শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর রিপোর্ট : নিখোঁজ হওয়া ১৯ ব্যক্তির মর্মস্পর্শী কাহিনী


গত শুক্রবার ৪ ডিসেম্বর ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টারে’ একটি করুণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠার প্রধান সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত এই সংবাদটির শিরোনাম ছিল, FORGED DISAPPEARANCE OF EIGHT / Families numbed by state’s silence. অর্থাৎ ৮ ব্যক্তির অন্তর্ধান / রাষ্ট্রের নীরবতায় পরিবারগুলো বাকরুদ্ধ। এই খবরে ৮ জন যুবকের ছবি ছাপা হয়েছে। এরা হলেন (১) মাসুম (২) তানভির (৩) আদনান (৪) রানা (৫) আল আমিন (৬) রাসেল (৭) সুমন এবং (৮) কাওসার। এরা সকলেই তাদের নিজ নিজ পরিবারের কর্তা। কেউ বা পিতা, কেউ বা স্বামী, কেউ বা পরিবারের প্রধান ব্যক্তি। ২ বছর হলো এরা নিখোঁজ। এদের মাতা, স্ত্রী বা পুত্র কন্যারা আজও ব্যকুল প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন, কবে তাদের প্রিয় মানুষটি তাদের মাঝে ফিরে আসবে এবং তাদের পরিবার আবার হাসি খুশিতে ভরে উঠবে। কিন্তু এমন সুখের মূহুর্ত আর কোনো দিন কি ফিরে আসবে এসব পরিবারে?
৫ বছরের শিশু কন্যা আরওয়া। ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো পিতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছবির দিকে বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই শিশু কন্যাটি গত দুই বছর হলো তার পিতাকে দেখেনি এবং তার পিতার আদর পায়নি। অবুঝ শিশু জানে না, তার পিতা এভাবে হারিয়ে গেল কেন। যখন তার পিতা হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। তারপরেও সে অত্যন্ত হালকাভাবে অনুভব করে তার পিতার অনুপস্থিতি। আরওয়া কাঁদতে ভুলে গেছে। তার খালা সানজিদা ইসলাম বলেন, সে না কাঁদলেও আমরা বুঝতে পারি, তার মধ্যে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ডেইলি স্টারের ঐ রিপোর্টে আরও প্রকাশ, সুমন ছাড়াও আরও ৭ জন যুবক রাজধানী ঢাকা থেকে ২০১৩ সলের ডিসেম্বর হতে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের পরিবার বর্গ অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সকলেই র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাবের বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার হয়েছেন। অভিযোগে প্রকাশ, সুমনসহ ৭ জনকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হতে র‌্যাব উঠিয়ে নিয়েছে। অন্য দুজনকেও ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর শাহিনবাগ থেকে রাত ৮টা হতে রাত ২টার মধ্যে উঠিয়ে নেয়া হয়। গত বছরে এসব হতভাগ্য পরিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানব বন্ধন করেছে। তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। দাবি করেছে, তারা কোথায় আছে, সেটি সরকার বলুক এবং তাদেরকে ফেরত দিক। সুমনের মতো প্রতিটি পরিবারেরই রয়েছে করুণ কাহিনী।
মাসুমের বড় ভাই আরজু বলেন, “যখনই আমরা শুনি যে তাদের ব্যাপারে প্রেস ক্লাবে একটি সমাবেশ হবে তখন থেকেই আমার আম্মা ওদের মুক্তির দিন গুনতে থাকেন। আমরা বাড়ি বদল করেছি। বদল করার সময় মাসুমের জামা কাপড় আলাদা একটি বাক্সে রাখা হয়েছে। যখনই আমার আম্মা এসব কাপড় চোপড় দেখেন তখনই তিনি কাঁদতে শুরু করেন।” নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়ে তাদের পরিবারবর্গ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছেন। তারা মানব বন্ধন করেছেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা সরকারের নিকট থেকে জানতে চেয়েছেন যে তাদের প্রিয় জনেরা কি কারাগারে আছেন, নাকি বন্দী আছেন, নাকি মারা গেছেন। কিন্তু তাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও শালিশ কেন্দ্রের’ পরিচালক নূর খান বলেন, এই ৮ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। যদি তারা কারাগারে বন্দী থাকেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। অথবা তাদেরকে মুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বলপূর্বক অন্তর্ধানের একটি কেসেও সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। একদিকে সরকার বলছেন যে, দেশটি নাকি খুব ভাল চলছে। আবার অন্যদিকে আমরা বলপূর্বক অপহরণের সংবাদও শুনতে পাচ্ছি। এই দুটি খবর উৎকটভাবে পরস্পর বিরোধী।
॥দুই॥
পারিবারিক সূত্রের উল্লেখ করে ডেইলি স্টারের ঐ রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকা মহানগরী বিএনপির ৩৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সুমন গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই বাসার বাইরে থাকছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি তার কাজিন তানভিরের বাসায় থাকতেন। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাসেল, মাসুম, রানা এবং আল আমিনের সাথে সুমন বসুন্ধরা ব্লক-১ এ তানভিরের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে র‌্যাবের ১৫ জন সদস্য সেখানে উপস্থিত হয় এবং ৬ জনকে উঠিয়ে নেয়। এই খবর দিয়েছেন সুমনের বোন সানজিদা। সেখানে ছিল একজন নির্মাণ শ্রমিক। সে সমগ্র ঘটনা নিজ চোখে দেখেছে। তার কাছ থেকেই এই খবরটি জানতে পেরেছেন সানজিদা। রিপোর্টে আরও বলা হয়, চলতি সালের ২৬ জানুয়ারি আল আমিনের পরিবার ভাটারা থানায় কতিপয় অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। আল আমিনের আত্মীয় ইয়াকুব বলেন যে, আজ পর্যন্ত তাদের মামলার কোনো অগ্রগতি নাই। এজন্য তারা চরমভাবে হতাশ। আল আমিনের পরিবারের এখন যাচ্ছে চরম দুঃসময়। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছেন না। তার অপর এক আত্মীয় বলেছেন যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বত্রই তারা গিয়েছেন। কিন্তু কোথাও তারা কোনো খবর পাননি।
রংপুর থেকে ঢাকা এসেছিলেন রানা। তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এজন্য তিনি রাজধানীতে তার বোনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। আদনান এবং কাওসারকে শাহিনবাগ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় বলে পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়। আদনানের পরিবার জানান যে, ৭ থেকে ৮ জনের একটি দল তাদের বাসায় প্রবেশ করে এবং আদনানকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যে, আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তারা নিয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই তাকে ফেরত দেয়া হবে। তাদের সাথে ছিল দুটি গাড়ি। একটি গাড়িতে খুব স্পষ্টভাবে লেখা ছিল র‌্যাব। আদনানের পিতা বিশ্বাস করেন যে, তার ছেলে আজও বেঁচে আছে এবং যেকোনো দিন তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু আজ ঠিক ২ বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু আদনান আর ফিরে আসেনি। র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল তুহিন মাসুদ বলেন যে, তাদেরকে উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে র‌্যাব জড়িত নয়। তবে ভিকটিমদের পরিবারের কাছ থেকে অন্তর্ধানের অভিযোগ তারা পেয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাইনি। অবশ্য এখনও তারা তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আইন ও শালিশ কেন্দ্রের তথ্য মোতাবেক ২০১৩ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৬৮ ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ৮৮ ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়। এদের মধ্যে পরবর্তীকালে ২৩ ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। ৪২ ব্যক্তি আজ পর্যন্ত ফিরে আসেনি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর, এই ১০ মাসে ৪৭ ব্যক্তিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে। এই ২ বছর ১০ মাসে মোট ২০৩ তিন ব্যক্তিকে বলপূর্বক অপহরণ করা হয়েছে। এসব তথ্য আইন ও শালিশ কেন্দ্রের।
॥তিন॥
গত শনিবার ৫ ডিসেম্বর ডেইলি স্টার এবং ‘প্রথম আলো’সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে গুম হয়ে যাওয়া ১৯ ব্যক্তির পরিবারের করুণ আর্তি ছাপা হয়েছে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমবেত হন এবং নিজেদের হৃদয়ের হাহাশ্বাস তুলে ধরেন। একটি জাতীয় দৈনিকে রিপোর্টটি শুরু হয়েছে এভাবে, “কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আর কাঁদতে পারছি না। অনুরোধ করবো, আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলুন। প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের কান্না শুনবেন না। আমরা আমাদের ভাইকে আর ফেরত চাই না।” এভাবেই কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা সাংবাদিকদের জানান, গুম হওয়া সেলিম রেজা পিন্টুর বোন মুন্নী। গুম হওয়া নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা সামছুদ্দিন বলেন, “আমার একটাই পরিচয়। গুম হওয়া সন্তানের পিতা। এই পরিচয় আর কারও হোক তা কামনা করি না। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া- আমাদের সন্তানকে ফেরত দিন। অথবা মেরে যেখানে রাখা হয়েছে, সেই মাটিটা আমাকে দেখিয়ে দিন। যেন মাটিটা ছুঁয়ে সান্ত¡না পেতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সুযোগটা চাই।”
গুম হওয়া পারভেজের শিশু কন্যা হৃদির আকুতি, সে বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়, পার্কে হাঁটতে চায়। অবুঝ শিশুর অবুঝ আবদার, যে তার বাবাকে এনে দেবে সে তাকে তার জমানো চকলেট দিয়ে দেবে। মাইকের সামনে হৃদি বলে যাচ্ছিল তার সব কষ্টের কথা। নিখোঁজ বাবার জন্য তার চোখে ঝরছিল ফোটা ফোটা পানি। হৃদি হকসহ গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কান্না আর আহাজারি উপস্থিত সবাইকে বেদনার্ত করে তোলে। অনেকেই কেঁদে ফেলেন ঝরঝর করে। সবাই স্বজনদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়া যাবে।
২০১৩ সালের নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গুম হয়েছিলেন ১৯ জন তরুণ। গুম হওয়া এসব মানুষের জীবিত অথবা তাদের কবরের সন্ধান পাওয়ার দাবি নিয়ে গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসেছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। সন্তানহারা ১৯ পরিবারের কান্নাকাটি ও আহাজারির মাধ্যমেই সবার সন্তান ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান। পরিবারের সদস্যরা এসব গুমের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়ই তা অস্বীকার করা হয়েছে।
॥চার॥
প্রেস ক্লাবে স্বজনহারাদের আর্তনাদ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এভাবে, “কেউ বলতে বলতে কাঁদছেন, কেউ শুনতে শুনতে। সবার চোখ ভেজা। বক্তব্যের চেয়ে কান্নার শব্দই বেশি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জড়ো হয়েছিলেন ১৯ জন গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনেরা। তাঁরা তাঁদের নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আর্তি নিয়ে এভাবে কান্নাভেজা চোখে দুই বছর ধরেই কথা বলে যাচ্ছেন।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। এমনকি নিখোঁজ ব্যক্তিরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, সে তথ্যও স্বজনদের জানায়নি কেউ। স্বজনেরা বলছেন, তাঁদের অনেককেই প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে। এখন সবাই অস্বীকার করে যাচ্ছে।
হারিয়ে যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে বেশির ভাগই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে ডিসেম্বরে এই ১৯ জন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হন, কয়েকজনকে পরিবারের সদস্যদের সামনে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।”
অপর একটি পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয় এভাবে, ২০১৩ সালের ২৪ নবেম্বর গুম হওয়া খালিদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জেলগেট থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর পরিচয়ে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। এখনও ফেরত পাইনি। আমার দুই বছরের সন্তান পিতা ছাড়া সময় পার করেছে। আমার সন্তানের সেই শৈশব ফিরিয়ে দিন।’
একই বছরের ২ ডিসেম্বর গুম হওয়া সোহেলের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী রাজু বলে, ‘বাবা আমার জন্মদিনের ফুল কিনতে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেননি। বাবা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অচল। বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমার এখন জন্মদিন পালন করতে ভাল লাগে না। মনে হয় ফুল আনতে গিয়ে যদি আরো কেউ হারিয়ে যায়। প্রধান মন্ত্রীকে অনুরোধ করবো আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
॥পাঁচ॥
দৈনিক প্রথম আলোর রিপোর্ট মোতাবেক সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনেক গুমের ঘটনা ঘটে। মূলত ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মীরা এর শিকার হন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা ওরফে পিন্টুর বোন রেহেনা বানু বলেন, “তখন ওর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর, শীতের রাত। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসায় ঢুকে বিছানা থেকে তাকে টেনে হিঁচড়ে তোলে। জামাও পরতে দেয়নি। তারা বলেছিল, ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু এরপর কোথাও কোনো খোঁজ মিলল না। তার অপেক্ষায় আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।”
প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের যে রিপোর্ট ডেইলি স্টারে ছাপা হয়েছে সেই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৮ নবেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে এই ১৯ ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা গত বছরের ২৮ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেইন গেট থেকে খালিদ এবং সম্রাট নামক দুই ব্যক্তিকে উঠিয়ে নেয়। সাদা পোশাক পরিহিত ডিটেক্টিভরা গত বছরের ২ ডিসেম্বর শাহবাগ এলাকা থেকে জহিরুল, পারভেজ, চঞ্চল এবং শহীদকে উঠিয়ে নেয়। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মাহবুব এবং ফরহাদকে অপহরণ করা হয়। সেলিমকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিরা পল্লবী থেকে উঠিয়ে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান লিটন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন। পরে আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। কোনো না কোনো দিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads