শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৫

মাত্র গত এক মাসে সরকারি দলের সন্ত্রাসের রেকর্ড


বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাস এখন একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। আর এটা যদিও হয় জামায়াত-শিবির, বিএনপি অথবা ২০ দলের নামে, তাহলে কোন কথাই নাই তারা এক নম্বর জঙ্গী। কিন্তু বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস হয় তার একটা বিরাট অংশের কৃতিত্বের দাবিদার আওয়ামী শিবির। সেটা এখন আর আলোচনায় নয় বরং বাস্তবে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে খোদ দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের আলঙ্কারিক পদ থেকে গোস্মা করে পদত্যাগ করা সর্বজনজ্ঞাত ঘটনা। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তো উষ্মা প্রকাশ করেই থাকেন তাদের বিষয়ে। তাছাড়া ছাত্রলীগ কর্তৃক সিলেট সরকারি এম.সি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকে কাঁদানো একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। সন্ত্রাস তো একটি বেআইনী হাঙ্গামা। কিন্তু জঙ্গিবাদ কি? এটা মনে হয় জামায়াত, শিবির বা কোন ইসলামী সংগঠন কর্তৃক অনুষ্ঠিত হাঙ্গামা। কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগ কোন সন্ত্রাস করলে সেটা কোন সংজ্ঞায় পড়বে? সেটা এখন সংজ্ঞায়িত হওয়া দরকার। বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস হয় তার ৯০ ভাগই এই আওয়ামী শিবিরের একক কৃতিত্বের দাবিদার তাতে সন্দেহ নেই এবং তাদের সমকক্ষ কেহ আছে বলে আমাদের জানা নেই। গত মার্চ মাসে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতায় অন্তত ১০ জন হত্যাসহ ১১৫ জনের বেশি আহত হয়েছে। নিহতরা হলো (১) লক্ষ্মীপুরের আরিফুর রহমান ফরহাদ (যুবলীগ ও (২) মনু মিয়া (যুবলীগ, (৩) নাটোরের সিরাজ সিকদার (যুবলীগ), (৪) বগুড়ায় মানিক (যুবলীগ), (৫) শরীয়তপুরের জাজিরায় খিদির ব্যাপারী, (৬) পাবনার ঈশ্বরদীর বাধন খন্দকার (ছাত্রলীগ), (৭) যশোর মনিরামপুরের মনোয়ার হোসেন (আওয়ামী লীগ), (৮) চাঁদপুরের মুক্ত শেখ (যুবদল), (৯) ফেনী শহরের দেলোয়ার হোসেন (যুবদল), (১০) মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জালাল আহমেদ (শিবির)। তাদের সন্ত্রাসের একটি সামান্য চিত্র যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে তার একটি অংশ তুলে ধরা হলো :
গত ২ মার্চ সোমবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের সৈকত আবাসিক হোটেল প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্য মেলা চলাকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগের নেতা কাজী মোর্শেদ আলম বাবু কর্তৃক অর্ধশতাধিক গুলীবর্ষণ করেছে। একই দিনে যশোরের কেশবপুর উপজেলা পরিষদে ছাত্রলীগের নেতা মুকুল ও পলাশের নেতৃত্বে হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যানন্দকাঠি ইউপি সদস্য আব্দুর রশীদকে আহত করে এবং কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ৩ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম. হলে আমিনুল ইসলাম নামে প্রথমবর্ষের ছাত্রকে পিটুনী দেয় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার যুবলীগের ভাঙ্গাখা ইউনিয়নের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ফরহাদকে দলীয় কোন্দলের ফলে স্থানীয় মিরিকপুর বাজারে একটি স’মিলের ভিতর থেকে ভোরে তার গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগ কর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পারভেজ নামে একজন ছাত্রকে পিটুনী দেয়। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম জীবনকে ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামে পুকুর নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। ৫ মার্চ রাতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নাটোর সদরের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সিরাজ সিকদার খুন হয়েছে এবং সোহেল ও সৌরভ নামে দু’জন আহত হয়েছে। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে শহরের ঝাউতলা মোড়ে যুবলীগের দলীয় কোন্দলে এ ঘটনা ঘটে। ঐদিনই সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের সাবগ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সাবগ্রাম বন্দর কমিটির সভাপতি মানিক (৩৫) খুন হয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকার সাভারে ঝুট ব্যবসা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে মানকি, ভাষানীসহ ৫ জন আহত হয়েছে। একই সাথে ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাসা ভাঙচুর ও ভিসির একান্ত সচিবের বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ৬ মার্চ ফেনীর লস্করহাটে দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সহকারী সম্পাদক রাশেদুল হাসানকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা তুলে নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। হজ্জে যাওয়ার জন্য সকালে পৌনে ১১টায় তথ্য সেবা কেন্দ্রে কাজ করছিলেন সাংবাদিক রাশেদ। ঐ দিনই খুলনায় বিএসএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকে কেন্দ্র করে সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ কেন্দ্র ছাত্রলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম বাবুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দু’বছরের কারাদ- দিয়েছে। ৭ মার্চ সকাল ১১টায় যশোর সরকারি এম.এম কলেজে ভর্তিচ্ছুকদের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল করীমকে ধরে ফেলে এবং পুলিশে দেয়। একই তারিখ রাতে পটুয়াখালী জেলার দুমকী থানার এএসআই মো. আউয়াল হোসেনকে থানার মধ্যেই মারধর করে আহত করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। পরে বাশার গ্রেফতার হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। ঐ দিন নাটোর শহরের দক্ষিণ বড়গাছা বাজার এলাকায় একটি বাড়ি থেকে যুবলীগ নেতা মাসুদ রানাকে পিস্তল, রিভলবার ও ৫৬ রাউন্ড তাজা গুলীসহ আটক করে। খবরে আরও প্রকাশ একই তারিখ পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছায় আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার নিজস্ব জমিও দখল করে যুবলীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় পরে পুলিশ সাইন বোর্ড তুলে দেয়। ৭ ও ৮ মার্চ কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মুগারচরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে খাল কাটার বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’দফা সংঘর্ষ হয় এবং ১০ জন আহত হয়। ৮ মার্চ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের ফুলমালীর চালা গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিনের বাড়ির খড়ের গাদা থেকে ৯টি পেট্রল বোমা ও ৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৯ মার্চ দুপুরে জয়পুরহাটে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় আক্কেলপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা রাশেদুল আলম সবুজ আহত হয়েছে। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাসুম বিল্লাহ টিএসসিতে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়। ঐ দিনই সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি শোডাউন করতে দেখা যায়। ১০ মার্চ ঢাকা বিদ্যুৎ ভবনে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গোলাগুলীতে গুলীবিদ্ধ হয় ৪ জন। একই তারিখ বরগুনার তালতলীতে ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান তনুসহ কুপিয়ে আহত করে ৩ জনকে নিজ দলীয় কর্মীরা। অন্যদিকে ঐ ১০ মার্চ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা উপনির্বাচনে তৃণমূলের মতামতের বাইরে প্রার্থী দিলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হলেও কেহ প্রত্যাহার করেনি। ফলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও হুইপ সমর্থিত প্রার্থী মুখোমুখি অবস্থানে।
১১ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সমালোচনা করে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এবং যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ দল আয়োজিত পদযাত্রা পূর্ব এক সমাবেশে লালদীঘি ময়দানে বলেছেন, চবিতে ছাত্রলীগ রাজনীতির নামে বলি খেলছে। একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। একই দিনে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা হাসান কবীর রাজা একই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা হাসান গাজীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সাতক্ষীরা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে হাসান। একই দিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম হলের ৫ ছাত্রকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় সকাল ১১টায় স্থানীয় চরকাঠি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবদল নেতা মুক্ত শেখকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় এবং মারধর করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ মার্চ মুক্ত মারা যায়। ১২ মার্চ পাবনা শহরের রামচন্দ্রপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে দু’জন গুলীবিদ্ধ হয়। একই দিন চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অবাঞ্ছিত নেতা পিযুষকান্তি বর্মণকে ছাত্রলীগের একাংশ মারধর করে। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ রফিক-জব্বার হলের ক্যান্টিন মালিক সোহেলকে পিটিয়ে আহত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ যুগ্ম-সম্পাদক মিঠুন কুন্ডু। বরিশালে বাণিজ্য মেলায় মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে জখম হয় ১ জন। ঐ ১২ মার্চ বিকেলে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়ায় ছাত্রলীগ যুবলীগের চার কর্মীকে আহত করে নিজ দলীয় কর্মীরা। একই দিনে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ১ জন। লালদীঘিতে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কমী আল-আমিন বিজয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৩ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহসহ ৩ জন আহত হয়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লামাপাড়ায় যুবলীগ নেতা মোফাজ্জেল হোসেন চুন্নুর অস্ত্রভান্ডারে তার শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তার মুন্নিকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলী, দুটি ম্যাগজিন ও দুটি চাইনিজ কুড়ালসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে যুবলীগ নেতা মনু মিয়া মারা যায়। ১৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তার ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়। ঐ দিন রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুরে এক এনজিও কর্মীকে ধর্ষণ করেছে রাব্বি, আরিফ ও অজ্ঞাত একজন যুবলীগ কর্মী। বগুড়ার নন্দীগ্রামে ঠিকাদারী কাজ ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে দুজন জখম হয়। ১৫ মার্চ বিকালে চট্টগ্রামের খুলশী থানার লালখান বাজারে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ট্রাকে করে এসে চারটি প্রতিষ্ঠানে হামলা করে তান্ডব চালায়। রাজশাহী শহরে বাংলাট্রাক ক্রিকেট একাডেমিসংলগ্ন সড়কে দুই যুবককে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ১৬ মার্চ খুলনার ডুমুরিয়ায় ইউপি সদস্যের নিকট হতে কুরবানীর গোশত ছিনতাই করে নেয় যুবলীগ নেতা আসফার হোসেন, শেখ মফিজুল ইসলমা, তোফাজ্জাল ও আব্দুল হালিম। বাধা দিলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ফকিরকে। একই দিন বরিশাল সার্কিট হাউসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনে ছাত্রলীগ দুই গ্রুপের হাতাহাতি হয়। ঐ দিনই শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বাজারে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে খিদির বেপারী নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে শ্রমিক লীগ নেতা নূর হোসেন কাজীর লোকজন। ১৭ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক আলোচনা সভায় যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দুঃখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে টাউট-বাটপার, খুনি, ভূমি দস্যুদের ছবি ছিঁড়ে ফেলুন! বরিশালের গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় পুলিশসহ ১২ জন আহত এবং ১৫টি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় ছাত্রলীগের গণপিটুনিতে নিহত হন শিবির কর্মী জালাল আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ছাত্রলীগের গোলাগুলীতে আহত হয় ৯ জন। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চারিপাড়া চৌমুহনী বাজারে আওয়ামী লীগের অফিসের ব্যানার টাঙ্গিয়ে জমি দখল করা হয়। ১৮ মার্চ পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে চাঁদা ও জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার গুলীতে ছাত্রলীগ নেতা বাঁধন খন্দকার মারা যায়। ঐ দিন রাতে ঢাকার তেজগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মানিককে পেটায় কর্মীরা। একইদিন বগুড়ায় চাপাতিসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হাবিবুর রহমান সন্ধান গ্রেফতার হয়। এদিন মাগুরার আমুড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২৫টি বাড়ি ভাংচুর ও ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলীবর্ষণ করে। ১৯ মার্চ বগুড়া শহরে আওয়ামী লীগ অফিসে দলীয় কর্মী জুবায়ের হাসান আতিক ছুরিকাঘাতে আহত হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলী ছোঁড়ে।
২১ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল থেকে মুক্তিযোদ্ধাসন্তান আব্দুল হান্নানকে অস্ত্রের মুখে হল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ এবং পরে মুক্তিপণ পেয়ে ছেড়ে দেয়। ২৩ মার্চ সিলেটের জিন্দাবাজারে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপাত্য বিস্তারে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘটিত হয়। নীলফামারী জেলার ডোমারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ১ জন। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বগঞ্জে যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সেখানেও আহত হয় ১ জন। ২৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে ৫ অটোবাইক চালককে পিটিয়ে জখম করে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু। কুমিল্লার দেবিদ্বারে পেট্রলবোমাসহ আওয়ামী লীগ কর্মীর স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যুবলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়েছে ছাত্রলীগ। সেখানে অস্ত্র উদ্ধার এবং ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফেনী শহরে যুবদলের নেতা দেলোয়ার হোসেনকে যুবলীগ কর্মীরা আহত করে এবং শহরের কসমোপলিটন হাসপাতালে ২৮ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৫ মার্চ মাগুরার মোহাম্মদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসে ঢুকে কর্মচারীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২৬ মার্চ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ৫ জন। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এমপির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলামকে মারধর করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ২৭ মার্চ রাত ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কর্মীদের পেটাল ছাত্রলীগ। রাজশাহীর রাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজন গুলীবিদ্ধসহ আহত ৬ জন। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার স্বাধীনতা দিবসের চাঁদা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সংঘর্ষে আহত ৪ জন। একই রাতে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলায় গোলাম রব্বানী নাদিম নামে সাংবাদিক আহত হয়েছে। ২৯ মার্চ যশোরের মনিরামপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের হামলায় মনোয়ার হোসেন নিহত এবং বাবলু রহমান নামে এক কর্মী আহত হয়। ২৯ মার্চ ফরিদপুরের মধুপুর এবং চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন সরকারদলীয় লোকদের সন্ত্রাস, ভোটডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। ফেনীতে যুবলীগ নেতার গুলীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আহত হয়। রাজশাহীতে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে পুলিশকে অস্ত্র প্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলীবিদ্ধ হয়ে গ্রেফতার হয় ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুস সালম শুভ, হাবিবুল্লাহ খান পারভেজ ও সানোয়ার হোসেন তুষার। সম্প্রতি যুবলীগের ক্যাডাররা বরগুনার তালতলী উপজেলার চান্দিতলা গ্রামের ১৪টি হিন্দু পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করেছে বলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এর প্রতিবাদ করেছে। ৩০ মার্চ মানিকগঞ্জে বেউথা মুকুল ফৌজ ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয়। ৩১ মার্চ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধে সড়ক অবরোধ করে এ মাসের ২৩, ২৫ ও ৩১ তারিখ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল ম-ল। তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম।
মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads