বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

রাত পোহাবার আর কত দেরি পাঞ্জেরি?


কবি ফররুখ আহমদের (১৯১৮-১৯৭৪) ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪) কাব্যগ্রন্থে সঙ্কলিত ‘পাঞ্জেরি’ একটি কালজয়ী কবিতা। পাঞ্জেরি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি জাহাজের সামনে বা মাস্তুলের বাতি দিয়ে চারপাশ দেখে মাঝিকে পথনির্দেশ করেন। কার্যত পাঞ্জেরি হলেন পথপ্রদর্শক। ফররুখ আহমদ পাঞ্জেরির প্রতীকে দুর্দশাগ্রস্ত জাতির পথের সন্ধান করেছেন। অন্ধকারে, কুয়াশায়, উত্তাল সাগরে পথের নিশানার জন্য অবিরাম দাঁড় টেনে চলা। সামনে আলোর দিশা মিলবে, এক সময় অন্ধকার কেটে যাবে- এমন আশা নিয়ে অবিরাম দাঁড় টেনে যাচ্ছে অভিযাত্রী দল। কখন রাত পোহাবে, কখন সূর্য উঠবে। কিন্তু এই পথচলায় ভুল আছে। আর সে ভুলের খেসারত শুধু নৌকার মাঝি-মাল্লা বা পাঞ্জেরিই দিচ্ছে, তা নয়। এদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে মুসাফির, সওদাগর, ক্ষুধাতুর মজলুম আর সাধারণ মানুষকেও। আর তাই ফররুখ লিখেছেন, ‘পাঞ্জেরি!/ জাগো বন্দরের কৈফিয়তের তীব্র ভ্রূকুটি হেরি,/ জাগো অনশন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রূকুটি হেরি!/ দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!’
এখন বাংলাদেশের মানুষের কেবলই রাত পোহাবার অপেক্ষা। শূন্যতা ঘিরে অসীম কুয়াশার আস্তরণ। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আমরা সত্যি সত্যি এক কালো দিগন্তে এসে পৌঁছেছি। এখানে এখন জীবনের জয়ভেরী অস্ত যাবার পথে। এখন মুসাফির নাগরিকের দল আলোর আশায় পেরেশান হয়ে আছে। কিন্তু রাষ্ট্রের গন্তব্য কেউ যেন ঠাহর করতে পারছে না। গাফিলতি আর খেয়ালের ভুলে আমরা লক্ষ্যহীন কূলকিনারাহীন কোনো দিগন্তের দিকে ছুটে চলেছি। কিন্তু যে নাগরিকরা আমাদের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষমাণ, তাদের সামনে আরও ঘন অন্ধকার নেমে আসছে।
এ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল অনেকদিন ধরেই। তার পেছনে কাজ করেছে সরকারের অপশাসন-দুঃশাসন আর ফ্যাসিবাদী গণতন্ত্রবিরোধী তৎপরতার ফলে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সারা পৃথিবী অগ্রাহ্য করেছে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই যারা বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হয়ে বসেছেন, তাদের হাতে কেউ নিরাপদ থাকতে পারে না। নিরাপদ নেইও। প্রথম দিকে ক্ষমতা জবরদখলকারী এই সরকার বলেছিল বটে, ঐ নির্বাচন ছিল কেবলই নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আশা করা গিয়েছিল, শিগগিরই বোধকরি তারা একটি সকলের অংশগ্রহণমূলক নতুন নির্বাচন দেবে। কিন্তু ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সেরকম ইচ্ছা তাদের নেই। ফ্যাসিবাদের ধর্মও তাই। তারা ক্রমেই মুখোশ খুলে ফেলে এখন আপন চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে। তারা এখন বলতে শুরু করেছে, তারা উন্নয়নে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে নয়। আর দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়ে এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার প্রধান বলেছেন, তারা মৌলিক অধিকারে নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
এতে যা হবার তাই হয়েছে। সরকার এখন পরিপূর্ণ ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিরোধী দল দমন, গুম-খুন, হাজারে হাজারে মামলা দিয়ে লাখ লাখ সরকারবিরোধীকে আসামী করা, সভা সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নানা কৌশলে হরণ করা এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ফ্যাসিবাদী অভিলাষ পূরণের সহযোগী হিসেবে লাখ লাখ লুঠেরা তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজার, ব্যাংক লুট, কুইক রেন্টাল, বেতন বৃদ্ধি, দায়মুক্তির মাধ্যমে সে বাহিনীর আকার কেবলই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতাহীন আইনপ্রণেতারা আদমপাচার-ড্রাগের ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এদের মধ্যে অনেকে আবার বন্দুকবাজ। নিজ নির্বাচনী এলাকার লোকদের শায়েস্তা করার জন্য কিংবা নিতান্তই খেয়ালের বশে যখন তখন বিনা কারণে যাকে তাকে গুলী করে বসছেন। এজন্য এ পর্যন্ত কারও বিচার হয়নি। দেখা যাক, সুন্দরগঞ্জের এমপি শুটার লিটনের কী বিচার হয় ৯ বছরের শিশু সৌরভকে অকারণে গুলী করে হত্যার চেষ্টার জন্য।
এরকম একটি ফ্যাসিবাদী শাসন যেখানে থাকে, সেখানে সহজেই আত্মরক্ষার্থে চরমপন্থার উদ্ভব ঘটা বিচিত্র নয়। সেটাই অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। মানুষ যখন স্বাভাবিক পথে বিচার পায় না, কিংবা সরকার যখন বিচার পাবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, তখন মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেবার প্রবণতা বাড়ে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ পথ ধরেই সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে অস্ট্রেলিয়া জানায়, বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়দের জন্য নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। এর আগে বিদেশীদের যারাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সরকার তাদেরই একহাত নিতে কসুর করেনি। তারও আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমা অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতদের অশালীন ভাষায় গালাগাল দিতেও সরকার দ্বিধা করেনি। সরকারের কথাবার্তায় মনে হয়েছে, তারা বোধকরি পৃথিবীতে নয়, ভিন্ন কোনো গ্রহে অবস্থান করছে।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যখন নিরাপত্তার প্রশ্ন তুললো, তখন সরকার বিষয়টাকে একেবারে পাত্তাই দিতে চাইলো না। তবে অস্ট্রেলিয়া তাদের গোয়েন্দা রিপোর্টে অনড় থাকলো। আর শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া টিমের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করল তারা। এত সরকারের গোস্বার অন্ত থাকলো না। তারা এই গোয়েন্দা রিপোর্টকে ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া টিম বাংলাদেশ সফর বাতিল করে দেয়ার মাত্র দু’দিন পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার সময় কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত গুলশান এলাকায় আততায়ীর গুলীতে খুন হন ডাচ এনজিওতে কর্মরত ইটালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার। ঐ হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত, সন্দেহ নেই। কারণ যেখানে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়, ঘটনার সময়ে সে সড়কের স্ট্রিট লাইট বন্ধ ছিল। হত্যায় অংশ নিয়েছিল দুজন। তাদের আর এক সহযোগী মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কাছেই পাশের সড়কে। সে জায়গায়ও স্ট্রিট লাইট বন্ধ ছিল। সিজারকে চারটি গুলী করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। এরপর সড়কবাতিগুলো আবার জ্বলে ওঠে।
এ নিয়ে কূটনীতিক মহলে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর মাত্র ৫ দিন পর রংপুর শহরের নিকটবর্তী আলুটারি গ্রামে কৃষি গবেষণায়রত এক জাপানী নাগরিক হোসি কুনিও একইভাবে খুন হন। সেখানেও একটি মোটরসইকেলে এসেছিল তিন ঘাতক। একজন বসে ছিল মোটরসাইকেলে, অপর দুজন হোসির রিকশা আটকে তাকে গুলী করে হত্যা করে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকলে উঠে পালিয়ে যায়।
প্রথম ঘটনা গুলশান এলাকাজুড়ে স্থাপিত শতাধিক সিসি ক্যামেরার কোনোটাতেই ঘাতকদের স্পষ্ট ছবি ধরা পড়েনি। এটাই আমাদের জানিয়ে আসছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আর হোসির হত্যাকারীদেরও এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। ফলে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা অনেক দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের জন্য রেড এলার্ট জারি করে। অনেকে ঢাকার বাইরে কর্মরত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে ছুটিতে দেশে পাঠিয়ে দেয়। 
দুটি ঘটনায়ই হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস- এই মর্মে একটি প্রতিষ্ঠান খবর প্রচার করে। এত সরকার আরও রুষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারে আতিপাতি মন্ত্রীরা নানা টিপ্পনি কেটে বিদেশীদের জন্য অসম্মানজনক বক্তব্য দিতে থাকেন। রেড এলার্ট জারির কঠোর সমালোচনা করতে থাকেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী তো বলেই বসেছেন, যেসব দেশ ঢাকার বাইরে কর্মরত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে, সেসব নাগরিক যথাসময়ে কাজে যোগ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেভাবে বিএনপি-জামায়াত তথা বিরোধী দলকে তারা শায়েস্তা করছেন, যেন একইভাবে তারা শায়েস্তা করে দেবেন বিদেশীদেরও। দেখা যাক, আগে কোনোদিন যাদের নামও কেউ শোনেনি, রেকম ‘ব্যবসায়ী রাজনীতিক’দের হুমকি-ধামকিতে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সুড়সুড় করে ঐ বিদশী নাগরিকরা ৫ নবেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে কাজে যোগ দেন কিনা। তবে ঐ নাম না জানা ব্যবসায়ী মন্ত্রীর হুমকির পর জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকায় কর্মরত প্রায় অর্ধশত জাপানি নাগরিককে ঐচ্ছিক ছুটি দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে জাপান সরকার।
যদিও ইটালীর নাগরিক সিজার হত্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলে বসেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে বসে বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করেছেন। ফলে বিষয়টির ওখানেই মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর মতো দেশের প্রশাসনের সর্বোচর ব্যক্তি যেখানে বলেছেন, খালেদা জিয়াই হত্যাকারী, তাহলে তো আর কোনো তদন্তের দরকার করে না। ইন্টারপোলের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে ধরে এনে ফাঁসিতে লটকে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। তা না করে ঘটনার ২৪ দিন পর দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ায় প্রকাশের জন্য সূত্রহীন দুটি ছবি সরবরাহ করেছে। তাতে সিজারের হত্যাকারীদের শনাক্ত করার কিউ আছে। অর্থাৎ খালেদা জিয়াই খুনি, এই তত্ত্বে সরকারের পুলিশ বাহিনী কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তারা প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। 
গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহকৃত ঐ দুটি অস্পষ্ট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন তরুণ মোবাইল-কানে কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তার ডান পাশ দিয়ে হেড লাইট জ্বালিয়ে একটি গাড়ি যাচ্ছে আর বাম পাশ দিয়ে একটি গাড়ি আসছে। রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার লাইন হিসেবে যে সাদা দাগ টানা থাকে, সে দাগের মুখ সুচালো হয়ে গেছে, ভোঁতা নয়। কোনো পাগল ছাড়া কারও পক্ষে দুটি চলমান গাড়ি মাঝখান দিয়ে এভাবে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে চলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মোটরসাইকেলে যাচ্ছে দুজন তরুণ। এটি নাকি একটি সড়কের কোনো একটি বাড়ির নিজস্ব সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি। যদিও পুলিশ শুরু থেকে বলছিল, আশপাশের শতাধিক সিসি ক্যামেরার কোনো ফুটেজেই ঘাতকদের ছবি শনাক্ত করা যায়নি। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘাতকদের সম্ভাব্য গতিপথ নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রথমে ছবি এঁকে একটি ছক তৈরি করে। তারপর অগ্রসর হয়। আর গোয়েন্দাদের সরবরাহকৃত ছবি দুটিকে যত না ভিডিওচিত্র মনে হয়, তার চেয়েও বেশি মনে হয়, শিল্পীর আঁকা ছবি বলে।
সরকার দুই বিদেশী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে তার দায় যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপানো মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দেড় ঘণ্টা ধরে কথা বলেছেন। একইসঙ্গে তারা কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে এখনও বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়ে গেছে তাই বিদেশীদের সতর্ক থাকতে হবে। তারা বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চেয়েছেন, আসলে বিদেশী হত্যা নিয়ে কী হতে যাচ্ছে? তার কারণ সম্ভবত এই যে, সিজার ও হোসি উভয় খুনের ক্ষেত্রে সরকার কেবলই তথ্য-প্রমাণ ছাড়া বিরোধীদের দোষারোপ করে যাচ্ছে। ফলে তারা এও বলেছেন, আসলে তদন্ত নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আর তদন্তের অগ্রগতিই-বা কী? তারা একাধিকবার বলেছেন, তদন্ত হতে হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বলেছেন, তদন্ত এগিয়ে চলেছে এবং তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হবে।
বিদেশীদের নিরাপত্তার জন্য গুলশান এলাকায় এখন যুদ্ধাবস্থা। নিরাপত্তা বাহিনী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা চলছে হর্ন বাজিয়ে। পুলিশ-র‌্যার-বিজিবির গাড়ি বন্দুক উঁচিয়ে টহল দিচ্ছে। পথের মোড়ে মোড়ে আছে রায়ট কার। নিরাপত্তা চৌকিতে যানবাহনে চলছে ব্যাপক তল্লাশি। ঐ এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখন চরমে। তার মধ্যেই গত ১৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপির কিশোর ভাতিজা বিকাল সোয়া ৪টায় মদ পান করতে করতে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিল একটি এসইউভি জিপ। সে দুটি রিকশাকে দুমড়ে মুচড়ে পিষে দেয় ও দুজন পথচারীকে মারাত্মকভাবে আহত করে। সে পুলিশের হাতে আটকও হয়। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে ঘটনাস্থলেই এক শিশু নিহত হয়। এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ফোনে কারও সঙ্গে আলাপ শেষে পুলিশ অতিশয় তৎপর হয়ে ওঠে। গাড়িটি আটক করে তারা থানায় নিয়ে যায় বটে, তবে দুজন পুলিশ ঐ ঘাতক কিশোরকে তাদের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে নিরাপদ আস্তানায় পৌঁছে দেয়। সাবাশ, পুলিশের নিরাপত্তা! আহা কূটনৈতিক জোনে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কী আশ্চর্য নমুনা! এর সচিত্র প্রতিবেদন বেশ কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার ওপর সাধারণ নাগরিকরা মন্তব্য করতে শুরু করেন, একই কায়দায় তাভেলা সিজারের ঘাতকদের পুলিশ নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়নি তো? গুলশান এলাকায় ঘাতককে এভাবে নিরাপত্তা দেয়ায় বিদেশীদের সংশয়ের অবসান কীভাবে হবে? অতএব ঘন অন্ধকার থাকছেই। আমাদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘতর হচ্ছে। আমরা কেবলই আকুল কণ্ঠে আলোর দিশারীর কাছে জানতে চাইছি, রাত পোহাবার আর কত দেরি পাঞ্জেরি?
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads