বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫

রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা


বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার রাতে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পরপর দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি গুলী ছোড়ে। রিয়াজ রহমানের শরীরে অন্তত চারটি গুলী লেগেছে। দুর্বৃত্তরা তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। অন্যদিকে হঠাৎ আক্রান্ত হলেও রিয়াজ রহমান ক্রল করে বিপরীত দিকের দরজা দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। সে কারণেই প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। তাকে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, প্রচুর রক্তক্ষয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি আশংকামুক্ত রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উসকানিতেই তার উপদেষ্টার ওপর গুলী চালানো হয়েছে। যারা গুলী করেছে তাদের গুপ্তঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে বেগম জিয়া বলেছেন, দেশব্যাপী চলমান অবরোধকে নস্যাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই সরকার গুপ্তঘাতকদের মাঠে নামিয়েছে। সরকারের নির্দেশে তারা বাছাই করা বিশিষ্টজনদের প্রাণনাশের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এভাবে গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকার নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই পদত্যাগ করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। রিয়াজ রহমানের ওপর চালানো এ হামলার বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে শুধু নয়, বিদেশেও তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হামলাকারীদের সনাক্ত করার এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আমরাও ভয়ংকর এ হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা একই সঙ্গে একথাও মনে করি যে, বেগম খালেদা জিয়া অকারণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতি আঙুল তোলেননি। বস্তুত বিগত কয়েকদিনের অবরোধের মধ্যে ক্ষমতাসীনরা তাদের আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্য ও মনোভাবের ন্যক্কারজনক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালিয়ে কথিত বোমাবাজ ও সন্ত্রাসীদের আটক করার এবং পুলিশের কাছে তুলে দেয়ার হুকুম এসেছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। অন্যসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও নেতারাও একযোগে মারমুখী বক্তব্যই রেখে চলেছেন। হুমকিও প্রকাশ্যেই উচ্চারণ করছেন তারা। এসবের ভিত্তিতে ধরে নেয়া যায়, বেগম খালেদা জিয়া যাদের গুপ্তঘাতক বলেছেন তাদেরকেও ক্ষমতাসীনরাই মাঠে নামিয়েছেন। এদের কর্মকা-ও লক্ষ্য করার মতো। এই গুপ্তঘাতকরা এরই মধ্যে বেছে বেছে বেগম জিয়ার উপদেষ্টা সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসভবনে বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং আরেক উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। গাড়ি পুড়িয়েছে তারা বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের নিকটবর্তী সড়কে। সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতেও ককটেল ছুড়েছে তারা। এর অর্থ, আসলেও বেছে বেছেই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন রিয়াজ রহমান। বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নেয়ার বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কারণ, প্রতিটি হামলাই চালানো হচ্ছে সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে, টার্গেটও হচ্ছেন বেগম জিয়ার উপদেষ্টাসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এসবের পেছনে ঠিক কাদের নির্দেশনা থাকতে পারে সেকথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। বেগম খালেদা জিয়াও নিশ্চয়ই আন্দাজের ভিত্তিতে অভিযোগ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতি ও কর্মকান্ডে পরিবর্তন ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবরোধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নতুন পর্যায়ে প্রচ- দমন-নির্যাতন এবং গ্রেফতার ও অঘোষিত হত্যাকান্ডের অভিযান চালানোর মধ্যদিয়ে তার প্রমাণও দিয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীনরা। পাড়া-মহল্লায় কথিত বোমাবাজ-সন্ত্রাসীদের আটক করার হুকুম দেয়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেদের জন্য আইন হাতে তুলে নেয়ারও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সবকিছুর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য একটিই। সেটা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত ও নিন্দিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবলম্বন করে যে কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা চালানো। অমন চেষ্টা তারা চালাতেই পারেন কিন্তু আমরা মনে করি, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে প্রথমে দরকার এখন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবরোধের অবসান ঘটানো এবং পানি বেশি ঘোলা হওয়ার আগেই নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া। তারও আগে সরকারকে বিদায় নিতে হবে এবং বিলুপ্তি ঘটাতে হবে বিদ্যমান সংসদের। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন কিভাবে করতে হবে সে নির্দেশনা বেগম জিয়া তার সাত দফার মধ্যে স্পষ্ট ভাষায় পরিষ্কার করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের শুধু সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, র‌্যাব-পুলিশ এবং দলীয় গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি গুপ্তঘাতকদের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রসম্মত পথকেই বেছে নেবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads