গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আলোচনা সভায় সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রধান অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী রোহিঙ্গা বিতাড়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাশের দেশের মুসলমানদের আমরা আশ্রয় দেই না, এর চেয়ে মর্মান্তিক কি হতে পারে। আমরা কেমন করে ভুলে যাই, একাত্তর সালে এক কোটি মানুষ আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম, এটা কেন আমাদের মনে আসে না।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের এই অগ্রহণযোগ্য অবস্থান এবারেই প্রথম নয়; ২০১২ সালে যখন বার্মার সামরিক সরকার মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালায় তখনও নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশি হিসেবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ এবং আরাকান বা রাখাইন প্রদেশের মাঝখানে প্রবাহিত হয়েছে নাফ নদ। তাই প্রায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান যখন নিজ দেশ থেকে নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয় তখন নাফ নদ দিয়ে তারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। গতবারে অর্থাৎ ২০১২ সালে যেমনটি ঘটেছিল এবারও ঠিক তাই ঘটছে। নাফ নদের এপারে পাহারা দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং নৌবাহিনীর কোষ্ট গার্ড। সরকারের এই অবস্থান দেখে গতবার ৩২ জন বুদ্ধিজীবী এক বিবৃতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ থেকে ৪ বছর আগে ২০১২ সালে বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তারা। ঐ আবেদনে বলা হয়েছিল, “এই দাঙ্গার যারা শিকার (বিবৃতির ভাষায় ভিকটিম) হয়েছেন তারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় চাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত পূর্নবিবেচনা করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, “আমাদের গৌরবময় ইতিহাস এই বিবৃতি দিতে আমদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমারা বিশ্বাস করি যে, মানবাধিকার অবিভাজ্য। এক দেশে কোনো জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় তাহলে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের যারা শিকার হয় তাদের দুঃখ র্দুদশা ভাগাভাগি করার দায়িত্ব অন্যদেশের, বিশেষ করে সেই দেশটি যদি প্রতিবেশী হয়।” বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা একথা স্মরণ করছি যে, জাতি হিসাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের নিকট থেকে আমরা অনুরূপ সুবিধা ভোগ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ কালে আমরা দেখছি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উদ্বাস্তু মাইগ্রেশন। যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তারা ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী’।” বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, “এডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, ড. রওনক জাহান, এডভোকেট সিগমা হুদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, ড. শাহদিন মালিক, ড. ইফতেখার উজ্জামান, প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ, কামাল লোহানী, শাহীন রেজা নুর, মোহম্মদ কামাল উদ্দিন প্রমুখ।” বিবৃতিটি ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য পত্রিকায়, ২০১২ সালের ১৭ই জুন রবিবার।
॥ দুই ॥
মাঝখানে ৪ বছর পার হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। বরং ২০১২ সালে যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল ৪ বছর পর ২০১৬ সালে সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকায় রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন বৌদ্ধ এবং বর্মী সেনাবাহিনীর যে অব্যাহত হামলা চলছে সেটাকে একদিকে বলা যায় গণহত্যা অন্যদিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত রোববার ও সোমবার ৩৪ রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। এ কারণেই সেনা অভিযানে তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে শত শত রোহিঙ্গা। বিজিবির নজরদারি কঠোর হওয়ায় বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না রোহিঙ্গারা। দেশটিতে সেনা অভিযানে ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এরা বর্তমানে বন-জঙ্গল, সাগরকূল ও সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদের ওপারে রোহিঙ্গাদের ভিড় জমেছে। প্রতি রাতেই সীমান্ত পার হয়ে এরা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, আটক ৬৬ মিয়ানমার নাগরিককে খাবার ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকারি বাহিনীর বর্বরতা ও মগ দস্যুদের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে নাফ নদে ঝাঁপ দিয়ে আসা ৬৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গত বুধবার তাদের আটক করা হয়। এ সময় পাচারের সহযোগী হিসেবে চার স্থানীয় বাংলাদেশীকেও আটক করে পুলিশ। আটককৃত নারীরা এ সময় আর্তকণ্ঠে জানায়, ‘যাদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি দয়া করে আমাদেরকে তাদের হাতে তুলে দেবেন না। আপনারা আমাদের গুলী করে মেরে ফেলুন এতে আমাদের কষ্ট কম হবে। কারণ মিয়ানমারের বর্বর বাহিনী আমাদের নৃশংসভাবে হত্যা করবে।
আটককৃতরা মিয়ানমারের মংডু কেয়ারীপাড়ার বাসিন্দা। মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ায় গত কয়েক দিন লতাপাতা খেয়ে তারা বনজঙ্গলে অবস্থান করছিল। তারা পাহাড়ি পথ হেঁটে নাফনদী পর্যন্ত এসে নৌকায় উনচিপ্রাং সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে।
তারা বলেন, কতটুকু অসহায় হলে মানুষ নিজ জন্মভিটা ছাড়ে তা আমাদের অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝবে না। এখানকার (বাংলাদেশ) সরকার কারাগারে দিলেও তো প্রাণে বাঁচব। ওখানে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে পশুর মতো আমাদের হত্যা করা হচ্ছে। তারা আরো জানান, রাখাইন প্রদেশ মংডুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারার ঘটনা সে দেশের নীতিনির্ধারক মহলের নতুন কৌশল।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন। এটা ছাড়া মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় হবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার প্রবাহ টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মি. ইমামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হতে পারে? জবাবে তিনি মিয়ানমারের ওপর স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, অতীতে অনেক দেশেই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এইচ টি ইমাম বলেন, ‘’পরমাণু অস্ত্র নিয়ে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’ ‘এখন মিয়ানমারের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে সম্ভবত তাদের বোধোদয় হবে। নইলে হবে না।’
জনাব এইচ টি ইমাম যা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মত হতে পারে। এই মত বাংলাদেশের জনমতেরই প্রতিধ্বনি করে। কিন্তু সরকারের ভুমিকায় উপদেষ্টার এই মত মোটেই প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারন দেখা যাচ্ছে যে সরকারি বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে গ্রেপ্তার করছে এবং তারপর বর্মী সেনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। বর্মী সেনারা ওদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং গুলি করে মারছে অথবা পুড়িয়ে মারছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশায় সহানুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই নিশ্বাসে তিনি বলেছেন যে, এই সমস্যা সমাধানের দ্বায়িত্ব বর্মী সরকারের। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি করার জন্য তিনি দাবি করেছেন। এই ভয়াবহ সমস্যায় মৌখিক একটি দাবি জানালেই সবকিছু করা হল না। সেই দাবি মোতাবেক যাতে কাজ হয় সেজন্য বাংলাদেশকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
॥ তিন ॥
যখন বাংলাদেশে সংকটের সৃষ্টি হয় তখন যেহেতু ভারত ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশী তাই সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনে লক্ষ লক্ষ শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। তখন ভারত বলেছিল যে, যেহেতু ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী তাই বাংলাদেশের এত বড় ঘটনায় ভারত নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন যে এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক ভাবেই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী এই কথা বলে নীরবে বসে থাকেননি। তার বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরবর্তী ঘটনাবলী সকলেই জানেন। বাংলাদেশকেও এক্ষেত্রে ভারতের মত ভূমিকায় নামতে হবে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশকেই জাতিসংঘের দুয়ারে করাঘাত করতে হবে। জাতিসংঘে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে বহু দেশের সমর্থন পাওয়া যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক দেশ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বর্মী সরকারের জাতিগত নিধন অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে।
বার্মার ডিফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট হলেন অং সান সু চি। শান্তির জন্য তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যার দেশে সামরিক বাহিনী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় এত বড় অশান্তির সৃষ্টি করেছে সেখানে এই শান্তির দেবী পরোক্ষভাবে গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। মিশাল হোসেন নামক লন্ডনের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ গ্রহণ করেছিলেন। ঐ ইন্টারভিউয়ে তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশার কথা সু চির কাছে তুলে ধরেন। পরে সু চি জানতে পারেন যে ঐ সাংবাদিক ছিলেন একজন মুসলমান। তখন তিনি বলেন, আগে যদি তিনি জানতেন যে ঐ সাংবাদিক একজন মুসলমান, তাহলে তিনি তাকে ইন্টারভিউ দিতেন না। এমনই মুসলিম বিদ্বেষ সু চির। এমন একজন মুসলিম বিদ্বেষীকে কিভাবে নোবেল প্রাইজ দেয়া হল সেটি এখন বিরাট জিজ্ঞাসার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, গতস্য শোচনা নাস্তি। কিন্তু এখন যখন তার মুসলিম বিরোধী চেহারা উন্মোচিত হয়েছে তখন শান্তির নোবেল পুরস্কার ধারণ করার কোনো অধিকার তার আর নাই। নোবেল কমিটির উচিত সু চির নিকট থেকে নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়া। ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ একটি লিখিত আবেদন করেছেন এবং সু চির নোবেল প্রাইজ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। রোহিঙ্গা মুসলমানদের এত বড় মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ নীরব থাকতে পারে না। ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন বা ওআইসিকে এবং একই সাথে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ বলতে পারে যে, বর্মী সামরিক জান্তার আচরণে যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড় হচ্ছে তার ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব সমাজের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশ যৌক্তিকভাবে এ কথা বলতে পারে যে, রোহিঙ্গারা বংশানুক্রমিকভাবে রাখাইন বা আরাকান তথা বার্মার অধিবাসী। অথচ ১৯৮২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। যারা জন্মগতভাবে বর্মী নাগরিক কোনো এক সামরিক সরকারের মুখের কথায় সেই নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা যায় না। সুতরাং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, অবিলম্বে তাদেরকে দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারসহ তাদেরকে তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার দিতে হবে। এটিই হলো রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের এই অগ্রহণযোগ্য অবস্থান এবারেই প্রথম নয়; ২০১২ সালে যখন বার্মার সামরিক সরকার মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালায় তখনও নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশি হিসেবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ এবং আরাকান বা রাখাইন প্রদেশের মাঝখানে প্রবাহিত হয়েছে নাফ নদ। তাই প্রায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান যখন নিজ দেশ থেকে নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয় তখন নাফ নদ দিয়ে তারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। গতবারে অর্থাৎ ২০১২ সালে যেমনটি ঘটেছিল এবারও ঠিক তাই ঘটছে। নাফ নদের এপারে পাহারা দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং নৌবাহিনীর কোষ্ট গার্ড। সরকারের এই অবস্থান দেখে গতবার ৩২ জন বুদ্ধিজীবী এক বিবৃতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ থেকে ৪ বছর আগে ২০১২ সালে বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তারা। ঐ আবেদনে বলা হয়েছিল, “এই দাঙ্গার যারা শিকার (বিবৃতির ভাষায় ভিকটিম) হয়েছেন তারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় চাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত পূর্নবিবেচনা করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, “আমাদের গৌরবময় ইতিহাস এই বিবৃতি দিতে আমদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমারা বিশ্বাস করি যে, মানবাধিকার অবিভাজ্য। এক দেশে কোনো জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় তাহলে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের যারা শিকার হয় তাদের দুঃখ র্দুদশা ভাগাভাগি করার দায়িত্ব অন্যদেশের, বিশেষ করে সেই দেশটি যদি প্রতিবেশী হয়।” বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা একথা স্মরণ করছি যে, জাতি হিসাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের নিকট থেকে আমরা অনুরূপ সুবিধা ভোগ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ কালে আমরা দেখছি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উদ্বাস্তু মাইগ্রেশন। যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তারা ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী’।” বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, “এডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, ড. রওনক জাহান, এডভোকেট সিগমা হুদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, ড. শাহদিন মালিক, ড. ইফতেখার উজ্জামান, প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ, কামাল লোহানী, শাহীন রেজা নুর, মোহম্মদ কামাল উদ্দিন প্রমুখ।” বিবৃতিটি ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য পত্রিকায়, ২০১২ সালের ১৭ই জুন রবিবার।
॥ দুই ॥
মাঝখানে ৪ বছর পার হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। বরং ২০১২ সালে যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল ৪ বছর পর ২০১৬ সালে সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গত কয়েকদিনের পত্র-পত্রিকায় রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন বৌদ্ধ এবং বর্মী সেনাবাহিনীর যে অব্যাহত হামলা চলছে সেটাকে একদিকে বলা যায় গণহত্যা অন্যদিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত রোববার ও সোমবার ৩৪ রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। এ কারণেই সেনা অভিযানে তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে শত শত রোহিঙ্গা। বিজিবির নজরদারি কঠোর হওয়ায় বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না রোহিঙ্গারা। দেশটিতে সেনা অভিযানে ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এরা বর্তমানে বন-জঙ্গল, সাগরকূল ও সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদের ওপারে রোহিঙ্গাদের ভিড় জমেছে। প্রতি রাতেই সীমান্ত পার হয়ে এরা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, আটক ৬৬ মিয়ানমার নাগরিককে খাবার ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকারি বাহিনীর বর্বরতা ও মগ দস্যুদের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে নাফ নদে ঝাঁপ দিয়ে আসা ৬৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গত বুধবার তাদের আটক করা হয়। এ সময় পাচারের সহযোগী হিসেবে চার স্থানীয় বাংলাদেশীকেও আটক করে পুলিশ। আটককৃত নারীরা এ সময় আর্তকণ্ঠে জানায়, ‘যাদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি দয়া করে আমাদেরকে তাদের হাতে তুলে দেবেন না। আপনারা আমাদের গুলী করে মেরে ফেলুন এতে আমাদের কষ্ট কম হবে। কারণ মিয়ানমারের বর্বর বাহিনী আমাদের নৃশংসভাবে হত্যা করবে।
আটককৃতরা মিয়ানমারের মংডু কেয়ারীপাড়ার বাসিন্দা। মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ায় গত কয়েক দিন লতাপাতা খেয়ে তারা বনজঙ্গলে অবস্থান করছিল। তারা পাহাড়ি পথ হেঁটে নাফনদী পর্যন্ত এসে নৌকায় উনচিপ্রাং সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে।
তারা বলেন, কতটুকু অসহায় হলে মানুষ নিজ জন্মভিটা ছাড়ে তা আমাদের অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝবে না। এখানকার (বাংলাদেশ) সরকার কারাগারে দিলেও তো প্রাণে বাঁচব। ওখানে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে পশুর মতো আমাদের হত্যা করা হচ্ছে। তারা আরো জানান, রাখাইন প্রদেশ মংডুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারার ঘটনা সে দেশের নীতিনির্ধারক মহলের নতুন কৌশল।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন। এটা ছাড়া মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় হবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার প্রবাহ টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মি. ইমামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হতে পারে? জবাবে তিনি মিয়ানমারের ওপর স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, অতীতে অনেক দেশেই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এইচ টি ইমাম বলেন, ‘’পরমাণু অস্ত্র নিয়ে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’ ‘এখন মিয়ানমারের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে সম্ভবত তাদের বোধোদয় হবে। নইলে হবে না।’
জনাব এইচ টি ইমাম যা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মত হতে পারে। এই মত বাংলাদেশের জনমতেরই প্রতিধ্বনি করে। কিন্তু সরকারের ভুমিকায় উপদেষ্টার এই মত মোটেই প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারন দেখা যাচ্ছে যে সরকারি বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে গ্রেপ্তার করছে এবং তারপর বর্মী সেনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। বর্মী সেনারা ওদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং গুলি করে মারছে অথবা পুড়িয়ে মারছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশায় সহানুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই নিশ্বাসে তিনি বলেছেন যে, এই সমস্যা সমাধানের দ্বায়িত্ব বর্মী সরকারের। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি করার জন্য তিনি দাবি করেছেন। এই ভয়াবহ সমস্যায় মৌখিক একটি দাবি জানালেই সবকিছু করা হল না। সেই দাবি মোতাবেক যাতে কাজ হয় সেজন্য বাংলাদেশকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
॥ তিন ॥
যখন বাংলাদেশে সংকটের সৃষ্টি হয় তখন যেহেতু ভারত ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম এবং অভিন্ন প্রতিবেশী তাই সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনে লক্ষ লক্ষ শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। তখন ভারত বলেছিল যে, যেহেতু ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী তাই বাংলাদেশের এত বড় ঘটনায় ভারত নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন যে এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক ভাবেই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী এই কথা বলে নীরবে বসে থাকেননি। তার বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরবর্তী ঘটনাবলী সকলেই জানেন। বাংলাদেশকেও এক্ষেত্রে ভারতের মত ভূমিকায় নামতে হবে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশকেই জাতিসংঘের দুয়ারে করাঘাত করতে হবে। জাতিসংঘে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে বহু দেশের সমর্থন পাওয়া যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক দেশ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বর্মী সরকারের জাতিগত নিধন অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে।
বার্মার ডিফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট হলেন অং সান সু চি। শান্তির জন্য তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যার দেশে সামরিক বাহিনী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় এত বড় অশান্তির সৃষ্টি করেছে সেখানে এই শান্তির দেবী পরোক্ষভাবে গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। মিশাল হোসেন নামক লন্ডনের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ গ্রহণ করেছিলেন। ঐ ইন্টারভিউয়ে তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশার কথা সু চির কাছে তুলে ধরেন। পরে সু চি জানতে পারেন যে ঐ সাংবাদিক ছিলেন একজন মুসলমান। তখন তিনি বলেন, আগে যদি তিনি জানতেন যে ঐ সাংবাদিক একজন মুসলমান, তাহলে তিনি তাকে ইন্টারভিউ দিতেন না। এমনই মুসলিম বিদ্বেষ সু চির। এমন একজন মুসলিম বিদ্বেষীকে কিভাবে নোবেল প্রাইজ দেয়া হল সেটি এখন বিরাট জিজ্ঞাসার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, গতস্য শোচনা নাস্তি। কিন্তু এখন যখন তার মুসলিম বিরোধী চেহারা উন্মোচিত হয়েছে তখন শান্তির নোবেল পুরস্কার ধারণ করার কোনো অধিকার তার আর নাই। নোবেল কমিটির উচিত সু চির নিকট থেকে নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়া। ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ একটি লিখিত আবেদন করেছেন এবং সু চির নোবেল প্রাইজ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। রোহিঙ্গা মুসলমানদের এত বড় মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ নীরব থাকতে পারে না। ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন বা ওআইসিকে এবং একই সাথে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ বলতে পারে যে, বর্মী সামরিক জান্তার আচরণে যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড় হচ্ছে তার ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব সমাজের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশ যৌক্তিকভাবে এ কথা বলতে পারে যে, রোহিঙ্গারা বংশানুক্রমিকভাবে রাখাইন বা আরাকান তথা বার্মার অধিবাসী। অথচ ১৯৮২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। যারা জন্মগতভাবে বর্মী নাগরিক কোনো এক সামরিক সরকারের মুখের কথায় সেই নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা যায় না। সুতরাং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, অবিলম্বে তাদেরকে দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারসহ তাদেরকে তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার দিতে হবে। এটিই হলো রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান।