বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৫০ বছরে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোতে গণতন্ত্র


গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ বিশ্বের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পাস করে। ওই প্রস্তাবে বিশ্বের সরকার প্রধানদের উৎসাহিতকরণের পাশাপাশি ১৫ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৬০ সালের পর বিশ্বের বেশ কিছু দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এ বছরের বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য কয়েকটি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হল।
কেনিয়া
সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ (কলোনি) কেনিয়া ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। ওইদিন ব্রিটিশ সরকার জুমো কেনিয়াত্তার নেতৃত্বাধীন কেনিয়া আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএএনইউ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এ জন্য কেনিয়াত্তাকে দেশটির জনক বলা হয়।
এর ঠিক এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৪ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশটিকে প্রজাতন্ত্র (রিপাবলিক অব কেনিয়া) হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং কেনিয়াত্তা দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৭৮ সালে কেনিয়াত্তার মৃত্যুর পর ডেনিয়েল এ্যারাপ মোই দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। যদিও এর মধ্যে ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৮৮ সালে নির্বাচন হয়। যাকে বলা হয় একদলীয় নির্বাচন। তা ছাড়া ১৯৮৩ সালের নির্বাচন হয় নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগে। কারণ ১৯৮২ সালের ২ আগস্ট দেশটিতে একটি ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান হয়।
১৯৮৮ সালের নির্বাচনে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। আর তা হলো গোপন ব্যালটে ভোটের পরিবর্তে প্রত্যেক প্রার্থীর সমর্থকদের লাইনে দাঁড়াতে হয়। এ নির্বাচনে জিতে যান মোই। কিন্তু তার এই নির্বাচন ব্যাপক সমালোচিত হয়। সংবিধান সংশোধনের দাবিতে দেশটিতে আন্দোলন দানা বাঁধে। এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে ১৯৯২ ও ১৯৭৯৭ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতেও পুননির্বাচিত হন মোই।
সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০০২ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোই। ফলে এ বছর বিরোধীদলীয় জোট ন্যাশনাল রেইনবো কোয়ালিশন (এনএআরসি) থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মাই কিবাকি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই নির্বাচনকেই কেনিয়ার গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট (সন্ধিক্ষণ) হিসেবে দেখা হয়। তা ছাড়া ২০০২ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই স্বাধীনতার পর প্রথম দেশটির ক্ষমতা বিরোধী দলের হাতে যায়।
দীর্ঘদিন পর বিরোধী দল ক্ষমতায় এসে দেশটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, শিক্ষা বিস্তার এবং সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতির কিছু অংশ বাস্তবায়ন করতেও সমর্থ হয় জোট সরকার। এরপর আসে ২০০৭ সালের নির্বাচন। ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট কিবাকি পার্টি অব ন্যাশনাল ইউনিটি দলের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। আর প্রধান বিরোধী জোট অরেঞ্জ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (ওডিএম) প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন রাইলা ওদিঙ্গা। কিন্তু ২০০২ সালে অর্জিত গণতন্ত্র ২০০৭ সালে এসেই বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ নির্বাচন হয়নি। অন্যদিকে, ভোট গণনার প্রথমদিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওদিঙ্গা। কিন্তু এরপর আবার একটানা এগিয়ে যেতে থাকেন কিবাকি। এক পর্যায়ে নিজেকে ‘জনগণের প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দেন ওদিঙ্গা। সেইসঙ্গে পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানান।
হোঁচট খায় আফ্রিকার এ দেশটির গণতন্ত্র। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গোষ্ঠীগত সহিংসতা। প্রায় এক হাজার লোক নিহত হয়। উদ্বাস্তু হয় ছয় লাখ লোক। এরপর আসে ২০১৩ সালের নির্বাচন। কিন্তু তার আগে জাতিসংঘের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কফি আনানের মধ্যস্থতায় দেশটিতে শান্তি আলোচনা চলতে থাকে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংলাপ ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কিবাকি ও ওদিঙ্গা এক চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী দেশটির জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন ওদিঙ্গা ও প্রেসিডেন্ট হন কিবাকি। ক্ষমতা ভাগাভাগির এ জোটকে বলা হয় গ্র্যান্ড কোয়ালিশন বা মহাজোট।
প্রধানমন্ত্রীর পদ অবলুপ্ত এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এ নিয়ে ২০১০ সালের ৪ আগস্ট গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাংবিধানিক কারণে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হতে পারেননি কিবাকি। ফলে উপ-প্রধানমন্ত্রী উহুরু কেনিয়াত্তা দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উহুরু একটি নিরাপত্তা আইন সংশোধনী বিলে সই করেন। বিলটিতে সাংবাদিকদের কোনো কিছু প্রকাশ ও অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে, সন্দেহভাজন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩৬০ দিন আটক রাখা যাবে, এ রকম বেশ কিছু নতুন আইন করা হয়।
বিরোধী দল, মানবাধিকার সংগঠন এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দেশটির পার্লামেন্টে বিলটি পাস হয়। এ নিয়ে কেনিয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ করে চীনের হস্তক্ষেপ এবং শুরু হয় চীন-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন।
মালদ্বীপ
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের গণতন্ত্র যেন অন্ধকারে আলোর ঝলকানির মতো। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মালদ্বীপ। স্বাধীনতার পর সালতানাত এবং তা থেকে রাজতন্ত্রে উন্নীত হয় দেশটি। ১৯৬৮ সালের ১১ নবেম্বর মালদ্বীপকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। তখন প্রেসিডেন্ট হন ইব্রাহীম নাসির।
১৯৭০ সালের দিকে দেশটিতে রাজনৈতিক মতবিরোধ স্পষ্ট রূপ ধারণ করে। নাসিরপন্থী ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা তাদের স্বরূপ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তৎকালীন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাকি নির্বাসনে চলে যেতে বাধ্য হন। সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে ইব্রাহীম নাসির রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান।
একই বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন মামুন আব্দুল গাইয়ুম। পর পর ছয়টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৩০ বছর মালদ্বীপ শাসন করেন গাইয়ুম। মজার ব্যাপার হলো, ছয়টি নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল ছিল না। মূলত, তার শাসন আমলেই স্বাধীন মালদ্বীপ সকল দিক থেকে একটি পরিপƒর্ণ রাষ্ট্রের আকার লাভ করে। কিন্তু অনেকেই তাকে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মামুন আব্দুল গাইয়ুমের শাসনামলে দেশটিতে তিনটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান (১৯৮০, ১৯৮৩ ও ১৯৮৮) হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের অভ্যুত্থানটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ ইব্রাহীম লুতফী। এ সময় তামিল বিদ্রোহীরা দেশটির বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিলে নিজ বাসভবন থেকে পালিয়ে যান গাইয়ুম। এই অবস্থায় দেশটিতে হস্তক্ষেপ করে ভারত।
গাইয়ুমকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা এবং দেশটিতে শান্তি ফেরাতে দেড় হাজারের বেশি ভারতীয় সেনা চলে যায় রাজধানী মালেতে। ‘অপারেশন ক্যাক্টাস’ নামের ওই অভিযানে ভারতীয় নৌ সেনারাও অংশ নেয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কোনো রক্তপাত ছাড়াই দেশটিতে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয়।
গাইয়ুমের শাসনামলের শেষ দিকে দেশটিতে স্বাধীন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জোরদার হয়। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গাইয়ুমের মালদিভিয়ান পিপলস পার্টি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে দেশটিতে ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করা হয় এবং প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (গণতান্ত্রিক) অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান মোহাম্মাদ নাশিদ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারের ঋণ, দুর্নীতি এবং ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামিতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন নাশিদ।
২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিরোধী দল প্রায় ২০ হাজার লোক নিয়ে নাশিদবিরোধী একটি সিম্পোঞ্জিয়ামের আয়োজন করে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি নাশিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির অপরাধ আদালতের প্রধান বিচারপতি আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি নাশিদ পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সরকারবিরোধীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
ওই দিনই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নাশিদ। প্রথমে জানান, মালদ্বীপের জনগণের ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন তিনি। কিন্তু পরে জানান, সেনাবাহিনী তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। নাশিদের পদত্যাগের পর সংবিধান অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ ওয়াহিদ হাসান প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। ৮ অক্টোবর আদালতে হাজির না হওয়ায় নাশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২০১৩ সালের নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জয়লাভ করেন নাশিদ। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়ে গাইয়ুমের সৎ ভাই আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের কাছে হেরে যান। ইয়ামিন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন গাইয়ুমের মেয়ে দুনিয়া। ফলে দেশটিতে আবার পরিবারতন্ত্র ফিরে আসে।
মোজাম্বিক
দ্য ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব মোজাম্বিক (এফআরইএলআইএমও/ ফ্রেলিমো)-এর আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মোজাম্বিক। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সামোরা মাচেল মার্কসপন্থী একদলীয় সরকার কায়েম করেন। কিউবা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন (সাবেক) থেকে কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পায় সামোরা। স্বাধীনতার অল্প সময়ের মধ্যেই বিরোধীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেন তিনি। ফলে সরকারপন্থী এবং এ্যান্টি-কমিউনিস্ট মোজাম্বিকান ন্যাশনাল রেজিজটেন্স (আরইএনএএমও/রেনামো) বা রেনামোপন্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। ১৯৭৭ থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধে প্রায় এক কোটি লোক মারা যায়। এ ছাড়া অসংখ্য লোক উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
১৯৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর সামোরা মাচেল বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় বসেন জোয়াকিম চিসানো।
ক্ষমতায় এসে তিনি মার্কসবাদ থেকে পুঁজিবাদের নীতি গ্রহণ করেন এবং রেনামোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯০ সালে দেশটিতে নতুন সংবিধান প্রণয়ন হয়। ১৯৯২ সালে রোম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে এবং দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।
১৯৯৪ সালে দেশটিতে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জোয়াকিমের নেতৃত্বে ফ্রেলিমো ক্ষমতায় আসে এবং আফনসো ধলাকামার নেতৃত্বে রেনামো আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করে। এরপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও ফ্রেলিমো জয়লাভ করে। এ নির্বাচনে ফ্রেলিমোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনে রেনামো। সেইসঙ্গে আবারও গৃহযুদ্ধে ফিরে যাওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু বিষয়টি উচ্চ আদালতে মীমাংসা হলে সে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে দলটি।
এরপর ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফ্রেলিমো থেকে নির্বাচিত হন আর্মান্দো গুয়েবুজা। আর রেনামো থেকে নির্বাচন করে আবারও হেরে যান ধলাকামা। ২০০৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় বসেন গুয়েবুজা।
এ ছাড়া ২০০৯ সালের নির্বাচনে গুয়েবুজার কাছে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফ্রেলিমোর প্রার্থী ফিলিপ নিউসির কাছে হেরে যান ধলাকামা। কিন্তু দেশটিতে আর কোনো বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
জিম্বাবুয়ে
১৯৮০ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করেন কানান বানানা। একই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জেডএএনইউ/জানু) বা জানু পার্টি বিজয় লাভ করে। ফলে দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতা নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। এরপর দেশটির মাটাবেলিল্যান্ড অঞ্চলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ হিসাব মতে, ওই বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় ৩০ হাজারের মতো লোক নিহত হয়েছেন।
১৯৮৭ সালে বিরোধী নেতা এনকোমোর সঙ্গে ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় একটি চুক্তিতে সই করেন মুগাবে। এরপরই ওই গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর থেকে ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলোতে বিজয়ী হয়েছে জানু-পিএফ (প্যাট্রিওটিক ফ্রন্ট) জোট।
তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী হন মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ (এমডিসি) নেতা টিএসভাঙ্গিরাই। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে বিপুল বিজয় লাভ করেন মুগাবে। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন মুগাবে। (দি রিপোর্ট ডেস্ক ফিচার)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads