প্রধানমন্ত্রী দিল্লী সফরে যাচ্ছেন। সেজন্য দুই দেশ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার পর তার এই সফরের ওপর বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ একথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ইতঃপূর্বে দুইবার এই সফরের সময় নির্ধারিত হয়। কিন্তু দুইবারেই অনিবার্য কারণবশত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফর চূড়ান্ত হয়েছে। গতবারে যেমন বলেছিলাম এবারেও তেমনি বলছি যে, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লী সফরের সময় যে বিষয়টি নিয়ে আগেভাগেই তুমুল আলোচনা হচ্ছে সেটি হলো- প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি। আসলে এটি কি হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে বলতে গেলে কিছুই বলা হচ্ছে না। তবে ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় এ সম্পর্কে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে, মানুষ বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা পড়ে কোনো ধারণাই পায়নি। কূটনৈতিক পরিভাষায় যেমন আছে- Diplomatic Jugglery, তেমনি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে চলছে কূটনৈতিক Jugglery. আসলে প্রতিরক্ষা খাতে যেটি হবে বলে শোনা যাচ্ছে সেটি হলো একধরনের চুক্তি। ইংরেজিতে এই ধরনের চুক্তিকে বলা হচ্ছে ‘Treaty’, আবার কোনো কোনো সময় বলা হচ্ছে ‘Pact’। তার পরেও কূটনৈতিক পরিভাষা থেমে নেই। কেউ কেউ বলেছেন যে, এটি হলো- ‘Memorandum of Understanding’, অর্থাৎ একটি সমঝোতা স্মারক। আবার কেউ কেউ বলেছেন প্রতিরক্ষা সম্পর্কে কোনো ‘Pact’ বা ‘Treaty’ হবে না। যেটি হবে সেটি হলো- ‘Deal’। আবার অন্য একটি মহল বলেছেন যে, এটি হবে এক ধরনের Agreement. এটি যে হবে একটি ডিফেন্স Deal বা Agreement সেটি কিন্তু আমরা ভারতীয় সূত্র অর্থাৎ ভারতীয় রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে জানতে পেরেছি। এ সম্পর্কে সর্বপ্রথম খবর দেয় ভারতের একটি প্রিন্ট মিডিয়া। সেই খবরও ছিল ছোট্ট এবং ভাসা ভাসা। বাংলাদশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নতুন করে কিছু বলেনি। বরং ভারতীয় মিডিয়াতে যেভাবে এগুলো এসেছে সেগুলো তারা লুফে নিয়েছে।
আমরা ঠিক জানি না যে, চুক্তি বা (MOU) যেটাই হোক না কেন সেটি কোন ধরনের হবে? তার মধ্যে কি থাকবে? ভারতের পত্র-পত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, এটি হবে একটি ‘Comprehensive Defense Deal’. এসব Diplomatic পরিভাষা ব্যবহার করে তারা কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটি তারাই ভালো জানেন। একটি ভারতীয় ইংরেজি পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, এই Comprehensive Defense Agreement-এ অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রশ্ন উঠেছে যে, সামরিক ক্ষেত্রের সহযোগিতার এই বিষয়টিতে কি কোনো সময়সীমা থাকবে? নকি ঐ ধরনের কিছুই থাকবে না। তবে সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে যে এর ভেতরে সামরিক সহযোগিতা বলতে যা কিছু বোঝায় তার সবগুলোই ঐ চুক্তি বা Agreement-এ থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, এর মধ্যে থাকবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ট্রেনিং প্রদান, সমরাস্ত্র ক্রয় এবং মিলিটারি টু মিলিটারি কো-অপারেশন। এই মিলিটারি টু মিলিটারি কো-অপারেশনের জন্য দিল্লী বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সামরিক খাতে এই ঋণ দেয়ার জন্য দিল্লী যে প্রস্তাবটি দিয়েছে, সেটি দিল্লী ইতঃপূর্বে আর কোথাও কাউকে দেয়নি। ভারত বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনছে এবং সেই অস্ত্র ক্রয় বাবদ শত শত কোটি রুপি ঋণও নিচ্ছে বিদেশ থেকে। সেখানে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে বাংলাদেশের জন্য সমরাস্ত্রের আয়োজন করা বিস্ময়কর বৈকি। তবে শর্ত হলো এই যে, অস্ত্র খাতে ভারত যে ঋণ দেবে সেই ঋণের টাকা দিয়ে বাংলাদেশকে শুধুমাত্র ভারত থেকে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করতে হবে।
॥ দুই ॥
কেন ভারত এসব করবে? ভারতের ইংরেজি পত্র-পত্রিকাতেই বলা হচ্ছে যে, এই ধরনের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বাংলাদেশ স্বেচ্ছায় রাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নাকি গাঁইগুঁই করছে। শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ মোচড়ামুচড়ি করে তাহলে ভারত নাকি বলছে যে, অন্তÍত একটি সমঝোতা স্মারক সই হোক। দরকার লাগলে ঐ স্মারকটি বাধ্যতামূলক নাও হতে পারে। এমনকি সেখানে কোনো সময়সীমা নাও থাকতে পারে। তবুও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করুক। ভারতীয় সূত্র থেকে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ঠিক এই মুহূর্তে ঐ ধরনের কোনো চুক্তি করতে চাচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশ বলছে যে, আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে এখন যদি প্রতিরক্ষা চুক্তি বা ঐ ধরনের কোনো চুক্তি হয় তাহলে বাংলাদেশের বিরোধী শিবির বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হাতে একটি নির্বাচনী অস্ত্র তুলে দেয়া হবে। ঐ অস্ত্র প্রয়োগ করে তারা আগামী ইলেকশনে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে বধ করবে। তবে এই নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগের আরও ৫ বছর সময় থাকবে। সেক্ষেত্রে চুক্তির ফলে যদি বাংলাদেশে জনমত কিছুটা প্রতিকূলে যায়, তাহলে তারা সেটা ম্যানেজ করতে পারবে।
বাংলাদেশের একশ্রেণীর নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন যে, বাংলাদেশ যদি এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করে তাহলে সেটি সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যান্য অপশনকে সীমিত করে ফেলবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এই ধরনের চুক্তির কোনো আবশ্যকতা অনুভব করে না। কিন্তু ভারত করে। বাংলাদেশের একধরনের মিডিয়া, যারা সেক্যুলার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা দুর্বল বলে পরিচিত, তারাও এখন মনে করছেন যে, ভারত এখন এই ধরনের একটি চুক্তি করতে চাচ্ছে একটি বিশেষ কারণে। আর সেটি হলো সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা। চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন সংগ্রহের পর ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। হিন্দুস্থান টাইমসসহ একাধিক ভারতীয় পত্র-পত্রিকা লিখছে, যেখানে বাংলাদেশের সাথে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পন্ন হয়ে গেছে এবং যেখানে ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধেরও ফয়সালা হয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের জন্য দুইটি সাবমেরিন কেনার কি যুক্তি থাকতে পারে?
॥ তিন ॥
এই ধরনের স্পর্শকাতর চুক্তিতে অবশ্যই জনগণের অনুমোদন দরকার। সেজন্য প্রয়োজন প্রকাশ্য আলোচনার ব্যবস্থা। এই চুক্তিটি যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সেটির ওপর ব্যাপক পাবলিক ডিবেট হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এমন গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে যে, পাবলিক ডিবেট তো দূরের কথা, সরকার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তারপরেও দেশপ্রেমিক জনসাধারণ গভীর উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে আছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লী সফরে কি ঘটে? বর্তমান সংসদ প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। তবুও সেখানেও যদি এই চুক্তি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য উত্থাপন করা হতো এবং সংসদে প্রকাশ্য বিতর্কের ব্যবস্থা করা হতো তাহলেও জনগণ কিছুটা জানতে পারতেন।
কতগুলো ব্যাপার মানুষকে জানতেই হবে। যেমন, চুক্তিতে নাকি এমন একটি ধারা থাকবে যেখানে বলা হবে যে, এমন কিছু বিষয় আছে যেটিকে দুই দেশই মনে করবে যে, সেটি তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন হুমকি বা পারস্পারিক হুমকি, তাহলে সেটি মোকাবিলা করার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এখন কথা হলো যে, ভারত যেটাকে মিউচুয়াল থ্রেট মনে করে বাংলাদেশ সেটিকে তো তার সার্বভৌমত্বের প্রতি থ্রেট মনে নাও করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে তাহলে কি হবে?
সবশেষে একটি কথা। ভারতের জন্য অনেক বড় মাথাব্যথা ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ বা সশস্ত্র বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহ দমনে বর্তমান সরকার যে অবদান রেখেছে সেটা কোনো মূল্য দিয়ে কেনা যায় না। আওয়ামী সরকার ভারতের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এতবড় অবদান রেখেছে। কিন্তু কোনো চুক্তি ছাড়াই। ঐ জায়গায় যদি কোনো চুক্তির প্রয়োজন না হয়, তাহলে এখন কেন প্রয়োজন হচ্ছে? ভারত ছাড়া বাংলাদেশের তো এমন কোনো প্রতিবেশী নেই যার সাথে তার যুদ্ধ লাগতে পারে। যদি কোনো সময় মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ লাগে তাহলে তার জন্য কি ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন আছে?
আফিস আরসালান
আমরা ঠিক জানি না যে, চুক্তি বা (MOU) যেটাই হোক না কেন সেটি কোন ধরনের হবে? তার মধ্যে কি থাকবে? ভারতের পত্র-পত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, এটি হবে একটি ‘Comprehensive Defense Deal’. এসব Diplomatic পরিভাষা ব্যবহার করে তারা কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটি তারাই ভালো জানেন। একটি ভারতীয় ইংরেজি পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, এই Comprehensive Defense Agreement-এ অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রশ্ন উঠেছে যে, সামরিক ক্ষেত্রের সহযোগিতার এই বিষয়টিতে কি কোনো সময়সীমা থাকবে? নকি ঐ ধরনের কিছুই থাকবে না। তবে সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে যে এর ভেতরে সামরিক সহযোগিতা বলতে যা কিছু বোঝায় তার সবগুলোই ঐ চুক্তি বা Agreement-এ থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, এর মধ্যে থাকবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ট্রেনিং প্রদান, সমরাস্ত্র ক্রয় এবং মিলিটারি টু মিলিটারি কো-অপারেশন। এই মিলিটারি টু মিলিটারি কো-অপারেশনের জন্য দিল্লী বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সামরিক খাতে এই ঋণ দেয়ার জন্য দিল্লী যে প্রস্তাবটি দিয়েছে, সেটি দিল্লী ইতঃপূর্বে আর কোথাও কাউকে দেয়নি। ভারত বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনছে এবং সেই অস্ত্র ক্রয় বাবদ শত শত কোটি রুপি ঋণও নিচ্ছে বিদেশ থেকে। সেখানে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে বাংলাদেশের জন্য সমরাস্ত্রের আয়োজন করা বিস্ময়কর বৈকি। তবে শর্ত হলো এই যে, অস্ত্র খাতে ভারত যে ঋণ দেবে সেই ঋণের টাকা দিয়ে বাংলাদেশকে শুধুমাত্র ভারত থেকে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করতে হবে।
॥ দুই ॥
কেন ভারত এসব করবে? ভারতের ইংরেজি পত্র-পত্রিকাতেই বলা হচ্ছে যে, এই ধরনের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বাংলাদেশ স্বেচ্ছায় রাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নাকি গাঁইগুঁই করছে। শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ মোচড়ামুচড়ি করে তাহলে ভারত নাকি বলছে যে, অন্তÍত একটি সমঝোতা স্মারক সই হোক। দরকার লাগলে ঐ স্মারকটি বাধ্যতামূলক নাও হতে পারে। এমনকি সেখানে কোনো সময়সীমা নাও থাকতে পারে। তবুও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করুক। ভারতীয় সূত্র থেকে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ঠিক এই মুহূর্তে ঐ ধরনের কোনো চুক্তি করতে চাচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশ বলছে যে, আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে এখন যদি প্রতিরক্ষা চুক্তি বা ঐ ধরনের কোনো চুক্তি হয় তাহলে বাংলাদেশের বিরোধী শিবির বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হাতে একটি নির্বাচনী অস্ত্র তুলে দেয়া হবে। ঐ অস্ত্র প্রয়োগ করে তারা আগামী ইলেকশনে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে বধ করবে। তবে এই নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগের আরও ৫ বছর সময় থাকবে। সেক্ষেত্রে চুক্তির ফলে যদি বাংলাদেশে জনমত কিছুটা প্রতিকূলে যায়, তাহলে তারা সেটা ম্যানেজ করতে পারবে।
বাংলাদেশের একশ্রেণীর নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন যে, বাংলাদেশ যদি এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করে তাহলে সেটি সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যান্য অপশনকে সীমিত করে ফেলবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এই ধরনের চুক্তির কোনো আবশ্যকতা অনুভব করে না। কিন্তু ভারত করে। বাংলাদেশের একধরনের মিডিয়া, যারা সেক্যুলার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা দুর্বল বলে পরিচিত, তারাও এখন মনে করছেন যে, ভারত এখন এই ধরনের একটি চুক্তি করতে চাচ্ছে একটি বিশেষ কারণে। আর সেটি হলো সামরিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা। চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন সংগ্রহের পর ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। হিন্দুস্থান টাইমসসহ একাধিক ভারতীয় পত্র-পত্রিকা লিখছে, যেখানে বাংলাদেশের সাথে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পন্ন হয়ে গেছে এবং যেখানে ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধেরও ফয়সালা হয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের জন্য দুইটি সাবমেরিন কেনার কি যুক্তি থাকতে পারে?
॥ তিন ॥
এই ধরনের স্পর্শকাতর চুক্তিতে অবশ্যই জনগণের অনুমোদন দরকার। সেজন্য প্রয়োজন প্রকাশ্য আলোচনার ব্যবস্থা। এই চুক্তিটি যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সেটির ওপর ব্যাপক পাবলিক ডিবেট হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এমন গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে যে, পাবলিক ডিবেট তো দূরের কথা, সরকার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তারপরেও দেশপ্রেমিক জনসাধারণ গভীর উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে আছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লী সফরে কি ঘটে? বর্তমান সংসদ প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। তবুও সেখানেও যদি এই চুক্তি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য উত্থাপন করা হতো এবং সংসদে প্রকাশ্য বিতর্কের ব্যবস্থা করা হতো তাহলেও জনগণ কিছুটা জানতে পারতেন।
কতগুলো ব্যাপার মানুষকে জানতেই হবে। যেমন, চুক্তিতে নাকি এমন একটি ধারা থাকবে যেখানে বলা হবে যে, এমন কিছু বিষয় আছে যেটিকে দুই দেশই মনে করবে যে, সেটি তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন হুমকি বা পারস্পারিক হুমকি, তাহলে সেটি মোকাবিলা করার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এখন কথা হলো যে, ভারত যেটাকে মিউচুয়াল থ্রেট মনে করে বাংলাদেশ সেটিকে তো তার সার্বভৌমত্বের প্রতি থ্রেট মনে নাও করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে তাহলে কি হবে?
সবশেষে একটি কথা। ভারতের জন্য অনেক বড় মাথাব্যথা ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ বা সশস্ত্র বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহ দমনে বর্তমান সরকার যে অবদান রেখেছে সেটা কোনো মূল্য দিয়ে কেনা যায় না। আওয়ামী সরকার ভারতের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এতবড় অবদান রেখেছে। কিন্তু কোনো চুক্তি ছাড়াই। ঐ জায়গায় যদি কোনো চুক্তির প্রয়োজন না হয়, তাহলে এখন কেন প্রয়োজন হচ্ছে? ভারত ছাড়া বাংলাদেশের তো এমন কোনো প্রতিবেশী নেই যার সাথে তার যুদ্ধ লাগতে পারে। যদি কোনো সময় মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ লাগে তাহলে তার জন্য কি ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন আছে?
আফিস আরসালান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন