রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

শান্তির লক্ষ্যে খুলে দেয়া হলো শত শত মসজিদের দ্বার


ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করার লক্ষ্যে ১০ জানুয়ারি ফ্রান্সের শত শত মসজিদ সবার জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। খবরটি পরিবেশন করেছে বিবিসি। মুসলিম নেতারা বলছেন, ফ্রান্সে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে। তারা সবাইকে মসজিদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই ধারণা ভেঙে দিতে চান। এর লক্ষ্য সব সম্প্রদায়ের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ তৈরি করা। মসজিদগুলোতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। সেখানে তাদের চা এবং কেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। আলোচনা, কর্মশালা এবং বিতর্ক হবে। প্রার্থনা করা হবে সবার জন্য।
ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ভুল ধারণা কোনো নতুন বিষয় নয়। জানাজানির অভাবের কারণে কিছু ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, আবার কিছু ভুল ধারণা সৃষ্টি করানো হয়েছে। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল ধারণা সৃষ্টি করছে তাদের রয়েছে মহাপরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ, তথাকথিত সভ্যতার-সংঘাত এবং বিভ্রান্ত ও ভ্রষ্ট কিছু মুসলিম। উদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা ইসলাম ও মুসলিম বিরোধিতায় লিপ্ত আছে তারা আসলে বিভ্রান্ত নয়, তারা ষড়যন্ত্রকারী এবং ভুল পথের পথিক। এদের হেদায়েতের জন্য মানুষের প্রভুর কাছে দোয়া করা যায়। তবে জানাজানির অভাবের কারণে যাদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা আছে, তাদের ভুল বুঝাবুঝি দূর করার ক্ষেত্রে আলোচনা, কর্মশালা, ডায়ালগ ফলপ্রসূ হতে পারে। এ কারণে ফ্রান্সের শত শত মসজিদের দ্বার সবার জন্য খুলে দেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
ফ্রান্সের গত বছর রম্য-ম্যাগাজিন ‘শার্লি এবডো’ এবং এক ইহুদি সুপার মার্কেটে জঙ্গি হামলার প্রথম বার্ষিকীতে সবার জন্য মসজিদের দুয়ার খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো। ফ্রান্সে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথ’ এর প্রধান আনোয়ার কিবিবেচ বলেন, তারা মানুষে মানুষে সংহতির বিষয়টির ওপর জোর দিতে চান। ফ্রান্সে গত বছর বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলার পর সেখানে মুসলিম বিদ্বেষের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম থাকে ফ্রান্সে। ফ্রান্সে গত বছর যেসব জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে আমরা তার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। আর এই নিন্দা জানানোর পেছনে রয়েছে মৌলিক কারণ। যে ঈমান ধারণ করে একজন মানুষকে মুসলিম হতে হয়, সেই ঈমানই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের নিন্দা জানাতে বলে, লড়াই করতে বলে। এখানে বলার মতো আরো বিষয় রয়েছে। আজকাল কোনো জায়গায় কোনো জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলা হলে কোনো তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় মুসলমানদের। এমন উদ্দেশ্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক চেতনাকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের খ্যাতিমান সাংবাদিক, লেখক ও চিত্রশিল্পী বেননর্টনের বিশ্লেষণ উল্লেখ করা যায়। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর পরই এক লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, নাইন-ইলেভেনের পর যখনই বেসামরিক কোনো হামলা হয়েছে, নেতারা সাথে সাথে এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন মুসলমানদের। তাদের হাতে তেমন কোনো প্রমাণ থাকে না, কিন্তু মুসলিমবিদ্বেষী গোঁড়ামির স্থূলবুদ্ধিকেই তারা ব্যবহার করেন তাদের অভিযোগকে জোরদার করতে। অথচ প্রকৃত প্রমাণ অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে যে সব সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে, তার দুই শতাংশেরও কম ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০১৩ সালে ১৫২টি সন্ত্রাসী হামলার মাত্র এক শতাংশ ছিল ধর্মীয় প্রকৃতির। আর ২০১২ সালে ২১৯টি সন্ত্রাসী হামলার ৩ শতাংশেরও কম ছিল ধর্মীয়ভাবে উদ্দীপ্ত। বর্তমান সময়ে সন্ত্রাসী হামলাগুলোর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো জাতিগত-জাতীয়তাবাদী কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী। আসলে পাশ্চাত্যের সত্যনিষ্ঠ বিশ্লেষকদের এসব তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় আনলে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ এবং তাদের মুসলিম বিরোধী নেতিবাচক প্রপাগাণ্ডার গোমর ফাঁস হয়ে যায়। এরপরও আমরা বলবো, মানবজাতির জন্য শান্তির কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে চাতুর্য ও শঠতার রাজনীতি পরিহার করা প্রয়োজন। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলমানদের ঈমান তাদের শান্তির পথে থাকতেই উদ্বুদ্ধ করে। এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বনেতারা মূল দায়িত্বটা পালনে এগিয়ে আসবেন কি?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads