বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বাড়ছেই


সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফাঁদ পেতে বিরোধী দলের তৃণমূল নেতাদের আটক করার অভিযান চালাচ্ছে বলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গত সোমবার ঢাকা মহনগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ তুলে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় সমতা দূরের কথা বিরোধী দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঠেই নামতে দেয়া হচ্ছে না। প্রার্থী ও সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করতে নানা রকম হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি নারী প্রার্থীদের বাসায়ও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এসবের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য ৫ জানুয়ারির ছকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই পুলিশ আতংকবাদী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। আতংকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সেনা মোতায়েনের দাবিও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। ওদিকে একই দিন একটি জাতীয় দৈনিক তার প্রধান শিরোনাম করেছে ‘বিএনপির প্রার্থীরা এখনও মাঠছাড়া’। খবরে  রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে- যেগুলো প্রমাণ করে, বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলের প্রার্থীরা আসলেও নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে এবং সভা-সমাবেশ করতে পারছেন না। তাদের কর্মী বৈঠক পর্যন্ত পন্ড করে দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের তাড়ার মুখে পালিয়ে যাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। মেয়র প্রার্থীরাও একই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের পাশাপাশি তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংংস্থাগুলো। উল্লেখ্য, বিরোধী দলের সম্ভাবনাময় প্রায় সকল প্রার্থীর বিরুদ্ধেই আগে থেকে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সব মিলিয়ে এমন ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করা হয়েছে, যার ফলে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ধাওয়ার মুখে রয়েছেন। তাদের পক্ষে তাই নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বললেই চলে।
আমরা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের চালানো এই উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতার ও ধাইয়ে বেড়ানোর অভিযান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, গণতন্ত্রে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে কোনো নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত। এই সুযোগ প্রত্যেক প্রার্থীরই সমানভাবে থাকা দরকার। তাছাড়া স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সকলেই ভাষণে-বিবৃতিতে লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ডের আশ্বাস দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও বহুবার একই আশ্বাসের কথা শুনিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো প্রার্থীদের হয়রানি ও গ্রেফতার না করার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে তিন সিটি করপোরেশনের কোনো একটি এলাকাতেও বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে জামায়াতের পক্ষ থেকে যথার্থই বলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন নামের আড়ালে ক্ষমতাসীনরা যেভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন আসন্ন সিটি নির্বাচনেও সেভাবেই অর্থাৎ ছলে-বলে-কৌশলে তারা দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে চান। প্রয়োজনে একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনেও আপত্তি নেই তাদের। এর পেছনেও বিশেষ কারণই রয়েছে। সে কারণটি হলো, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সকল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা লজ্জাকর পরাজয়ের মুখে পড়েছিলেন। মাত্র সেদিনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের আশংকা করছেন। এই আশংকা সত্য বলেই তারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যাতে বিএনপি ও জামায়াতের মতো প্রধান দলগুলো নির্বাচনে অংশই না নিতে পারে। অংশ নিলেও তাদের প্রার্থীরা যাতে প্রচারণা চালাতে এবং জনগণের কাছে ভোট চাইতে না পারেন। এজন্যই মামলা ও গ্রেফতারের জন্য ধাইয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে ভীতি-আতংক ছড়িয়ে দেয়ার অপকৌশল নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। যে কোনোভাবে তিন মহানগরীর সিটি করপোরেশনকে নিজেদের দখলে নিতে চাচ্ছেন তারা। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু ও গণতন্ত্রসম্মত নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে পুলিশের চলমান অভিযান বন্ধ করা দরকার। এর পাশাপাশি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাও প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে কাউকেই আত্মগোপনে থেকে প্রচারণা চালাতে না হয়। বলা দরকার, আতংকমুক্ত পরিবেশে তৎপরতা চালানোর সুযোগ দেয়া এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক কর্তব্য। কমিশনকে অবশ্যই লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, সব দলের প্রার্থীরা যাতে বাধাহীনভাবে সভা-সমাবেশ করতে ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন। পুলিশ যাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতারের নামে প্রার্থী এবং তার কর্মী ও সমর্থকদের ধাইয়ে বেড়াতে ও আতংক ছড়িয়ে দিতে না পারে সে বিষয়েও কমিশনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু মুখে বললে চলবে না। ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, বিএনপি ও জামায়াতের মতো প্রধান এবং ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত দলগুলোকে পুলিশ দিয়ে নির্মূল করা যায় না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads