বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৫

লাখ টাকার পুরস্কার প্রসঙ্গে


আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক সভা শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, বোমাবাজ-সন্ত্রাসীদের যারা ধরিয়ে দেবে তাদের এক লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এই পুরস্কার পাওয়া যাবে এক-একজনের জন্য। অর্থাৎ যে যতজনকে ধরে দেবে তাকে ততো লাখ টাকা দেবে সরকার। মন্ত্রী আমুর মাধ্যমে ঘোষিত সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশিষ্টজনেরাও বলেছেন, কেউ সন্ত্রাসী বা বোমাবাজ কি না তা তার গায়ে লেখা থাকে না। তাছাড়া প্রাণবিনাশী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করার জন্য দেশে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা যদি ঢালাওভাবে সাধারণ নাগরিকদের দেয়া হয় এবং সেই সঙ্গে যদি লাখ টাকা পুরস্কারের প্রলোভন দেখানো হয় তাহলে সমাজে এক মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে যাবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো থাকবেই, একযোগে শুরু হবে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কার্যক্রমও। বিশিষ্টজনেরা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চলমান মানসিকতার দিকে ইঙ্গিত করে আশংকা প্রকাশ করেছেন, এই সুযোগে তারা প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদেরই শুধু আটক করবে না, যাকে-তাকে ধরার এবং ধরিয়ে দেয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মধ্যেও চাঁদাবাজির মহোৎসবে নেমে পড়বে। ফলে সব মিলিয়েই সমাজে সংঘাত ও হানাহানি ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
আমরাও সম্ভাবনার চাইতে আশংকার দিকটিকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এর কারণ, পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন থেকে শুরু করে আরো অনেকভাবেই আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে দেখেছে সরকার কিন্তু সুফল অর্জন করা যায়নি। জনগণের সচেতন অংশ এসব পন্থা বা কৌশলের পেছনে নিতান্ত উস্কানি ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পায়নি। এজন্যই লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যে কেউ ভাবতে পারেন, সারা দেশে পুরো প্রশাসন তথা র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি দলীয় বাহিনীকে মাঠে নামিয়েও নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। মূল দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সংকীর্ণ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কাজে অনেক বেশি সময় দিতে হচ্ছে বলে আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ক্লান্ত বা অনিচ্ছুক হয়ে পড়েছে কি নাÑ এ ধরনের কোনো জল্পনা-কল্পনায় না গিয়েও বলা যায়, জনগণ সরকারের আহ্বানে খুব একটা সাড়া দেয়নি। জনগণ বরং ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিই পালন করে চলেছে। হরতালও পালন করছে তারা। পেট্রোল বোমা ও গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা কারা করছে এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন রয়েছে। কারণ, অতীতের মতো সাম্প্রতিক সময়েও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তাদের সামনেই ঘটানো হচ্ছে। সবই দেখতে ও জানতে পারছে তারা। সুতরাং সরকার চাইলেই সম্পদ ও প্রাণবিনাশী কর্মকাণ্ডের সব দায় বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের উপর চাপানো যাবে না। একই কারণে জনগণকেও বেগম খালেদা জিয়ার বা তার নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো সম্ভব হওয়ার কথা নয়। আমরা তাই এ ধরনের বিপদজনক ও সংঘাতমুখী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাই। আমাদের মতে লাখ লাখ টাকার প্রলোভন দেখানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং সংকট উত্তরণের সহজ ও গণতন্ত্রসম্মত পথে পা বাড়ানো। সেটা সম্ভব হতে পারে ক্ষমতাসীনরা যদি হত্যা-গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতনের কর্মকাণ্ড ছেড়ে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত সাত দফা দাবি অথবা সর্বস্বীকৃত কোন পদ্ধতির ভিত্তিতে নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সমঝোতায় আসেন। এর মাধ্যমেই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads