রাখাইন প্রদেশের মাঝখানে প্রবাহিত হয়েছে নাফ নদ। তাই প্রায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান যখন নিজ দেশ থেকে নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয় তখন নাফ নদ দিয়ে তারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। গতবারে অর্থাৎ ২০১২ সালে যেমনটি ঘটেছিল এবারও ঠিক তাই ঘটছে। নাফ নদের এপারে পাহারা দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং নৌবাহিনীর কোষ্ট গার্ড। সরকারের এই অবস্থান দেখে গতবার ৩২ জন বুদ্ধিজীবী এক বিবৃতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ থেকে ৪ বছর আগে ২০১২ সালে বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তারা। ঐ আবেদনে বলা হয়েছিল, “এই দাঙ্গার যারা শিকার (বিবৃতির ভাষায় ভিকটিম) হয়েছেন তারা  উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় চাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত পূর্নবিবেচনা করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, “আমাদের গৌরবময় ইতিহাস এই বিবৃতি দিতে আমদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমারা বিশ্বাস করি যে, মানবাধিকার অবিভাজ্য। এক দেশে কোনো জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় তাহলে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের যারা শিকার হয় তাদের দুঃখ র্দুদশা ভাগাভাগি করার দায়িত্ব অন্যদেশের, বিশেষ করে সেই দেশটি যদি প্রতিবেশী হয়।” বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা একথা স্মরণ করছি যে, জাতি হিসাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে  ভারতের নিকট থেকে আমরা অনুরূপ সুবিধা ভোগ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ কালে আমরা দেখছি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উদ্বাস্তু মাইগ্রেশন। যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তারা ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী’।” বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, “এডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, ড. রওনক জাহান, এডভোকেট সিগমা হুদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, ড. শাহদিন মালিক, ড. ইফতেখার উজ্জামান, প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ, কামাল লোহানী, শাহীন রেজা নুর, মোহম্মদ কামাল উদ্দিন প্রমুখ।” বিবৃতিটি ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য পত্রিকায়, ২০১২ সালের ১৭ই জুন রবিবার।
॥ দুই ॥
মাঝখানে ৪ বছর পার হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। বরং ২০১২ সালে যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল ৪ বছর পর ২০১৬ সালে সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকায় রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন বৌদ্ধ এবং বর্মী সেনাবাহিনীর যে অব্যাহত হামলা চলছে সেটাকে একদিকে বলা যায় গণহত্যা অন্যদিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত রোববার ও সোমবার ৩৪ রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে মিয়ানমারের  সৈন্যরা। এ কারণেই সেনা অভিযানে তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে শত শত রোহিঙ্গা। বিজিবির নজরদারি কঠোর হওয়ায় বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না রোহিঙ্গারা। দেশটিতে সেনা অভিযানে ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এরা বর্তমানে বন-জঙ্গল, সাগরকূল ও সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদের ওপারে রোহিঙ্গাদের ভিড় জমেছে। প্রতি রাতেই সীমান্ত পার হয়ে এরা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, আটক ৬৬ মিয়ানমার নাগরিককে খাবার ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকারি বাহিনীর বর্বরতা ও মগ দস্যুদের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে নাফ নদে ঝাঁপ দিয়ে আসা ৬৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গত বুধবার তাদের আটক করা হয়। এ সময় পাচারের সহযোগী হিসেবে চার স্থানীয় বাংলাদেশীকেও আটক করে পুলিশ। আটককৃত নারীরা এ সময় আর্তকণ্ঠে জানায়, ‘যাদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি দয়া করে আমাদেরকে তাদের হাতে তুলে দেবেন না। আপনারা আমাদের গুলী করে মেরে ফেলুন এতে আমাদের কষ্ট কম হবে। কারণ মিয়ানমারের বর্বর বাহিনী আমাদের নৃশংসভাবে হত্যা করবে।
আটককৃতরা মিয়ানমারের মংডু কেয়ারীপাড়ার বাসিন্দা। মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ায় গত কয়েক দিন লতাপাতা খেয়ে তারা বনজঙ্গলে অবস্থান করছিল। তারা পাহাড়ি পথ হেঁটে নাফনদী পর্যন্ত এসে নৌকায় উনচিপ্রাং সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে।
তারা বলেন, কতটুকু অসহায় হলে মানুষ নিজ জন্মভিটা ছাড়ে তা আমাদের অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝবে না। এখানকার (বাংলাদেশ) সরকার কারাগারে দিলেও তো প্রাণে বাঁচব। ওখানে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে পশুর মতো আমাদের হত্যা করা হচ্ছে। তারা আরো জানান, রাখাইন প্রদেশ মংডুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারার ঘটনা সে দেশের নীতিনির্ধারক মহলের নতুন কৌশল।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন। এটা ছাড়া মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় হবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার প্রবাহ টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মি. ইমামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হতে পারে? জবাবে তিনি মিয়ানমারের ওপর স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, অতীতে অনেক দেশেই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এইচ টি ইমাম বলেন, ‘’পরমাণু অস্ত্র নিয়ে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’ ‘এখন মিয়ানমারের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে সম্ভবত তাদের বোধোদয় হবে। নইলে হবে না।’
জনাব এইচ টি ইমাম যা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মত হতে পারে। এই মত বাংলাদেশের জনমতেরই প্রতিধ্বনি করে। কিন্তু সরকারের ভুমিকায় উপদেষ্টার এই মত মোটেই প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারন দেখা যাচ্ছে যে সরকারি বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে গ্রেপ্তার করছে এবং তারপর বর্মী সেনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। বর্মী সেনারা ওদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং গুলি করে মারছে অথবা পুড়িয়ে মারছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশায় সহানুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই নিশ্বাসে তিনি বলেছেন যে, এই সমস্যা সমাধানের দ্বায়িত্ব বর্মী সরকারের। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি করার জন্য তিনি দাবি করেছেন। এই ভয়াবহ সমস্যায় মৌখিক একটি দাবি জানালেই সবকিছু করা হল না। সেই দাবি মোতাবেক যাতে কাজ হয় সেজন্য বাংলাদেশকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
॥ তিন ॥
যখন বাংলাদেশে সংকটের সৃষ্টি হয় তখন যেহেতু ভারত ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশী তাই সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনে লক্ষ লক্ষ শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। তখন ভারত বলেছিল যে, যেহেতু ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী তাই বাংলাদেশের এত বড় ঘটনায় ভারত নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন যে এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক ভাবেই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী এই কথা বলে নীরবে বসে থাকেননি। তার বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরবর্তী ঘটনাবলী সকলেই জানেন। বাংলাদেশকেও এক্ষেত্রে ভারতের মত ভূমিকায় নামতে হবে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশকেই জাতিসংঘের দুয়ারে করাঘাত করতে হবে। জাতিসংঘে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে বহু দেশের সমর্থন পাওয়া যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক দেশ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বর্মী সরকারের জাতিগত নিধন অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে।
বার্মার ডিফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট হলেন অং সান সু চি। শান্তির জন্য তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যার দেশে সামরিক বাহিনী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় এত বড় অশান্তির সৃষ্টি করেছে সেখানে এই শান্তির দেবী পরোক্ষভাবে গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। মিশাল হোসেন নামক লন্ডনের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ গ্রহণ করেছিলেন। ঐ ইন্টারভিউয়ে তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশার কথা সু চির কাছে তুলে ধরেন। পরে সু চি জানতে পারেন যে ঐ সাংবাদিক ছিলেন একজন মুসলমান। তখন তিনি বলেন, আগে যদি তিনি জানতেন যে ঐ সাংবাদিক একজন মুসলমান, তাহলে তিনি তাকে ইন্টারভিউ দিতেন না। এমনই মুসলিম বিদ্বেষ সু চির। এমন একজন মুসলিম বিদ্বেষীকে কিভাবে নোবেল প্রাইজ দেয়া হল সেটি এখন বিরাট জিজ্ঞাসার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, গতস্য শোচনা নাস্তি। কিন্তু এখন যখন তার মুসলিম বিরোধী চেহারা উন্মোচিত হয়েছে তখন শান্তির নোবেল পুরস্কার ধারণ করার কোনো অধিকার তার আর নাই। নোবেল কমিটির উচিত সু চির নিকট থেকে নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়া। ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ একটি লিখিত আবেদন করেছেন এবং সু চির নোবেল প্রাইজ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। রোহিঙ্গা মুসলমানদের এত বড় মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ নীরব থাকতে পারে না। ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন বা ওআইসিকে এবং একই সাথে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ বলতে পারে যে, বর্মী সামরিক জান্তার আচরণে যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড় হচ্ছে তার ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব সমাজের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশ যৌক্তিকভাবে এ কথা বলতে পারে যে, রোহিঙ্গারা বংশানুক্রমিকভাবে রাখাইন বা আরাকান তথা বার্মার অধিবাসী। অথচ ১৯৮২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। যারা জন্মগতভাবে বর্মী নাগরিক কোনো এক সামরিক সরকারের মুখের কথায় সেই নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা যায় না। সুতরাং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, অবিলম্বে তাদেরকে দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারসহ তাদেরকে তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার দিতে হবে। এটিই হলো রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান।

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচাতে হবে


প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-নির্যাতন অমানবিকতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দমন-নির্যাতনের সঙ্গে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভয়াবহ গণহত্যাও। শত শত রোহিঙ্গা মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ডের অসহায় শিকার হচ্ছে বিশেষ করে পুরুষ রোহিঙ্গারা। নারী ও শিশুরাও নিস্তার পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ ধরনের অনেক চিত্রই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ধারণ ও প্রচার করা হয়েছে।
মিয়ানমার সরকার অভিযোগ তুলেছে, রোহিঙ্গারা নাকি রাষ্ট্রদোহী এবং তাদের জঙ্গিরা নাকি সম্প্রতি কয়েকজন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে তথ্যভিত্তিক খবরে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা নয়, কথিত ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আসলে দেশটির মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, যারা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী বাংলাদেশে চোরাচালানের অবৈধ পথে পাচার করে থাকে।  সেনাদের হত্যার পেছনেও মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী চক্রই জড়িত রয়েছে। কিন্তু  প্রকৃত সত্য পাশ কাটিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযান শুরু করেছে।
বিস্ময়ের কারণ হলো, সুদীর্ঘ সেনা শাসনের পর মাত্র কিছুদিন আগে মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু কি সে সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আশা করা হয়েছিল, বিশেষ করে নতুন নেত্রী নিশ্চয়ই রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়াবেন এবং সেনাবাহিনীকে গণহত্যা চালানো থেকে নিরস্ত করবেন। অন্যদিকে নিজে ইয়াঙ্গুনের সামরিক সরকারের হাতে নির্যাতিত হলেও ক্ষমতায় আসার পর অং সান সু কিও মিয়ানমারের নিন্দিত রোহিঙ্গা নীতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্ববাসীকে হতবাক করে তিনিও ঘোষণা করেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা নাকি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ‘বাঙালি’ এবং তাদের মিয়ানমারে বসবাস করার কোনো অধিকার নেই। রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমার থেকে বহিষ্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন অং সান সু কি। বলা হচ্ছে, নেত্রীর এই ঘোষণা দেশটির সেনাবাহিনীকে নিরস্ত করার পরিবর্তে গণহত্যার নিষ্ঠুর অভিযান চালানোর ব্যাপারে উল্টো প্রশ্রয় দিয়েছে। এমন অবস্থারই অসহায় শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।
এদিকে গণহত্যাসহ দমন-নির্যাতনের কারণে শুধু নয়, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার কারণেও রোহিঙ্গা মুসলমানরা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। রাখাইন প্রদেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহর থেকেই তাদের তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের কোথাও যাওয়ার এবং আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো জায়গা পাচ্ছে না তারা। ফলে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট নৌকায় চড়ে তারা লুকিয়ে লুকিয়ে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে এসে হাজির হচ্ছে। যারা আসছে তাদের বেশিরভাগই স্বজন হারানো নারী ও শিশু। কিন্তু  আওয়ামী লীগ সরকার তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিজিবি ও কোস্টগার্ড অনেককে জোর করে ফেরতও পাঠিয়েছে। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশ এই অসহায় রোহিঙ্গাদের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখনো সরকারের ওই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে গিয়ে পড়তে এবং মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে।
এমন অবস্থার মধ্যে সঙ্গত কারণেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ও প্রাণে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বানের জবাবে না হলেও সরকারকে কিছুটা ইতিবাচক অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গত বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে প্রথমবারের মতো তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূতের হাতে একটি কূটনৈতিক নোট তুলে দিয়েছেন। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমন-নির্যাতন ও গণহত্যার ব্যাপারে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে অবিলম্বে এসব বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই হতে হবে। কথাটার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন কি না সে প্রশ্ন উঠলেও মিয়ানমারের ওপর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক পন্থায় চাপ সৃষ্টির উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-নির্যাতন ও গণহত্যার অভিযান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আশংকাজনক এবং ভীতিকর। ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘ, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তো বটেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে সামান্য কিছু ঘটলেও যারা দুনিয়াজুড়ে শোরগোল তোলে তাদের কেউই কেন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছে না সে প্রশ্নও উঠেছে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গেই। অং সান সু কির সঙ্গে প্রাধান্যে এসেছে তিব্বতীদের বৌদ্ধ নেতা দালাই লামার ভূমিকার দিকটিও। কারণ, নিজে নির্যাতিত হলেও এই নোবেল বিজয়ী নেতাও এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পক্ষে এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। ওদিকে অং সান সু কি তো রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও ‘বাঙ্গঙালি’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। এভাবে প্রমাণিত হয়েছে, মুসলমান হওয়াটাই আসলে রোহিঙ্গাদের প্রধান অপরাধ! ঘটনাপ্রবাহে তথাকথিত অহিংস ধর্মাবলম্বী বৌদ্ধদের স্বরূপও ন্যক্কারজনকভাবে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। বৌদ্ধরা আসলে যে মোটেও অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করে না এবং সুযোগ ও ক্ষমতা পেলে তারাও যে রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে তারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বর্তমান মিয়ানমারে।
আমরা মনে করি, সরকারের উচিত বিপন্ন রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া। সরকারকে একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক পন্থায় চাপও সৃষ্টি করতে হবে, দেশটি যাতে গণহত্যা ও দমন-নির্যাতনের অভিযান বন্ধ করে এবং রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার দিয়ে পুনর্বাসনের আশু পদক্ষেপ নেয়।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সুন্দর মুখের আড়ালে এমন অসুন্দর মন!


জাতিগত নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে এবার ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা জানিয়েছে, স্যাটেলাইটে সেসব ভস্মীভূত গ্রামের ছবি ধরা পড়েছে। ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের প্রতি সংগঠনটি আহ্বান জানিয়েছে বলে জানায় আল-জাজিরা। ১২ নবেম্বর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নবেম্বরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামে ৪৩০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শনই শুধু প্রকাশ করেনি বরং এটাও নিশ্চিত করেছে যে, আমরা আগে যা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ।’ এইচ আর ডব্লিউ’র তথ্য অনুযায়ী যে তিনটি গ্রাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো- পায়উংপিত, কিয়েতইযোপিন এবং ওয়াপেইক। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক মানসিক নিপীড়ন চলছে।
সম্প্রতি সিএনএন মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘শ্যুট ফার্স্ট আস্ক কোয়েশ্চেন লেটার’। এদিকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান যিনি রাখাইন স্টেটে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গঠিত অ্যাডভাইজারি কমিশনের প্রধান তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, উত্তর রাখাইন এলাকায় সাম্প্রতিক সহিংসতা গভীর উদ্বেগজনক যা অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং এ ঘটনায় নতুন করে মানুষ ঘর-বাড়ি ছাড়া হচ্ছে। রাখাইন অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ মুসলমান থাকলেও তাদের কোনো নাগরিক স্বীকৃতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার। তারা স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করতে না পারায় কাজকর্মও করতে পারছে না। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জমি বা সম্পদের কোনো অধিকার নেই। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের হামলায় বেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও তাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এদের অনেকে সাগর পথে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়ার অভিযাত্রায় ক্ষুধায় ও নৌকাডুবিতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
রাখাইন স্টেটে গত মাস থেকে শুরু করা অভিযানে সেনা সদস্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় বৌদ্ধ যুবকরাও। অভিযানের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকেও রাখাইন স্টেটে গুলিবর্ষণ করা হয়। তারা ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কমপক্ষে আড়াই হাজার বাড়ি ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। গুলিবর্ষণে ও আগুনে পুড়ে মারা গেছে প্রায় তিনশ’ জন। আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য মা ছেলেকে নিয়ে যখন বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন মার কাছ থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের যেন কোন শেষ নেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলো স্বল্পমাত্রায় কিছু উহ্-আহ্ করছে কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও হত্যাযজ্ঞ বন্ধে বর্তমান বিশ্বসভ্যতা যৌক্তিক ও কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করছে না। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অংসান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং নির্বাচনের আগে-পরে ফাঁস হয়েছে সু চির মুসলিমবিদ্বেষী নানা কথা। নির্বাচনে তিনি কোন মুসলমানকে প্রার্থীও করেননি। ফলে প্রশ্ন জাগে ভেতর বা বাইরে থেকে তথা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কি রোহিঙ্গা মুসলমানদের মুক্তির কিংবা মানুষের মত বাঁচার কোনো বার্তা নেই? এমন প্রশ্নের মধ্যে অন্য একটি বার্তা আছে। আর তা হলো বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা, সভ্যতা ঠিক পথে চলছে না।
এক সময় বলা হতো, সব কবি কবি নয়, কেউ কেউ কবি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এখন আবার অনেকে বলছেন, সব মানুষ মানুষ নয়, কেউ কেউ মানুষ। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরীহ মানুষের ওপর নিষ্ঠুর ও অমানবিক কর্মকাণ্ড দেখে এমন উপলব্ধি খুবই সঙ্গত। বিশেষ করে আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে এখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন ও জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণের সাথে সাথে তাদের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কিছু কথাবার্তা বললেও বিশ্বের প্রতাপশালী রাষ্ট্রগুলো নীরব। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর কিছু মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান, আর অনেক মানুষের জীবনের কোন দামই নেই। আলো ঝলমলে ও বিজ্ঞানমনস্ক বর্তমান পৃথিবীতে এমন বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা কেমন করে চলছে তা ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। এক সময় ভাবা হতো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সামরিক জান্তার কারণে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অকথ্য জুলুম নির্যাতন চলতে পারছে। গণতন্ত্রমনা নেত্রী অং সান সুচির ব্যাপারে অনেকে আশাবাদী ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন ক্ষমতার পরিবর্তন হলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনে মুক্তি আসতে পারে। মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল তো হলো কিন্তু রোহিঙ্গাদের জীবনে কোন পরিবর্তন এলো না। মন-মানসিকতায় অংসান সু চিও উদারতার পরিচয় দিতে সক্ষম হননি। বরং তার মধ্যেও মুসলিম বিদ্বেষ কাজ করছে।
অং সান সু চির মুখোশ ক্রমেই উন্মোচিত হচ্ছে। ফলে তার কৃত্রিম ইমেজের পালকও খসে পড়ছে। সু চির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনলাইন আবেদনে ইতিমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার ব্যাপারে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আবেদন জানানো হয়। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি, যারা এ পুরস্কার দেয় তাদের প্রতি আবেদনে এ পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে চেঞ্জ ডট অরগে এই আবেদনটি করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষায় যারা কাজ করেন তাদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। সু চির মতো যারা এই পুরস্কার পান তারা শেষ দিন পর্যন্ত এই মূল্যবোধ রক্ষা করবেন এটাই আশা করা হয়। যখন একজন নোবেল শান্তি বিজয়ী শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি কমিটির উচিত এই পুরস্কার হয় জব্দ করা, নয় ফিরিয়ে নেয়া।’
লক্ষাধিক মানুষের অং সান সু চির নোবেল প্রত্যাহারের দাবিটি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলমাদের ব্যাপারে সঙ্গত ভূমিকা পালনে সু চি ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ অবাক হয়েছে। সু চি যে ইমেজ সংকটে পড়ে গেছেন তা তিনি এবং তার দল কতটা উপলব্ধি করতে পারছেন তা আমরা জানি না। তবে লক্ষাধিক মানুষ তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের যে দাবি জানিয়েছেন তা তিনি এড়িয়ে যাবেন কেমন করে? বিষয়টি যে শুধু তার নিজের এবং দলের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রের জন্যও তা কলঙ্কজনক। আর দেশে-দেশে যদি সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া হয়, তাহলে এ পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকবে কেমন করে? আর আখেরে ওই অপকর্মগুলো মিয়ানমারের জন্যও কি কোন শুভ ফল বয়ে আনবে? এ বিষয়টি নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি বুঝতে সক্ষম না হলে তার নোবেল প্রত্যাহার করাই সমীচীন বলে আমরা মনে করি।
২৩ নবেম্বর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা অব্যাহত থাকায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যটিতে জঙ্গি নিধনের নামে নির্বিচারে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। গত মাসে সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন শুরুর পর আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদেরও রাখাইন রাজ্যে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার পৌঁছার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিনিধি দলটি পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, উদ্বিগ্ন এই সব মানুষ দেখা করলে, কথা বললে কি পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে?
এমন প্রশ্নের কারণ আছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে পরিশীলিত ও গণতন্ত্রমনা মানুষ হিসেবে পরিচিত নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির চিন্তা-চেতনা ও মনোভঙ্গি এখন বিরাট প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে : মিয়ানমারের নতুন সরকার জনগণের মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছিল। অনেকে আশা করেছিলেন সু চি হয়তো রোহিঙ্গাদের সংকট দূর করবেন।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যা আশা করা হয়েছিল তা ছিল ভুল। কারণ অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, তারা বাঙালি। তিনি আরও বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর এই অভিযান চলছে আইনের ওপর ভিত্তি করে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে যে চিত্র ফুটে উঠলো, তাতে মনে হচ্ছে, সু চি যেন মুক্ত বায়ুর অক্সিজেন নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সুরে সুর মিলাবার শপথ নিয়েছেন। বিশেষত তিনি যখন বলেন, রোহিঙ্গারা বিদেশি এবং বাঙালি, তখন বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কারণ থাকে। নোবেল বিজয়ী একজন মানুষ ইতিহাসের সত্যকে অস্বীকার করে এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা কী করে বলেন? তিনি যে নোবেলের অযোগ্য তা আবারও প্রমাণ করলেন। সুন্দর মুখের আড়ালে এমন অসুন্দর মন কী করে লুকিয়ে থাকে?
সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে, মানবাধিকারের বুলি, উদ্বেগ প্রকাশ ও আবেদন-নিবেদনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচানো যাবে না। এখন প্রয়োজন, ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা তো বেশ শক্তিশালী। বিশ্ববাসী ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ায় তাদের শক্তিমত্তার প্রমাণ পেয়েছে। জল্লাদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সেই শক্তির কিঞ্চিৎ প্রয়োগে তো কোনো আপত্তি থাকার কারণ নেই। বরং এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে পারবেন যে, তাদের উদ্বেগ প্রকাশটা খাঁটি ছিল এবং তারা যথার্থই মানবতাবাদী।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে বেগম জিয়ার অর্থবহ ফর্মুলা আওয়ামী লীগের তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান : অতঃপর?


গত শুক্রবার এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে কতিপয় সুনির্দ্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। আরও বলা হয়েছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কেও তিনি শীঘ্রই একটি রূপরেখা দেবেন। এই প্রস্তাবটি পড়া এবং বিবেচনার আগেই অর্থাৎ প্রস্তাব পেশের ২ ঘন্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেসব প্রস্তাব পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছেন। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী প্রশ্ন আসেঃ বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট এরপর কি করবে? কারণ আওয়ামী লীগ তো বেগম জিয়ার রূপরেখা সামারিলি রিজেক্ট করে দিয়েছে। তারা বলেছে, সংবিধান মোতাবেকই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এ ব্যাপারে তিনি আরও কিছু কথা বলেছেন যেগুলো এই ইস্যুটির সাথে মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়।ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথার অর্থ এই দাঁড়ায় যে বিরোধী দল যখন যা কিছুই বলে বা করে সেগুলো আসলে ফালতু হয়ে দাঁড়ায়। তারা বিরোধী দলের কোনো যৌক্তিক প্রস্তাবকেও ফালতু হিসাবে উড়িয়ে দেয়। নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে বেগম জিয়া যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটি যুক্তি-তর্কের কষ্টি পাথরে বিবেচনা করলে অস্বীকার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে পাল্টা যুক্তি না দিয়ে আওয়ামী লীগ সংবিধানের দোহাই দিয়েছে। সংবিধানে তো এক কথা বলেই সব কিছু শেষ করে দেয়া হয়েছে। কারণ, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন’।
সংবিধান ও মানুষ
ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। তিনি আরও বলেন যে, ‘ইসি গঠনে আমরা সংবিধান মোতাবেক চলতে চাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, সে প্রক্রিয়া থেকে আমাদের সরে যাওয়ার সুযোগ নেই’। এ সময় ইসি গঠনে বিএনপির প্রস্তাবকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক করছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তারা আমাদের পবিত্র সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মিথ্যাচার নতুন নয়, ক্রমাগত ভুলের কারণে তার দল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ভাবে না, বিদেশের কোন দেশে কোন দল ক্ষমতায় আসে, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি (খালেদা) জনগণের ওপর আস্থা রাখেন না। ভোটে তার বিশ্বাস নেই।’ তিনি বলেন, ‘জাতির কাছে কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশন দেয়ার আগে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মানুষ হত্যার জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। শোক দিবসে জন্মদিন পালনের জন্যও ক্ষমা চাইতে হবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন যে তিনি (খালেদা) সুন্দর সুন্দর ভালো কথাগুলো বলছেন, এগুলো মাগুরা, ঢাকা-১০ এর উপ-নির্বাচনে কোথায় ছিল। নিজেরা যেটা প্রাকটিস করে না, সেটা অন্যকে বলাও ঠিক নয়।
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, জনাব ওবায়দুল কাদের ধান ভানতে শিবের গান গাচ্ছেন। বেগম জিয়ার প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কি আছে? আর এসব কথা বললেই সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয় কিভাবে? তাহলে এর আগে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওয়াজ উঠেছিলো তখন আওয়ামী লীগও কি সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলো? কারণ তখন তো সংবিধানে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিলো। আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল হয় এবং কেয়ারটেকার সরকারের ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটিকেই বলা হয় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। তখন কেউতো বলেনি যে, আওয়ামী লীগ তথা বিরোধী দল রাষ্ট্রদ্রোহিতা করছে অথবা তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ তো বার বার বলেছে যে মানুষের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সুতরাং মানুষের ইচ্ছা বা দাবি মোতাবেক সংবিধান যখন তখন পরিবর্তিত বা সংশোধিত হতে পারে। বেগম খালেদা জিয়া যে সব প্রস্তাব দিয়েছেন সে সব প্রস্তাব সরকার মেনে নিলে নেবে, না হলে সেসব দাবি আদায়ের জন্য বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ পথে, গণতান্ত্রিক পথে, নিয়মতান্ত্রিক পথে জনগণের কাছে যাবে। জনগণ তাদের দাবি গ্রহণ করলে সংবিধান সংশোধিত হবে, গ্রহণ না করলে হবে না। তাই বলে এসব প্রস্তাবের মধ্যে তিনি মিথ্যাচার কোথায় দেখলেন?
॥ দুই ॥
আমরা খালেদা জিয়ার ব্রিফ নিয়ে বসিনি। কিন্তু যখন তিনি বলেন যে, বেগম জিয়া জনগণের ওপর আস্থা রাখেন না তখন তিনি ইতিহাসকে সঠিকভাবে বিব্রত করেন না। ভোটে নাকি বেগম জিয়ার বিশ্বাস নাই  (দৈনিক সংগ্রাম, শনিবার, ১৯ নবেম্বর)। ভোটে কোন দলের বিশ্বাস আছে আর কোন দলের নাই সেই বিতর্কে আমরা যাব না। তবে একটি শক্তিশালি, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হোক যেখানে সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং যেখানে জনগণ নির্ভয়ে অবাধে তাদের ভোট দিতে পারে। এমন একটি নির্বাচন দিতে হবে যেখানে জনগণ যে মার্কায় তার ভোটটি দিতে চায় সেই মার্কাতেই যেন ভোটটি পড়ে। সেখানে যেন এমন নির্বাচন না হয় যেখানে, ‘আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব’, অবস্থা না হয়। এমন একটি পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হোক। তখন দেখা যাবে কোন দল ভোটে যায়, আর কোন দল ভোটে যায় না। সেই রকম একটি অবস্থার সৃষ্টি না করে এমন একটি ভোট করা হলো যেখানে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ¦ীতায় পাস করল। তেমন একটি ইলেকশনে বিরোধী দল যাবে কিভাবে? সেই ইলেকশন বয়কট করার পর যদি বলা হয় যে, বিরোধী দল ভোটে বিশ্বাস করে না তাহলে সেটা সত্যের চরম অপলাপ হবে।
অনেকের ধারণা ছিল যে, ওবায়দুল কাদের সাহেব হয়তো দলের অভ্যন্তরেও গণতন্ত্রের চর্চা করবেন। কিন্তু মাত্র ১ মাসের মধ্যেই সেই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া এবং শোক দিবস পালনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা তিনি যতদিন না চাচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত বেগম জিয়া কোনো রাজনৈতিক প্রস্তাব দিতে পারবেন না, এমন কথা কোনো গণতান্ত্রিক নেতার মুখে শোভা পায় না। একমাত্র ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটররাই এ ধরনের কথা বলতে পারেন। এটিকেই বলা হয় গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে আমরা একটু পেছনে ফিরিয়ে নিতে চাই, যখন কেয়ার টেকার আন্দোলন দানা বাঁধে এবং চূড়ান্ত পরিণামে ত্রয়োদশ সংশোধনী নামে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।
॥ তিন ॥
কেয়ারটেকার সরকারের ইতিহাস নিয়ে এই ক্ষুদ্র পরিসরে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি আজকের আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক বলে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করছি।
জেনারেল এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে ভোট নিয়ে অনেক কারচুপি হয়। তখন অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এবং দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা তথা সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রবল গণআন্দোলন হয়। এই গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। অনেকেই এটিকে দেশের কেয়ারটেকার সরকার বলতে চান। যাই হোক, শাহাবুদ্দিন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ১৯৯৪ সালে মাগুরায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলে বিরোধী দল। এখান থেকেই হয় কেয়ার টেকার সংজ্ঞার উৎপত্তি। এর আগে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ৮০’র দশকে এক সাংবাদিক সন্মেলনের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকারের সংজ্ঞা জনগণের নিকট উপস্থাপন করেন। বিষয়টি জনগণ কতৃক নন্দিত হলেও সেটি আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। ১৯৯৪ সালে মাগুরার উপনির্বাচনে কারচুপি হলে আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে। তাদের দাবিতে জামায়াতের কেয়ারটেকার সরকারের ছায়াপাত ঘটেছিল। কেয়ারটেকার সরকারের এই দাবিতে আওয়ামী লীগ রাজপথে যে আন্দোলন শুরু করে সেই আন্দোলন ধীরে ধীরে সারা দেশে উত্তাপ ছড়াতে থাকে। সরকার কেয়ারটেকার দাবি মানতে অস্বীকার করে। জামায়াতও এই ইস্যুতে আন্দোলন করে, তবে ভিন্ন প্লাটফর্মে। আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মাসের পর মাস ধরে সংসদের অধিবেশন বর্জন করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৯৬ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আন্দোলনের প্রবল চাপে সেই সংসদ অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সংসদ বাতিল করা হয়। বাতিল করার আগে সেই সংসদই কেয়ারটেকার সরকার বিল পাস করে, যেটি এদেশে রাজনৈতিক ইতিহাসে ত্রয়োদশ সংশোধনী নামে খ্যাত।
ওপরের এই আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, রাজপথের আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো দিন গণদাবি আদায় হয় না। বেগম জিয়া গণমুখী নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটি আওয়ামী লীগ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়াশুনা করে, ইতিহাস ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান ঘাঁটাঘাঁটি করে বিএনপি যে ফর্মুলা দিয়েছে সেটি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। এখন বিএনপি কি করবে? বেগম জিয়ার সাংবাদিক সন্মেলনে আরও বলা হয়েছে যে, খুব সহসা অবাধ নির্বাচনের একটি ফর্মুলা দেয়া হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সেই ফর্মুলাও আওয়ামী লীগ তাৎক্ষণিকভাবেই নাকচ করে দেবে।
আজ শনিবার এই কলামটি লেখার সময় দেখলাম, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করার জন্য বেগম জিয়া যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেই ফর্মুলা জনগণের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। এজন্য জনগণের মাঝে এই ইস্যুটি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। যখন এই দাবিটি জনগণের গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তার পরেও যদি আওয়ামী লীগ তার জেদ বহাল রাখে, অর্থাৎ সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচনী সরকার গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি তথা ২০ দলকে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অভিজ্ঞ মহলের মত, মির্জা ফখরুল যে আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছেন সেটি বাস্তবায়িত করতে হলে বিএনপিকে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।  প্রস্তুতি পর্বে একদিকে মানববন্ধন, সেমিনার সিম্পোজিয়াম প্রভৃতি অনুষ্ঠান করতে হবে, অন্যদিকে ধীরে ধীরে রাজপথে নেমে আসতে হবে। বিএনপির প্রস্তাবিত আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। একবার যদি জনগণকে আন্দোলনে সামিল করা যায় তাহলে আন্দোলনের সফলতা দমন নীতি দিয়ে ঠেকানো যাবে না। বিগত মার্চ আন্দোলনের পর ১ বছর ৮ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। আর সময় ক্ষেপণ করলে বিএনপি তথা ২০ দল আন্দোলন গড়ে তোলার সময় পাবে না। যদি দাবির বাস্তবায়নই না হয় তাহলে সেই দাবিনামা প্রস্তুত করার পেছনে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাংবাদিক এবং গবেষক দিয়ে সেই দাবিনামা প্রস্তুত করা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। 

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নেপালের রাজনীতিতে ভারতপন্থীদের বিপর্যয়


আঠার বছর পর এ মাসের প্রথম সপ্তাহে নেপাল সফরে এসেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। নেপালের ওপর ভারতের খবরদারির ইতিহাস দীর্ঘকালের। কিন্তু ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্র অবসানের পর সেখানে শুরু হয় গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সেই লক্ষ্যে নেপালে একটি সাংবিধানিক পরিষদ নির্বাচিত হয়। এই পরিষদের প্রধান কাজ ছিলো একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রণয়ন করা। তার জন্য নেপালের দীর্ঘ সময় লেগেছে। তাকে খুব অস্বাভাবিক বলা যাবে না। কারণ নেপালে রাজতন্ত্র কায়েম ছিল ২৭০ বছর ধরে। সেই বৃত্ত থেকে বেরুনো খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেক আলাপ আলোচনা আর বিতর্ক শেষে ১৯১৫ সালের ৩০ অক্টোবর নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিক সংবিধান সাংবিধানিক পরিষদে গৃহীত হয়। নেপালের ৬০১ সদস্যের এই পরিষদে ৫০৭ সদস্যই সংবিধানের পক্ষে ভোট দেন এবং সংসদে সংবিধান গৃহীত হয়। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র থেকে নেপাল প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়। ভারত ও নেপালের মধ্যকার সঙ্কটের শুরু হয় সেখান থেকেই।
নেপালের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে। নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের তেরাইতে মাধেসী বলে এক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটতে থাকে ষাটের দশক থেকে। তেরাই অঞ্চল নেপালের সমতল ভূমি ও অত্যন্ত উর্বর এলাকা। ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক লোককে দিল্লী ঐ এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারা এসে বসবাস ও চাষাবাদ শুরু করে। এখানে নেপালিরাও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নেপালের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ এই তেরাই অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের মধ্যে ২০ ভাগ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাধেসী। নেপালের রাজতন্ত্রের আমলে আশির দশকে রাজা ভারতীয় বংশোদ্ভূত অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরকার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে রাজতন্ত্র অবসানের হুমকি প্রদান করেন। বরং ভারতের অবৈধ অভিবাসীদের আত্মীকরণের জন্য নেপালের রাজাকে চাপ দেন। নিজের গদী রক্ষার জন্য রাজা তা মেনে নিতে বাধ্য হন। ভারতীয় মাধেসীরা আসন গেড়ে বসে।
এখানে ভারতীয় পরিকল্পনা কারও কাছে অস্পষ্ট ছিলো না। তাদের লক্ষ্য ছিলো, ভারতীয় জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে তারা কোনোদিন মণিপুর বা সিকিমের মতো নেপালের তেরাই অঞ্চল দখল করে নেবে। আর নেপাল দখল করতে পারলে তাদের পক্ষে চীনকে মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়ে উঠবে। নেপালের রাজার ওপর ঐ চাপ সৃষ্টির পর থেকে ভারত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নেপালে মাধেসীদের বসতি বাড়াতে শুরু করে। কিন্তু সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর বিষয়টির প্রতি তারা মনোযোগী হয় এবং মাধেসী জনসংখ্যা নেপালে যাতে আর বাড়তে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে আগের মতো ধমক দিয়ে ফায়দা হাসিলের পরিবেশ আর নেপালে নেই। ফলে এ যাত্রা ভারত নতুন কৌশল গ্রহণ করে। তার একটি নেপালের নবগঠিত সংবিধান সংশোধন। এই সংশোধনের মাধমে ভারত মাধেসীদের জন্য অধিক আসন ও স্বতন্ত্র প্রদেশ তৈরি করতে চায়।
নেপালের ৬০১ আসনের সাংবিধানিক পরিষদ দীর্ঘ আট বছর আলাপ-আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত সংবিধানের ওপর ভোটাভুটি করে। তাতে সকল দলের মোট ৫০৭ জন ঐ খসড়া সংবিধানের পক্ষে ভোট দেন আর ৯৪ জন এর বিরুদ্ধে ভোট দেন। আবার এই সাংবিধানিক পরিষদে মাধেসীদের ভোট সংখ্যা ছিল ১১৬। তাদের মধ্যে ভোটাভুটির সময় ১১১ জন নয়া সংবিধানের পক্ষে ভোট দেন। অর্থাৎ মাধেসীরাও ব্যাপকভাবে এই সংবিধানের পক্ষে ভোট দেন। এখানেই প্রমাদ গোণে ভারত সরকার। ভারত দেখতে পায় যে নেপালের ওপর চাপ প্রয়োগের এত বড় একটা হাতিয়ার তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর তাই তারা মাধেসী দলগুলোর নেতাদের দিল্লীতে ডেকে নিয়ে এবং কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসে বৈঠক করে সংবিধানের বিরুদ্ধে তাদের উস্কে দিতে থাকে। আর এই সুযোগে নেপালকে মাধেসীদের অসঙ্গত দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ভারত চাপ দিতে শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে ভারত গত বছর প্রচণ্ড শীতের মধ্যে নেপালে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ আরোপ করে রাখে। নেপালে জ্বালানি তেল, খাদ্যশস্য, শাকসবজি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু নেপালের সাধারণ মানুষ এতে দমে যাননি। তারা সকল কষ্ট সহ্য করেও নিজেদের আত্মমর্যাদা বজায় রেখে যান। নেপাল তার জ্বালানি তেলের জন্য শতভাগ নির্ভরশীল ভারতের ওপর। রান্নার গ্যাসও আসে ভারত থেকে। ভারত সেই জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ওলি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চীন আপৎকালের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ্য লিটার জ্বালানি স্থলবেষ্টিত নেপালকে বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে উপহার দেয়। সেই সঙ্গে সরবরাহ করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধও। দেয় লাখ লাখ সিলিন্ডার গ্যাস। জ্বালানি তেলে রেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। নেপালীরা এমনিতেই কষ্টসহিষ্ণু জাতি। তারা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে শুরু করেন। নিজেদের ঊষ্ণ রাখার জন্য ও রান্নার জন্য তারা গ্যাসের বদলে ব্যবহার করতে শুরু করেন জ্বালানি কাঠ। সরকার সে কাঠ রেশন ব্যবস্থায় জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করে। ভারতের ওপর বাড়ে আন্তর্জাতিক চাপ।
আবার মাধেসীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত তার সীমান্তের ভেতরে মাধেসীদের জন্য তৈরি করে দেয় অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানে আন্দোলনকারীদের জন্য রান্না ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। মাধেসীরা নেপালের ভেতরে ঢুকে নানা ধরনের নাশকতা চালিয়ে যেতে থাকে। এক সময় এসব মাধেসী আন্দোলনের বদলে নানা ধরনের নিত্যপণ্যের চোরাচালানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আবার আন্দোলন করার জন্য লোকেরও অভাব দেখা দেয়। আন্দোলন করে না হয় তাদের নিজেদের পেট চলছিল, কিন্তু তাদের পরিবার পরিজনের খাওয়া-পরার জন্য তো অর্থের দরকার। কাজ দরকার। ফলে ধীরে ধীরে ভারতের তৈরি করা আন্দোলনের ক্যাম্প ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে। লোকের অভাবে মাধেসীদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ভারতীয় পণ্যের সরবরাহ ফের শুরু হয়।
নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি সম্পাদন করেন। তার মধ্যে আছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ চুক্তি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের সরবরাহ চুক্তি। যাতে ভবিষ্যতে ভারতের এ ধরনের চাপ প্রয়োগের বিপরীতে নেপালের সরবরাহ লাইন একেবারে বন্ধ হয়ে না যায়। চীনের সঙ্গে নেপালের এই চুক্তি ভারত ভালোভাবে নেয়নি। ফলে তারা ওলি সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। ওলি নেপালের মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। প্রচণ্ড ওলির কোয়ালিশন থেকে বের হয়ে এসে এখন নেপালি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছেন। শর্ত হলো যে, উভয় দল এগারো মাস করে ক্ষমতায় থেকে নতুন নির্বাচন দেবেন। উল্লেখ্য, নেপালে নতুন সংবিধান গ্রহণের সময় নেপালি কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। এখনও কাঠমান্ডু দিল্লীর সম্পর্ক নিয়ে নানা টানাপোড়েন চলছে। মাধেসীরা সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েই যাচ্ছে। কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু মাধেসীদের দাবি অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের বড় ধরনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যেই নেপাল সফরে এসেছিলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। তার বার্তাও একই ছিল। নেপাল যেন মাধেসীদের দাবি অনুযায়ী তাদের সংবিধান দ্রুত সংশোধন করে নেয়। তার এই বক্তব্যে নেপালের সাধারণ মানুষ ও পার্লামেন্টারিয়ানদের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, সংবিধান সংশোধনকামী কিছুসংখ্যক ভারতীয় বংশোদ্ভূত’র মাধ্যমে দিল্লী নেপালের অখণ্ডতা ধ্বংস করতে চায়। তাদের আশঙ্কা, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভারত কার্যত নেপালের উর্বর ও সমতলভূমি দখল করে নিতে চায়। বস্তুত প্রণব মুখার্জি নেপাল ত্যাগের আগে সেখানকার রাজনীতিকদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে গেছেন যে, তারা যেন মাধেসীদের দাবি অনুযায়ী দ্রুত নেপালের সংবিধান সংশোধন করে।
আসলে প্রণবের এই নেপাল সফরে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনেনি। ভারতীয় পত্রিকা ফার্স্টপোস্ট লিখেছে, নেপাল ও ভারতের প্রেসিডেন্টের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে দু’দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জনগণের মৈত্রী প্রভৃতি বিষয় স্থান পেলেও তাদের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নেপালের সংবাদপত্রগুলো বরং প্রণবের সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনাই করেছে। মিডিয়া বলেছে, এটা অপর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। ভারতের অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে নেপালের জনগণের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, প্রণবের সঙ্গে আলোচনায় সে বিষয়টি স্থান না পাওয়ায় নেপালের রাজনীতিকরা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল তার ভারত সফরের আগে সংবিধানের কিছু সংশোধন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানের প্রধান বিরোধী দল ওলির সিপিএন ইউএমএল ও তার মিত্রদের বাধায় তা করতে পারেননি। অথচ এই দাহালই গত বছর বলেছিলেন, ‘সংবিধান গ্রহণ করে আমরা কেবল আমাদের সাংবিধানিক অধিকারই প্রতিষ্ঠা করেছি। কারও চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করবো না। এটা আমাদের বিবেক ও আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। এবার নেপালি জনগণ তাদের নিজেদের সংবিধান নিজেরাই প্রণয়ন করেছে। এটা ছিল আমাদের ৭০ বছরের স্বপ্ন।’
তবে সিপিএন ইউএমএল-এর সমর্থন ছাড়া নেপালের সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। ওলির দল ও তাদের সহযোগী আরপিপি-এন ২০০ আসনের অধিকারী। ওলি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সংবিধান সংশোধনে সায় দেবেন না। সংবিধান সংশোধন করতে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার। নেপালের সংসদে সদস্য সংখ্যা ৫৯৫। এ ছাড়াও নেপাল মজদুর কিষাণ পার্টি, সিপিএন-এমএল, ন্যাশনাল পিপলস ফ্রন্ট জানিয়েছে, তারা সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দেবেন না। এ ছাড়াও ভারতপন্থী বলে পরিচিত নেপালি কংগ্রেসের তরুণ সদস্যরাও সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দেবেন না বলে প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছেন। ওলি সরকারের পতন ঘটিয়ে ও সংবিধান সংশোধনের পক্ষ নিয়ে কাঠমান্ডু ভ্যালিতে মাওবাদী ও নেপালি কংগ্রেস তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। নাম প্রকাশ না করে নেপালি কংগ্রেসের এক নেতা বলেছেন, ‘এখানে গত নির্বাচনে তারা ১১টি আসন পেয়েছিলেন, সামনের নির্বাচনে তিনটি আসনও পাবেন না।’
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

Ads