রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫

স্বাধীন দেশে বন্দী নাগরিক!!


স্বাধীনতা একটি জাতির জন্য বিরাট গৌরবের অনেক বেশি আনন্দের। স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত সম্পদ। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের গৌরবের মায়াগাথা এই লাল সবুজের পতাকা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমারা অর্জন করি মহান স্বাধীনতা। ইতিহাসের বিচারে মাত্র ৯ মাসের সংগ্রামের অর্জিত স্বাধীনতা বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। যেখানে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা লাভ করতে সময় লাগে ২৬ বছর। ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে ৪০ বছরের ওপর আন্দোলন করে ভারত অর্জন করে স্বাধীনতা। ফরাসী শক্তির বিরুদ্ধে ৯ বছর ধরে লড়াই করে আলজেরিয়া পায় স্বাধীনতা। ইরিত্রিয়া রক্তাক্ত সংগ্রাম করে আজও ইথিওপিয়া থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারেনি। কাশ্মীরসহ ভারতের সাত রাজ্য অব্যাহত রেখেছে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। তাই স্বাধীনতা আমাদের জন্য গৌরব ও অহঙ্কারের।
আমরা স্বাধীন ভূ-খন্ড পেয়েছি সত্য, কিন্তু পায়নি তার আয়তন। আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি বটে, কিন্তু পাইনি আমাদের সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। আমরা পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি ফেলেও এখনও নিজ দেশেই যেন বন্দী। অথচ স্বাধীনতা শব্দটির মাঝেই লুকায়িত প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ের চাওয়া পাওয়া আর আত্মার প্রশান্তি। সেই পাওয়া অঢেল সম্পদ আর ক্ষমতার মালিকানা নয় কিংবা অভিজাত্য আর বিলাসিতা পূর্ণ জীবন ও নয়। স্বাধীনতা মানে আমার কথা বলার অধিকার, স্বাধীনতা মানে আমার জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা। স্বাধীনতা মানে আমার পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা মানে আমার ছোট্ট একটি সংবিধান। স্বাধীনতা মানে আমার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি। কিন্তু আজ আমাদের মানচিত্র খন্ড-বিখন্ডিত। বিডিয়ারকে হত্যা করে সীমান্ত অরক্ষিত, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। প্রতিটি নাগরিক অধিকার নির্বাসিত। মানুষের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নেই কোনো নিরাপত্তা। কিন্তু কেন? আমার দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধমীয় স্বাধীনতা কোনো দল বা গোষ্ঠীর করুণা কিংবা দয়া নয়। এটি সংবিধান স্বীকৃত আমাদের প্রাপ্য অধিকার। এ আধিকার হরণের সাধ্য কার!
একটি জাতির আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য ৪৪ বছর কম সময় নয়। কিন্তু যে গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ইনসাফের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম তার সবই আজ আওয়ামী নখরে ক্ষতবিক্ষত। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এখনো আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ভিন দেশের দিকে কেন করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়। এখনো আমাদের কানে বাজে ইজ্জত রক্ষায় জালপরা বাসন্তীদের হাহাকার!! দু’মুঠো খাবারের জন্য মা তার সন্তান বিক্রির খবর আসে এখনো পত্রিকার পাতায়। আকাশে-বাতাসে আজ লাশ আর বারুদের গন্ধ। রাস্তা-ঘাট, বনে-জঙ্গলে, ডোবা-নালায়, নদীতে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাতের মৃতদেহ।
রাতের অন্ধকারে বন্দুকের একটি আওয়াজ মানেই অজানা এক আতঙ্ক। না জানি ক্রসফায়ারের নামে ঝড়ে পড়লো কোনো তাজা প্রাণ? আজীবনের জন্য নিভে গেল কোনো উজ্জ্বল প্রদীপ! এটি কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। এ যেন কোনো মায়ের নাড়ি ছেঁড়া সন্তানের বুকে গুলী ঝাঁঝরা করা মৃত লাশের খবর!। কোনো স্ত্রীর বিধাবা হওয়ার এক মহাদুঃসংবাদ। এতিম সন্তানরা পৃথিবীতে বাবা বলে আর কাউকে ডাকতে না পারার পরিসমাপ্তি। এর কোনো জবার আছে কি আমাদের রাষ্ট্রের কাছে? ক্রসফায়ারের খবর শুনলেই যেন বুক কেঁপে উঠে। প্রিয়জনের সন্ধানে হাসপাতালের মর্গে কিংবা অজ্ঞাতনামা লাশের মিছিলে খোঁজাখুজি। বুলেট আর পেট্রোল বোমার আঘাতে এ জনপদে লাশের মিছিল এখন অনেক দীর্ঘ।
বাংলাদেশে এখন বেওয়ারিশ লাশের স্তূপ দিন দিন বাড়াছে। এটি মানবতার জন্য বড়ই অবমাননাকর। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে লাশটিও জুটছে না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রশিবির নেতা অলিউল্লাহ আর মোকাদ্দাস, চৌধুরী আলম, মিঠাপুকুরের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাসেত, আর ইলিয়াস আলী আজ ও ফিরেনি। এ রকম হাজারো গুম-খুন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পঙ্গু হাতহারা-চোখ হারাদের সারি এখন অনেক দীর্ঘ। কিছুতেই যেন তা আর থামছে না। দেশীয়-আন্তজার্তিক কোনো সমালোচনাই যেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী তোয়াক্কাই করছে না। তাহলে এর অবসান আসলে কবে হবে? কবে বন্ধ হবে এই কান্নার আওয়াজ? কবে বন্ধ হবে হুঙ্কার আর নিষ্ঠুরতা। স্বাধীনতার ৪৪ বছরে মানবতার এমন করুণ আর্তনাদ চিৎকার করে যেন স্বাধীনতাকে খুজে ফিরছে!!
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, মানুষের জীবনহানি, সভ্রমহানি ও আইনের শাসনের বোধের উপলব্ধির অভাব দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাছাকাছি পৌঁছিয়ে দিয়েছে। জনগণ এখন অগ্নিকুন্ডের কিনারে দন্ডায়মান। এক ব্যক্তির খেয়াল-খুশিই যেন ১৬ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে একচরম তামাশায় লিপ্ত। গুম হয়ে যাওয়া মানুষ নিয়ে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী রশিকতা করেন। সেখানে মানবিকতার কত বড় বিপর্যয় তা কি বলার আপেক্ষা রাখে? আজ রশিকতা চলছে মানুষের জীবন, সভ্রম, নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে। তার অধিকার, মর্যদা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। এটি কারো করুণা নয়। আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে সে প্রয়োজনবোধে জীবন দেবে, কিন্তু অন্যায়-অবিচার, জুলুম আর অবিচারের কাছে মাথা নত করবে না। যে বান্দা কপাল দিয়ে এক আল্লাহকে সিজদা করে, সেই সৈনিক এক আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করে না।
পাহাড়সম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সহিংসতা, আগ্রাসন, নাশকতা ও রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা নাটক জনসমর্থনহীন এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার শূন্যের কোটায় সঙ্কুচিত করেছে। বিরোধীদলীয় জোটের আহ্বানে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনে এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষের সাড়া আর উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন সরকারকে ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুকতর জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। একের পর এক সরকারের অপকৌশল বুমেরাং হচ্ছে। নিজের অপরাধের  বোঝাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য অসহনীয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন, দমন-নিপীড়ন, গণহত্যা, দুর্নীতি, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর সর্বশেষ একদলীয় নির্বাচনের আয়োজনের কারণে বাংলাদেশে এখন বিশ্ব মিডিয়ার খোরাক।
বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক এটা ভারত কখনো চায়নি। যার কারণে ভারত পৃথিবীর এত বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়েও বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মূল মদদদাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে ভারতের কংগ্রেস সরকার। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের নামে সিলেক্টিভ এই সরকার সারা পৃথিবী থেকে এখন প্রায় বিচ্ছিন্ন। ভারতের যে কংগ্রেস প্রভুদের ইশারায় ক্ষমতায় এসেছে তারাও এখন দিল্লির মসনদ থেকে ছিটকে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পরাজয় হবে কংগ্রেস থেকে আরো অনেক বেশি ভয়াবহ। কারণ কংগ্রেস থেকে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, দুনীতি আর অপকর্মের পাল্লা অনেক ভারি।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরু কখনো ছোট ও ক্ষুদ্র দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি মনে করতেন, ক্ষুদ্র দেশগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে এবং একদিন এসব ক্ষুদ্র দেশ ভারতে যোগদান করবে। ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’র ৫৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় নেহরু লিখেছেন : Small nation state is doomed. It may survive as a cultural and autonomous area but not as an independent political unit. অর্থাৎ ক্ষুদ্র জাতি রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। এটি সাংস্কৃতিক ও স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে টিকে থাকতে পারে তবে স্বাধীন রাজনৈতিক ইউনিট হিসেবে নয়। ভারত সেই থিওরি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। তার ব্যতিক্রম কিছু হলে এদেশের জনগণের চাপেই হতে পারে, অন্য কোনো কারণে নয়। সম্পতি ক্রিকেট জালিয়াতি কর বাংলাদেশ হারাতেও ভারত দ্বিধাবোধ করেনি। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে লজ্জাজনক পরাজয় বাংলার ক্রিকেট প্রেমিদের ক্ষত কিছুটা গুছেছে।
সোনার বাংলা বৃটিশদের দু'শো বছরের গোলামী শাসন, পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তি পেলেও তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি এখনো। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে ভারত হাঙরের মতো তার আসল চরিত্র নিয়ে হানা দিচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ভারত প্রীতি। ভারতের প্রতি এই কৃতজ্ঞতা অবশ্য আওয়ামী লীগের ঐ নেতারাই বেশি প্রকাশ করেন, যারা যুদ্ধ না করে মুন্সিয়ানার মতো ভারত পালিয়ে লজিং ছিলেন। এজন্য অনেক আওয়ামী লীগারের-ই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ভালো লাগেনা, এক মন্ত্রী তো সেদিন বলেই ফেললেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ চেতনায় এক ও অভিন্ন।’ এর বড় প্রমাণ মিলবে ইটালিয় বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচির ‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরি’ গ্রন্থে। যিনি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলো- আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ আপনার কাক্সিক্ষত মিত্র হবে। ইন্দিরা গান্ধী উত্তর দিলেন, ‘বাংলাদেশ ও আমাদের বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অবশ্য একতরফা বন্ধুত্ব হবে না। প্রত্যেকেরই কিছু দেবার ও নেবার থাকে আমরা আমাদের পাওয়ার ব্যাপারে সব সময়ই সচেষ্ট।’ সম্মানিত পাঠক বৃন্দ এখান এটি খুবই পরিষ্কার যে, ভারত নিজেদেও স্বার্থেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল।
সম্প্রতি এনটিভিতে বাংলাদেশে মানবসম্পদ তথা তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনার ওপর এই তথ্যবহুল রিপোর্ট দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর মধ্যে বড় অংশ কর্মক্ষম তরুণ এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তা প্রায় ১১ কোটির মতো। এই সম্ভাবনাকে আগামী ৩০/৩৫ বছরের মধ্যে কারিকরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ ১-২শ’ বছর এগিয়ে যাবে। কিন্তু এই মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে না পারলে বাংলাদেশের জনবিস্ফোরণ একটি বোঝায় পরিণত হবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিকল্পনা আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দেশে পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা তা নিয়ে কি এই তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আদৌ ভাবেন? বর্তমানে বিরোধ, বিভেদ, অপরাজনীতি, আর শাসক গোষ্ঠীর জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতার থাকার অপপ্রয়াস দেখে কি দেশের জনগণ তাই মনে করে না?
আমাদের সোনার বাংলার প্রতি বিদেশী শকুনদের এখন লোলুপতা। অপরূপ ও অবারিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশসহ বহির্বিশ্বের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ অনেকেই চায় না। এটি আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বুঝতে পারেন?। স্বনির্ভর অর্থনীতি আর আত্মনির্ভর বাংলাদেশ অনেকের কাছেই এখন চক্ষুশূল। এ দেশের গণতন্ত্রকে ভারত রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন সেই পরিকল্পনারই অংশ। দেশের অর্থনীতি এখন পঙ্গু হতে চলেছে। তার মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিচ্ছে। পোশাক শিল্পের একচেটিয়া সুবিধা এখন ভারত নিচ্ছে।
এজন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৪-১৫ অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি আরো বলেছে, বিনিয়োগ তো হয়নি, উল্টো বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে দেশ থেকে। টাকার অঙ্কে যা বৈদেশিক সাহায্যের চেয়েও বেশি। সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকান গবেষণা সংস্থার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানানো হয়, ২০১২ সালে দেশ থেকে ১৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এর আগে ভারতীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স আকারেই ২০১৩ সালে ভারতে চলে গেছে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার। সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশের বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকে। কিন্তু দেশটিতে আমাদের লোক কমে যাচ্ছে। তারা লোক ঠিকই নিচ্ছে কিন্তু আমাদের থেকে নিচ্ছে কম। সিপিডি বলেছে, নেপাল থেকে আগের চেয়ে বেশি লোক যাচ্ছে সৌদি আরবে। আবার ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তেমন প্রবাসী আয় অর্জিত হয় না। ভারত পঞ্চম প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বাংলাদেশ থেকে। সিপিডির এই বক্তব্য সঠিক হলে তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের।
সিপিডি বলেছে, তাদের বক্তব্য সরকারি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই তৈরি করা। বাংলাদেশ থেকে ৩৭০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স ভারতে চলে যাওয়া অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশ থেকে পঞ্চম প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে কোনো প্রবাসী আয় আসছে না। এটা থেকে কি বোঝা যায়? তাহলে বাংলাদেশে কতজন ভারতীয় নাগরিক চাকরি করছে? ৩৭০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স যাওয়া কি সহজ কথা? অথচ তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশে কোনো আয় আসছে না। বাংলাদেশে বিপুল শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আমাদের দেশে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত।” সুতরা আজ আমাদের ভাবতে নিজেদের প্রয়োজনেই।
দেশ, জাতি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো আওয়াজ তুলতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করতে চায়। এভাবে একে একে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে নির্মূল করে আওয়ামী সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করে বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধীমত শূন্য বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তাইতো ১৯৪৭ সালে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাকলোয়েন চার্লস মানুষের দুর্দশার চিত্র আঁকতে গিয়ে বলেন, ‘ইতিহাসের কোনো যুগেই কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়নি, প্রশাসনের সামনে বিচার বিভাগ কখনো এতটা অসহায়ত্ব বোধ করেনি, এ বিপদ অনুভব করা এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্বে কখনো চিন্তা করার এতটা তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়নি-যতটা দেখা দিয়েছে আজকের এ সময়ে। আজ আওয়ামী দুঃশাসনের এই মানব রুপি অক্টোপাসের জুলুম নির্যাতনের নিষ্পেষণে ক্ষতবিক্ষত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। দেশের ১৬ কোটি মানুষ সকলেই যেন আজ স্বাধীন দেশের বন্দী নাগরিক!!
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads