রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

পুলিশের ভয়ঙ্কর উক্তি


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে নির্যাতনকালে পুলিশ কর্মকর্তার ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’- বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। ১৬ জানুয়ারি ঢাকা ল্যাব-এইড হাসপাতালে বিকাশকে দেখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এই উক্তিটি ভয়ানক উক্তি। দেশে যে অবস্থা চলছে তা এখনই বন্ধ করা না হলে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া না হলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে, যার পরিণতি ভাল হবে না। বিকাশকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান, সাংবিধানিক অধিকার এবং নির্যাতন বিরোধী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার চিকিৎসার ব্যয় রাষ্ট্রের বহন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর ক্ষত না শুকাতেই বিকাশ চন্দ্র দাসকে পেটাল পুলিশ। এদিকে গোলাম রাব্বীকে মধ্যরাতে ছদ্মবেশে হাসপাতালে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালে পুলিশের বিরুদ্ধে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে তদন্ত শেষে শাস্তি দেয়া হয়েছে ১০ হাজার পুলিশ সদস্যকে। এদের মধ্যে ৭৬ জনকে করা হয়েছে চাকরিচ্যুত। পুলিশ সদর দফতরের প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড এন্ড ডিসিপ্লিন (পিএসডি) শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। লঘুদণ্ড, গুরুদণ্ড ও বিশেষদণ্ড এই তিন ক্যাটাগরিতে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিজস্ব আইনে ব্যবস্থা নেয় পিএসডি। প্রসঙ্গত এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালের ১৯ ও ২১শে জুন দুই দফা নির্দেশনা দিয়ে থানায় সিভিল টিম বা সাদা পোশাকে অভিযানে পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কিন্তু কমিশনারের নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন থানায় সিভিল পোশাকে ডিউটি পালন চলছে। সাদা পোশাকে অভিযানের নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, গ্রেফতার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সিভিল পোশাকে দায়িত্ব না পালনের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় থানা পুলিশের সিভিল টিমগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কখনও কখনও পুলিশের কতিপয় সদস্য সিভিল টিম হিসেবে আটকের নামে অপহরণ করে মুক্তিপণও আদায় করছে। এ ব্যাপারে মানবজমিন পত্রিকার ১৭ জানুয়ারি সংখ্যায় বিশদ বিবরণ রয়েছে।
দেশের মানুষ আইনের শাসন চায়, সুশাসন চায় - এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খোদ পুলিশই যখন মানুষের আস্থা হারিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে তখন তা দেশের জন্য এক বড় সংকট হয়ে ওঠে। এই সংকট দূর করার দায়িত্ব সরকারের এবং পুলিশ প্রশাসনের। পুলিশের অনাকাক্সিক্ষত এবং বেপরোয়া ভূমিকায় পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের বিধান অনুযায়ী পুলিশকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা দেয়া হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। পুলিশকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কিংবা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হলে এই বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা জানি, সরকারের দায়িত্ব দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যেই পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোনো সরকার যদি পুলিশ বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে কিংবা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমন-অবদমনে উস্কে দেয়, তখন ওই বাহিনীর নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্ববোধে অবক্ষয় দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত ভূমিকা আশা করা যায় না। বর্তমান অবস্থায় আমরা তেমন চিত্রই লক্ষ্য করছি। এমন চিত্র পরিবর্তনে সরকার অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনেরও করণীয় আছে। কাক্সিক্ষত সে দায়িত্ব পালনে তারা এগিয়ে আসেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads