সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫

জাতীয় রাজনীতির প্রভাব ছাত্র রাজনীতিতে


‘ওরা বাস্টার্ড’- শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে মানবজমিন পত্রিকায়। ২৩ মে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, সিলেটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ দেখালেন অর্থমন্ত্রী। বললেন, ‘ওরা বাস্টার্ড, ওদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছি। কোনোভাবেই ছাড় নয়।’ এর আগে ছাত্রলীগের একাধিক বিতর্কিত ঘটনায় নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটেও বিব্রত হন অর্থমন্ত্রী। এমনকি মন্ত্রীর সমাবেশ স্থলেও ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর নতুন দু’টি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফের বেসামাল হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের সখ্যভাবের কারণে নগরজুড়ে নানা বিতর্কিত কাজ করেই চলেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ওই ছাত্রলীগের হাত থেকে রেহাই পেলেন না ছাত্রলীগের এককালের নেতা ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্তও।
সিলেটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত যে খুবই ক্ষুব্ধ তা তার ভাষা ব্যবহার থেকেও উপলব্ধি করা যায়। দেশের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলবেন- এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসতো শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা দেশেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের অনাকাক্সিক্ষত এমন চিত্রে দেশের যে কোনো সচেতন নাগরিকেরই ব্যথিত হওয়ার কথা। আমরা মনে করি, ছাত্রলীগ কিংবা কোনো দলকে ছোট করার লক্ষ্যে এ জাতীয় খবর তুলে ধরার মধ্যে তেমন কোনো কল্যাণ নেই। শুধু ছাত্রলীগ কেন, বিভিন্ন সময় আমরা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকতে দেখেছি। শুধু আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই যে এখন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে তা নয়, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। যে সমস্ত কর্মকা- ছাত্রদের সাথে যায় না, সেই সব কর্মকাণ্ডে ছাত্রনেতারা কীভাবে জড়িয়ে পড়ছে জাতীয় স্বার্থেই তা গভীরভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ এবং ব্লেমগেম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমরা জানি, জাতীয় রাজনীতির প্রভাব ছাত্র রাজনীতিতেও পড়ে থাকে। এক সময় তো মেধাবী এবং যোগ্য ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত থাকতো। তারা লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করতো, এমন কি জাতীয় প্রয়োজনে রাজনীতিতেও অবদান রাখতো। আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তখন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যেনতেনভাবে ব্যবহারের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত ছিলেন। তারা ছাত্রদের স্বার্থ যেমন দেখতেন, তেমনি দেখতেন জাতীয় স্বার্থও। ক্ষমতাকেন্দ্রিক বর্তমান রাজনীতিতে সেই সুবাতাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জাতীয় স্বার্থ ও আদর্শ, নিষ্ঠা এখন গৌণ হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মন্দ প্রভাবে ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা এখন নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে পদ-পদবী ও অর্থলিপ্সায় মত্ত হয়ে উঠেছে। ফলে তারা কাউকে মারতে, অপমান করতে কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাতে মোটেও কুণ্ঠিত হয় না। দেশের জনগণ তো দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চায় না, তারা চায় নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত, গণতান্ত্রিক রাজনীতি। কিন্তু তেমন আকাক্সক্ষা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতো যে ছাত্রসমাজ, তাদের চিত্রটাই বা কেমন? কালান্তরের এই সময়টায় আমাদের রাজনীতিবিদরা কি তাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন না? দায়িত্ব পালনের প্রশ্ন আসলে প্রথমেই তাকাতে হয় নিজের দিকে। আমাদের রাজনীতিবিদরা নিজের দিকে তাকিয়ে আত্মসমালোচনার দায়িত্ব পালন করে যদি রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে এগিয়ে আসেন, তাহলে তাদের আর কোনো সন্ত্রাসী বা তাঁবেদার বাহিনী পুষতে হবে না। তখন ছাত্র রাজনীতিও রাহুমুক্ত হয়ে আপন মহিমায় ঐতিহ্যের উজ্জ্বল ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে। আমাদের রাজনীতিবিদরা সময়ের দাবি পূরণে এগিয়ে আসেন কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads