শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

জাসদ নিয়ে ঝড় : পেছনে কোন মতলব?


আজ জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি অংশের রাজনৈতিক গোলা নিক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। অবশ্য আমরা যেটাকে বলি Topical subject  সেটি হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি।  সেটার ওপরই লেখার কথা। কিন্তু দেখলাম, সব পত্রপত্রিকাই এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করছে। এছাড়া বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং পলিটিশিয়ানরা এ ব্যাপারে তাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন। সুতরাং আমার ধারণা, পাঠক ভাইয়েরা এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই একটি  ধারণা গঠন করে নিয়েছেন। তাই জাসদ নিয়েই আজ আলোচনা করব। তবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে একটি কথা অবশ্য এখনই বলতে হবে। সেটি হলো, কিছুদিন আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি ১২০ ডলার। এখন সেটি নেমে এসেছে ৪০ ডলারে। তাহলে আমাদের তেলের দাম যা আছে তার দুই তৃতীয়াংশ কমা উচিত। সেটি না হয়ে উল্টো তেলের দামও বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের দামও  বেড়েছে। আর গ্যাসের তো কথাই নাই।
বাবু সুরঞ্জিত  সেনগুপ্তের রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। তার কথা বলার ধরন ধারণ আমর বিরক্তি উৎপাদন করে। শুধু তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজই নয়, তার মুখের জবানগুলোও Irritating, অর্থাৎ গা জ্বালা ধরায়। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে তার একটি উক্তি আমার পছন্দ হয়েছে। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে সরকার সাথে সাথেই সে পণ্যটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের বৃদ্ধির আনুপাতিক হারের চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন কোনো পণ্যের দাম কমে যায় তখন সরকার সে পণ্যটির দাম দেশের অভ্যন্তরে কমায় না। এটি কোনো ভাল নীতি নয়। আজকের মত জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে এটুকু বলে জাসদ প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি।
জাসদের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক গোলা নিক্ষেপ সম্পর্কে সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয় The first political salvo was fired by AL leader Sheikh Selim. অর্থাৎ প্রথম রাজনৈতিক গোলাটি নিক্ষেপ করেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম। শেখ সেলিম একজন এমপি এবং শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তিনি যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির আপন ছোট ভাই।  শেখ হাসিনা এবং তারা ফার্স্ট কাজিন। সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র এবং শেখ সেলিমের ভাতিজা। এসব বর্ণনা থেকেই শেখ সেলিমের রাজনৈতিক অবস্থান বোঝা যায়।
সেই শেখ সেলিম কিন্তু তার আক্রমণটা শুরু করেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধ কালে এস  ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মুক্তিযুদ্ধ কালে ৩ জন কমান্ডারের নামে তিনটি বাহিনী গঠিত হয়। এরা হলেন (১) জেনারেল জিয়াউর রহমানের নামে ‘জেড ফোর্স’, (২) জোনারেল খালেদ মোশাররফের নামে ‘কে ফোর্স’ এবং (৩) জেনারেল শফিউল্লাহর নামে ‘এস ফোর্স’।  শেখ মুজিব হত্যার সময় জেনারেল শফিউল্লাহ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। শেখ সেলিম শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে শেখ মুজিব হত্যার সময় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আনেন এবং তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আক্রমণ রচনা করেন। তিনি এতদূরও বলেন যে, ঐ সময় জেনারেল জিয়া যদি সেনা বাহিনীর প্রধান থাকতেন তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধুকে এমন করুণভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। একই বক্তৃতায় এরপর তিনি রাজনৈতিক আঘাত হানেন জাসদের বিরুদ্ধে।
॥দুই॥
 শেখ ফজলুল করিম  সেলিম অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি  মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য  বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।
 শেখ  সেলিম বলেন, কর্নেল তাহের জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সহানুভূতিশীল হয়ে যাকে বিআইডব্লিউটিএর  চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন, তিনিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাহেরের কী পরিণতি হয়েছিল, তা সবাই  দেখেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার  প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক  শেষ  না হতেই একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ  অভিযোগ করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপসহ তৎকালীন বাম সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার  প্রেক্ষাপট  তৈরি করেছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর  সেদিন যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল জাতি তাদের ভুলেনি। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়  শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি জাসদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল, কথিত  সেই বিপ্লবীদের কথা আমরা ভুলিনি। পঁচাত্তরের আগে বিপ্লবের নামে রাজনীতিতে অস্থির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে সামরিক বাহিনী হত্যা করতে সাহস  পেয়েছিল। মঙ্গলবার ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে হল শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
দল নিরপেক্ষ শিক্ষিত সমাজ ভেবে পাচ্ছেন না যে, ৪০ বছর পর জাসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতার এই আক্রমণ কেন? এখানে সবচেয়ে বড় স্ববিরোধিতার বিষয় এই যে, মাহবুব উল আলম হানিফ এবং অন্যেরা শুধু জাসদ নয়, সমস্ত বাম পন্থী দল এবং নেতার বিরুদ্ধে অনুরূপ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই পটভূমিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জনাব হাফিজউদ্দিন একটি মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা সশস্ত্র তৎপরতা এবং শেখ মুজিবের পতনের পথ প্রশস্ত করার যে অভিযোগ করেছেন সেগুলো সবই ঠিক। তাহলে সেই সব ব্যক্তিকে নিয়ে আবার মন্ত্রিসভা গঠন কেন? এসব অভিযোগের পরেও তারা মন্ত্রী থাকেন কিভাবে?
হঠাৎ করে জাসদ এবং বামপন্থীদের বিরুদ্ধে এই বিষোদগার কেন, সে প্রশ্ন এখন সুধী সমাজ এবং রাজনৈতিক মহলে উত্তপ্ত রাজনীতির টপিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কিছুক্ষণ পরে কথা বলব। কিন্তু এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাসদের দুই নেতা সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই তথ্যটি এখন হট ডিসকাশনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর  চন্দ্র রায় বলেছেন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার  হোসেন ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলীবর্ষণ করেন। তিনি বলেন, গুলীটা প্রথম আনোয়ার  হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর  নেতৃত্বেই শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয়  প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, ১৯৭৪ সালে আমি জাসদে ছিলাম। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হল, আমরা  গ্রেফতার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি  ঘেরাও করব। কিন্তু  ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা জানতাম, মন্ত্রীর বাড়ির  গেটের সামনে যাব, সরকারের পক্ষ  থেকে  কেউ আসবে, স্মারকলিপি  নেবে। কিন্তু গুলীটা প্রথম আনোয়ার  হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর  নেতৃত্বেই শুরু হল। ইনি হলেন, সেই আনোয়ার হোসেন যিনি কিছুদিন আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি কর্নেল তাহেরের আপন ছোট ভাই। যখন আত্মরক্ষার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসভবন  থেকে পাল্টা গুলী এল, তখন আমরা দিগি¦দিক  ছোটাছুটি করছি। কারও হাত  নেই, কারও পা  নেই। কতজন মারা  গেছেÑ তখন জানার সুযোগ ছিল না। গয়েশ্বর আরো বলেন, ’৭৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক  দেয় জাসদ।  সেই হরতালে  বোমা ব্যবহারের জন্য  বোমা বানানোর দায়িত্ব  দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নিখিল চন্দ্র সাহাকে। যাত্রাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে নিখিল  বোমা বানাতে যায়।  বোমাতে  মেশানো জিনিস  কোনটা আগে দিতে হয়, পরে দিতে হয়Ñ এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মধ্যে একটা  বোমা ফাটে। নিখিলের সম্মানার্থে  পেট্রোল  বোমার নাম রাখা হল ‘নিখিল’। আপনারা তথ্য মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করবেন,  বোমার অপর নাম নিখিল ছিল কি না? বিএনপি এই  নেতা অভিযোগ করেন, হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র রাজনীতি শুরু করেছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য।’
॥তিন॥
এখন সেই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। এত বছর পর হঠাৎ করে জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ক্ষেপে গেল কেন? এ সম্পর্কে বাজারে অনেক গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। গুজবকে গুজব বলেই আমি বিবেচনা করি। কিন্তু এবারের গুজবে দেখলাম একটি রহস্যময়তা এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস। একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, আওয়ামী লীগের অনেক পদবঞ্চিত নেতা মনে করেন যে, অনেক বামপন্থী ও কমিউনিস্ট আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে এবং মন্ত্রিসভায় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এরা হলেন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর ফলে শেখ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শেখ সেলিম এবং শেখ মনির ছেলে ব্যারিস্টার তাপসসহ আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মন্ত্রী হতে পারেন নি। এখন তারা মনে করছেন যে, এসব বামপন্থী এবং কমিউনিস্ট নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিতে পারলে মন্ত্রিসভায় তাদের সুযোগ মিলতে পারে। এ জন্যই জাসদের বিরুদ্ধে এই আক্রোশ।
এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক মহল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কারণ তারা মনে করে যে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা। প্রধান বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপিসহ সমস্ত বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। বিদেশীদের কাছে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য সরকার নাকি নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু সেই নির্বাচনে যাতে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত না হয়ে সরকার ইলেকশন  দেবে না।
সরকার নাকি এরকম চিন্তা ভাবনা করছে যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেগম জিয়াসহ বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার বিচার করা হবে এবং বিচারে দ-প্রাপ্ত হলে তারা নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান মহাজোটেরই একটি অংশ অর্থাৎ ইনুর জাসদ, মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, দীলিপ বড়–য়ার সাম্যবাদী দল এবং এরশাদের জাতীয় পার্টিকে কিছু আসন দিয়ে বিরোধী দলে রাখা হবে। সেটির মহড়া হিসেবে বামপন্থী মন্ত্রীদেরকে কেবিনেট থেকে সরানো হবে। তাদেরকে পরবর্তী নির্বাচনে জিতিয়ে এনে তাদেরকে দিয়েই বিরোধী দল গঠন করা হবে। সে জন্যই অর্থাৎ কমিউনিস্টদেরকে ড্রপ করার জন্যই জাসদ ও গণবাহিনীর  নেতা হাসানুল হক ইনু এবং অন্যান্য বামপন্থী নেতার বিরুদ্ধে সরকারি দল থেকেই মারাত্মক সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ মন্ত্রিসভা  থেকে জাসদ সভাপতিকে সরিয়ে তার দলকে আগামী দিনের নির্বাচনী ময়দানে  ঠেলে  দেয়ার সরকারি পরিকল্পনারই অংশ। গত শুক্রবার একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে আওয়ামী ঘরানারই একজন কলামিস্ট লিখেছেন, ইনুর নিজের ও দলের  কোন গণভিত্তি না থাকলেও  দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি  নেত্রী  বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি  থেকে মাইনাস করতে বলেছিলেন।  সেই ইনুকেই আজ সরকার  থেকে মাইনাসের নকশা অনুসারে এই বিতর্কের ঝড়  তোলা হয়েছে।
ঐ কলামিস্ট লিখেছেন, ১৫ই আগস্ট না ঘটলেও গণবাহিনী মুজিব সরকার উৎখাতের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে  ফেলতো। আজকের সরকারের পার্টনার রাশেদ খান  মেনন, দীলিপ বড়ুয়াদের চীনাপন্থী রাজনীতির তৎপরতাও কম ছিল না।  সেদিন সিপিবি আর ন্যাপ গণমানুষের আকাক্সক্ষার বিপরীতে ক্ষমতার দাসত্ব বরণ করেছিল। ভাঙনের পথে পথে  যে জাসদ রিক্ত-নিঃস্ব, তাকে মুজিব কন্যা  নৌকায় তুলেই না জাতে এনেছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতো মন্ত্রণালয় জাসদ সভাপতি ইনুর হাতে তুলে দিয়েছেন। এর আগে সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়াকেও মন্ত্রী করেছিলেন। সাম্যবাদী দল বঙ্গবন্ধু হত্যাকে সমর্থনও করেছিল। বর্তমান সরকারে রাশেদ খান  মেননও রয়েছেন। ’৭৫ সালের পরেও এদের রাজনীতি ছিল  শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ বিরোধী। বিএনপির ওপর সরকারের খড়গনীতি চরম পর্যায়ে নিয়ে দলটিকে  যেভাবে মাটিতে শুইয়ে  দেয়া হয়েছে,  সেখানে ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলের মঞ্চে পাঠিয়ে সরকার আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা  শেষ করতে চায় বলে মনে করেন ঐ কলামিস্ট। 
আসিফ আরসালান

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads