বুধবার, ২০ মে, ২০১৫

এটা গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায়ও পড়ে না


সরকার দেশের সবগুলো সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃত্ব দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা একদিকে ২০ দলীয় জোটের নির্বাচিত মেয়রদের সাজানো মামলায় ফাঁসাচ্ছেন, অন্যদিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি পুলিশকে দিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে দাখিল করাচ্ছেন চার্জশিট। একযোগে চলছে স্থানীয় সরকার আইনের অপব্যবহার করে মেয়রদের সাময়িক বরখাস্ত ও অপসারণ করার কার্যক্রম। সিরিয়াল বা ক্রমিক না মেনে প্রতিটি স্থানে প্যানেল মেয়র হিসেবে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের। গত সোমবার দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এবং গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে ঢোকানোর এবং সাময়িক বরখাস্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। কুমিল্লা ও বরিশালের মেয়রদের বিরুদ্ধেও জোর তৎপরতা চলছে। উল্লেখ্য, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে আটটির মধ্যে রংপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সব কর্পোরেশনের মেয়র পদেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। ২৩৩টি কাউন্সিলর পদের মধ্যেও সংখ্যাগরিষ্ঠ তথা ১২৬ আসনে জিতেছিলেন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৮০ জন কাউন্সিলর। ক্ষমতায় আসতে পারলেও বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করেছে। ২০১০ সালের জুন মাসে প্রথম অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে জিতেছিল বিএনপি। মেয়র হয়েছিলেন মঞ্জুরুল আলম। তাকেও শেষদিনগুলোতে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, তিনি এমনকি কর্পোরেশন অফিসেও যেতে পারেননি। চট্টগ্রামের পর পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছিলেন বিরাট ব্যবধানে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের জুন ও  জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ছিল শোচনীয়। সব মিলিয়ে দেশের আটটি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে দুটি ছাড়া সবগুলোতেই মেয়রের আসনে জিতেছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা। ব্যতিক্রম ছিল রংপুর ও নারায়ণগঞ্জ। রংপুরে জাতীয় পার্টি জিতেছিল, অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে জিতেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভি। সেখানে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। অর্থাৎ দলগতভাবে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছিল। এভাবে প্রতিটি নির্বাচনেই ২০ দলীয় জোট বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। মূলত তখন থেকেই ফন্দি এঁটে এসেছেন ক্ষমতাসীনরা, যার বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। পাঁচ সিটির মেয়ররা শুধু নন, একই অবস্থায় পড়েছেন কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও- যারা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। প্রত্যেককেই কয়েক মাস ধরে পুলিশের ধাওয়ার মুখে রাখা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে ডজনের বেশি নাশকতা ও খুনের মামলা দিয়েছে পুলিশ। অনেকে এরই মধ্যে কারাগারেও স্থান পেয়েছেন। এর ফলে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
আমরা সব সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃত্ব দখলের লক্ষ্যে সরকারের কৌশল ও স্থানীয় সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দখল নেয়া। ভোট জালিয়াতি ও সন্ত্রাসের পথে সে দখল তারা নিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা চাচ্ছেন সকল সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিজেদের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। জনসেবা ও উন্নয়ন ধরনের বাগাড়ম্বর করা হলেও অন্তরালের উদ্দেশ্য আসলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দলীয় লোকজনের পকেট এবং দলের তহবিল স্ফীত করা। এজন্যই নির্বাচনে আবারও কুপোকাত হওয়ার পরিণতি এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। সর্বাত্মক দমন-নির্যাতন চালানোর এবং মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাজানো মামলায় ফাঁসানোর মধ্য দিয়ে এমন এক ত্রাসের রাজত্ব তারা কায়েম করেছেন যাতে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কেউ এমনকি প্রার্থী হওয়ারও সাহস না পান। যাতে ফাঁকা মাঠ পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেই দখল ও তছনছ করতে চাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। আমরা এই গণবিরোধী নীতি-উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং মনে করি, গণতন্ত্রের ব্যাপারে আদৌ সদিচ্ছা থাকলে ক্ষমতাসীনদের উচিত ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত ২০ দলীয় জোটকে ধাওয়ার মুখে রাখার পরিবর্তে অবিলম্বে দমন-নির্যাতন এবং গ্রেফতার ও মামলার অভিযান বন্ধ করা। সরকারকে একই সাথে মেয়র ও কাউন্সিলরসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যেককে যার যার পদে পুনর্বহাল করতে হবে। আমলা এবং দলীয় লোকজনকে মেয়র বা প্রশাসকের পদে বসানোর চিন্তা বাদ দিয়ে সুযোগ দিতে হবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads