বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

‘মাছের লোভে বোকা বগা পড়ে উড়াল দিয়া’


বাসা হইতে এরাদা করিয়া বাহির হইলাম চাইরপাশে যাহা ঘটিতেছে সেইসব দেখিয়াও দেখিব না। চোখ থাকিতেও অন্ধ হইয়া রহিব। কোন ফালতু বাতচিত কানে ঢুকিতে দিব না। কানে তুলা গুঞ্জাইয়া রাখিব। গলার আওয়াজ নামাইয়া আনিব। বোবার নাকি দুশমন থাকে না। এখনকার সমাজে ঠোঁট যতটা চাপিয়া রাখা যায় ততটাই বেহতের। হররোজ এই উমদা ভাবনাটি দেমাগে জমা রাখিবার কোশেশ করি। কোনদিন ফল পাকে কোন দিন কাঁচা থাকিয়া যায়। এই আধাপাকা ভাবনাটি মগজে ঘুুরাইতে ঘুরাইতে রোজ অফিসের দিকে পাও বাড়াই। আইজও তাহাই করিলাম। খোশনসিবই বলিতে হইবে, বাসে একখানা কুরসিও জোগাড় হইয়া গেল শেষ কাতারে। বরাতগুণই বলিতে হইবে। আখেরে বরাত বরবাদ হইতে লাগিল। বাস এক মিনিট চলিলে তিন মিনিট খাড়া হইয়া থাকে। মিরপুর দশ নম্বরের বগলে আসিয়াতো মহা গেঞ্জামে আটকাইয়া গেলাম। বসিয়া আছি তো আছিই। আগে বাড়িবার কোশেশ করিয়াও কোন লাভ হইলো না। হররোজ এই গোলচত্বরে এমন কামড়া কামড়ি লাগিয়াই থাকে। বাস টেক্সি আর রিকশা মানুষে এক এলাহি কা-। নিশি রাইত পর্যন্ত একই আলামত। সামাল দিতে গিয়া আইনের লোকজনেরও জানকান্দানি শুরু হইয়া যায়। বাসে বসিতে বসিতে বেফানা অবস্থায় পড়িয়া গেলাম। কখন যে সীমানায় গিয়া পৌঁছাইব তাহা ভাবিতে ভাবিতে মগজে উথাল পাথাল শুরু হইয়া গিয়াছে। গাড়ি-ঘোড়ার ফাঁকফোঁকর দিয়া মানুষজনদের দৌড়াদৌড়ি যেন থামিতেই চাহিতেছে না। রাস্তাঘাটে গাড়ি আটকাইয়া থাকিবার ইহাও একটি বড় উছিলা। উড়াল পুলে উঠিতে নারাজ। ঠ্যাং কমজুর হইয়া পড়িবে এমন একখানা ভাব। কেহ কেহ আবার ট্রাফিক পুলিশের বেক্কলি বা বেরহমির কথাও তুলিয়া থাকেন। যত কিসিমের অজুহাতই উঠুক না কেন গাড়ি চাক্কায় খিল ধরিবার বেমারটি যেন দিন দিন ডাঙর হইতেছে। দিকদারি বাড়িতেছে। মুশকিলের বাত  হইল এই বেরামের এলাজ করিবার মতো হাকিম জোগাড় হইলো না। জোগাড় করিবার কোশেশের আলামতও নজরে আসিতেছে না। চারদিকে কেবলই আইন্ধারই নামিতেছে। পথেঘাটে দিকদারি, অফিস কাচারিতে দিকদারি, বাজার সদায় করিতে গিয়াও দিকদারির অন্ত থাকিতেছে না। এক ঘণ্টার পথ পারি দিতে আজকাইল তিন চাইর ঘণ্টা লাগিয়া যাইতেছে। দিনের অর্ধেকটা সময়ই কাবার হইয়া যায় বাসে, পথে পথে। কপালের লেখন কে করে খ-ন এমনি একটা সময়ের  মাইঝ বরাবর দিয়া যেন আমরা হাঁটিতেছি। বাসে বসিয়া বসিয়া সময় কাবার করিতে গেলে এমনি সব আজগবি চিন্তা মাথায় আসিয়া জমা হয়। মালুম হইল মগজ পুর হইয়া যাইতেছে, আউলাঝাউলা চিন্তার ভারে। খালাস পাইবার পথ তালাশ করিবার ফুরসতও যেন আটকাইয়া যাইতেছে। এক কাতারে অনেকগুলি বাঁশি বাজিয়া উঠিতে ধরফরাইয়া উঠিলাম। ইহারি মধ্যে সব বেরহম চিন্তা আসমানে উড়িয়া গেল।
বাস মিরপুর দশ পার হইল কাউসালি করিতে করিতে। বাসের সাথে সাথে সওয়ারীগণও কাউসালির মধ্যে আটকাইয়া যায়। আমিও আটকাইয়া গেলাম। সওয়ারীদের গেঞ্জামে পসিনা ঝরিতে লাগিল। গেঞ্জাম হইবার কথা না থাকিলেও হইল। সিটিং সার্ভিস নাম লেখিয়া বাসওয়ালা সওয়ারীদের সাথে চিটিং করিল। বাস বোঝাই করিয়া সওয়ারী উঠাইল। কুরসির আয়োজন মত সওয়ারী তুলিবার আইন থাকিলেও তাহা তারা মানিল না। এই অন্যায় তাহারা রোজই করিয়া থাকে। ইহা লইয়া কাজিয়া-ফ্যাসাদতো রোজকার আলামত। এইসব দেখভাল করিবারও যেন কেহ নাই। এই দিকে সিটিংয়ের ভাঁওতাবাজিতে আটকাইয়া বেশতি পয়সা আদায় করিতে ইহাদের কোন শরম নাই। বাসওয়ালাদের বেশরম কায়কারবার এবং চিল্লাচিল্লিতে দেমাগে খিল ধরিয়া যাইতেছিল। বাড়ি হইতে এরাদা করিয়া আসিয়াছি দেখিয়াও দেখিব না, শুনিয়াও শুনিব না। তাই ঝিম মারিয়া বসিয়া থাকিলাম। তাহা ছাড়া নতুন ভাড়া লইয়াতো হাতাহাতির জোগাড় হয় সব বাসেই। এই বাসেও হুমকি ধমকি কম হইল না। আলামত দেখিয়া মালুম হইল ‘আমরা সবাই রাজা এই রাজার রাজত্বে’। কবি রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকার সিটিং বাসে আসিয়া চড়িতেন তাহা হইলে হয়তো আরো উমদা কিছু লেখিয়া ফেলিতে পারিতেন। তিনি আর জিন্দা নাই। মরিয়া বাঁচিয়া গিয়াছেন। জিন্দা থাকিলে হয়তো মহা কেলেংকারিতে পড়িতে হইতো। সিটিংওয়ালাদের চিটিংবাজি দেখিতে দেখিতে একদিন মনের দুঃখ মনে সামলাইয়া বিষ খাইতেন না হয় দড়িতে ঝুলিতেন। দিকদারি আর কাহাতক সহ্য করা যায়। দুঃখ শুনিবারও কেহ নাই। যার যার ধান্দায় ব্যস্ত। কামাই রুজিতে বেচইন। তামাম দেশই তো আজকাইল চিটিংবাজির কারখানা বনিয়া যাইতেছে। এই কারখানার কারিগরদের ফান্দে পড়িয়া আমার মতো বেক্কলদের জানকান্দানির একশেষ। আব্বাসউদ্দিনের একখানা গান শুনিয়াছিলাম ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’। চাইরপাশ দেখিয়া শুনিয়া মালুম হইতেছে আমার মতো বেক্কলের গোষ্ঠী ‘বগা’ হইয়া গিয়াছে। ফান্দে আটকাইয়া এখন কান্দনই সার। ফান্দুয়া ভাইদেরই কপাল রোশনাই হইতেছে দিন দিন।
ইহারই মধ্যে দুই ঘণ্টা সোয়া দুই ঘণ্টা কাবার হইয়া গিয়াছে। কাউসালি করিতে করিতে আমাদের বাসখানা প্রেস ক্লাবের সামনে আসিয়া খাড়া হইল। কন্ডাকটরের প্রেস ক্লাব ডাক শুনিয়া ধরফরাইয়া উঠিলাম। এতসময় দেমাগে নানান চিন্তা আসিয়া দৌড়াদৌড়ি করিতেছিল। তাই এক অচিন রাজ্যে গিয়া হাজির হইয়া ছিলাম। আইজকাল হামেশাই এমন হইতেছে। ঝিমমারিয়া বসিয়া থাকিলেই হইল। সামনে কেবল চিটিংবাজির সায়র ফুলিয়া ফাঁপিয়া আগাইতে থাকে। কুচিন্তা ঘিরিয়া ধরে। ডর ভয় গলির মোড়ে মোড়ে খাড়া হইয়া থাকে। তাই হররোজ ডরভয়কে সাথে লইয়াই বাড়ি হইতে পথে নামি। না জানি কোন গরদিশ কোন জাগায় গিয়া আছড়াইয়া, পড়ে। বলাতো যায় না। এই জামানায় তো আবার চিটিংবাজদেরই জয়।
ডাইনে বামে নজর ঘুরাইয়া বাস হইতে নামিলাম। এতসময় বসিয়া থাকিতে থাকিতে কোমর আর মাথা ঝিমঝিম করিতেছে। ঝিমমারা গতর লইয়াই উড়াল পুল দিয়া তোপখানা সড়ক পাড়ি দিলাম। প্রেস ক্লাবে পৌঁছাইতে হইলে এই পথেই আহসানির সাথে পার হওয়া যায়। আমিও তাহাই করিলাম। আচানক ব্যাপার হইল এই পুলে কেহ চড়িতে চাহে না। মানুষজন সড়ক দিয়াই দৌড়াদৌড়ি করে। তোপখানা সড়কের কিনার ঘেঁষিয়া কোর্ট কাচারির আড্ডাখানা। লোকজনে গিজগিজ করে। ইহার পরও খুব কম মানুষই উড়াল পুল পছন্দ করে। কেন যে এমন করে বুঝে আসে না। আবার এই কিসিমের মানুষেরাই উড়াল পুলের দাবিতে মিছিল করে। মজমা জমায়। বাঙ্গালদের মনের দিশা পাওয়া মুশকিল। পুলে উঠিয়া দেখি আমি একজনই সওয়ারী। পুলটি সাফসুতরের কোন বালাই নাই। এইখানে সেইখানে আবর্জনা পড়িয়া আছে। কাহারা যে এইসব পুলের দেখভাল করে আল্লাহ মালুম। কোন কোন পুলে দেখিয়াছি লোহা জং ধরিয়া ঝরিতেছে। পলেস্তার খসিয়া পড়িতেছে। গলিজ ছড়াইয়া ছিটাইয়া আছে সিঁড়িতে। কোন কোনটিতে বিছানাপত্রও বিছাইয়া রাখিয়াছে। হকারের যন্ত্রণাতো লাগিয়াই থাকে হরহামেশা। এইসব দেখিবার বুঝি কেহ নাই। মা-বাপ হারা এতিম এই পুলটি পার হইতে হইতে নজর ছানি করিতে ছিলাম পুবে পশ্চিমে। দেখিলাম প্রেস ক্লাবের গেইট কাছাকাছি আটদশ লোকের কাতার। তাহাদের হাতে একখানা বড় কাপড়। সেই কাপড়ে কী জানি লেখা রহিয়াছে। পাঠ করিবার ইচ্ছা হইল না। এই রকম মজমা এই এলাকায় লাগিয়াই থাকে। তাই কে শোনে কার কথা। চিটিংয়ের জামানায় মিটিং করিয়া কি ফায়দা। প্রেস ক্লাবে ঢুকিতে যাইব। এমন সময় একটি চেন পরিচয় আওয়াজ আসিয়া কানে বাড়ি খাইল। আমি খাড়া হইয়া গেলাম। ডাইনে নজর ঘুরাইতেই ভুত দেখিবার মতো আঁতকাইয়া উঠিলাম। একটু দূরে কিতাবালী মুচকি হাসিতেছে। গালভর্তি পান, ঠোঁটের দুই কিনার দিয়া পানের লাল রস নামিতেছে। তিন চাইর বছর পার হইয়া গেল কিতাবালী লাপাত্তা। তাহার কোন হদিস পাইতে ছিলাম না। জানি দোস্ত কিতাবালীকে পাইয়া দিল ধরফরাইয়া উঠিল। আগের মতই আছে কিতাবালী। মাথায় একখানা খয়ারি রংয়ের তুর্কি টুপি উঠিয়াছে। হাতের লাঠি কান্দের ঝোলা কালা সেরওয়ানী সব আগের মতই রহিয়া গিয়াছে। বাবরির চেহারাও বদলায় নাই। ত্বর সহিতে ছিল না। তাই একরকম দৌড়াইয়া কিতাবালীর বগলে আসিয়া হাজির হইলাম। সিনাতে সিনা মিলাইলাম, মোসাফাহ হইল বহু সময় ধরিয়া। হাত যেন ছাড়িতেই চাহে না কিতাবালী। বহুত কোশেশ করিয়া কিতাবালীর আঞ্জা হইতে আলগা হইলাম।
কুশল অদল বদলের পর কিতাবালী জানাইল আমি নারিকেল জিঞ্জিরায় দিন গোজরান করিয়াছি গত কয়টা বছর। তোমরা যাহার নাম দিয়াছ সেন্টমার্টিন। তোমাদের এই ঢাকা শহরে থাকিতে থাকিতে জান কান্দানি শুরু হইয়া গিয়াছিল। তাই দ্বীপে পালাইয়া গিয়াছিলাম। সায়রের কাছে থাকিলে মনটা সায়রের মতো ডাঙ্গর হইয়া যায়। ছহবতে তাছির বদল হয়। বেতমিজী বেলেহাজী আর ফাসেকি সব সায়রের ঢেউয়ের বাড়িতে দিশাহীন হইয়া পড়ে। তোমাদের এই ঢাকা শহরে তো বাস-রিকশার কেচকেচানি আর চিটিংবাজদের গলাবাজী মাথা মগজ সব খিল ধরিয়া থাকে। বেরহম আদমদের আলামত দেখিতে দেখিতে নজর খোলা হইয়া যাইতেছিল। তাই দ্বীপবাসে গিয়াছিলাম। এখন বল তোমার দিনকাল কিরকম কাটিতেছে। জবাবে জানাইলাম কাটিতেছে একরকম। কিতাবালী আমার নজরে নজর রাখিল। সেইখানে কি জানি তালাশ করিতেছে মালুম হইল। একটু বাদে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। বুঝিলাম এই হাসিতে কিতাবালী তাহার মনের অনেক জ্বালাকে খোলাসা করিয়া দিয়াছে। যে জ্বালা জুড়াইতে সে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পাড়ি জমাইয়াছে। দূরে গেলে কি আর জ্বালা জুড়ায়! কিতাবালীকে ইহা কে বুঝাইবে। একদিকে কিতাবালীর টান অন্যদিকে কামের তাকিদ, কোন দিক সামাল দিব ভাবিয়া পাইতেছিলাম না। তাই কিতাবালীকে আমার সাথে প্রেস ক্লাবে ঢুকিতে বলিলাম। আমার আবদার শুনিয়া কিতাবালীর চেহারায় যেন অমাবস্যা নামিয়া আসিল। তাহার চেহারার দিকে নজর দিয়া আমিও থতমত খাইয়া গেলাম। প্রেস ক্লাবের নাম শুনিয়া কিতাবালী এমন বেজার হইবে তাহা আন্দাজ করিতে পারি নাই। আতকা কিতাবালী হাত বাড়াইয়া বলিল দোস্ত এখন তবে বিদায়। আমিও হাতখানি শক্ত করিয়া ধরিয়া রাখিয়া জানিতে চাহিলাম বিষয় কী। প্রেস ক্লাবের নাম শুনিয়া তুমি এতটা বেজার হইলে কেন? গোস্যারই বা কি থাকিতে পারে?
কিতাবালী কিছু সময় চুপ মারিয়া থাকিল। চুপ থাকিয়া কিতাবালী তাহার গোস্যাকে বশে আনে। আবার তাহার ঠোঁট নড়িয়া উঠিল। কিতাবালী জানাইল দিলে খুব চোট পাইয়াছি। এই দেখ আমার ঝোলা খালি। সত্যি সত্যি দেখিলাম তাহার ঝোলায় দু’একটি চটি বই ছাড়া তেমন কিছু নাই। যেই বেগে দু’চারখানা খবরের কাগজ থাকিত সেইখানে কিছুই নাই। কারণ জানিতে চাহিলে কিতাবালী বলিল সে এখন আর আখবর পাঠ করে না। বেহুদা সময় বরবাদ। জোড়া তালি দিয়া কিসসা কাহিনী আর কত মগজে রাখা যায়। এই পচাগান্ধ পড়িতে পড়িতে তোমাদের মতো পাঠকদের মগজেও পচন ধরিতে শুরু করিয়াছে। তাই আমি আমার মগজকে তোমাদের মগজের কচকচানি হইতে তফাতে রাখিয়াছি। 
ডরাইতেছিলাম কিতাবালী কোন সময় কোন বেফাঁস কথা বলিয়া বসে। কিতাবালীর এই রকমই খাসিলত। ইশারা দিয়া থামাইতে চাহিলাম। কিন্তু থামিল না। কথার রেলগাড়ি ছুটাইত লাগিল। একটু ঢুক গিলিয়া বলিল তোমরা না বড় গলায় চিল্লাচিল্লি কর, তোমরা জাতির বিবেক। হায়রে বিবেক। নিজেরা নিজেরা খামচা খামচি করিয়া কলিজা গুর্দা আড়ফাড় করিতেছ। আবার এলান চলিতেছে আমরা বিবেক। যেইখানে নিজেদেরই বিবেক নাই, অন্যের বিবেক তাহারা কি করিয়া বনিতে চাহে। কিতাবালীর কথাবার্তার জবাব দিতে গিয়া চুপ মারিয়া গেলাম। বলাতো যায় না কিতাবালী কোন বেফাঁস কথা বলিয়া বসে।
আমি প্রেস ক্লাবের দিকে নজর ঘুরাইতে ছিলাম। আমার বেচইন ভাব দেখিয়া কিতাবালী আবার হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিলাম হাসিবার কি দেখিলা। হাসিতে হাসিতেই কিতাবালী জবাবে বলিল তোমরা ফান্দে আটকাইয়া গিয়াছ। কাউসালি করিয়া কোন ফায়দা হইবে না। আব্বাস উদ্দিনের গানটি শোন নাই। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে/ফান্দ বসাইছে ফান্দুয়া ভাই, পুঁটি মাছ দিয়া/মাছের লোভে বোকা বগা পড়ে উড়াল দিয়া।’ তোমরা তো দেখিতেছি চাইর পাওয়ে ফালাফালি করিতেছ। তন্তুরার সূতা যে কোন দিন লোহার গুনা হইয়া দেখা দিব তাহা ভাবিয়া দেখিলা না। কিতাবালীর বয়ান শুনিয়া আমি থ বনিয়া গেলাম। এমনিতে বাস অনেক সময় গিলিয়া ফেলিয়াছে। এখন আবার কিতাবালীর সাথে বহুত সময় কাবার হইয়া গেল। মন উসখুস করিতে লাগিল। কিতাবালী জানাইয়া ছিল রোজানা আখবরের সাথে আর কোন মোয়ামেশা নাই। তাহার ঝোলাও খালি দেখিলাম। কিন্তু বয়ান শুনিয়া তো মালুম হইল তাহার বুঝ এখনো সাড়ে ষোল আনা।  আখবরওয়ালাদের উপর হইতে তাহার জিদ এখনো নামিয়া আসে নাই। এই খবর আমি আগ হইতেই জানিতাম। কিতাবালী কথায় কথায় আমাকে ‘দলদাস’ বলিয়া খোটা দিত। আমি বরাবরই তাহার এই খোটাখুটি হজম করিয়া যাইতাম। আইজ কেন জানি তাহার খোটায় দিলে চোট পাইলাম। এই চোট কিতাবালীর তরফে না আমার তরফে তাহা বুঝে আসিল না।
সিনাতে সিনা মিলাইল, মোসাফা করিয়া কিতাবালী এক সময় বিদায় নিল। আমিও মাথা নেচা করিয়া প্রেস ক্লাবের উঠানে পাও রাখিলাম।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads