শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৫

বর্ষবরণের নামে জাতিবিরোধী কর্মকান্ড


গত ১৪ এপ্রিল ছিল নতুন বাংলা সন ১৪২২-এর প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্যোগে এবারও যথারীতি রাজধানী এবং দেশের বড় বড় শহরগুলোতে মহা ধুমধামের সঙ্গে নববর্ষের আনন্দ-উৎসব করা হয়েছে। পাঠকরা লক্ষ্য করবেন, এখানে কিন্তু সারা দেশ কিংবা দেশের সকল স্থানের কথা বলা হয়নি। কেন হয়নি, তার উত্তর দেয়ার আগে দুটি প্রসঙ্গে বলতে হবে। প্রথম প্রসঙ্গ মরহুম আতাউস সামাদের একটি মন্তব্য। বিবিসি’র সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠা আতাউস সামাদ দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ছিলেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন তিনি। অসাধারণ ছিল তার দেশপ্রেম। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তো বটেই, সব সরকারও তাকে যথেষ্ট সমীহ করতো। অনেকেই পরামর্শের জন্য তার কাছে যেতেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি বর্তমানে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ দৈনিক আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইন্তিকালের কয়েকদিন আগেও তিনি কলাম লিখেছেন। আমার সৌভাগ্য, বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে তার জীবনের শেষদিনগুলোতে এই দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের সান্নিধ্যে যাওয়ার এবং তার সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাকে সামাদ ভাই ডাকতাম। ২০১১ সালের কথা। সেবার পহেলা বৈশাখের দিন দুই আগে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সহকর্মীকে সম্পাদকীয় সম্পর্কে ব্রিফিং দেয়ার সময় আতাউস সামাদ সেই বিশেষ গোষ্ঠীর বিষয়ে বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন, পহেলা বৈশাখে যারা ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার মাধ্যমে উৎসব করে, আনন্দ-স্ফ’র্তিতে মেতে ওঠে। সামাদ ভাই তাদের ‘ফিলদি রিচ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশের কৃষক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন এই গোষ্ঠীর লোকজন আসলে নোংরা রকমের ধনী- ‘ফিলদি রিচ’। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রঙিন কাপড়-চোপড় পরা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া এবং গান-বাজনা করাসহ যা কিছু তারা করে তার সঙ্গে বাংলাদেশীদের জীবন ও সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। বাঙালিয়ানার নামে তারা আসলে অর্থ-বিত্ত প্রদর্শনের নোংরা কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। বিষয়টিকে আতাউস সামাদ সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে কৃষকদের সঙ্গে তামাশা এবং অপরাধ বলে মনে করতেন। সম্পাদকীয়ও সেভাবেই লিখতে বলেছিলেন। লেখাও হয়েছিল। পাঠকরা চাইলে ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল সংখ্যা দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদকীয়টি পড়ে দেখতে পারেন। 
সাংবাদিক আতাউস সামাদ যে সামান্যও বাড়িয়ে বা অসত্য বলেননি এবং তার ব্যাখ্যায় যে কোনো ভুল ছিল না, পহেলা বৈশাখের উৎসব-আনন্দের দিকে লক্ষ্য করলে যে কেউ তা বুঝতে পারবেন। সেদিকে যাওয়ার আগে একটি বিশেষ খবরের উল্লেখ সেরে নেয়া দরকার। এবারের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুধু নয়, গণজাগরণওয়ালাদের শাহবাগ এবং তার পার্শ্ববর্তী চারুকলা ইন্সটিটিউটও নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। সংখ্যায় তারা ১৫ না ৫০ জন ছিলেন সেটা কোনো বিষয় নয়, আপত্তি ও প্রতিবাদের কারণ হলো, এত বড় একটি জাতীয় উৎসবে- তাও আবার দিনের বেলায় এবং হাজার হাজার মানুষের সামনে এই নারীদের বিবস্ত্র করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে ধর্ষণও করেছে দুর্বৃত্তরা। অথচ অনেক আগে থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছিল। ডগ স্কোয়াড নিয়েও র‌্যাব ও পুলিশকে মহড়া দিতে দেখা গিয়েছিল। গোপন বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য সিসি ক্যামেরাও নাকি লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এতসব সতর্কতামূলক আয়োজনের পরও ‘কীর্তিমানেরা’ তাদের কাজ সেরে নির্বিঘ্নে চম্পট দিয়েছে। পুলিশ তাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি। কেন পারেনি সেকথা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল পর্যন্ত জারি করেছেন। ওদিকে স্তম্ভিত হয়েছে সমগ্র জাতি। লজ্জা ও ঘৃণায় মাথা নুইয়ে গেছে মানুষের।
এবার আসি মরহুম আতাউস সামাদের সেই মন্তব্য প্রসঙ্গে। পহেলা বৈশাখের আগের কয়েকদিন ধরে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, রাজধানীর কাওরানবাজার এবং মাওয়া ঘাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবার দেড় দুই কেজি ওজনের এক একটি ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৫/১৬ হাজার টাকায়। ভাববেন না, ‘এত’ বেশি দাম বলে মাছ কেনার মানুষের অভাব ঘটেছিল। বাস্তবে ‘এত’ দাম হাঁকানোর পরও বড় সাইজের কোনো মাছ পাওয়া যায়নি। রাজধানী থেকে এক ব্যক্তি মাওয়া ঘাটে গিয়ে একাই কিনেছেন তিনটি ইলিশ- নগদে ৪৮টি হাজার টাকা দিয়ে। বেশ কয়েকটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে এমনকি ২০ হাজার টাকা দরে। সেগুলোও কিনে এনেছেন ‘ঢাকার পার্টি’! দৈনিকগুলোর খবরে তথ্য-পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশের হাট-বাজারগুলোতে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে কোনো কৃষক যদি একটি ইলিশ কিনতে চাইতেন, তাহলে তাকে অন্তত ২০ মণ ধান বিক্রি করতে হতো। অর্থাৎ একটি ইলিশের দাম পড়তো ২০ মণ ধানের সমান! বলা বাহুল্য, এমন অবস্থা কল্পনা করা যায় নাÑ যেখানে পান্তা দিয়ে ইলিশ খাওয়ার জন্য গ্রামের গরীব কৃষক ২০ মণ ধান বিক্রি করবেন। একথারই সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে মাওয়া ঘাটে। সেখানে ‘ঢাকার পার্টি’রা যখন ৫৫/৬০ হাজার টাকায় এক হালি ইলিশ কিনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন, তখন একই মাওয়া ঘাটে আগত কৃষক ও সাধারণ মানুষ কোনোভাবে ছোট ছোট পুঁটি, তেলাপিয়া বা কেচকি ধরনের মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছেন। সে মাছও তারা পান্তা দিয়ে খেয়েছেন কি না তা জানার জন্য যে কেউ খোঁজখবর করতে পারেন। কারণ, একে তো এটা ইলিশের মওসুম নয়, তার ওপর ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার কথা বাংলাদেশের কোনো মানুষই কল্পনা করতে পারে না। তারা পান্তা খায় শুকনো মরিচের ভর্তা আর পেঁয়াজ দিয়ে। পান্তা-ইলিশ খাওয়া তাদের কাছে শুধু বিলাসিতা নয়, যে কোনো ব্যাখ্যায় ফাজলামোও।
বলা দরকার, এখানে যাদের ‘ঢাকার পার্টি’ বলা হচ্ছে তাদেরকেই ‘ফিলদি রিচ’ বা নোংরা রকমের ধনী হিসেবে চিহ্নিত করে গেছেন আতাউস সামাদ। পাঠকরাও লক্ষ্য করলে দেখবেন, বাংলা সনের প্রথম দিন বলে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং টিএসসি ও চারুকলার মতো স্থানগুলো দখল করে যারা মাটির শানকিতে পান্তা-ইলিশ খেয়ে ‘ঐতিহ্যবাহী’ ও ‘সর্বজনীন উৎসব’ করেন, নাচ-গানের মধ্য দিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন, লাল-হলুদসহ বাহারী নানা রঙের কাপড় পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় অংশ নেন এবং প্রচন্ড রোদের মধ্যে দিনভর বৈশাখী মেলায় ঘুরে বেড়ান, তাদের সঙ্গে গ্রামের গরীব কৃষকসহ সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আসলে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সঙ্গে তামাশা আর উপহাসই করেন। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। সব মিলিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখও বিশেষ করে শহুরে অবস্থাপন্নদের জন্য আনন্দের একটি দিনে পরিণত হয়েছিল। অন্যদিকে জনগণ বলতে যাদের বোঝায় সেই সাধারণ মানুষের পক্ষে কিন্তু এই আনন্দ উপভোগ করার কোনো সুযোগই ছিল না। কোনোবার তেমন সুযোগ থাকেও না, তারা যথারীতি বঞ্চিতই থেকে যায়। ইতিহাসের পর্যালোচনা করলেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। বঙ্গাব্দ তথা বাংলা বর্ষের ইতিহাস জানাতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, বাংলা এই সালের সূচনা করেছিলেন মুসলিম মুঘল সম্রাট আকবর। উদ্দেশ্য ছিল ফসলের ঋতুর ভিত্তিতে খাজনা আদায় করা। এর ফলে কৃষকের পক্ষে খাজনা দেয়ার সময় অর্থাৎ কখন খাজনা দিতে হবে তা মনে রাখা সহজ হতো। সরকারও বছরের বিশেষ সময়ে কম ঝামেলায় খাজনা আদায় করতে পারতো। নববর্ষের উৎসবও শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। ঐতিহাসিক এই তথ্যের আলোকে বলা যায়, নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ সম্পূর্ণরূপেই কৃষিভিত্তিক একটি দিন। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল সেটাও ছিল কৃষিভিত্তিকই। এদেশের মানুষের জীবনেও এর রয়েছে নানামুখী প্রভাব। দিনটিকে শুভ মনে করা হয় বলে অনেক কৃষক পহেলা বৈশাখে জমিতে হাল দেয়। অনেকে ফসলের বীজ বোনে, রোপণ করে শস্যের চারা। দোকানদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা হালখাতার মাধ্যমে পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাবের সূচনা করে। গ্রাম থেকে শহর-নগর-বন্দর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় হরেক রকমের পণ্য নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে কামার-কুমার ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। মেলায় থাকে মাটির পুতুলসহ খেলনা এবং দই ও মুড়ি-মুড়কির মতো উপাদেয় নানা খাবার। মেলা পরিণত হয় সাধারণ মানুষের মিলন মেলায়। এখানে গ্রামীণ অর্থনীতিই প্রধান হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে ‘ফিলদি রিচ’ তথা নোংরা রকমের ধনীদের উদ্যোগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে রাজধানী ও বড় বড় কিছু শহরের বৈশাখী মেলা ও অনুষ্ঠানমালা নববর্ষের এই মূল চেতনা ও অবস্থান থেকে অনেকটা নয়, বহু দূরে সরে গেছে। বলা চলে, সরিয়ে নেয়ার কাজটি করা হয়েছে সুচিন্তিতভাবেই। যেমন রাজধানীতে নববর্ষের উৎসব শুরু হয় রমনার বটমূলে। সেখানে পান্তা-ইলিশ ভোজনের মধ্য দিয়ে বাঙালিয়ানা দেখানোর বিলাসিতা করেন ওই নোংরা রকমের ধনীরা। তারা পহেলা বৈশাখকে বেছে নিয়েছেন টাকা দেখানোর, বিলাসিতা করার এবং বিশেষ করে কৃষক-জনতার সঙ্গে তামাশা ও ফাজলামো করার উপলক্ষ হিসেবে। অথচ পান্তা-ইলিশ খাওয়া কখনো গ্রাম বাংলার তথা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ছিল না। এটা চালু করেছে ফিলদি রিচেরা। বিষয়টিকে বাংলা নববর্ষের মূল চেতনার সঙ্গেও মেলানোর উপায় নেই। কারণ, গ্রাম বাংলার কোনো অঞ্চলেই বছরের এ সময়ে ইলিশ পাওয়া যায় না। এটা ইলিশের মওসুমও নয়। সরকার তো বরং জাটকা ইলিশ নিধন বন্ধ করার জন্য এ সময় ইলিশ শিকারই নিষিদ্ধ করে থাকে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ বিশেষ করে ওই নোংরা রকমের ধনীরা নিষিদ্ধ সে ইলিশকে নিয়েই মেতে ওঠেন। সঙ্গে আবার খান পান্তা ভাত! অথচ গ্রাম বাংলার মানুষ কখনো ইলিশ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার কথা কল্পনা করতে পারে না। তারা পান্তা খায় লবণ-পেঁয়াজ আর শুকনো মরিচ দিয়ে। সেটাও খায় বাধ্য হয়ে- ভালো কিছু খাওয়ার উপায় নেই বলে। একটু অবস্থাপন্নরা হয়তো সঙ্গে সবজি ও ছোট মাছ খায়। কিন্তু কেউই ইলিশ খায় না, পায় না বলে খেতেও পারে না। এখানে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কেও বলা দরকার। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নামে যেসব জীব-জন্তুর কুৎসিত মূর্তি এবং বীভৎস নানান প্রতিকৃতি নিয়ে রাজধানীতে মিছিল করা হয় সেগুলোর সঙ্গে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষের চিন্তা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। এগুলো বরং মূর্তি পূজার কথাই মনে করিয়ে দেয়- ইসলাম যার বিরোধিতা করে। এজন্যই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমানদের চিন্তা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী কর্মকান্ডের অবসান ঘটানো দরকার। একই দেশে নববর্ষ উদযাপনের এই বৈষম্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার এবং নববর্ষ উদযাপনের মূল অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে বলেও আমরা মনে করি।
মানুষের ‘মঙ্গল’ সত্যি কাম্য হলে নতুন বছরের শুরুতে বরং জাতীয় জীবনের অন্যসব দিকে দৃষ্টি ফেরানো উচিত। হত্যা-গুম ও রাজনৈতিক দমন-নির্যাতনের পাশাপাশি লোডশেডিং এবং গ্যাস ও পানির সংকট মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খুনের তথা রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ঘটনা লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যেন মানুষের জীবন কোনো ছেলেখেলার বিষয়! কথায় কথায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জীবন ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কখনো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আইনের চোখে প্রতিটি মানুষেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার রয়েছে। এজন্যই বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংস্থাই শুধু নিন্দা-সমালোচনা করছে না, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরাধ দমন ও নির্মূল করা সত্যি উদ্দেশ্য হয়ে থাকলে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পুলিশকে যদি বিরোধী দলকে দমনের কাজে ব্যস্ত না রাখা হয় এবং পুলিশ যদি সরকারদলীয় গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পায় তাহলে দেশে হত্যা-সন্ত্রাস এবং নারীর বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানিসহ সব ধরনের অপরাধ দমন ও নির্মূল করাটা সময়ের বিষয়ে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা এখন শোচনীয়। এজন্যই নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে কেবলই উৎসব আনন্দ না করে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেও নতুন করে অঙ্গিকার করা এবং উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল। প্রকৃতির প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, সামনে রয়েছে কালবৈশাখীর পালা। ওদিকে ভারতের পানি আগ্রাসনের পরিণতিতে বাংলাদেশের নদ-নদী খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে। দেশ মরুভূমি হওয়ার পর্যায়ে এসে গেছে। আর কিছুদিন পর ‘সাধের’ ইলিশও পাওয়া যাবে না। অথচ ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরোধিতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো লক্ষণ ও প্রস্তুতিই এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিহত করার এবং ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদাযের চেষ্টাও করছে না সরকার। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করনেওয়ালারাও ভারতের ব্যাপারে মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। কারণ অবশ্য সহজবোধ্য। এমন অবস্থা অবশ্যই চলতে পারে না। ভারতের কাছে নতজানু থাকার এবং পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আড়ালে ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমানদের মূর্তিপূজারী বানানোর কৌশলী কিন্তু ভয়ংকর প্রচেষ্টারও তীব্র বিরোধিতা করা দরকার। এটাই এখন সময়ের দাবি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads