বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

গুলী করে জনগণের আন্দোলন দমন করা যায় না


রাজনৈতিক অস্থিরতায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মরছে মানুষ, পুড়ছে যানবাহন। প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গোটা দেশ অচল হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন ক্রমেই প্রচন্ড রূপধারণ করছে। সরকার সংলাপ-সমঝোতার পরিবর্তে কঠোরতম পন্থা অবলম্বন করেছে। গুলী এখন আন্দোলন দমনের প্রধান হাতিয়ার। বিরোধী মত বলতে কিছুই নেই। সাধারণ মানুষ পার করছে অনিশ্চিত জীবন। সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা করছে। সরকার নিজেই হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও তা-ব সৃষ্টি করার কাজে নিয়োজিত। দেশের বুদ্ধিজীবী, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ কারো অভিমতের কোনো মূল্যায়ন করছে না সরকার। জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার চলমান সংকটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ এবং তা নিরসনে সংলাপ-সমঝোতার আহ্বান আমলে নিচ্ছে না বর্তমান সরকার। দেশ, দেশের অর্থনীতি, জনগণের জীবন বিপন্ন প্রায়। আর সরকার ব্যস্ত দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিজেদের গদি রক্ষায়।
বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এটা কোনো দল বা ব্যক্তির একার দেশ নয়। অধিকাংশ মানুষের পছন্দের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। জনগণের প্রতিনিধিত্ব প্রকাশিত হয় রাজনৈতিক দলসমূহের মাধ্যমে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাথে কমবেশি জনসম্পৃক্ততা রয়েছে। সুতরাং কোনো রাজনৈতিক দলকে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। গণতন্ত্রে বহুদলের অস্তিত্ব স্বীকৃত। ভিন্ন মত ও দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, গণতন্ত্র টিকে না। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের সভা-সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। এটা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র যখন এ অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে বা তা হরণ করে তখন তা হয় সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় থাকার নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশে ভিন্ন মত উৎখাতের যে অভিযান চলছে তা উদ্বেগজনক। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চড়াও হতে থাকে। সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য শতকরা ৯০ ভাগ জনগণের সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা আদালতের দোহাই দিয়ে বাতিল করা হয়। অথচ আদালতের ঐ রায়েই পর পর দুটো নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। সংকটের সূত্রপাত ওখান থেকেই। জনগণের প্রচ- আন্দোলনের ধারাবাহিকতার মধ্যে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে সরকার একতরফা নির্বাচনের নানান বাহানা খুঁজতে থাকে। জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভিমত অগ্রাহ্য করে শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়। জনগণ সে নির্বাচন বয়কট করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটারবিহীন এ ধরনের নির্বাচন অতীতে কোনো স্বৈরশাসকের আমলে আর দেখা যায়নি। ১৫৪টি আসনে বিনা নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা, অবশিষ্ট আসনগুলোতে শতকরা ৫ ভাগ ভোটারও ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া বিশ্বের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। নির্বাচনের এ করুণ অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা নিয়ম রক্ষার দশম সংসদ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তারা আরো ঘোষণা করেছিলেন, ‘আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সমঝোতায় আসলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি আলোচনা চলতে থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করার পর তাদের সে বক্তব্যের সুর পাল্টে যেতে লাগলো। শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা বলতে শুরু করলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকবে।
তামাশার নির্বাচনের ১ বছর পেরিয়ে গেলো। আওয়ামী নেতৃবৃন্দ জোর গলায় বলার চেষ্টা করছেন নির্বাচনের যেহেতু অনেক সময় বাকি সুতরাং এত আগেভাগে আলোচনার দরকার নেই, সমঝোতারও প্রয়োজন নেই। শুধু তাই নয় তারা বিরোধী ২০ দলীয় জোটকে কোনো ধরনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিতে রাজি নয়। ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অবরুদ্ধ করে রাখে ২০ দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। সরকার নিজেই সারাদেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হন। অবরোধের পাশাপাশি চলতে থাকে হরতাল। হরতাল-অবরোধে গোটা দেশ আজ অচল হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি স্থবির, জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। সরকার পুলিশ প্রহরায় যানবাহন চালানোর ঘোষণা দেয়। যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও বলে। পুলিশ প্রহরায় চলন্ত যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যার ঘটনা এবং দুষ্কৃতকারীদের ধরা না পড়া খুবই রহস্যজনক। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সরকারদলীয় ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালিয়ে বিরোধী দলকে দায়ী করছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় কিভাবে মানুষ খুন হয় তার জবাবদিহি করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের।
রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘর থেকে ধরে নিয়ে নির্দয়, নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে ঘোষণা দিচ্ছেন ‘ক্রসফায়ারে নিহত’ বলে। ইতোমধ্যেই নড়াইলের নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার এডভোকেট ইমরুল কায়েসকে গুলী করে হত্যা করার পর বলা হলো ‘ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে’। খিলগাঁওয়ের ছাত্রদলের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদককে ধরে নিয়ে গুলী করে হত্যা করার পর তাকে ‘ক্রসফায়ারে নিহত’ বলে প্রচার করা হলো। রংপুরের মিঠাপুকুরে জামায়াত নেতা আল-আমিন ও তার স্ত্রী বিউটি বেগম এবং প্রতিবেশী মৌসুমীকে ঘরে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নিয়ে আল-আমিনের গায়ে গুলি চালানো হয় এবং হাত ভেঙে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত তারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের কোনো সন্ধান নেই। দেশ যেন আজ এক সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করতে হয়। কিন্তু আওয়ামী সরকার আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে দমন-পীড়ন আর গুলী করেই সংকটের সমাধান করতে চাচ্ছে। সরকারের এই মনোভাব কিছুতেই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে না।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের গুলী করে দমন করা হবে বলে প্রথম ঘোষণা দেন জাসদের নেতা মইনউদ্দিন খান বাদল। তিনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সরাসরি বুকে গুলী চালানোর কথা বলেছেন। ১৮ জানুয়ারি খাদ্যমন্ত্রী বিবিসি সংলাপে বলেন, ‘অস্ত্র দিয়েই বিএনপির সন্ত্রাস দমন করা হবে’। ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সমাজকল্যাণমন্ত্রী বললেন, ‘দৃষ্কৃতকারীদের দেখামাত্রই গুলীর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার’। সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের এই যদি হয় অবস্থান, তাহলে দেশের পরিণতি কত বিভীষিকাময় হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
সরকারের মন্ত্রী, এমপিদের গুলী করার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। ১৫ জানুয়ারি বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ঐ বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।’ বিজিবি মহাপরিচালকের এ ঘোষণা অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং আইনগত এখতিয়ারবহির্ভূত। যদি কেউ বোমা ফাটায় তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করার সুযোগ আছে। কিন্তু বিচারের আগে তাকে গুলী করার অধিকার বিজিবি বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি। এদেশের মানুষকে হত্যা করার কোনো অধিকার বিজিবির নেই।
১৬ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক বলেন, ‘বিএনপির ভুলের খেসারত জনগণ দেবে না। ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে দিলে যদি হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হতো তখন টকশোওয়ালারা কি করতেন? এর দায় পড়তো সরকারের ওপর।’ পুলিশের আইজি আরো বলেন, ‘একটা দলের প্রধান তিনি যদি বেআইনি কাজ করেন তার কাছ থেকে জনগণ কি চাইবে? আপনারা ভোট প্রতিরোধ করলেন। ভোট কেন্দ্রে লোক আসতে দিলেন না। ভোটের কেন্দ্রগুলো যেখানে- সেই স্কুল, কলেজ, মাদরাসাগুলো পুড়িয়ে দিলেন, মানুষ মারলেন, জনগণকে ভোটের অধিকার দিলেন না কেন? ভুল আপনারা করেছেন জনগণ খেসারত দিবে কেন? এই দেশে আমরা তা করতে দেব না ইনশাআল্লাহ্। আমরা গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে। আমরা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাজ করে যাবো। কোনো অপশক্তি, কোনো সন্ত্রাসী বাংলার মাটিতে কখনো তাদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা নির্মূল করে ছাড়বো। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্দোলনের নামে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষে থেকে শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও নাশকতা নির্মূলে কাজ করে যাবো। জনগণকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করা হবে।’ (মানবজমিন, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫)
এই বক্তব্য পাঠ করলে সকলেরই ধারণা হবে এটা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বক্তব্য। বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান এ ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন তা ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি বিরোধী রাজনীতি নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন। পুলিশের এই রাজনৈতিক বক্তব্য জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে তা বিঘিœত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের পরই নির্বাচন হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর বাইরে আমরা আর কোনো কিছুই চাই না। ২০১৩ সালের মতো একটি গোষ্ঠী তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করেছে। তারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। তারা সন্ত্রাসী। তারা গণতন্ত্রের নামে বোমাবাজি করে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এসব খুনিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এগুলোকে ২০১৩ সালে আমরা একবার রুখে দিয়েছি এবারও রুখে দেবো ইনশাআল্লাহ।’ (মানবজমিন, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫)
র‌্যাবের ডিজির বক্তব্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি ইঙ্গিত করে যেসব কথা বলা হয়েছে তা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির বক্তব্যের ভাষার মতোই। চাঁপাইনবাবগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ৭১-এর শরণার্থীর মতো লোকজন পালিয়ে যাওয়ার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরাসরি সরকারের দলীয় বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। একদিকে ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে চলছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। অপরদিকে সরকার, সরকারদলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ক্রমেই সংঘাত, সংঘর্ষ বিস্তৃত হচ্ছে। ছাত্রদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস প্রায়। এসব কিছুর মূলে সরকারের একগুঁয়েমি, অপরিণামদর্শী রাজনৈতিক কর্মকা- এবং জোর করে ক্ষমতায় থাকার মানসিকতা। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়। যারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তা-বতা সৃষ্টি করেন তাদের দ্বারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাহলে সমস্যার সমাধান কোথায়? এর উত্তর হলো যখন মানুষের বাঁচার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যায় তখনই গড়ে উঠে প্রতিরোধ আন্দোলন। আর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন মানুষের বাঁচার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে জালেম সরকারের পতন ঘটায়।
বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ বাঁচার তাগিদে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের এই ইস্পাত কঠিন ঐক্য গুলী করে দমন করা যাবে না। সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমেই এ সংকটের অবসান হতে পারে। আর এ সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান না করে বন্দুকের গুলী দিয়ে সমাধান করতে চান তাহলে হয়তো মানুষ খুন করা যাবে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। একটি খুনের রক্ত থেকে লক্ষ প্রতিবাদী শক্তির উদ্ভব ঘটবে। এটাই আন্দোলনের ইতিহাস। এতদিন এ আন্দোলনের পথেই আওয়ামী লীগ হেঁটে এসেছে। তারাই আজ গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে স্বৈরাচারের লেবাস ধারণ করে জনগণের বুকে গুলী চালাচ্ছে। এর চূড়ান্ত পরিণতি একদিন আওয়ামী লীগকেই ভোগ করতে হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads