মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

আইনের শাসন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ


শেখ মুজিবের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘আমরা আইনের শাসন চাই না, বঙ্গবন্ধুর শাসন চাই’। তার কথাটা মেনে মেনে নিতে সমস্যা হতো না, যদি সে সময় দেশে সুশাসন থাকতো। দার্শনিক প্লেটোর মতে, ‘When the prince is virtuous, law are unnecessary; when prince is not virtuous, law is useless.’ অর্থাৎ ‘শাসক যখন হবেন ন্যায়বান, তখন আইনের শাসন নিষ্প্রয়োজন। আবার যখন হবেন দুর্নীতিপরায়ণ তখন আইন হবে নিরর্থক’।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় দার্শনিক প্লেটোর কথাটির বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে সংবিধান আছে, আইন আছে, দণ্ডবিধি আছে, আছে কার্যবিধিও। কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ নেই। সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা থাকলেও দেশে জনগণের শাসন সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সংসদ থাকলেও তার কোনো কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। সর্বত্রই আইন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লংঘনের মহোৎসব চলছে। আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে গর্ববোধ ও উল্লাস প্রকাশ করা হচ্ছে। সাধারণত পেশাদার অপরাধীরা অপরাধ ও আইন লঙ্ঘন করে দানবীয় উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, যাদের হাতে রাজদ-, দেশে সাংবিধানিক ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাদের দায়িত্ব তারাই এ বিষয়ে উদাসীন। এখানে আইন, রাষ্ট্র, সংবিধান ও আইনের শাসন উপেক্ষিত প্রায়।
যাহোক ‘মনি’ অধ্যায়ের শেষ হলেও অন্য নামের অধ্যায় এখনও চলমান। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ দেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীন করেছে, তাই তারাই এ দেশ শাসন করবে’। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীদের এ দেশে ঠাঁই নেই।
সংবিধান সকল দেশেরই সর্বোচ্চ আইন। আওয়ামী লীগকে তো সব সময়ই সংবিধান নিয়ে জিকির-আজকার করতে শোনা যায়। সংবিধানের কথা বলেই তারা এখন পর্যন্ত নির্দলীয় সরকারের দাবিকে উপেক্ষা করে চলছে। কিন্তু সংবিধানের কোন ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ কথা বললেন তা কারো কাছে বোধগম্য নয়। দেশ শাসনের একচ্ছত্র অধিকার যদি আওয়ামী লীগেরই হয়ে থাকে তাহলে দেশে সংবিধান, গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের নামে প্রহসন কেন? এসব প্রশ্নের জবাব কি? না তিনি প্রয়াত মণির কথারই প্রতিধ্বনি করছেন? এখন তো বঙ্গবন্ধু নেই। তাহলে কি দেশে এখন আইনের শাসনের পরিবর্তে অন্য নামে সে শাসন চলবে? আওয়ামী লীগ তো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করেছে। তবুও কি এই সংবিধানে আওয়ামী লীগ নেতার কথার স্বীকৃতি মেলে?
দেশের সংবিধান অনুসায়ী প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হলেও ক্ষমতাসীনরা তার ধার ধারছে না। তারা বোধ হয় এখন মানব থেকে মহামানবে পরিণত হয়েছেন। সে কথার প্রমাণ মেলে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য থেকে। তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করা যাবে না। তিনি বলেন, যেমনিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করা যাবে না, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনারও সমালোচনা করা যাবে না।
সংবিধানে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার শুধু স্বীকৃতই নয় বরং মৌলিক অধিকার তাদের। আমাদের সংবিধানেও চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩৯ ধারায় এ নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
1. Freedom of thought and conscience is guaranteed.
2. Subject to any reasonable restrictions imposed by law in the interests of the security of the state, friendly relations with foreign states, public order, decency or morality, or in relation to contempt of court, defamation or incitement to an offence-
(a) The right of every citizen to freedom of speech and expression;
And
(b) Freedom of the press, are guaranteed.
৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইন দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ-সাপেক্ষে-
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে অধ্যাপক লাস্কি বলেন, (Right in fact are those conditions of social life without which no man can seek in general to be himself at his best.)
অর্থাৎ অধিকার সমাজ জীবনের সেসব অবস্থা যা ব্যতীত মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।
শাসন কাজে জনগণের সক্রিয় অংশ গ্রহণই গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও জনমতের কোন মূল্যায়ন করছে না। এমন কি জনগণের মত প্রকাশের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হলেও সরকার সে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করছে। সংবিধানের ৩৭ ধারায় বলা হয়েছে, (Every citizen shall have the right to participate in public meetings and processions peacefully and without arms, subject to any reasonable restrictions imposed by law in the interests of public order or public health.)
অর্থাৎ জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও সোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জনমত অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের দেশে তা পুরোপুরি উপেক্ষিত। যদিও তা সুশাসনের জন্য খুবই জরুরি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনমত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘Successful administration in modern state depends largely upon the way in which public openion is formed and expressed.’
অর্থাৎ যেভাবে জনমত সংগঠিত ও প্রকাশিত হয়, তার মাত্রার উপরেই সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা অনেকাংশে নির্ভর করে।
সংবিধানে বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত হলেও ক্ষমতাসীনরা তা মানতে চাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভাষায় যেহেতু দেশ স্বাধীন আওয়ামী লীগই করেছে তাই দেশ শাসন করার একচ্ছত্র অধিকার আওয়ামী লীগেরই। আবার যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে সমালোচনার উর্দ্ধে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা বিষয়টির অসারতা প্রমাণের জন্য সংবিধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও প্রচলিত নিয়ম-নীতির আশ্রয় গ্রহণ করবো।
আমাদের দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় (Preamble) বলা হয়েছে যে, (‘...Further pledging that it shall be a fundamental aim of the state to realize through the domestic process a socialist society, free from exploitation-a society in which the rule of law, fundamental human rights and freedom, equality and justice, political, economic and social, will be secured for all citizens.)
অর্থাৎ...আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা-সেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, (‘We, the people of the united states, in order to from a more perfect union, establish justice, insure domestic tranquility, provide for the common defense, promote the general welfare and secure the blessings of liberty to ourselves and our posterity, do ordain and establish this constitution for the United States of America.’)
অর্থাৎ ঐক্য, ন্যায়, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের কল্যাণ এবং আমাদের এবং আমাদের বংশধরদের স্বাধীনতার আশির্বাদের জন্য আমরা আমেরিকাবাসীগণ সংবিধান লিপিবদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত করেছি।
অধ্যাপক গার্নারের মতে, শাসন বিভাগের কার্যাবলীকে মোটামোটি পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। (এক) অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিষয়ক (Administrative), (দুই) পররাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও বৈদেশিক সম্মন্ধ (Diplomatic), (তিন) সামরিক ব্যবস্থা (Military), (চার) বিচার বিষয়ক ক্ষমতা (Judicial) ও (পাঁচ) আইন বিষয়ক ক্ষমতা (Lagislative)।
শাসন বিভাগের কোনো শাখায় সরকারের সাফল্য দৃশ্যমান নয়। বর্তমানে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সকল সময়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে। বৈদেশিক সম্পর্কে এখন প্রায় বন্ধুহীন। কথায় কথায় সরকার বন্ধুপ্রতীম দেশের সম্মানিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না সম্মানিত কূটনীতিকরাও। যদিও জিএসপি সুবিধা নেয়ার জন্য সরকারকে বারবার তাদেরই দারস্থ হতে হচ্ছে।
সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাথে সরকারের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আন্তর্জাতিক এ সংস্থার বিরুদ্ধে যথেচ্ছ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সাথে কোনো সরকারের পক্ষে ঝগড়া বাধানো কূটনৈতিক ব্যর্থতারই দলিল।
বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। জনগণের শেষ ভরসা স্থল। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীই যখন বিচারবিভাগের প্রতি কর্তৃত্ব পরায়ণ হয়ে ওঠেন তখন দেশের মানুষের আর বিচার পাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিচারকদের প্রতি জামিন সম্পর্কে একটি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। কিন্তু জামিন বিষয়ে তিনি যা বললেন তা কি বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ নয়? মনে রাখতে হবে, জামিন দেয়া না দেয়া সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আমাদের বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। একইভাবে আমাদের এ আস্থাও থাকতে হবে যে, আমাদের বিচার বিভাগ থেকে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে। তাই জামিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের প্রতি অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
দেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ২১ হাজার ৬৮০টি মামলা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচীব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমলীগের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা রয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সারা দেশে ৮ হাজারেরও বেশি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সরকার বলছে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ বিরোধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারে সরকারের বক্তব্য কৌশলগত হলেও জাতিকে হতাশ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি বলেছেন, দেশে কোনো রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বা তাদের কোনো ধরনের হয়রানিও করা হচ্ছে না। যারা সন্ত্রাসী, দৃর্বৃত্ত ও যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদেরকেই গ্রেফতার করছে পুলিশ। যা সরকারের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিধ্বনি। আইজিপি মহোদয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে রাজনৈতিক। ফলে তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে চাকরি বিধি লঙ্ঘন ও পেশাগত অসদাচারণ করেছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।
রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অগ (Ogg) বলেন, (‘The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff)
অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাবৃন্দ হবে সুদক্ষ, পেশাদারী, অধিনস্ত কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সাথে যাদের কোনো সংশ্রব নেই।
বিশ্বের সকল জাতিই যখন উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহনের প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের এই পশ্চাদমুখিতা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। সরকারের দলের অনেক নেতাই আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতেই বীরবলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার দম্ভে নিজেদেরকে অতিমানব ভাবতে শুরু করেছেন। তাই তাদের কাছে দেশ, জাতি, সংবিধান, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুশাসন কোনো মুখ্য বিষয় নয় বরং তাদের ক্ষমতায় আসল বিষয়। তাই তারা বোধহয় নিজেদেরকে অপ্রতিরোধ্য মহাবীরই ভাবতে শুরু করেছে। যেমন গীতিকবি মুর্শিদা গানে মহাবীরদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন-
আর এক সাজিল মর্দ নামে মদন ঢুলি
আশি মণ তামা তার ঢোলের চারটা খুলি।
আর এক সাজিল মর্দ নামে আইন্দা-সাইন্দা
আশি মণ তামাক লয় লেইংটির মধ্যে বাইন্দা।
তুগুলী-মুগুলী সাজে তারা তারা দুই ভাই 
ঐরাবতে সাইজা আইল আজদাহা সিপাই।।
কিন্তু বীরগাঁথা ও ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়। তা অবশ্যই তাদেরকে ভাবতে হবে। আর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী দিনের জন্য। দেশের মানুষ তাদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads