মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০১৫

অভিজিৎ হত্যা : কেনো কেউ এগিয়ে এলো না?


গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ন’টার দিকে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশে রাজু ভাস্কর্যের পূর্বদিকে ২০ মিটার দূরে ফুটপাতে দুইজন সন্ত্রাসীর চাপাতির কোপে নিহত হন তিনি। তাতে বাধা দিতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। বই মেলা কেবলই ভেঙেছে। মেলা থেকে বের হচ্ছে শত শত লোক। উৎসবমুখর পরিবেশ। যদিও সারা দেশে হরতাল অবরোধ চলছিলই কিন্তু বই মেলা ছিলো নিজস্ব রীতিতে ভাস্বর। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ঘটলো এমন বিয়োগান্ত ঘটনা।
এটা ছিলো আমাদের জন্য অকল্পনীয়। বলা হয়ে থাকে, অভিজিৎ নাস্তিক ছিলেন। পৃথিবীর সাতশ’ কোটি লোকের মধ্যে একশ’ কোটি লোকের কোনো ধর্ম নেই। তারা নাস্তিক। সে জন্য পৃথিবীর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ কেউই ঐ নাস্তিকদের এখন পর্যন্ত নির্মূল করার ঘোষণা দেননি। আর ঘোষণা দিলেই যে তা বাস্তবায়ন করা যাবে, বিষয়টা ততটা সহজও নয়। ফেসবুকে কে কি বলে এই বিষয়ে সরকার সাংঘাতিক স্পর্শকাতর। প্রধানমন্ত্রী, তার পিতা বা ছেলে মেয়েদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কোনো কিশোর, তরুণ কোনোরূপ অবমাননাকর পোস্ট দিলে সে দীর্ঘমেয়াদে কারাদ- ভোগ করে। বলা হচ্ছে, কটূক্তি করা হয়েছে। কটূক্তি যে কাকে বলে, সেটাও নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এবং কটূক্তির দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে তরুণরাই যারা প্রতিবাদ করে, যারা কোদালকে কোদাল বলে, যারা সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে, জয় পরাজয়ের চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারুণ্যের কৃতিত্ব সেখানেই। এই তারুণ্যই এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরাট শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো। তার আগেও এদেশের সকল গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামে তরুণরাই এগিয়ে এসেছে এবং তারা জয়লাভ করেছে।
কিন্তু সমকালে তারুণ্যের এই আন্দোলন এই অসংকোচ প্রকাশ কখনোই নন্দিত হয়নি। তাদের হঠকারি বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য হলো, পরবর্তীকালে তারা নন্দিত হয়েছেন। তাদের নামে স্মৃতির মিনার রচিত হয়েছে। সে মিনারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। এদেশের মানুষ যে গভীর গণতন্ত্রের চেতনা লালন করেন, এসব তারই প্রতিফলন। অনেকেই বলে থাকেন যে, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূত্রপাত। তারা আসলে দূরদৃষ্টিহীন। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা হাজার বছর ধরে। তাকে মাত্র দুই-চার-পাঁচ বছরের গন্ডিতে আবদ্ধ করা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার শামিল। কিন্তু সেভাবেই সবকিছু চলছে। আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকাবার চেষ্টা করছি না। এটা একটা ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিজিৎ যখন আক্রান্ত হলেন, তখন সেখানে শত শত লোক উপস্থিত ছিলো। তিনস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে দায়িত্বরত ছিলো পুলিশ। র‌্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাকোয়াজি আমরা অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করে আসছি। তারা হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা বলে একেবারে সমাজ কাঁপিয়ে দিয়েছেন। এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের উৎসবে মেতেছেন। তারা বলেছেন, তাদের হাতে যে অস্ত্র সেটি খেলনা নয়। এমনকি হাডুডু খেলবার জন্য নয়। সেটি মারণাস্ত্র। তারা হুমকি দিয়েছেন সন্ত্রাসীদের বুক বরাবর গুলী করে দিবেন। সন্ত্রাসী চিহ্নিত করার কোনো দরকার নেই। তারা যাদের সন্ত্রাসী ভাববেন, হাডুডু না খেলে তাদের বুক বরাবর গুলী করে দিতে পারবেন। এরপর একসময় বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশ প্রধানদের কথাবার্তায় মনে হলো, সরকার পরিচালনা করছেন আসলে তারাই, শেখ হাসিনা নন। অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এটা এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। কেননা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকারকে নির্ভর করতে হয় জনগণের ওপর, বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশ প্রধানদের উপর নয়।
আমরা আলোচনা করতে বসেছিলাম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী পরস্পরের বিপদে আমরা সবসময় এগিয়ে গেছি। প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু অভিজিৎ হত্যার সময় এবং ঐ হত্যাকান্ডের পর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমরা কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। মাত্র তিন-চার মিনিটের মধ্যে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে যখন হত্যা করা হচ্ছিল, তখন আশপাশে ডজন ডজন লোক ছিল। পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ছিল। মাত্র কয়েক গজ দূরে  মোটরসাইকেল আরোহী একজন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বরত ছিলেন। তাদের সবার চোখের সামনেই অভিজিৎ রায়কে প্রধানত মাথায় ও সারা শরীরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা শত চিৎকার করেও কারো কোনো সাহায্য পাচ্ছিলেন না।
কিন্তু কেনো? আমরা সংবাদপত্রে রিপোর্ট দেখেছি। ছবি দেখেছি। রক্তাক্ত অভিজিৎ ফুটপাতে পড়ে আছেন। তার আঙুল-বিচ্ছিন্ন স্ত্রী বন্যা দু’হাত বাড়িয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু শত শত মানুষ, পুলিশ, কেউ সে আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না। যে পুলিশ কর্মকর্তা এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন, তার যুক্তি অতি স্বাভাবিক। তিনি ভেবেছিলেন, সাধারণ কোনো মারামারি হচ্ছে। অতএব এতে তার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। ক্যাম্পাস এলাকায় সাধারণ মারামারি মানে ছাত্রলীগের লোক ছাত্রদলের লোকদের পিটাবে। এতে তো বাধা দেওয়ার কিছু নাই। পুলিশ কর্মকর্তার তখন পর্যন্ত ধারণা ছিলো যে, দেশপ্রেমিক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী ছাত্রদলকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে সাইজ করে দিচ্ছে। বেশ তো। এখানে তাদের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ পুলিশের নানা ধরনের অভিযানে ছাত্রলীগ সহায়তামূলক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। ‘মুক্তমনা’ ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হয়ে গেছেন। তার স্ত্রীর জীবনও বিপন্ন।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের হাজার বছরের সমাজ সংস্কৃতিকে দু’পায়ে দলে দিয়েছে। তারা দেশের ভেতরে এমন এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, কেউ আর সত্যকে সত্য বলতে পারবে না, কোদালকে কোদাল বলতে পারবে না। সরকার যদি বলে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হচ্ছে, তাহলে সরকারের তোষামদগাররা হীরক রাজার সভাসদদের মতো বলবে, বাহবা বাহবা বেশ। সূর্য তো পশ্চিম দিকেই উদিত হচ্ছে। সাথে জনগণকেও তাই বলতে হবে। ফলে অন্ধত্ব প্রয়াসে সরকার সত্য ও বাস্তবতা থেকে কেবলই পিছিয়ে যেতে থাকবে। যাচ্ছেও তাই। কিন্তু এ আমার চেনা সমাজ নয়। এ আমার চেনা জীবন নয়। যে তরুণ আলোকচিত্রী অভিজিৎ-বন্যার ছবি তুলেছেন, তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তার আতঙ্ক আমাকে বেদনাহত করেছে।
ঐ ফটোসাংবাদিক সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্তব্যরত ছিলেন। হঠাৎই তিনি দেখতে পান অভিজিৎকে কেউ কুপিয়ে হত্যা করছে। রাত। ছবি তুলতে হলে তাকে আরও কাছে আসতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বেরুবার গেট দিয়ে বের হয়ে ঘটনাস্থলে আসতে তার কয়েক মিনিট সময় লেগেছিলো। এসে তিনি ছবি তুলেছেন। কিন্তু দেখলেন ফুটপাতের উপর যখন এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো, তখন সাধারণ মানুষ বা পুলিশ কেউই এগিয়ে এলো না। হত্যাকারীদের বাধা দিলো না। এমনকি গুরুতর আহত অভিজিৎ-বন্যাকে হাসপাতালে নিতেও কেউ সাহায্য করলো না।
ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ‘বাংলার চোখে’র তরুণ ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদ দেখলেন আশপাশে এত লোক, পুলিশ-কেউই সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না, মানবিক কারণেই তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারও বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকেই। জীবন আহমদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। তার হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। ঘটনাস্থলের আশপাশ দিয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে। অনেকেই অদূরে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছেন একজন পুলিশ সদস্যও। কিন্তু তাদের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যায়নি।
জীবন ভেবেছিলেন, বন্যাকেই কেউ চাপাতি দিয়ে আঘাত করেছে। তিনি বন্যার হাত ধরে বলেন, আপা আপনি উঠেন, আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। কিন্তু বন্যা ছিলো বিভ্রান্ত। তিনি ফুটপাতে পড়ে থাকা অভিজিতের শরীরে হাত বুলিয়ে বার বার বলছিলেন, ‘অভি ওঠো, অভি ওঠো।’ তখন জীবন বুঝতে পারেন শুধু বন্যাই নয় গুরুতর আহত হয়েছেন অভিজিৎও। আর ফুটপাত ভেসে যাচ্ছিল তাদের রক্তে। জীবন একটি সিএনজি থামালো। তাতে দুইজন যাত্রী ছিলো। তারা নেমে যায়। এর মধ্যে অনেকে এসে জড়ো হন। তারা ধরাধরি করে অভিজিৎ ও বন্যাকে সিএসজিতে তুলে দেন। দুই হাত দিয়ে অভিজিতের ক্ষত-বিক্ষত মাথা ধরে রাখেন জীবন। অভিজিতের দুই পা ছিলো সিএনজির বাইরে। সিএনজি যখন বাংলা একাডেমির মূল গেট পার হচ্ছিল তখন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন বন্যা। তিনি জীবনের কাছে জানতে চান কে আপনি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আপনি কি আমাদের মেরে ফেলবেন? জীবন নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আপা আমি আপনাদের মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বন্যা জীবনের পা ছুঁয়ে বলেন, আপনার পায়ে ধরি, আপনি আমাদের মারবেন না। যা চান, তাই দিবো। শুধু আমাদের ছেড়ে দেন। তারপরই বন্যা আবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন।
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন জীবন। এ অবস্থায় তিনি গণপিটুনির ভয় পাচ্ছিলেন। সত্যি সত্যি বন্যার কথা শুনে যদি পথচারীরা তাকে গণপিটুনি দিতে শুরু করে, তাহলে কী উপায়? কিন্তু তখন সে পিছনে তাকিয়ে দেখতে পায় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্য  মোটরসাইকেলে চড়ে তার পিছনে পিছনে আসছে। এতে সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছিলো না বন্যা। ততক্ষণে তারা পৌঁছে গেছে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে। চিকিৎসকরা অভিজিৎ ও বন্যাকে ভেতরে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত আনসাররা আর জীবনকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জীবন সেখানেই তার রক্তে ভেজা টিশার্ট খুলে ক্যামেরা মোছার জন্য রাখা পুরনো টি শার্টটি পড়ে রাত দশটা পর্যন্ত মেডিকেল গেটেই বসে থাকেন। তারপর অফিসে ফিরে যান। গিয়ে জানতে পারেন যাদের তিনি উদ্ধার করেছেন তারা হলেন ‘মুক্তমনা’ ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যা।
কিন্তু কেন আক্রান্তদের রক্ষা করতে বা উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো না কেউ? কেন-ই-বা পুলিশও দাঁড়িয়ে রইলো ঠায়? পুলিশের বক্তব্য হলো, তারা ভেবেছিলো, ওখানে মারামারি হচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, মারামারি হলে তা থামানোর দায়দায়িত্ব পুলিশের নেই। অথচ সেটিও পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশকে বিরোধী দল দমনে ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তারা হয়ে পড়েছেন দায়িত্বহীন। তারা এক ধরনের বেপরোয়া আচার আচরণ শুরু করেছে। ক্রসফায়ার, গ্রেফতার বাণিজ্য, পর্তায় না পড়লে হাঁটুতে গুলী এটি নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর সরকার বার্ন ইউনিট বার্ন ইউনিট বলে চেঁচামেচি করলেও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এই পেট্রোল বোমা তৈরি ও নিক্ষেপের সাথে। কিন্তু ক্রসফায়ার বিষয়ে সরকার বা পুলিশ একেবারে চুপ। কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারছে না এর বিরুদ্ধে। এ এক অসহায় অবস্থা।
আর সাধারণ মানুষ যে এগিয়ে গেলো না, সেটাও চিন্তা করার মতো বিষয়। এটা আমাদের সমাজ নয়। এ সমাজের মানুষ হাজার বছর ধরে পরস্পরের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জীবনও দিয়েছে। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। এগিয়ে না আসার কারণ বহুবিধ। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে দিনরাত ছাত্রলীগ, যুবলীগ আড্ডা দিয়ে থাকে। সে কথা সবাই জানে। আর তারা মাঝে মধ্যেই কাউকে অপছন্দ হলেই বেধড়ক পিটিয়ে শিবির বা নাশকতাকারী বলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এলাকাটিকে এরকমই অনিরাপদ করে রেখেছে। সেরকম জায়গায় সাধারণ মানুষের অপরের বিপদে সহায়তার হাত বাড়ানো বিরাট দুঃসাহসের ব্যাপার।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যা পাওয়া গেছে তা হলো, ঘাতক ছিলো দু’জন। আর তারা ছিলো অভিজিৎ দম্পতির পেছনে। আচমকাই তারা অভিজিৎকে মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। তাতে বাধা দেবার চেষ্টা করে বন্যা। হামলাকারীরা তাকেও আঘাত করে। চাপাতির বাঁট ছিলো কাগজে মোড়ানো। যাওয়ার সময় তারা সে কাগজও দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেছে যাতে আঙুলের ছাপ না পাওয়া যায়। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মিশন শেষ করে তাদের একজন নীলক্ষেতের দিকে হাঁটা দেয়। অপরজন হেঁটে চলে যায় বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে, নির্বিঘ্নে। পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সাধারণ মানুষ তাকিয়ে দেখে সরে যায়। জীবন আহমদের মতো আরও অনেক সাধারণ মানুষই হয়তো ভেবেছিলেন, সাহায্য করা দরকার। কিন্তু সাহায্য করতে গিয়ে, অপরের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি যে নিজেই আসামী হবেন না বা গণপিটুনিতে নিহত হবেন না, সে নিশ্চয়তা এখন এই সমাজে আর নেই। 
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads