শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫

কূটনীতিকদের তৎপরতা ॥ তারপরেও সুড়ঙ্গের আরেক প্রান্তে আশার আলো নাই


বোধগম্য কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে এবং বিদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবারের পত্র-পত্রিকা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশীদের তৎপরতার খবরে ভরপুর। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যেসব খবর ছাপা হচ্ছে তার সংক্ষিপ্ত সার নিম্নরূপ : বাংলাদেশে সহিংসতা বন্ধ এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দিন দিন বাড়ছে কূটনৈতিক চাপ। চলমান সংকটের ৬০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে সরকার ও বিএনপির ওপর এই চাপ প্রয়োগ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা বলছেন, সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ওপর এই পরিস্থিতি ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুগো সোয়্যারে, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়িদ রা’দ আল সাদ, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা শাই প্রায় একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেন। বর্তমান অচলাবস্থার ২ মাস পূর্ণ হওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ অনেক বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় ব্যস্ত। অপরদিকে, বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করছেন। তিনি সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ওসমান ফারুক বাংলাদেশের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে আলাপকালে নিশা বিসওয়ালের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেন। ঢাকা থেকে টেলিফোন করা হলে ওসমান ফারুক বলেন, ‘আমি শুধু এটা নিশ্চিত করছি যে, নিশা বিসওয়ালের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ, অনেকে অনেকভাবে এটার ব্যাখ্যা করে। ফলে আমরা যে বর্তমান পরিস্থিতির একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই সে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেও এ বিষয়ে কিছু বলা হবে না।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়িদ রা’দ আল হোসেইন তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, জেনেভা সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। জায়িদ রা’দ আল হোসাইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বে খুবই প্রভাবশালী। তিনি জর্ডানের বাদশার ভাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী তাকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগুন জ্বালিয়ে হামলা এবং রাজনৈতিক দলগুলো ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিশুসহ কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা শুধু উগ্রপন্থী গ্রুপের দ্বারাই নয়, বরং সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়ার শিকারও হচ্ছে। আমি সব রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি মহাসচিবের (জাতিসংঘ মহাসচিব) আহ্বানের সঙ্গে যোগ দিয়ে বলতে চাই যে, সহিংসতার বিস্তার রোধ করুন, রাজনৈতিক সংলাপের পথ খুঁজে বের করুন এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখান।’
ঢাকার অপর একটি জাতীয় দৈনিক এ সম্পর্কে গত ৬ই মার্চ শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে উদ্যোগী হতে পশ্চিমা ১৬ দেশের রাষ্ট্রদূতের সমন্বয়ে পুনঃগঠিত হয়েছে কূটনৈতিক গ্রুপ ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বা ফ্রেন্ডস গ্রুপ। এতে ভারত, চীন ও রাশিয়া ছাড়া অন্য সব প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা সরকার ও বিএনপির সঙ্গে এক দফা করে বৈঠক করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলেও সরকার এক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। উদ্যোগী রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রীর সময়ও প্রার্থনা করা হয়েছে। তবে কূটনীতিকদের সঙ্গে এখনই সরাসরি সাক্ষাৎ হচ্ছে না সরকার প্রধানের। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্র বিষয়ক দুই উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই হবে সরকারের যোগাযোগ। শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় কূটনীতিকদের সঙ্গে কার্যকর বৈঠক হবে দুই উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। কূটনীতিক সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের মে মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো গঠিত পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর এই ফ্রেন্ডস গ্রুপ গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সম্প্রসারিত ও পুনর্বিন্যাস করা হয়। আগে ১৩ দেশ এই গ্রুপে থাকলেও এবার গ্রুপে আসে ১৬ দেশ। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্বে নতুন আসা কূটনীতিকরা এই গ্রুপের সঙ্গে অংশীদার হন। সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি এই গ্রুপের বিষয়ে বৈঠকে বসেন সমমনা পশ্চিমা কূটনীতিকরা। অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের বাসায় বৈঠকেই ফ্রেন্ডস গ্রুপকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
দুই
২৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমা আরেক রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৈঠকে বসে তৈরি হয় যৌথ কূটনৈতিক বার্তা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠানো হয় পররাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে চিঠি পাঠানো হয় এক নেতার মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যৌথ বার্তায় কূটনীতিকরা লিখেন, ‘বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আশা করি, ক্ষতিকর সময় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। আমরা স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাই। এসবের কারণে জীবন, অঙ্গহানি ও আস্থার ওপর মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা এই সহিংস পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটানোর আহ্বান জানাই। সহিংসতার অবসান ও সংকট উত্তরণে আস্থা বৃদ্ধির ওপর মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা এই সহিংস পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটানোর আহ্বান জানাই। সহিংসতার অবসান ও সংকট উত্তরণে আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপের প্রয়োজন। এটা কিভাবে করা হবে সেটা বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সব পক্ষকে জ্বালাময়ী রাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করি। কারণ এই ধরনের ভাষা অপর পক্ষকে আবারও বিচ্ছিন্ন করবে এবং সহিংসতার দিকে নিয়ে যাবে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণ, আইনগত এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নিরসন সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আস্থা সৃষ্টি, জনগণের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য এ পরিবেশ জরুরি। এতে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং উগ্রবাদ দমনে শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাকে স্বাগত জানাবো।’
সূত্র মতে, এই বার্তা হাতে পাওয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পরে ১ মার্চ আগ্রহী কূটনীতিকদের জন্য ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে উপস্থিত থাকেন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও গওহর রিজভী। ব্রিফিংয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয় কূটনীতিকদের কাছে। এই ব্রিফিং থেকে সরকারের দেয়া দুটি প্রস্তাব বা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার কূটনীতিকদের কথা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে। সরকারের দুই দাবি হলো- সহিংসতা বন্ধ করলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সুযোগ দেয়া হবে এবং জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। ইউরোপের একটি দেশের কূটনৈতিক সূত্রের খবর, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে আস্থাহীনতার প্রসঙ্গ। কারণ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানবে কিনা, তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত খালেদা জিয়া। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা সহিংসতার সঙ্গে তার দলের সংযোগ নেই বলে দাবি করেন। তবে যদি আন্দোলনের কারণে সহিংসতা হয় তাহলে আন্দোলন স্থগিত করতেও তিনি প্রস্তুত বলে জানান। তবে এর আগে প্রকাশ্যে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি দাবি জানান, আন্দোলন স্থগিতের আগে কার্যালয় খুলে দেয়া এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে মুক্তি দেয়ার। সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। তার এসব দাবির কথা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবেই তুলে ধরা হবে সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে। উদ্যোগের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবেই এই সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এই সমঝোতা কোনো একক নির্বাচনকে লক্ষ্য করে নয়; বরং স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর জন্য উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানানো হয়েছে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকেই। যেহেতু আগে উভয় দলের নেতারা একত্রে বসে সফলতা পাওয়া যায়নি, তাই এবার সে ধরনের চেষ্টা করা হবে না; বরং উভয় পক্ষের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে উভয় পক্ষকে বোঝানো হবে। সূত্রে তথ্যানুসারে, এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে পাঁচটি দাবি খুঁজে পেয়েছেন কূটনীতিকরা। এর মধ্যে সরকারের দুই দাবি- সহিংসতা বন্ধ ও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ। অন্যদিকে বিএনপির দাবি- মুক্ত রাজনৈতিক চর্চার সুযোগের জন্য কেন্দ্রীয়সহ সব কার্যালয় খুলে দেয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মুক্তি ও চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল।
তিন
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নিয়মিত অধিবেশনে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের (এএলআরসি) রিপোর্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে বিরোধী রাজনীতিকদের দমনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে উৎসাহ দিচ্ছে দেশটির সরকার। এমন হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের অব্যাহতিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিরোধীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে গণমাধ্যমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি) বাংলাদেশে ‘ক্রসফায়ারের’ মিথ্যা ওজরে জোরপূর্বক তুলে নেয়া ও হত্যার মাধ্যমে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘনের চলমান ধারায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সাথে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ‘গোপনে হত্যার’ ঘটনাও ঘটে চলেছে। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর মাধ্যমে তার রাজনৈতিক বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যৌথবাহিনী এসব লোককে তুলে নিয়ে গুলী করে হত্যা করছে।
ক্ষমতাসীন দল ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে তার নতুন কার্যকাল শুরু করার পর থেকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য, সব বিরোধী দল ঐ নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকার দশম পার্লামেন্ট নির্বাচনে জনগণকে প্রতিনিধি বেছে নেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করে আসছে। সমাজে চরম ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার উদ্দেশে এ রকম প্রেক্ষাপটে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটছে।
চার
এত কিছুর পরেও বিদেশীদের এত তৎপরতা এবং চাপ প্রয়োগেও সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে আশার কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। এইবার যে ধরনের সম্মিলিত এবং সংঘবদ্ধ কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৪৩ বছরের জীবনে অতীতে তেমনটি আর দেখা যায়নি। এত কিছুর পরেও উভয় পক্ষে, বিশেষ করে সরকার পক্ষে বরফ গলেনি। অবশ্য অধিকাংশ পত্র-পত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, বেগম জিয়া অনেকটা নমনীয় হচ্ছেন। তিনি না কি বিদেশী কূটনীতিকদের বলেছেন যে, হরতাল এবং অবরোধ তুলে নিলে যদি পেট্রোল বোমা হামলার অবসান ঘটে তাহলে তিনি হরতাল এবং অবরোধ তুলে নিতে রাজি আছেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্পষ্ট ভাষায় ওয়াদা করতে হবে- তিনি অতি সহসা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিরোধী দলসমূহের সঙ্গে সংলাপে বসবেন। বেগম জিয়া এ কথা পুনর্বার ব্যক্ত করেছেন যে, বিএনপি এবং ২০ দল পেট্রোল বোমার সহিংসতার সঙ্গে মোটেও জড়িত নয়। ২০ দল এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা করে। কূটনীতিকদের কাছে দেয়া বেগম জিয়ার এ বক্তব্য যথারীতি সরকারের কাছে পৌঁছে গেছে। তারপরেও সরকার কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিদেশী কূটনীতিকদের অনুরোধের কারণে এখন পর্যন্ত বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং তার গুলশান অফিসে তল্লাশি চালানো হয়নি।
আসিফ আরসালান 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads