বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

গত দশ মাসে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড


গত মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বহুদলীয় রাজনীতি বলতে যা বুঝায় তা নেই। তারপরও চলমান স্থানীয় সরকারের পৌরসভাগুলির নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচনের সুবাদে কতকগুলি দল নির্বাচনে সীমিত আকারে কিছু রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। মূলত আওয়ামী লীগ বা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট অন্য কোন সংগঠন ছাড়া কারোর পক্ষে স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ অত্যন্ত কম। অন্য কোন দলের রাজনৈতিক সহিংসতা, মারামারি ও হানাহানি প্রায় নেই। কিন্তু সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে সন্ত্রাসের কোন কমতি দেখা যায়নি। বর্তমান বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তার নব্বই ভাগ এই আওয়ামী মহল একক কৃতিত্বের দাবিদার, তাতে কোন সন্দেহ  নেই এবং তাদের সমকক্ষ কেউ আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই। গত মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দশ মাসে কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় নিহত নিরানব্বই জন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের হাতে ঊননব্বই জন, বিএনপির হাতে তিন, এমএনপি হাতে এক, সন্তু লারমার জেএসএস-এর হাতে চার এবং জামায়াতের হাতে দু’জন নিহত বলে অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের হাতে নিহত চল্লিশ জন : ১১ মার্চ চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় সকাল ১১ টায় স্থানীয় চরকাঠি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবদল নেতা মুক্ত শেখকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় এবং মারধর করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ মার্চ মুক্তা শেখ মারা যায়। ১৮ মার্চ পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে চাঁদা ও জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার গুলীতে ছাত্রলীগ নেতা বাঁধন খন্দকার মারা যায়। ১৩ মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে জেরে যুবলীগ নেতা মনু মিয়া মারা যায়, ২৯ মার্চ যশোরের মনিরামপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় দু’গ্রুপের হামলায় মনোয়ার হোসেন নামে একজন কর্মী নিহত হয়েছে, ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার নিউ ইস্কাটনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদিকা পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির হঠাৎ এলোপাতাড়ি পিস্তলের গুলীতে আহত হয় রিক্সা চালক আব্দুল হাকিম ও সিএনজি অটোরিক্সা চালক ইয়াকুব আলী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা যথাক্রমে ১৫ ও ২৩ এপ্রিল মারা যায়। এই ঘটনায় তার গাড়ির ড্রাইভার ইমরান ফকির আদালতে এমপির ছেলের দায় স্বীকার করেছে। ১৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মধ্যে তেল সরবরাহকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল মারা যায়। ১০ মে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে সজীব সিকদার নামে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে। ১৪ মে কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল গ্রুপ ও ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ার গ্রুপের মধ্যে রাত দশটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সংঘর্ষে গোলাগুলী চলে এবং সংঘর্ষ চলাকালে গাড়ি চাপায় মাসুম সরকার নামে একজন ছাত্রলীগ কর্মী মারা যায়। ২৩ মে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস খানের লাঠির আঘাতে দোকানি আব্দুল জলিল নিহত হয়েছে। ১ জুন ফেনীর সোনাগাজীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগে এমপির ইন্ধনে নিহত হয়েছে যুবলীগ নেতা আজিজুল হক। এ ঘটনায় এমপির ভাই ও ভাতিজাসহ তেত্রিশ জনের নামসহ এবং আরো দশ-বারজনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। ২ জুন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরশেদ মাতুব্বর (যুবলীগ) ও শাহাজান ঘরামী (দোকানী) নামে দু’জন নিহত হয়েছে। ৮ জুন বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে খুন হয় ডাবলু মিয়া নামে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। ২২ জুন নওগাঁর পত্নীতলায় জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা চান মোহাম্মদ এবং আব্দুল মতিন গংদের হামলায় উপজাতি শিশু মিথুন ও হাফিজুল ইসলাম নামে দু’জন নিহত। ৬ জুলাই চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডে উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকায় রাত আটটায় আওয়ামী লীগ নেতা ও নাজিম বাহিনীর প্রধান নাজিম উদ্দিন ডাকাতির চেষ্টাকালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়। নাজিমের অন্যান্য সঙ্গীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনায় এস.আই দুলাল, জামান, কনেষ্টবল জাহেদ, কামরুল, শাহাদাতসহ পাঁচ পুলিশ ও এক আনসারসহ ছয়জন আহত হয়েছে। পরে চিকিৎসাধী অবস্থায় ৭ জুলাই ভোর রাত দু’টায় নাজিম উদ্দিন হাসপাতালে মারা যায়। ১০ জুলাই কুমিল্লার লাঙ্গলকোটে ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আব্দুর রহীম নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুলাই রাতে চট্টগ্রামে একটি ক্লিনিকে মারা যায়। ১৩ জুলাই বগুড়ার গাবতলীতে বাবনভিটা রাস্তায় আওয়ামী লীগের নশিপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব ও তার লোকজন ব্যবসায়ী মোজাম প্রামানিককে ব্যারিকেড দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। এ ঘটনার মামলায় বিপ্লবসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিপ্লব পুলিশের কাছে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। ২৩ জুলাই মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উত্তর রূপদহ সুন্দরপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের সহিংশতায় উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম আলী ও পরাজিত আওয়ামী প্রার্থী আবু নাসির বাবলু গ্রুপের সংঘর্ষে নান্নু মোল্লা নামে একজন নিহত হয়। ১০ আগস্ট ঢাকার কাফরুলে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কাফরুল থানা সাধারণ সম্পাদক রুবেল মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। প্রথমে তাকে কাজীপাড়া এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত অনুমান এগারটার সময় রুবেল মারা যায়। ১৩ আগস্ট ঢাকার বাড্ডা আদর্শ লিংক রোডে আল সামী হামপাতাল সংলগ্ন পানির পাম্পের পাশের খোলা মাঠে শোক দিবস পালন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক আলোচনা কালে হঠাৎ প্রতিপক্ষ গ্রুপের এলোপাতাড়ি গুলীতে আওয়ামী লীগ নেতা সামসুর রহমান মোল্লা, ফিরোজ আহমেদ মানিক, বাড্ড থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান সোয়েল ওরফে গামা এবং বাড্ডা ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম গুলীবিদ্ধ হয়। তার মধ্যে সামসুর রহমান মোল্লা ও ফিরোজ আহমেদ মানিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ দিনই গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যায়, ১৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থা মাহাবুবুর রহমান সোয়েল ওরফে গামা মারা যায় এবং পরে ২৩ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুস সালাম মারা যায়। মূলত ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সাবেক ছাত্রলীগ গুলশান থানা সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ বাড্ডা থানা শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন মিলন এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পৌর সভার বাতেন মার্কেট এলাকায় গরুর হাটে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগ ক্যাডার শিশু ও জাফর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর আলম ও হুমায়ুন কবীর নামে দু’জন গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং তিন জন গুলীবিদ্ধসহ অনেকে আহত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের শালথায় মোবাইলের মেমোরী কার্ড কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত প্রায় পঞ্চাশজন এবং পবে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল হোসেন নামে একজন মারা যায়। ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- ফরিদ শেখ, মঙ্গল মোল্লা, রাশেদ, ইসাহাক, অহিদ খান, আর্শেদ, রাকিবুল, নবীন শেখ, বাবুল মাতুব্বর, অপু শেখ, সালাম মাতুব্বর ও বতু শেখ। ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রেফতার বার জনের ছয় জনকে দুই মাস করে বিনাশ্রম কারাদ- দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের ধাইনগর ইউনিয়নে নাক্কাটিতলা গ্রামে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগের ধাইনগর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে হয়। ঐ সংঘর্ষের জেরে ১ অক্টোবর আবারও দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে মধ্যে পড়ে বিএনপির নজরুল ইসলাম নামে একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। নিহত নজরুল ধাইনগর ইউনিয়ন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত পনের জন। ৭ অক্টোবর খুলনা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিনের পুলিশ লাইনের পাশে মুন্সীপাড়ার বাসায় ভ্রাতুষ্পুত্র মাওলানা হেদায়েত হোসেন আওয়ামী লীগ নেতা জালাল মোল্লার নিজ পুত্রবধূ রাব্বি সুলতানা লিপিকে শর্টগান দিয়ে গুলী করে হত্যা করে। শর্টগানটি মোল্লা জালাল উদ্দিনের লাইসেন্সকৃত। ২২ অক্টোবর নাটোরের সিংড়ায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আব্দুল হান্নান নামে একজন নিহত, আহত পনের এবং গ্রেফতার ষোলজন। এ সময় ৩৫টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৯ তারিখ আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের একবার সংঘর্ষ হয়েছে। ২৯ অক্টোবর ফেনীতে লক্ষ্মীপূজায় নামাজের সময় আতশবাজি ফুটানোর অযুহাতে পূজায় হামলা করে ছয় মাসের গর্ভবতী তুলসী রানী দাস নামের এক হিন্দু মহিলার গর্ভপাত ঘটায়েছে এবং বাকী আলো রানী দাস, শোভা রানী দাস, শুকদেব দাস, পরিমল দাস ও বিকাশসহ আরো পাঁচজনকে আহত করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় একটি মৃত সন্তান প্রসব করে টুনি। সন্ত্রাসীরা দোকন লুটপাট, ভাংচুর ও মারপিট করে হিন্দুদের। ৬ নবেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়। গুরুতর আহত জাসদ কর্মী বাবলু চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ নবেম্বর রাত দু’টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। ৮ নবেম্বর কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মাকসুদুর রহমানকে স্বর্ণ চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর মাকসুদুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে আওয়ামী লীগের সরসপুর ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নূরুল আমীন, তার ছেলে রুবেল হোসেন ও মাসুদ, স্ত্রী রোজিনা আক্তার, মেয়ে স্বপ্না আক্তার, ভাগিনা ওমর ফারুক ও মিলনসহ দশ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে মৃতের মা জাহানারা বেগম। ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ে শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরপাগলা-চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জামাল হোসেন নামে একজন নিহত ও অপর বিশজন আহত হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বাদশা মিয়ার নির্বাচনী প্রচারণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ৪নং ওয়ার্ডে আদর্শ গ্রাম এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের হামলায় বিএনপি কর্মী নজরুল ইসলাম নিহত হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। ২৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া সদর থানায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম নামে একজন নিহত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পৌর নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোজাম্মেল বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী আব্দুল হালিমের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলীতে ভোটের লাইনে দাড়িয়ে থাকা বিএনপি কর্মী নূরুল আমীন গুলীবিদ্ধ হলে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে এবং রবগুনা পৌর নির্বাচনে আওয়মী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৩১ ডিসেম্বর বরগুনা সদর হাসপাতালে নূরুল ইসলাম মারা যায়।

যুবলীগের হাতে নিহত সাতাশ জন : ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার যুবলীগের ভাঙ্গাখা ইউনিয়নের যুগ্ম-আহবায়ক আরিফুর রহমান ফরহাদকে দলীয় কোন্দলের ফলে তাকে হত্যা করে মৃত অবস্থায় স্থানীয় মিরিকপুর বাজারে একটি স’মিলের ভিতর থেকে ভোরে তার গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। ৫ মার্চ রাতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নাটোর সদরে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সিরাজ সিকদার খুন হয়েছে। টাকা ভাগাভাগী নিয়ে শহরের ঝাউতলা মোড়ে যুবলীগের দলীয় কোন্দলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে ও ৫ মার্চ সন্ধায় বগুড়া শহরের সাবগ্রামে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দলীয় কোন্দলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সাবগ্রাম বন্দর কমিটির সভাপতি মানিক খুন হয়েছে। ২৪ মার্চ ফেনী শহরে যুবদলের নেতা দেলোয়ার হোসেনকে যুবলীগ কর্মীরা আহত করে এবং শহরের কসমোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মার্চ মারা যান তিনি। ৪ এপ্রিল ফেনী সদরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দলে যুবলীগের কর্মী সাইফুল ইসলাম নিহত হয়েছে। ৮ এপ্রিল ঢাকার খিলগাঁওয়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয় মোঃ আরিফ নামে এক যুবলীগ কর্মী। মৃত্যুর আগে আরিফ সাংবাদিকদের জানায় স্থানীয় শুভ, মিঠু, ইমরান ও কালা তার উপর হামলা করেছে। আরিফের বক্তব্য অনুসারে দলীয় কোন্দলে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এরপর আরিফ আর কথা বলতে পারেনি। ২৪ এপ্রিল বাগেরহাট মডেল থানা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগ দু’গ্রুপের সংঘর্ষে রাজা শেখকে কুপিয়ে জখম করে এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজে রাজা শেখ মারা যায়। ৭ মে চট্রগ্রামের মুরাদপুরে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ডাকাতিতে অংশ নেয় যুবলীগের পাঁচ নেতা আরিফ, মাহবুব, সাগর, পিয়াস ও মাসুদ। ঘটনার সময় তারা ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী ইব্রাহিতকে খুন করে। ২০ মে নোয়াখালী পৌর যুবলীগের নেতা আলী আকবরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এলাকায় কয়েকদিন আগ থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ২১ মে কুমিল্লার তিতাসে হারাইকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে শাহ আলম নামে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী নিহত হয়েছে। ১৮ জুন ফেনী সদরের বালিগাঁওয়ে যুবলীগের দ্বন্দ্বে গোলাম মওলা মিস্টার, আজিমসহ আরো ছয়-সাত জনের হামলায় গুলীবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে যুবলীগ নেতা রসুল আমিন মানিক। ১৯ জুন খুলনায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে যুবলীগ কর্মী ইমরান সজিব আকনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে যুবলীগ খুলনা মহানগর কমিটির সদস্য এস.এম হাফিজুর রহমান হাফিজের লোকজন। নিহতের বাবা ২১ জুন খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন- তার ছেলে মরে যাওয়ার আগে বলে গেছে, মাহবুব ও চঞ্চল তাকে চেপে ধরে এবং ভাগ্নে সুমন তার মাথার পিছনে কোপ মারে ও হাত কেটে নেয়। সিরাজসহ আরো অন্যান্যরা তার শরীরে কোপায়। তিনি আরো অভিযোগ করেন নিহতের হাতটি কেটে নিয়ে এমন নৃশংসতা দেখায় যে তা দিয়ে ক্রিকেট খেলার মত ক্যাচ ধরার খেলা করে। ২৭ জুন লালমনিরহাটের সদর থানার মহেন্দ্রনগর বাজারের খান মার্কেটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে যুবলীগ নেতা ফখরুল ইসলাম বুলেট নিহত হয়েছে। ৮ জুলাই সিলেটের জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকায় চোর সন্দেহে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে আহত করে পরে হাসপাতালে নিলে ডাক্তারা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা আলী হায়দার ওরফে হায়দার আলী, তার ভাই শামীম, কামরুল ও বাদলসহ আরো অনেকে। পুলিশের এস.আই আমিনুল ইসলাম যুবলীগ নেতা হায়দার আলীর মাধ্যমে বারো লক্ষ টাকায় চুক্তি করে নগদ ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে মূল আসামী বাদ দিয়ে এজাহার দায়ের করে এবং মৃতকে বেওয়ারিশ দেখিয়ে মামলা রেকর্ড করে। ১২ জুলাই নাটোরের সিংড়ায় ননী গোপাল কুন্ডু ও তার স্ত্রী চিত্রা রানী কুন্ডুকে শ্বাস রোধ হত্যা করা হয়। হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা এমদাদুল হক কালু, মকবুল হোসেন, মমতাজ আলী, আব্দুল হক ও শামসুল হককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ২১ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধানীখোলা বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ান যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল মোতালেব মোল্লার বাড়িতে বসে সাতজন মিলে মদের আসর বসায় এবং দেশীয় মদ পান করে। অতিরিক্ত মদ পান করার পর সাতজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। পরের দিন ২২ জুলাই আব্দুল মোতালের মোল্লা ও চৌকিদার শুকলাল চন্দ্র রবিদাস মারা যায়। ২৫ জুলাই মাগুরায় যুবলীগের গুলীবিদ্ধ নেতা আব্দুল মমিন ভূঁইয়া মিরাজ রাত ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে মারা যায়। উল্লেখ্য আব্দুল মমিন ভূঁইয়া মিরাজ গত ২৩ জুলাই যুবলীগের এক সংঘর্ষে গুলীবিদ্ধ হয়। ১৫ আগস্ট কুষ্টিয়াতে আওয়ামী লীগের শোক র‌্যালিতে তাদের অঙ্গ সংগঠনের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী সবুজ হোসেন নিহত হয়। ১৯ আগস্ট ঢাকার ওয়ারীতে যুবলীগের দলীয় কোন্দলে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান খুন হয়েছে। তিনি এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকালাপের বিরেধিতা করতেন বলে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে আব্দুল মান্নান এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকালাপের প্রতিবাদ করতেন বলে এলাকার কিছু দলীয় লোকের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিল, ৫ সেপ্টেম্বর ছিনাইদাহের শৈলকুপায় যুবলীগের হাতে নিহত হয় যুবদলের আবু জাফর। ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে রহমতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর এতিম ছাত্রী পনের বছরের সুমাইয়া আক্তার নাদিয়াকে যুবলীগের মোশাররফ হোসেন লিটন, ফকিরা, সুমন ও স্বপন সকাল ন’টা থেকে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে গলাটিপে হত্যা করে। পুলিশের হাতে চার ধর্ষকের মোশাররফসহ তিনজনই ধরা পড়ে ১৬৪ ধারা মতে জবানবন্দী প্রদান করে ঘটনার সব তথ্য প্রকাশ করে। একই দিন নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্যম হাজীপুর গ্রামে যুবলীগের স¤্রাট বাহিনীর গুলীতে জসিম উদ্দিন রুবেল ও স্বাধীন গুলীবিদ্ধ হয়। পরে জসিমকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তারা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ২৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চাটখিলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুবলীগের হাতে অপর যুবলীগ কর্মী আক্তার হোসেন স্বপন নিহত হয়েছে। আগের দিন তুচ্ছ বিষয়ে কথা কাটাকাটি হলে পরের দিন যুবলীগ কর্মী রবিন হোসেন রবিন, তার ছোট ভাই জাকির হোসেন রাব্বি, তাদের মামা তারেক ও প্রতিবেশী রিশনসহ আরো কয়েকজন ঘুমন্ত স্বপনের উপর হামলা করে। ১৬ নবেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদরে যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জিপু গ্রুপ ও নাঈম গ্রুপের সংঘর্ষে নাঈম গ্রুপের আজিজুল হক নামে একজন যুবলীগ নেতা নিহত এবং জিপু গ্রুপের বুদো আহত হয়। কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে কমিটি গঠন হলে বিরোধ আরো চরমে ওঠে। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা ওবায়দুর রহমান জিপু চৌধূরীসহ ত্রিশজনের নাম উল্লেখ করে নিহতের স্ত্রী ডলি খাতুন হত্যা মামলা দায়ের করেছে এবং মামলায় বাকী ৮-১০ জনের নাম অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে এবং ২২ ডিসেম্বর ঢাকার আশুলিয়ায় যুবলীগের সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছে ভ্যান চালক মঈন উদ্দিন এবং আহত হয়েছে প্রতিবেশী মোর্শেদ। মঙ্গলবার সন্ধায় সুদের টাকা লেন-দেন নিয়ে যুবলীগ নেতা হাসান মন্ডল এক শালিস বৈঠকে ডাকেন মন্ডল মার্কেটে। তারা বৈঠকে যাওয়া মাত্র যুবলীগ সদস্য মেহেদী, মামুন, মান্নান, তুষার, পারভেজ, মানিক ও সুমন তাদের লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ সময় তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাদের পলাশবাড়ী হাবিব ক্লিনিকে নিয়ে যায়। মঈনের অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তাররা তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে মঈন মারা যায়।
মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads