রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

আইনের শাসনের বিকল্পও আইনের শাসন


আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে। আইনের শাসন তথা সুশাসনের সঙ্কট নিয়েও উদ্বিগ্ন নাগরিকরা। ‘চ্যালেঞ্জ আইনের শাসনে’ শিরোনামে প্রতিবেদনও মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরও প্রশ্ন এখন আইনের শাসন নিয়ে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারপক্ষের লোকজন বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। একই সঙ্গে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। অন্যায়-অপরাধ করলে ছাড় দেয়া হবে না দলের কাউকে। বর্তমানে এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর মনোভাব নিয়েছে।
সরকারপক্ষের লোকজন বলছেন, সরকার একই সাথে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায়। এটা খুবই ভালো কথা। অবশ্য কিছুদিন আগে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল উন্নয়ন আগে, না সুশাসন আগে? জনগণ আসলে উন্নয়ন ও সুশাসন দুটোই চায় এবং চায় একসাথেই। আর উন্নয়নেরও রয়েছে নানা রূপ। গুটি কয়েকের উন্নয়ন কিংবা দুর্বৃত্তদের উন্নয়ন জনগণের কাম্য নয়। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের সব মানুষের উন্নয়ন। শুধু ২২ পরিবারের উন্নয়ন চায়নি বলেই তো দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও জনগণ কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক উন্নয়নের রূপ দেখতে পায়নি। আসলে গণতান্ত্রিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুশাসন তথা আইনের শাসন। এর অভাবে প্রকৃত উন্নয়ন ও স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ এখনো সম্ভব হয়নি।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বন্দুকযুদ্ধে সরকারি ঘরানার কিছু মানুষকে নিহত হতে দেখা গেছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে সঙ্কট মোকাবিলার কৌশল গ্রহণ না করে বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে সরকারের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। প্রসঙ্গত তারা অনুরাগ ও বিরাগের মনোভাব পরিত্যাগ করে ন্যায়ের চেতনায় সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে, সরকারদলীয় লোকদের এখন ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন? এমন পরিস্থিতি তো একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ঘরানার লোকজন প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়েছে, আইনের শাসনের বদলে তারা দলীয় শাসনের সুখ ভোগ করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন তো তারা আর কথা শুনতে চায় না- সরকারের ইমেজ নষ্ট হলেও না। অতএব, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্রসফায়ার আইনের শাসনের বড় অন্তরায়। এতদিন বাংলাদেশের কোনো সরকারই এটা মানেইনি যে, ক্রসফায়ার হচ্ছে। তবে এখন নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই এটা করা হচ্ছে। সরকারের একজন মন্ত্রী এমনভাবেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন যে, দলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আবার সরকারের অন্য একটি অংশ প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করছেন। তবে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, আইন লঙ্ঘন করে এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে তার মূল্য সরকারকেই দিতে হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ-র‌্যাবের মধ্যে হত্যা করার একটি সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। এটি যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। অতএব, আমরা মনে করি, হুমকির পথ পরিহার করে এখন সরকারের উচিত হবে অনুরাগ-বিরাগ তথা দলকানা মনোভাব বর্জন এবং ন্যায়ের চেতনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়া। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আইনের শাসনের বিকল্পও আইনের শাসনই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads