শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

মোদির সফর : তিস্তার পানি পাচ্ছে না ঢাকা


কলকাতার শতবর্ষের বাংলা প্রাচীন দৈনিক ‘আনন্দ বাজার পত্রিকা’ লিখেছে যে আগামী ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ‘বাংলাদেশ বিজয়’ করতে যাচ্ছেন। দুই দিনের ঢাকা সফরে তিনি অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশ জয় করবে। এই দিকে বাংলাদেশ সরকার তথা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা দাবি করেছেন যে তাদের নেতা শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ‘ভারত জয়’ করেছেন। ভারতের রাজ্য সভায় এবং লোকসভায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ভারত বিজয় কমপ্লিট হয়েছে। ঢাকা সফরকালে নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা চুক্তিটির নীচে তাদের স্বাক্ষর প্রদান করলে শেখ হাসিনার ভারত বিজয় ফাইনাল হয়ে যাবে। এখন পাবলিক ভারত এবং বাংলাদেশের দাবি শুনে ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছেন। কে কাকে জয় করলো? ভারত বাংলাদেশ জয় করলো? নাকি বাংলাদেশ ভারত জয় করল? একসঙ্গে দুটি দেশই তো দুটি দেশ জয় করতে পারে না। একজন জয়ী হয়। দুইজন তো এক সাথে জয়ী হয় না। তবে আমেরিকানরা মাঝে মাঝে ইংরেজি ভাষায় নতুন নতুন শব্দ উদ্ভাবন করে। তেমনি একটি শব্দ হল Win win situation, অর্থাৎ কেউ হারেনি, সকলেই জিতেছে। আসুন, আমরাও দেখি, এবার কে হারলো আর কে জিতলো।
বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে যে, স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় পার্লামেন্টে পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের জয় হয়েছে। তবে যারা শিক্ষিত লোক এবং যারা অতীতের খবরাখবর রাখেন, তাদের মতে এখানে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো সাফল্য বা অর্জন নাই। স্থল সীমান্ত চুক্তি বা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি তো স্বাক্ষরিত হয়েছে সেই ৪০ বছর আগে, ১৯৭৪ সালে। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৪০ বছর আগেই ভারতকে তার পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে, অর্থাৎ বেড়ুবাড়ী হস্তান্তর করা হয়েছে। বিনিময়ে দহগ্রাম এবং আঙ্গরপোতা বাংলাদেশকে দিয়ে দেয়ার কথা। এই দুটি ছিাটমহলের মধ্যে যাতায়াতের জন্য রয়েছে যে তিন বিঘা করিডোর সেটি বাংলাদেশকে ভারতের স্থায়ীভাবে ইজারা দেয়ার কথা। ৪০ বছর ধরে ভারত বাংলাদেশকে ঘুরিয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে ছিটমহলও দেয়নি বা করিডোরও ইজারা দেয়নি। অবশেষে ৪০ বছর পর বাংলাদেশ তার পাওনা পেয়েছে। এখানে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগ সরকারের বিজয় হল কোত্থেকে? তাছাড়া এখানে বিজয়ের প্রশ্নই বা আসে কোত্থেকে? বিষয়টিকে আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে আসুন, ৪০ বছর পেছনে ফিরে যাই।
॥ দুই ॥
৬২ বছর ধরে ভারত বাংলাদেশের নিকট থেকে যে দু’টি বস্তু পাচ্ছিল না, যে দুটির বস্তুর সাথে বাংলাদেশের শুধু মাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থ নয়, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব জড়িত, সেই বিষয়টি মাত্র এক লহমায়, কলমের এক খোঁচায়, ভারতকে দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই দুটি বিষয় হলো (১) বাংলাদেশের প্রধান দুটি সমুদ্র বন্দর অর্থাৎ চট্টগ্রাম এবং খুলনার মংলা ভারতকে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া (২) ভারতকে তাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং বহু প্রতীক্ষিত করিডোর প্রদান। এতো বড় দুটি জিনিস ভারতকে শেখ হাসিনা দিয়ে দিলেন। অথচ বিনিময়ে তিনি কিছুই পেলেন না। স্বাধীনতার কিছু দিন পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান একটি কবিতার দুই লাইন প্রায়শই আবৃত্তি করতেন। ওই লাইন দুটি হলো-
রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি
দেবার কিছু নাই
আছে শুধু ভালবাসা
দিলাম আমি তাই
কিন্তু শেখ হাসিনা যা করলেন সেটি তার পিতার এই উক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার যা কিছু দেবার আছে তার সবকিছু তিনি ভারতকে উজাড় করে দিয়েছেন। বিনিময়ে ভারত তাকে কিছুই দেয়নি। ভারতের অন্তরে যাই থাকুক না কেন, মুখে দিয়েছে, তার পিতার ভাষায়- শুধু ভালবাসার কথামালা। বাংলাদেশ সবকিছু দিয়ে রিক্ত নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবকিছু পেয়ে ভারত সমৃদ্ধ হয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশকে দিয়েছে শুধু কথার ফুলঝুরি।
 বাংলাদেশের মাত্র দুটি সমুদ্র বন্দর। আওয়ামী সরকার এই দুটি সমুদ্র বন্দরই ভারতকে দিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে তারা ভারতের নিকট থেকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল এবং তিনবিঘা করিডোর আনতে পারেনি। অথচ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ি ইউনিয়ন ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই হস্তান্তরের বিরুদ্ধে সেই সময় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন জনাব আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বলে ১২ নম্বর দক্ষিণ দগগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল দুটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিনিময়ে ভারতের দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল দুটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা যাওয়ার রাস্তা হলো তিনবিঘা করিডোর। এটিও ভারতের দখলে। মুজিব ইন্দিরা চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, যেহেতু তিনবিঘা করিডোর দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতার প্রবেশ পথ, তাই এই করিডোরটি বাংলাদেশের কাছে স্থায়ীভাবে ইজারা দেয়া হবে। এই চুক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে কাজী মোখলেছুর রহমান নামক একজন আইনজীবী উচ্চ আদালতে মামলা করেন। তখন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। জনাব মোখলেছুর রহমানের মামলার মূল বিষয় ছিল এই যে, ভারত বিভাগের সময় দক্ষিণ বেরুবাড়ি ইউনিয়ন বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে। সংবিধান সংশোধন ছাড়া দেশের ভূখর্ড অন্য দেশের কাছে হস্তান্তরের কোন অধিকার সরকারের নাই। সুপ্রিম কোর্ট এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, একটি দেশের ভূখ-ের একটি অংশ অন্য দেশের কাছে হস্তান্তর করতে হলে পার্লামেন্টের অনুমোদন এবং সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়। যেহেতু এখনও এটি হস্তান্তরিত হয়নি তাই বিষয়টি অপরিপক্ক। এই যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২৮ নবেম্বর সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার মুজিব ইন্দিরা চুক্তি র‌্যাটিফাই করে এবং বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। অন্য দিকে ভারতের উচ্চ আদালতেও একই বিষয় নিয়ে মামলা হয়। ওই মামলায় ভারতীয় উচ্চ আদালত রায় দেয় যে দেশের ভূখ- অন্য দেশের কাছে হস্তান্তর করার অধিকার ভারত সরকারের নাই। তাই দগগ্রাম ও আঙ্গরপোতা বাংলাদেশকে দেয়া যাবে না। ফলে বেরুবাড়ি ভারত পেয়ে যায়, কিন্তু দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা বাংলাদেশ পায় না। শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংহের যৌথ ইস্তেহারের পর এগুলো বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু সেটারও কোন সুরাহা হয়নি। মাঝখানে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে দেয়া হলো।
॥ তিন ॥
বাংলাদেশের পত্রপত্রিকার এক্সক্লুসিভ খবরে প্রকাশ, পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ঢাকা আসছেন ঠিকই, কিন্তু তিস্তার ওপর এবার কোনো চুক্তি সই হবে না। আগামী বছর কলকাতা বিধান সভার ইলেকশন। ঐ ইলেকশনকে সামনে রেখে মমতা এবার ঢাকায় তিস্তা চুক্তি সই করছেন না। তাহলে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর থেকে বাংলাদেশ এবার কি পাচ্ছে? পর্যবেক্ষকগণের মতে কিছুই পাচ্ছে না। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশে ৫৪টি নদী রয়েছে যেগুলোকে বলা হয় অভিন্ন নদী। অর্থাৎ এগুলো ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে নেমে এসেছে। এ কারণে বাংলাদেশ হলো ভাটির দেশ। ভারত বিগত ৪০ বছর ধরে ওয়াদা করে আসছে যে এই ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশের সাথে আলোচনাক্রমে এবং বাংলাদেশের সম্মতিক্রমে ন্যায্যভাবে বণ্টন করা হবে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে।
এর আগে শহীদ জিয়ার আমলে পানি বণ্টন নিয়ে প্রথম চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। শহীদ জিয়ার চুক্তির তুলনায় শেখ হাসিনার চুক্তিটি অত্যন্ত দুর্বল এবং তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশকে কম পানি বরাদ্দ করা হয়। প্রথম চুক্তিতে তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলক কম পানিও ভারত বাংলাদেশকে দিচ্ছে না। এখন অবশিষ্ট ৫৩টি নদীর চুক্তি কবে হবে? এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে অত্যন্ত কঠিন সমস্যা হলো তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা। শেখ হাসিনা বিগত দিল্লী সফর করে যখন ৫০টি দফা ভারতকে দিয়ে আসেন তখন বাংলাদেশের মানুষ জানতে চেয়েছিলেন যে, তিস্তার পানি বণ্টনের কি হলো? সেই দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মণি বলেছিলেন যে, বাংলা ভারত যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠকেই অর্থাৎ মার্চ মাসের বৈঠকেই তিস্তার পানি বণ্টন সম্পর্কে একটি অস্থায়ী চুক্তি হবে। মার্চ মাসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তিস্তার পানি চুক্তি আর হয়নি।
এর পর ঢাকায় এলেন প্রণব বাবু। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই বললেন না। কিন্তু পরের দিন তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মণি বলেন যে, আগামী বছর নাকি এটি হবে। জনগণের প্রশ্ন : তাহলে এতো তাড়াহুড়ো করে করিডোর দিলেন কেন? কেন এতো সাত তাড়াতাড়িতে বন্দর দুটি দেয়া হলো? কেন আশুগঞ্জকে এমন ক্ষিপ্রতার সাথে ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে ঘোষণা করা হলো?
॥ চার ॥
বাংলাদেশের নিকট থেকে ভারত চায় দুটি জিনিস। একটি হলো বহুমুখী করিডোর। অপরটি হলো উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতা যোদ্ধাদেরকে ভারতীয় বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। নর্থ ইস্টের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ইতোমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের সাতটি রাজ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা অমূল্য ভূমিকা রেখেছেন। বাকি রইলো বহুমুখী করিডোর প্রদান।
বর্তমান প্রজন্ম তো দূরের কথা, তার আগের প্রজন্মও হয়তো ভারত বিভাগের অব্যবহিত পরের দিনগুলোর কথা ভুলে গেছেন। আজ যেটি বাংলাদেশ, সেটি স্বাধীনতার পূর্বে পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। আজ সেটার নাম পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু মানচিত্র বা ভূমির পরিবর্তন হয়নি। ভারত ভাগ হওয়ার পর আজকের বাংলাদেশ এবং সেদিনের পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সমুদ্র বন্দর ছিল না। অথচ সমুদ্র বন্দর ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য চলবে কিভাবে? কলকাতা ছিল অবিভক্ত বাংলার একমাত্র সমুদ্র বন্দর। পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রামে সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হবে। কিন্তু সে জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। পাকিস্তান সরকার তাই সেদিন ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিল, ‘অন্তত ৬ মাসের জন্য পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশকে কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হোক।’ ভারতে তখন ক্ষমতার দন্ড ছিল পন্ডিত নেহরু এবং সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের হাতে। নেহরু এবং প্যাটেল সেদিন সাফ জবাব দিয়েছিলেন, ‘৬ মাস তো দূরের কথা ৬ ঘণ্টার জন্যও পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’ যারা সেদিন ৬ ঘণ্টার জন্যও কলকাতা বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দেয়নি তারা আজ স্থায়ীভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় কোন মুখে? আর বাংলাদেশ সরকারই বা সেই অনুরোধ বিবেচনায় আনবে কেন?
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করতে হয়। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে বেসামরিক বিমান সার্ভিস চালু হয়নি। তৎকালীন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১৫০০ মাইল। বিমান ছাড়া দুই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা অসম্ভব ব্যাপার। যতদিন বিমান সার্ভিস গড়ে না উঠছে ততোদিন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ভারতের কাছে স্থলপথে ভারতীয় ভূখন্ডের ওপর দিয়ে আকাশ পথে ট্রানজিট সুবিধা চেয়েছিল পাকিস্তান। ভারত ট্রানজিট সুবিধার অনুরোধপত্র পাঠ নাকচ করে দেয়। আজ সেই ভারতকে এখন একই সুবিধা দিচ্ছে আওয়ামী সরকার। সেদিন ভারত বলেছিল যে, ট্রানজিট দিলে নাকি ভারতের নিরাপত্তা সমস্যা হবে। অথচ সেদিন পাকিস্তানের ছিল না কোনো সামরিক বাহিনী, ছিল না কোনো শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী, ছিল না কোনো শক্তিশালী কাউন্টার টেরোজিম সংস্থা। আজ ভারতের সেনাবাহিনী পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম। পৃথিবীর দেশে দেশে বিস্তৃত রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর নেটওয়ার্ক। সামরিক দিক দিয়ে এমন শক্তিশালী ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিলে দুর্বল বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টি হবে ভয়াবহ নিরাপত্তা সমস্যা। সুতরাং ট্রানজিট শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়। এটি মূলত কৌশলগত নিরাপত্তা সমস্যা।
তাই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, ট্রানজিট বা করিডোর দেয়ার আগে বাংলাদেশকে বিষয়টি নিয়ে হাজার বার ভাবতে হবে।
আসিফ আরসালান 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads