শনিবার, ১৬ মে, ২০১৫

এমপিরা দপ্তরি নিয়োগ কর্তা, তাহলে ...


অতিসম্প্রতি একটি জাতীয় পত্রিকার খবর পড়ে সহসাই আমি হাঁপিয়ে উঠতে নিতান্তই বাধ্য হয়েছি। সেই সঙ্গে আশ্চর্যও কম হয়নি। হাঁপিয়ে উঠার কারণ, যে দেশে প্রাইমারি স্কুলে দপ্তরি নিয়োগ দিতে আইনপ্রণেতার (এমপি-সংসদ সদস্য) প্রয়োজন। সেই দেশে ওই স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে কিরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তির প্রয়োজন হতে পারে? অথবা কি বা যুক্তিতে দপ্তরি  নিয়োগে এমন ধারার প্রবর্তন করা হলো? এসব নানাবিধ অপ্রত্যাশিত প্রশ্নবানেও অনেকটাই জর্জরিত হয়েছি। আর আশ্চর্য হওয়ার পেছনে রয়েছে, এরশাদের শাসনামল বাদ দিলে এদেশে এমপিদের হাতে অতীতে কোনো ধরনের ‘নিয়োগ ক্ষমতা’ না থাকলেও এই প্রথম কমপক্ষে এমপিরা একটি নিয়োগ ক্ষমতা পেলেন। তাও আবার দপ্তরি! এই ক্ষুদ্র মানের নিয়োগ ক্ষমতা নিতেও আমাদের মাননীয় এমপি মহোদয়দের কি না কোনো ধরনের সংকোচবোধের খবর পরিলক্ষিত হয়নি। বরং ভেতরে ভেতরে তারা যে খুশিতে দিশেহারা হননি, তাও কিন্তু নয়। নিয়োগ ক্ষমতা ঘোষণার পর থেকে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দপ্তরি নিয়োগে সমান তালে প্রতিযোগিতাই তার প্রমাণ বহন করে। এ থেকে অনুধাবন করা যেতে পারে আমাদের দেশের এমপি সাহেবরা মহান মনের মহান রাজনীতিবিদ। কারণ তারা দপ্তরি নিয়োগ ক্ষমতা পেয়েও মহা খুশি। তাদের খুশি তো হওয়ারই কথা। দেশের আইনপ্রণেতা হওয়া সত্ত্বেও এতদিন তাদের ভাগ্যে নিয়োগ ক্ষমতাই ছিল না। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের দাবিদার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অশেষ কৃপায় দীর্ঘদিন হতে নিয়োগ ক্ষমতাবঞ্চিত ভাগ্যবিড়ম্বনা এমপিরা অন্তত তো দপ্তরি নিয়োগ ক্ষমতা পেলেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দপ্তরি নিয়োগও এমপিদের হাতে’ শিরোনামে শীর্ষ খবরে ওঠে আসে দেশের প্রায় ১৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদে লোক নিয়োগের ক্ষমতা পেয়েছেন এবার এমপিরা। প্রায় ৩৭ হাজার দপ্তরি নিয়োগের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে এসে নীতিমালা সংশোধন করে এমপিদের ওই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আগের দুই ধাপের নিয়োগে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হলেও এবার তা বাদ দেয়া হয়েছে। একইভাবে আগের দুই ধাপে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে অভিযোগ করার সুযোগ রাখা হলেও এবার সেই সুযোগও রাখা হয়নি। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা।
আগের দুই ধাপের নিয়োগের ক্ষেত্রে সারা দেশেই ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। আর নতুন নীতিমালার আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দলীয়করণের অভিযোগও যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের ৩৬ হাজার ৯৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে দপ্তরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। প্রথম বছর নিয়োগ দেয়া হয় ১২ হাজার। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিয়োগ দেয়া হয় আরো ১২ হাজার। এ বছর নিয়োগ দেয়ার কথা ১২ হাজার ৯৮৮ জন।
আগের দুই বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাছাই ও নিয়োগ কমিটি ছিল তিন সদস্যের। নিয়োগ কমিটি সভাপতি ছিলেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি। সদস্য ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়কেন্দ্রিক। চলতি বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আগেই সংশোধন করা নিয়োগ নীতিমালার গেজেট গত ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে।
নয়া নীতিমালায় বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে আরো তিনজন সদস্য যুক্ত করে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) করা হয়েছে সভাপতি। এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দুজন প্রতিনিধিকে সদস্য রাখা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিনিধির পরিবর্তে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেরাও সরাসরি কমিটিতে উপস্থিত থাকতে পারবেন। বিগত দুই বছরের কমিটিকে বৈধ আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে শারীরিকভাবে যোগ্য তিনজনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বরাবর পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত নীতিমালায় বাছাই ও নিয়োগ কমিটিকে তিনজনের একটি তালিকা তৈরি করে দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্য থেকে এমপি যাকে নিয়োগের সুপারিশ করবেন তাকেই নিয়োগ দিতে হবে।
নয়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বাছাই ও নিয়োগ কমিটি বৈধ আবেদনকারীদের মধ্য থেকে তিনজনের একটি তালিকা প্রস্তুত করিবেন। তালিকাভুক্ত তিনজনই সমান যোগ্যতাসম্পন্ন বলিয়া গণ্য হইবেন। উক্ত তালিকা হইতে মাননীয় সংসদ সদস্য একজনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করিবেন। মাননীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে। সংসদ সদস্যের সুপারিশ প্রাপ্তির পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত প্রার্থীর নাম সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পত্রযোগে জানাইয়া দিবেন।
আগের নীতিমালায় নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করার এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা কমিটিকে তা নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সংশোধিত নীতিমালায় এ রকম অভিযোগ দায়েরের সুযোগ বাতিল করে উপজেলাকেন্দ্রিক রাখা হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
বলা বাহুল্য যে, আগে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপি সাহেবদের কর্তৃত্ব পরোক্ষ ছিল, এখন সরাসরি হলো। আগে যখন সরাসরি ক্ষমতা ছিল না, তখনো এমপিদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না নিয়োগ কমিটির, এখন তো আর এমপি সাহেবদের কথার বাইরে নিয়োগ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। সবমিলে বলা যায়, ‘এমনিতেই নাচস্তি কানাই, আরও পেলো ঢোলের বাড়ি’। ফলে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রতিনিধি যুক্ত হওয়ায় ব্যাপকহারে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হলো।
নীতিমালা সংশোধন করে এমপিদের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা কম। বলা যায়, এটি একটি ভয়ানক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকে আরো পঙ্কিল করে তুলবে। কারণ নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দিলেও অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়। কিন্তু রাজনীতিবিদদের নিয়োগ কমিটিতে ঢোকানোর পর অনিয়ম বেড়ে যায়। সাংবাদিকতায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এসব প্রক্রিয়া থেকে রাজনীতিবিদদের দূরে রাখা দরকার।
দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদে নিয়োগপ্রার্থীদের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার (যেখান থেকে সহজলভ্য) স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। তবে ক্যাচমেন্ট এলাকার কোনো প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ক্যাচমেন্ট এলাকার পার্শ্ববর্তী ক্যাচমেন্ট এলাকার প্রার্থীকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। প্রার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। প্রার্থীর সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস। নিয়োগের ক্ষেত্রে সাইকেল চালনায় পারদর্শী, সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ প্রার্থীদের নির্বাচন করতে হবে। তাদের বেতন-ভাতা হবে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা।
আগের দুই দফায় দপ্তরি পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সারা দেশেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি-আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। এতে জানা যায়, কোথাও বয়স জালিয়াতি করা হয়। কোথাও অন্য এলাকার প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোথাও আবার অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা দায়িত্ব পালন না করে শুধু বেতন উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওইসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এসব অনিয়ম নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আদালতে মামলাও হয়েছে। রংপুরের বদরগঞ্জের ১৭টি বিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার তিনটি ও নাচোলের দুটি বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েও মামলা হয়েছে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় দপ্তরি পদের চাকরিপ্রার্থীদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে গুনতে হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেও এ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ জমা পড়েছে বলে গণমাধ্যমে জানা গেছে।
এছাড়া কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ‘এমপি এনামুলের ডিওতে ৫০ দপ্তরি নিয়োগ: ২ কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ’ এবং ‘রাজশাহীর ১৯০ প্রাথমিক বিদ্যালয়: দপ্তরি পদে নিয়োগেই তিন লাখ টাকা!’ শিরোনামে গত বছর পৃথক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব জ্যোতির্ময় বর্মণ আগের দুই দফায় দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গণমাধ্যমে জানান, বিগত দুই বছর অনেক অভিযোগ জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। নয়া নীতিমালায় অভিযোগ দায়েরের সুযোগ না রাখা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপি সাহেবদের সুপারিশই চূড়ান্ত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেই। তাই সেই সুযোগ রাখা হয়নি। (তথ্য সূত্র: কালেরকণ্ঠ : ০৪.০৫.২০১৫)
আমরা মনে করি, এমপিদের বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে হঠাৎ করে নীতিমালা সংশোধন উদ্দেশ্যমূলক বলেই প্রতীয়মান। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কিছুতেই যৌক্তিক বলে গণ্য হতে পারে না বলে কমপক্ষে আমাদের বোধগম্য নয়। আগের দুই ধাপে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে অভিযোগের সুযোগ রাখা হলেও এবার এর ব্যত্যয় ঘটেছে। অর্থাৎ বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখানে অনিয়মের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই তোলা যাবে না। যদিও স্বৈরশাসকখ্যাত এরশাদের আমলে এ ধারার নিয়োগ প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দাবিদার সরকারের অধীনে সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেতই বটে।
আজ বলা বাহুল্য যে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানাবিধ অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বড়ই লক্ষণীয়। সেগুলো প্রশমনের কথা নাই থাক, বিপরীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম আর দুর্নীতি গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদে আগের দুই দফায় নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। এমন অনেককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা দায়িত্ব পালন না করে শুধু বেতন তুলে নিচ্ছেন। এসব অনিয়ম নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আদালতে মামলাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক তদারকি ও নজরদারি নিশ্চিত করা। এর বদলে যা করা হলো, তা প্রকারান্তরে জবাবদিহিমুক্ত একটি স্বেচ্ছাচারী নীতিমালা। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাঙ্গণেও রাজনীতির নেতিবাচক প্রকোপ যে বৃদ্ধি পাবে না তা অবিশ্বাসই বটে। রাজনীতির লক্ষ্য মহৎ হলেও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি অস্বচ্ছতা ও পঙ্কিলতাকেই তীব্র করে এমনটি ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে।
সর্বত্র যেভাবে নীতি ও সুশাসনের দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার পরিণাম কিছুতেই শুভ হতে পারে না। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা হীরক রাজার দেশ নয়; এখানে নাগরিকের সমানাধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। নিয়োগে অনিয়ম শুধু অন্যায্যতাই প্রতিষ্ঠা করে না, তা সমাজে বৈষম্য ও বিভেদও সৃষ্টি করে। আমরা সব স্তরের নিয়োগে স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করছি।
জানুয়ারি মার্কা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ব্যতিরেকে দেশের চরম অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যেও ক্ষতাসীন মহাজোট স্তবকরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন এই বলে যে, যেই সেই নয় এবার এমপিরা দপ্তরি নিয়োগকর্তা!
পরিশেষে বলতে চাই, মাছিমারা কেরানী নিয়ে যত হাসিঠাট্টাই করা হোক না কেন। মাছিমারা যে কত কষ্টের, তা কেবল যিনি মাছি মারেন, তিনিই ভালো জানেন। কাজেই দপ্তরি নিয়োগের ক্ষমতা তো আর একপোয়া চালের কথা নয়। বরং এই দপ্তরি পদটি একেবার সরকারি চাকরি। এমন ভাবনা থেকে সরকার বাহাদুরের পক্ষ থেকে যদি মাননীয় এমপি মহোদয়দের হাতে দপ্তরি নিয়োগ ক্ষমতা দেওয়া হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে নিতান্তই আমাদের তেমন কিছু বলার নেই। তবে এতটুকু না বললে হয়তো সত্যের কাছে বিবেক নির্ঘাত পরাজয়বরণ করবে। সেটা হচ্ছে, এমপিদের দপ্তরি নিয়োগকর্তা করায় এনালগ জামানায় ডিজিটাল স্বেচ্ছাচারিতার আরও একটি জলজ্যান্ত উদাহরণের জন্ম দিলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালি মাঠে গোলদাতা গণতান্ত্রিক লীগবাদী সরকার। এত সব পরেও হয়তো লীগ স্তবকরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন, ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় ১৪৬ জন বিনা প্রতিযোগিতার এমপিরা মাছিমারার কেরানী নয়; বরং দপ্তরি নিয়োগকর্তা! 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads